দিগন্তজোড়া মাঠের প্রান্তরে যে হিরন্ময় গোধূলিকে পিছনে ফেলে এসেছে তরুলতা, অসীম অতল সাগর তার কাছে বড্ড নস্যি। আয়নায় নিজেকে ঝিনুকমাল্যে সাজাতে চাওয়ার স্বপ্নে বিভোর তরুলতার সাথে আমার একাল ও সেকাল বিলীন করে দিয়েছি আমি।

স্বপ্নবিলাসের মত্ততা হারানো তরুলতাকে বলেছিলাম, মনেহয় সবকিছু ছেড়েছুড়ে বোহেমিয়ান যাত্রায় বেড়িয়ে পড়ি। এই নোংরা শহর ছেড়ে চলো আবারো আদিম গুহায় ফিরে যাই। টোলপড়া হাসিতে সাগরের বালিয়াড়িতে ছোট্ট কুঁড়েঘরকেই বেছে নিয়েছিলো তরুলতা।

সাগরপাড়ের প্রত্যেকের মুখেমুখে তরুলতার সে প্রেমের গল্প দিনকেদিন কাব্যকথার রুপ নিয়েছে। প্রেম ইতিহাসের যতশত কপোতি এ সাগর পাড়ে পা রেখেছে তারাও তরুলতাকে মনেপ্রাণে স্মরণ করে নিজেদের প্রেমিকারুপে কল্পনাবিলাসে মত্ত হয়।

যে প্রেম স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে এসে প্রেমকাননে গোলাপঝাড় সাজিয়েছে সেখানে এখন প্রেম যেন কণ্টকাকীর্ণ কাঁটা হয়ে রক্ত ঝড়ায়। সাগরতীরে বয়ে আসা প্রতিটি ঢেউ মনে করিয়ে দেয় তরুলতার সোনালি অতীত।

বিস্তীর্ণ বালুকাবেলায় খালিপায়ে হেঁটেচলা, কখনো সখনো রুক্ষ ডুবোপাথরে আঁচরে দেহেমনে যে শীর্ণতা অনুভব হয়; নিয়তি ভেবে তরুলতা মেনে নিয়েছিলো সে আঘাত। এটাই তবে প্রাপ্য ছিলো হয়তো!

তরুলতা নেই! সাগরের সূর্যালোকিত ভোর ইদানিং বড্ড পানসে লাগে আমার। গোধূমচূর্ণ আকাশে ভর করে মনখারাপের কালো মেঘ। নিয়মের বেড়াজালে বন্দি এ দিনযাপনে বিরক্তি এসে গিয়েছে। একঘেয়েমিতে পেয়ে বসেছে কাজেকর্মে, চিন্তা-চেতনায়।

জীবনের অভিজ্ঞতা ইশারায় দেখিয়ে দেয়, প্রতিটি অভিমানী গল্পের শুরু থাকে শেষ থাকেনা। কালের গহবরে তরুলতাদের জীবনে আসা চরিত্রগুলি বিলীন হতে হতে মিশে যায় একসময়। শুধু ভালোবাসার রেশ সাগর তীরের তপ্ত বালুকণা হয়ে উড়ে যায় অসীমের শুন্যতায়।

ভরা জোছনায় আমি আবারো ফেনীল সমুদ্রে মিশে যেতে চাই। সমুদ্রের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলতে চাই- তরুলতা, আমি আজন্ম নীলের সাথে সখ্যতা গড়ে রোদ্দুরের শালিক হতে চেয়েছিলাম। আমি গাঙচিল হয়ে সাগরের জলরাশিতে তোমার তরীর বৈঠা বাইতে চেয়েছিলাম।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ