সেদিন দুজনে

মুহাম্মদ শামসুল ইকরাম পিরু ৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১২:২৪:৪৩পূর্বাহ্ন গল্প ৭৩ মন্তব্য

সকাল দশটায় শান্তার ফোন: প্রবাল কি করছো? আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীন লাউঞ্জে  আসবা, সন্ধ্যা ৬:১৫ তে ফ্লাইট, রাখছি। বলেই কল কেটে দিলো কোনো প্রশ্নের অবকাশ না দিয়েই। প্রশ্নের সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে প্রবালের মাথায়। বিমানে কোথায় যাবো? কয়দিনের জন্য যাবো? গত রাতেও ঘুমানোর পূর্বে শান্তা আর প্রবালের ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট হয়েছে, তখন কেন বললো না? প্রোগ্রামটা কখন করলো সে? কিছুই জিজ্ঞেস করার সূযোগ দিলো না। কল দিয়ে জানবে এসব তারও উপায় নেই। কারণ কল দেয়া মানা। বাসায় থাকাবস্থায় শান্তা কল দেবে সব সময়, প্রবাল দিতে পারবে না। ওয়ান ওয়ে টিকেট এর মত হচ্ছে মোবাইল কল।
এমন তার ছেড়া প্রেমিকা আর এই জগতে আছে কিনা কে জানে? অবশ্য প্রবালেরও তার ছেড়া কম না। গতবার কক্সবাজার গিয়ে সারারাত সৈকতে বালির উপরে শুয়ে থাকলো কিভাবে?

বিকেল ৪:৩০ এ আবার শান্তার কলঃ কতদূর এলে প্রবাল? এইত উবারে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করলাম, কিছুটা জ্যাম সামনে, প্রবালের উত্তর। প্রতি উত্তরে শান্তাঃ পাঁচটার এক সেকেন্ড বিলম্ব হলে আমি কিন্তু তোমাকে বাদ দিয়ে একাই চলে যাবো, বলেই কল কেটে দিলো। প্রবালের মনে আতংক, সামনে ভালোই জ্যাম, নেমে হেটে যাবে নাকি? প্রতি সেকেন্ড যেন মনে হচ্ছে এক ঘন্টা। শেষ পর্যন্ত পাঁচটা বাজার দশ মিনিট পূর্বে পৌছাতে পারলো প্রবাল। গেটের সামনেই হাসি মুখে দাড়িয়ে ছিল শান্তা, প্রবাল সামনে যেতেই হাত ধরে টিকিট দেখিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলো প্রবাল আমরা যাচ্ছি কোথায়? মুখে দুস্টামীর হাসি নিয়ে বলল শান্তা : ধীরে বৎস ধীরে, সময় হলেই জানতে পারবে। প্রবাল হাল ছেড়ে দিয়ে বলল: চলো কফি খাই। দুজনে গিয়েই দুইকাপ কফির অর্ডার দিলো। দুইশত টাকা প্রতিকাপ, কফি খাবার পরে দুজনেরই মুখ একদম তেতো হয়ে গেলো, কি ছিল কফিতে কে জানে, জিহবায় কেমন জ্বলুনি অনুভব করল দুজনেই।

বিমানের কাউন্টারের সামনে টেনে নিয়ে গেলো শান্তা প্রবালকে, ডিসপ্লে বোর্ডে সিলেট এর নাম দেখে প্রবাল বুঝলো সিলেট যাচ্ছে ওরা। বোর্ডিং করাল দুজনে, লাগেজ না থাকায় দ্রুতই বোর্ডিং হয়ে গেলো। লাগেজ বলতে দুজনের হাতে ছোট দুই ব্যাগ। ডিপারচার লাউঞ্জে গিয়ে প্রবালের প্রশ্নবোধক চোখ দেখেই শান্তা বলতে থাকলো, হঠাৎ প্লান, রিটার্ন টিকিটও কাটা। আগামিকাল সকালে জাফলং যাবে, সারাদিন জাফলং থেকে সন্ধ্যায় ফিরবে সিলেট। পরদিন সকালে আবার ঢাকা। সিলেট হোটেল, গাড়ি সবই ম্যানেজ করে রেখেছে। প্রবালের বিশ্ময় আর কাটে না, সব কিছু ম্যানেজ করে রেখেছে শান্তা! প্রবালের মনের কথা যেন জানতে পারল শান্তা, বলল: ভরসা রাখেন বস, শান্তা পারে সব।

সিলেট পৌছে হোটেলের গাড়িতে হোটেলে গেলো। কিছুটা ফ্রেস হবার পরে শান্তার তাগাদায় হযরত শাহজালাল এর মাজার জিয়ারত করতে ছুটলো। প্রবাল জিয়ারতের সময় ওদের দুজনের বিয়েটা যেন উভয় পরিবার মেনে নেয় এবং দুজনে যেন জন্ম জন্মান্তরের সাথী হতে পারে তা   মোনাজাতে চাইল।

পরদিন সকাল নয়টায় গাড়িতে জাফলং এর উদ্দেশ্যে ছুটলো। পথে হযরত শাহ পরান এর মাজার এ গিয়ে মাজার জিয়ারত করলো। সারাপথ দুজনে একে অপরের হাত ধরে কিছুক্ষন নিরব কথা, আবার সরব কথা বললো। এই জগতে যেন সুধু শান্তা আর প্রবাল আছে, অবিশিস্ট জগত বলতে আর কিছুই ছিল না।

জাফলং নদীটা অনেক সংকুচিত হয়ে গিয়েছে দেখে মন খারাপ শান্তার। দুই বছর পুর্বেও কত শ্রোত ছিল নদীতে। এখন শ্রোত বলতে নেই। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত হেটেই যাওয়া যায়। উপর থেকে নামার জন্য পাকা সিড়ি করে দিয়েছে সরকার। নামতে ভালই লাগছিল। প্রবাল থেমে থেমে ছবি তুলছিল। শান্তা পিছন থেকে বলে উঠলো ' আমি তোমাকে সহই ধারন করব প্রবাল।'

 

ভারত থেকে আসা পর্যটক। সীমান্ত আছে এখানে, কে মানে এই সীমান্ত? একই ভাষার মানুষের মিলনমেলা যেন জাফলং জিরো পয়েন্ট। কে ঠেকাবে দুদেশের মানুষের মিলন?  দুরে সেতু, সেতুর নীচে বহমান ছোট নদী।  ভারত থেকে আসা নৌকাগুলো বেশ কালারফুল। যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নৌ ভ্রমন করেন। বাংলাদেশের নৌকাগুলো তেমন আকর্ষনীয় নয়।

 

সময় একসময় গড়িয়ে সন্ধ্যা। শান্তা প্রবাল মুগ্ধ হয়ে দেখে সূর্যাস্ত। দুজনের মুখ উজ্জল সোনা রংয়ে। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে একহাতে টেনে নেয় শান্তাকে প্রবাল। সোনালী আভায় ভালোবাসার তীব্র অনুভবে ডুবে যেতে থাকে দুজনে।

প্রকৃতির এই অনাবিল সৌন্দর্য একসময় আধারে ঢেকে যায়,  প্রেমময় মুহুর্তগুলোর স্মৃতি নিয়ে পরদিন সকাল দশটায় দুজনে ফিরে আসে ঢাকায়।

গল্পে রসকসহীন নির্দয় সেন্সরবোর্ড অনেক কাটাকুটি করেছে।

প্রবালের গল্প- ২  

প্রবালের গল্প- ১

0 Shares

৭৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ