কৈশরের দুরন্তপনা…..

বোহেমিয়ান ভবঘুরে ১৭ নভেম্বর ২০১৩, রবিবার, ০৭:৩৮:৩৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৫ মন্তব্য

আমার শৈশবের পুরোটা সময় কেটেছে চট্রগ্রামের লালখান বাজারে । চারিদিকেই ছিলো পাহাড় । রাস্তার বিপরীতে নানুর বাসা । ক্লাস ওয়ান এ পড়ার সময় শীতকালে বাধ্যতামূলক জগিং এ বাটালি হিলে যেতে হতো নানার সাথে , সঙ্গী ছিলো একক্লাস বড় ছোট মামা ।

ছোট মামা অদ্ভুৎ  এক আবেগী মানুষ ।  শুক্রুবার ভোরে দুজনে চলে যেতাম মেহেদিবাগের ভেতরে A K KHAN এর প্রপার্টির পেছনের পাহাড়ে । ওই খানে অনেক গুলো বট বৃক্ষের সাথে পাঁচ ফিট উচ্চতার ভেতরে ফাঁপা একটা গাছের গুড়ি ছিলো । প্রতিবার আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো এর ভিতর দিয়ে নেমে গেলে হয়তো আমরা অন্য এক দেশে গিয়ে উপস্থিত হবো…হাজারো জল্পনা-কল্পনা সেই গাছ নিয়ে…..ওখান থেকে ঘুরে এসে মুকুল খালার বাসায় নাস্তা করাটাই ছিলো সবচাইতে লোভনীয় অংশ….নসিলা দিয়ে ব্রেড আর ঠান্ডা দুধে মেশানো কনফ্লেক্স আমাকে টানতো বেশী ।

দুপুর বেলার রুটিন ছিলো পুলিশ লাইনের গেটের মুখের ফকির হোটেল থেকে দুটি রসগোল্লা আর তিনটা পরটা নিয়ে পুলিশ লাইনের পাহাড়ের উচুঁ সমতল জায়গায় বসে খাওয়া  । পরোটা তিনটা ছিলো কারন মামা খেতো দুটা আর আমি একটা । মিষ্টির দাম ছিলো ৩ টাকা আর পরোটা ১ টাকা । আমি দুটাকার বেশী কখনোই দিতে পারতাম না, এমন ও হতো পুরো টাকাটা প্রায় মামাই দিতো । আর নীচ দিয়ে চলে যাওয়া বড় বাস গুলোকে ছোট ছোট আকারে দেখা…মাথার উপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে ভাবতাম- আহা যদি ওই ভেলায় ভেসে যাওয়া যেতো ।

একবার মামা, আমি আর সুমেল পাহাড় বাইতে বাইতে পুলিশ লাইন থেকে ঝাউতলা চলে আসি । আশে পাশে কোন মানুষজন পাইনা যাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি আমরা এখন কোন জায়গায় । যাও এক যুবক কে পেলাম উনি উওর দিলো উনি নিজেই জানেনা উনি কোথায় । ওই মূহুর্ত্বে সুমেলের বাঁধ ভাঙ্গা কান্নার শব্দ এখনো আমার কানে বাজে । হয়তো আমরা পিচ্চি ছিলাম দেখে আমাদের সাথে এই নিষ্ঠুর রসিকতা । আরো খানিক দূর হেঁটে এসে বসতি দেখে জানে পানি পেলাম । টাইগার পাসের ভেতর দিয়ে রিক্সায় চড়ে আমাদের বাসায় ফিরে আসা ।

বিকেলের প্রোগ্রাম থাকতো রেলওয়ে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা ড্রেন গুলো স্লিপারি বানিয়ে এক পলকে উপর থেকে নীচে নেমে আসা । মন্জু মিয়ার পাহাড়ের উপরে অবস্থিত মাজার নিয়ে ভীতি ছিলো সবচাইতে বেশী । দলে ছয়জনের কম হলে ওই পথ মাড়াতামই না । ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলাম । প্রিয় জায়গাটা ছেড়ে চলে এলাম হালিশহর ।

বাসার পাশেই সমুদ্র । হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ার সুবাদে পরিচিত হলাম চাঁদের অপর রুপ জোছনার সাথে । সমুদ্র আর জোছনা ফ্যান্টাসিতে রুপ নিলো । আমি জীবিকার তাগিদে সমুদ্রে । সমুদ্রের উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মাঝে অবিরত নেচে যাওয়া জোছনা দেখি আর পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করি ।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ