সম্পর্কের আদি অন্ত।

রিতু জাহান ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার, ০৮:৩৭:১১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৭ মন্তব্য

আজ বড় বাবাকে নিয়ে রংপুরে গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে। বাবাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। চেম্বারে বসে থাকার সময় লক্ষ্য করলাম, এক দম্পত্তিও তাদের এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে এসছে। পুরুষ লোকটি পুরো সময়টি ধরে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আছে। দেখে খুব ভাল লাগল। আমার মেমন রিয়ানের ছোট বেলা দেখতে পাচ্ছিলাম। তবে খেয়াল করলাম, মেয়েটি চোখ ছল ছল করে তার বাচ্চা ও স্বামীটিকে দেখছে। মনে হল একটু কথা বলি, মেয়েটির সাথে। মেয়েটি দুঃখ করে বলেই ফেলল, মেয়েটি ঐ লোকের দ্বিতীয় বউ। লোকটির প্রথম বউ এই বাচ্চাটি হতেই মারা যায়। লোকটি বাচ্চাটিকে দেখাশুনার জন্য একে বিয়ে করেছে। মেয়েটি স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বাচ্চাটি বড় নাহওয়া পর্যন্ত নিজে কোনো সন্তান নিবে না। মেয়েটির শুধু দুঃখ লোকটি তাকে খুব ভালবাসে, কিন্তু সে তার বাচ্চাটিকে নিজেই বেশী কেয়ার নেয় বেশী। এবং এই জিনিসটি তাকে কষ্ট দেয়। শুনে আমি মেয়েটির হাত ধরে হেসে দিলাম। তাকে বললাম, "তুমি একটি বোকা মেয়ে!" তকে আমি আমার গল্প শোনালাম।বললাম, " আমার দুই ছেলে। আমার দুই ছেলেও যখন ছোট, কোথাও যাওয়ার সময় ওর বাবাই ওদের কোলে নিত। টিকা দেবার সময় সে নিজেই কোলে করে নিয়ে যেতো নিয়ে আসত। আমাকে বলত, আমি নাকি পারব না। শুনে আমি মনে মনে খুশি হতাম, দেখে যে সে তার বাচ্চার প্রতি কতোটা দুর্বল। একবার মোংলা থেকে ঢাকা আসার সময়, আমার মেমনের বয়স তখন চার, ছোটকুর দুই। ওরা পুরা রাস্তাবাবার সাথে, কিছুতেই আমার কোলে বা পাশে বসবে না। তো এটা দেখে এক মহিলা বলেই বসল," এটা কি আপনার স্বামীর প্রথম ঘরের সন্তান !" শুনে তো আমি ক্ষেপে মেপে একাকার । ^:^ জুলি এখনো ক্ষেপায়। :p

মেয়েটি মনে হল খুশি হল শুনে। ওকে বললাম, এটা আসলে আপনাকে অপমান করা না। এটা তার ভালবাসা। মেয়েটি অনেক গল্প করল। এই কথপোকথনে মেয়েটি মনে হল, প্রান ফিরে পেল। খুব ভাল লাগল তার ঐ নিষ্পাপ হাসিটি। সহজ সরল এক সাধারন ও বুদ্ধিমতি মেয়ে। স্বামী ভাগ্য ভাল হোক এই মেয়েটির এই কামনা। এই সম্পর্কগুলো আদি অন্ত ভাল হওয়া উচিৎ।

আজকের এই ভাল লাগার মুহুর্তগুলো ভাগ করতেই লিখলাম। জানি না এগুলো পোষ্ট কিনা।

এই ছোট জীবনে পথ চলা অনেক। সেই পথ চলায় দু একটা মান অভিমান ভুলে তার ভিতরে থাকা গুনগুলো দেখেও জীবন পার করা যায় অনেকগুলো। আমি মেয়েটিকে বলেছি যখনি তোমার মন চাইবে রিং দিবে। না, আমি কোনো কাউনসিলর নই। তবুও আমরা অনেকেই অনেক সময়, নিজেদের মন খারাপ হলে কাউকে কথাগুলো বলে ফেলতে পারলে হালকা বোধ করি। আর এতে সমস্যা সমাধান হয়। আমি দু বছর মনোবিজ্ঞান বই পড়েছি। আমিই একসময় এ্যবনরমাল হয়ে গেছিলাম, বড় মামনি চলে গেলে। আমার মেয়েটা আমার স্পর্শ পায়নি, এই অপরাধে ভুগেছি, পাগল প্রায় হয়েছি। দুই দুইটা ইনজেকশনেও আমার ঘুম আসত না। কাউনসিলিং করে, জুলির সাপোর্টে সেরে উঠেছি। সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে মানসিক বিভাগে কয়েকবার গেছি। অনেকদিন বাচ্চার কান্না সহ্য করতে পারিনি। সেই ধাক্কা শুধুমাত্র কাউনসিলিং ও মেমন আসলে সামলেছি। অনেকদিন আমি তাকে স্বপ্ন দেখেছি। ঠিক সেই সময় তার যে বয়সটা হওয়ার কথা সেই বয়সেই তাকে দেখেছি। এখন সে থাকলে, আমি হতাম "জীনেতার আম্মু"

সবার কি মন খারাপ হল ? আমার মা কিন্তু ভাল আছে। কতো কথা যে হয় ওর সাথে আমার! মন খারাপ করে থাকলে বকা দিবে। হাসাবে। গল্প করবে।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ