গত চারদিনে হাঁটতে হাঁটতে সবাই ক্লান্ত । বান্দারবান- রুমা- বগালেক- লংথাওসি-রুমানা পাড়া হয়ে পাসিং পাড়া এসে আস্তানা গাড়লাম সন্ধ্যায়। পাসিং পাড়া হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বসতি। পাসিং’দার বাসায় ঢাকা থেকে আসা একটা গ্রুপ, তাই উনি পাড়ার অন্য এক বাসায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন । হাসান ভাইকে রান্নার দায়িত্ব দিয়ে আমরা শুয়ে পরলাম বাঁশের মেঝেতে। হটাত হাসান ভাই রান্না ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে এসে বলল এই রান্নাঘরে রান্না করা সম্ভব না। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখি বিশাল এক গুইসাপ রান্না করতেসে বাড়ির লোকজন। কি আর করা, ওদের বলে অন্য একটা চুলা মাচার একপাশে বাইরে নিয়ে শুরু হল আমাদের রান্না। রাতে মুরগী পাওয়া গেলো না, পাহাড়ি মারফা (বড় শসা) ছিল একমাত্র ভরসা। সবাই এতো ক্লান্ত ছিল ঐটা দিয়েই ভরপেট খেয়ে ঘুম দিলো।
সবাই মরার মতন ঘুমাচ্ছে। শীত লাগাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল...আমার সাধের কম্বল পাশের জন টেনে নিয়েছে কোন এক ফাঁকে, কায়দা করে আমি আবার টেনে নামালাম। ঘড়িতে সময় দেখলাম ভোর ৬ টা । এই কটা দিন না হয় একটু কম ঘুমালাম, এই ভেবে উঠে পরলাম। ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিলাম কিশোর ভাই কে। অন্যদের ডাকছি কিন্তু কেও পাত্তা দিলো না। যে বাসায় ছিলাম ওদের দেয়া কম্বল জড়িয়ে আমরা দুজন বেরিয়ে পরলাম কেওকারাডাং এর উদ্দেশে। ওখান থেকে কেওকারাডাং যেতে সময় লাগে ১০ মিনিট। বই পুস্তকে দেয়া আছে কেওকারাডাং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়, কিন্তু এটা ভুল। উচ্চতার দিক থেকে কেওকারাডাং (প্রায় ৩১৭২ ফিট) রয়েছে ৫ নাম্বেরে।  বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় বান্দরবন জেলার দক্ষিনে মায়ানমার সীমান্তে। প্রাচীন ম্যাপগুলোতে এর নাম মদলত্ল্যাং (Modol tuang): আর বর্তমানে ট্র্যাকারদের কাছে সাকাহাফং নামে পরিচিত,উচ্চতা প্রায় ৩৪১২ ফিট।
বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই বেকুব বনে গেলাম। তিন হাত দূরের জিনিস ও দেখা যাচ্ছে না ঘন মেঘের জন্য ।

মেঘের মাঝে


ভাগ্যভালো অই রাস্তা আমাদের চেনা ভালভাবেই। কেওকারাডাং এর টাওয়ারে বসে বসে মন্ত্র মুগ্ধের মতন পাহাড়ের রুপ গিলছি। মেঘের মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সবুজ পাহাড় আবার হারিয়ে যাচ্ছে মেঘের আড়ালে।

পাহাড়ের সকাল

মেঘের খেলা

মেঘ আর মেঘ

প্রায় ১ ঘণ্টা পর জুনায়েদ, মুন্না আর মন্জু এসে হাজির। আরও ঘণ্টা দুয়েক পর ফেরত আসলাম পূর্বের জায়গায়। তখনও ঘুম আসিফ, অপু ভাই আর হাসান ভাই । জুয়ায়েদ বুদ্ধি দিলো তাবু বের করে তাবুর মধ্যে বসে বসে পাহাড় দেখবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

তাবুতে

বেশ কয়েকজন জমে গেলো আমাদের এই পাগলামি দেখার জন্য।
নুডুলস দিয়ে নাস্তা করার পর রওনা হলাম সব চাইতে সুন্দর মনমাতানো জাদিপাই ঝর্ণা দেখার জন্য। জাদিপাই পাড়ায় নামতে গিয়ে কিশোর ভাইয়ের স্যান্ডেল গেলো ছিঁড়ে । স্থানীয় পাহাড়ীদের সহযোগিতায় সাময়িক মেরামত করা হলো। পাহাড়ে গেলে আমি সাধারণত আগে হাঁটি ডাবল রেষ্ট খাওয়ার জন্য। এক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলো না । গাইডের সাথে ছোটখাটো এক্টা পাহাড় ডিঙ্গালাম প্রায় আধা ঘন্টা সময় ব্যায় করে । হঠাত পেছন থেকে কিশোর ভাই এসে ডান দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো ঐ দেখেন ঝর্ণা কিন্তু এটা এরুম দেখাচ্ছে ক্যান??

উপর থেকে দেখা

গাইডের নাম ধরে ডাকতেই সে আবার উল্টা হাঁটা দিতে দিতে বললো রাস্তা ভুল হৈছে...আমার সাথে আচেন বলেই গায়েব...মন চাচ্ছিলো ঐ মুহূর্তে মেরে দেই গাইড কে। অবশেষে সঠিক পথে এসে নামলাম ঝর্ণায়...নামতে নামতে অগণিত জোঁক মনের সুখে রক্ত খেয়ে নিলো।

জোঁকের ভালোবাসা

পুরাই খাড়া রাস্তা, জোঁক সরানোর সময় নেই হাতে । জোঁক নিয়েই নামতে লাগলাম।
ঝর্ণার সামনে গিয়েই আমি বাকরুদ্ধ...

ঝরনা

ঝরনা

এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব...

বড় ফটো দেখার জন্য ফটোর উপরে ক্লিক করুন

 

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ