মহারানী,
ছাইরঙা কুয়াশার ভেতর হিরন্ময়ের আহ্লাদীতে স্ফটিকের মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে শিশির। অমন মুহূর্ত দিতে চেয়েছিলাম তোকে। চাইলেই যে সব দিতে পারিনা আমি। এভাবে লিখে নয়, মুখোমুখি বসে বলার কতো ইচ্ছে, পারি কোথায়! নাহ আমায় দিয়ে কিছুই হয়ে ওঠেনা। দিন যায় যতো, ততোই পিছিয়ে পড়ছি। সীমানা ভেঙ্গে যে বন্ধুতার জন্ম হয়েছিলো, বাস্তবের রঙ-রূপ কতো বদলে গেছে। ভুলে যাবার কথা নয় তোর, ১১ মার্চ, ২০১২ সালে সেন্ট এলিজাবেথের চার্চে বসে প্রথম দিন প্রার্থনা। তারপর সেখানে তোর প্রাণখোলা হাসি, আজ আর কোথায়! রোজকার রাগ-অসহ্য বিরক্তি নিজের প্রতি সেসব রাখার জায়গা কেন যে তুই-ই হলি। উত্তর জানিনা।
কি যে সব লিখছি, বলছি! আজ তোর বিশেষ দিন। নাহ এটা ভালোবাসা না। তাই যদি হতো, তোকে সবসময় আনন্দে রাখতাম। তোর মনের মতো হয়ে যেতাম। আমাদের ব্রাশেলসের আড্ডাই ভালো ছিলো। চার মাস ব্লক ছিলাম, হাত খরচের টাকা জমিয়ে কেনা সেই ক্রিস্টালের পুতুলটা তোকে আর দেয়া হলোনা। কোথায় যে ফেলে দিয়েছি! যা শুনেছি তোকে নিয়ে, তুই নাকি এ জীবনে আমার সাথে আর কথা বলবিনা। আমার অপরাধ মিথ্যে বলেছিলাম আর তুই মিথ্যুককে ঘেণ্ণা করিস। আমার মিথ্যে এ জীবনে তোকেই সেদিন দিয়েছিলাম, আর কেউ পায়নি। জানিনা কেন অমন করেছিলাম! অথচ কেমন এক বিশ্বাস ছিলো, আমায় ফেলে দিবিনা তুই। একধরণের অহঙ্কার আছে বন্ধুত্ত্বে, বন্ধু হিসেবে আমায় কেউ ছেড়ে দিতে পারেনা।
ফেসবুকের পরিচয়ের সম্পর্ক আমাকে এমন এক জীবন দিয়েছে, যা কেউ দিতে পারেনি। পারবেও না। আমার একটুকু ব্যথা তোকে কেমন যন্ত্রণা দিয়েছে, সেও তো দেখেছি। আর সেই যে নার্সিং সার্টিফিকেট পাওয়া, কনভোকেশনে মনে হচ্ছিলো আমি নই, তুই পেয়েছিস। জানিনা কেন এতো ভালোবাসিস, অতো ভালো কি আমি? নাহ! মনে আছে আমাদের একসাথে প্রথম ইষ্ট গেট যাওয়া? তারপর প্রথম টিম হর্টনে কফি? হ্যামিল্টন এসে টিমের কফি আমি কিনবো, এমন কথা হওয়া। একদিন তোকে ফেলে আমার রাগ করে চলে আসা পার্লার থেকে। আমাদের টবি রেষ্টুরেন্টের ব্রেকফাষ্ট, যে ওয়েটারকে দেখতে সাদ্দামের মতো লাগে আমি বলেছিলাম তাকে, সে এখনও আমাদের মনে রেখেছে। শুধু তাই নয়, এতো বেশী চেনে যে জানে আমাদের কি পছন্দ! ইন্ডিয়ান গ্রোসারি শপে যাই, আজকাল আর তোকে দেখেনা দোকানের মালিক, তাই সবসময় জিজ্ঞাসা করে সঙ্গীতা কোথায় নীলা? বলি ওর বর টরেন্টো থেকে বাজার নিয়ে আসে। হেসে বলবে আমায় তোকে যেনো বলি বরকে নিয়ে ওদের থেকে বাজার করতে। ঊর্মী Bedrock Bistro রেষ্টুরেন্টে সেই জায়গাটায় বসে কতো গল্প।
সময় এতো তাড়াতাড়ি দৌঁড়ায় কেন, বলতো? তবে এতো তাড়াতাড়ি দৌঁড়ায় বলেই আমাদের এই সম্পর্কটা মিষ্টি-টক-ঝাল। আমি-শিল্পী-তুই, আমাদের তিনজনের ঝগড়া-খুনসুটি ছাড়া আমি নিঃশ্বাস নিতে পারবোনা। একেই বুঝি বলে আত্মার সম্পর্ক। কোন কথায় কি হবে, কার সাথে গল্পে কোন পরিণতি হবে আগে থেকেই বলে দিস। আমি বুঝিনা রে। তাই হয়তো অনেক কিছু হারালেও কষ্ট হয়না, তোরা আছিস। আমার দুটি চোখ—শিল্পী আর তুই।
পুরোনো লেখা দিয়ে আবার তোকে…সময় কোথায় বল! ভোর চারটা বাজে, ফ্রী হয়ে বসলাম এখন। এবার তোর বিশেষ এই দিনে কিছুই দেয়া হলো না রে মনি। জানি তার জন্যে তুই কষ্ট পাবিনা। জিনিস দিয়ে হিসেব বাড়ে, আবেগ হলো বে-হিসেবী, সেটা রাখাই আছে। হয়তো বোঝা যায়না আগের মতো। শুভ জন্মদিন মহারানী ঊর্মী। সবসময় হাসি যেনো তোর মনকে ছুঁয়ে থাকে। এছাড়া আর কিছুই চাইবার নেই রে।
আমি এবং তুই……
হাতটি তুই বাড়িয়ে দে
এই যে আমি
আরেকটুখানি সামনে এগো
আমি-ই তোর পাগলামী ।
চোখটি মেলে দেখনা চেয়ে
স্বপ্নগুলো নাচছে কেমন
একটু শুধু হেসেই দেখ
দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে মরণ ।
গলা ছেড়ে সুরটি ধর
দাদরা কিংবা কাহারবা
তালের সাথে লয়টি মেলা
নিজেকেই দে বাহবা ।
একলা যে তুই একলা আমি
দু’জনে মিলি একপথে
আমার মাঝে নিজেকে খোঁজ
আমায় খুঁজি তোর মাঝে ।
**শুধু এই লেখাটি ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বরের**
হ্যামিল্টন, কানাডা
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ইং।
২৯টি মন্তব্য
অরুনি মায়া
আজ তো আপনার অনেক আনন্দ আপু | প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন , প্রিয় নানার জন্মদিন , জিসুখ্রিস্টের জন্মদিন 🙂 | ঊর্মী আপুকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিবেন প্লিজ | -{@
এতগুলো জন্মদিন কিন্তু কেউ আমারে কেক খাওয়ালোনা 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম অনেক আনন্দ আপু। গতকাল রাতে বাসায় পার্টি দিয়েছিলাম। অনেক মজা করেছি। আমি কেক খাইনা। কিন্তু গতকাল খেয়েছি। ওর জন্যে কেক কিনেছিলাম। প্রতি বছর ঊর্মীর জন্যে আমি কেকটা কিনি। আর সেই কেকটা খুব স্পেশ্যাল হয়। সাধারণত জন্মদিনে কেক নষ্ট হয়। আমার পছন্দের কেনাটা নষ্ট হয়না। কারণ জানিনা।
ইস তুমি থাকলে ঠিক খাওয়াতাম। কাজ থেকে ফিরে ৪টের সময় রান্নায় ঢুকে, ঘর গুছিয়ে-সাজিয়ে, নিজেও সেজেছি। ওহ রান্না করেছিলাম চিকেন রোষ্ট, মিক্সড ভেজ, ডিমের পোলাও, ফিস ফিলে ফ্রাই, ক্যাপসিকামের পুর, সালাদ, ক্ষীরের পায়েস। আর আমার বর রেঁধেছিলো হাঁসের মাংস(দারুণ রাঁধে নাকি! আমি খাইনা তো তাই জানিনা)। 😀
আর হুম ঊর্মী তোমাকে চেনে। আসলে আমার প্রিয় সবাইকেই ও ভালো করে চেনে। -{@
জিসান শা ইকরাম
শুভ জন্মদিন মহারানী ঊর্মী, জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছে -{@
ঊর্মীর কথা এত শুনেছি তোমার কাছে যে,তাকে না দেখেও চেনা হয়ে গিয়েছে আমার।
আত্মার সাথে যার মিল, সেই তো আত্মীয়
এমন আত্মীয়ের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়।
এভাবেই একসাথ হয়ে থাকো হৃদয়ে হৃদয় মিশিয়ে।
শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম নানা, ঊর্মী অনেক কিছু আমার। পৃথিবীতে এমন একজন বন্ধু সকলের দরকার। আমার অন্যায়কে ধরিয়ে দেয়। কোনো ভুলকে ঠিক করে শিখিয়ে দেয়। নাহ ওকে ফেলে কোথাও যাওয়া হবে না আমার।
আর ঊর্মীর সাথে তো তোমার কথাও হয়েছিলো। আমাকে সব সময় বলে নানা তোকে অনেক ভালোবাসে। আর এ মন্তব্যগুলো ও পড়ছে। লিঙ্কটা দিয়েছি ওকে। -{@
ছাইরাছ হেলাল
শুভ জন্মদিন, আপনার মহারানি কে। রাজা হয়েই থাকুন আপনার প্রাণান্তরে।
তাঁকে মনে হচ্ছে আপনার থেকেও বেশি জানি।
নীলাঞ্জনা নীলা
অবশ্যই আপনি আমার থেকেও ওকে বেশী জানেন। আর সেও আপনাকে।
বেশ ভালো বন্ধুত্ত্ব আপনাদের দুজনের। 🙂
মামুন
‘একলা যে তুই একলা আমি
দু’জনে মিলি একপথে
আমার মাঝে নিজেকে খোঁজ
আমায় খুঁজি তোর মাঝে ।’ – :c :c
জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপনার মহারাণীর জন্য। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
পৌঁছে দেবো আপনার শুভেচ্ছা আমার মহারানীকে। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
পৌঁছে দেবো আপনার শুভেচ্ছা আমার মহারানীকে। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
শুভেচ্ছা মহারাণীর জন্মুতে।
সুখে থাকুক দুধেভাতে থাকুক।
-{@ -{@ -{@ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক সুন্দর শুভেচ্ছা বাণী মজিবর ভাইয়া। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
আগের বাক্যে দিলাম দিদি।
স্বরনে আসে অতীত
নীলাঞ্জনা নীলা
স্মরণে আসে অতীত…বাহ! (y)
ব্লগার সজীব
জন্মদিনের উৎসবে ভাসছে সোনেলা 🙂 শুভ জন্মদিন উর্মি আপু।জগতের সকল সুখ আপনার হোক -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাভু বাইয়া ডিসেম্বর মাসটা খুব প্রিয় আমার।
আমার মহারানী নিশ্চিত সবার মন্তব্য দেখে ফেলেছে। আপনারটাও। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
এমন করে কেন লিখিস?
আবগের ভাগাভাগি কাগজের সাথে
সে আমার সইবেনা
জানিতো পারিস,
শুধু পারলে ভালোবাসায় পোড়াতে নয়, পুড়তে শিখিস।
…………………………… ঊর্মী আপুকে আমার জন্মদিনের হাজার শুভাশিস দিও। এমন করে লিখতে যখন পারো, কাঁদাতে তো অবশ্যই পারো।
ভালো থেকো, ভালো রেখো। তোমার কাছ থেকে শিখেছি এটা। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য আপুউউউউউউউউউউউউউ…দারুণ! আমি মুগ্ধ!! কি বলেছো বোঝো কিছু?
তোমার সেই আবেগের স্থান, যেখানে তোমার একলা রাজত্ত্ব, সেখান থেকে এমন শব্দগুলো নেমে এলো আমার ভালো লাগছে অনেক।
ভালোবাসাতেই মানুষ পোড়ে আপু। ক’জন আছে যে পোড়ায়? বলো!
হুম আপু ভালো থেকে ভালো রেখো। -{@ (3
নূরু
আপনার মহারাণীর জন্য
শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ নূরু। 🙂
অনিকেত নন্দিনী
এই মহারাণী ঊর্মির কথা লেখার মাঝে বহুবার পেয়েছি। সেই জানের বন্ধু, প্রাণের বন্ধুর জন্মদিনে তার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা। (3 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি ও আমায় যতোটা ভালোবাসে, বরং সেভাবে আমি পারিনি ওকে ভালোবাসতে । বরং ভালোবাসা কি তা শেখার চেষ্টা করে চলছি।
স্বপ্ন
ঊর্মী আপুকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
স্বপ্ন আমি জানিয়ে দেবো। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভ হউক জীবনের বাকী সময়,আনন্দে কাটুক সারাটি জীবন -{@ -{@
আশা রাখি জীবন গড়বে মা বাবার আদর্শে -{@ (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
ঊর্মী আমার বন্ধু মনির ভাই।
আবু খায়ের আনিছ
বন্ধুত্বের নির্দশন রাখতে চললে দিদি, শুভেচ্ছা তোমাদের।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া বন্ধুত্ত্ব কি, সে তো এখনও শিখতেই পারিনি। কিন্তু ঊর্মীকে দেখি তখন বুঝি বন্ধুত্ত্ব কি!
মরুভূমির জলদস্যু
শুভেচ্ছা রইলো জন্মদিনের।
নীলাঞ্জনা নীলা
জানিয়ে দেবো। 🙂