লৌকিক অলৌকিক উনিশ রহস্য

রিতু জাহান ১৭ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:৫৫:১০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

রাতে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা ভিডিও আসলো ইনবক্সে।
ভিডিওটা এরকম যে ওখানে এলোমেলো অনেকগুলো সংখ্যা ছিলো আপনি যে সংখ্যাটা মনে মনে ভাববেন এবং চোখ দিবেন সে অক্ষরটাই শুধু গায়েব হয়ে যাবে। আমিও খেলাটা শুরু করলাম। হ্যাঁ, সত্যিই কি অদ্ভুতভাবে সে সংখ্যাটা গায়েব হয়ে যাচ্ছিলো। আমি পরপর তিনবার গেমটা খেললাম। প্রতিবারই ভিডিওর সে চোখজোড়া মনে হচ্ছিলো আমাকে গভীরভাবে দেখছে। একটু ভয় পেলাম ভিতরে ভিতরে। রাতে আর বই না পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ও চোখজোড়া আমি সরাতে পারছিলাম না। চোখ মুজে আসতেই মনে হচ্ছে আমার সামনে বসে দেখছে আমাকে। কিছুক্ষণ এমন করতে করতে চোখ লেগে এসছে কখন টের পাইনি। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো একটা ছায়ামূর্তি দৌড়ে সরে গেলো। আমি আর যাই কোথায় কোনোরকম মশারী থেকে বের হয়ে দুই ছেলের কাছে চলে গেলাম। যেহেতু এল্যার্জীর ওষুধ খেয়েছি ঘুমও আসতেছিলো খুব। কিন্তু ও চোখজোড়া! একপর্যায়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি।

হঠাৎ মনে হলো চোখজোড়া আমাকে ডাকছে। আমি উঠে পড়লাম। আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তার পিছু পিছু চলে যাচ্ছি আমাদের হসপিটালে করা নতুন লাশঘরে। একদম ছাদের উপরে একটা ঘর। জানলা দরজা কিছু নেই। শুধু একটা বড় লোহার দরজা। আমি তার পিছু পিছু ঢুকে গেলাম ও ঘরে। হঠাৎ কোথাও কোনো আলো নেই। আমি একা বসে আছি গুটিশুটি মেরে। এক লোক খুব সুন্দর করে আমার লাশটাকে কেটে টুকরো করছে। আমি যতোবার মনে মনে বলছি এতো ছোটো কোরো না ততোবার ও চোখজোড়া নীরবে শাসিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আমার মস্তিষ্কের সমস্ত ভাষা সে পড়ে নিচ্ছে।
কি সে দৃষ্টি ঠান্ডা এক স্রোত বয়ে যায় মেরুদণ্ড দিয়ে। আমি নিরব দৃষ্টি নিয়ে সব দেখছি। লাশের টুকরোগুলোর উপর সংখ্যা বসানো হচ্ছে। অনেক অনেক সংখ্যা। এলোমেলো সংখ্যা। কিছু সাংকেতিক চিহ্ন যেনো বসানো হচ্ছে, জিজ্ঞেস করলাম এসব সংখ্যা বা বর্ণ আমি তো চিনিনে। লোকটা তখনও চেয়ে আছে। এবার বলা হলো টুকরো টুকরো মাংসগুলোর উপরে বসানো চিহ্নকে আমার মনে মনে ভাবতে হবে। হয় সে টুকরো গায়েব হবে নতুবা জড়ো হবে এক এক করে। যদি ভাগ্য ভালো হয় তবে আমি একবারই সকল অঙ্গের চেতন ফিরাতে পারব এবং মাংসপিণ্ডগুলো জড় করতে পারব।
কিন্তু যদি আমি একবারে বলতে না পারি তবে অনন্তকাল ধরে আমাকে সংখ্যা মিলানোর চেষ্টা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সবগুলো অঙ্গের সাথে ক্রমানুসারে যেনো সংখ্যাগুলো আমি কল্পনা করি বা তাকাই। নতুবা কোনো অঙ্গই আমার ঠিকঠাক জোড়া লাগবে না। আমার মস্তিষ্কবাদে সমস্ত শরীর অবশ। তবু আমি যেনো ঘেমে যাচ্ছি। আমি পুরোপুরি অবশ অসাড় এক বস্তু যেনো পাথরের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি। আমি এবার প্রথম সংখ্যা বলব কোনটা বলব সেটাই ভাবছি। হয় প্রথমবারই সুযোগ নতুবা অনন্তকাল আমাকে সংখ্যা সাজাতে হবে এ অন্ধকুঠুরিতে।

আমার শরীরের কোন অংশটা আমার সবচেয়ে দরকার সেটাই ভেবে উত্তর দিলাম চোখের সাথে মস্তিষ্কের সাথে চিন্তা করে হঠাৎ একটা সংখ্যা মনে এলো যা কিছুদিন আগে মাত্র আমি পড়েছিলাম পবিত্র কোরআনে ১৯ সংখ্যার সম্পর্ক নিয়ে।
তাই চট করে ১৯ সংখ্যাই আমি বলে ফেললাম। আর বড় ব্যাপার ভিডিওটি খেলার সময় আমার ১৯ সংখ্যাটিই প্রথমে চোখে পড়লো। সংখ্যা ১৯ ভাবার সাথে সাথে আমার মনে হলো আমি চোখের পাতা নাড়াচাড়া করতে পারছি। আমার চেতন এখন কাজ করছে। লোকটা স্থির দৃষ্টি নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে। হাসছে এবার সে। কিন্তু হাসিটা পরাজয়ের হাসি। তীক্ষ্ণ আলোর রেখায় ঘরটা ভরে উঠলো। ভোরের দরজা খুলে দিলাম আমি।

এ ১৯ সংখ্যার সাথে আমার আর একটা সম্পর্ক আছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে ১৯ রোজার দিন সন্ধ্যার পর পর আমি ময়লা ফেললাম বাসার পাশে। আমি ঘুমানোর পর পর হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকছে নাম ধরে। আমাকে ময়লাটা ফেলার জন্য জোরে কষে ধমক দিলো। আমাকে ওখান থেকে ময়লাটা সরাতে বলল,, সে ময়লার জন্য তার সাদা কাপড় খারাপ হয়ে গেছে ব্যাপারটা এমন। আমি অপরাগতা প্রকাশ করলাম ঘুম থেকে উঠতে পারব না বলে। কিন্তু মনে হলো উনি প্রচন্ড রেগে গেছেন। আমাকে জোরে টেনে উঠালো যেনো। আমি সত্যি চিৎকার করে উঠে বসলাম। আমাকে মনে করিয়ে দিলো এ উনিশ রোজা যেনো আমি মনে রাখি।

একবার আমি লটের সাদা কিছু থান কাপড় কিনছিলাম। কাপড়ের গজ মাপা ছিলো না। তিন হাত বহরের সাদা কাপড়। এ সাদার রঙটা অদ্ভুত সুন্দর সাদা। আমি বাসায় এসে মেপে দেখলাম ঠিকঠাক ১৯ গজ। আমি যখন যা বানাই অতোটুকু কাটার জন্য যখনই কাপড়ে হাত দেই এক ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় যেনো আমার। মনে হয় ভেজা কাপড়। যেহেতু লম্বায় অনেক তাই সব একবারে ধোয়া সম্ভব না। আমি একদিন রোদে দিলাম কাপড়টা। কিন্তু কাপড়টা তবু যেনো ঠান্ডা! কিন্তু যে কাপড়টা তৈরি করা হয় তা ধুয়ে শুকানোর পর আর ঠান্ডা ভাবটা থাকে না। আমি ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম সেদিন যেদিন ১৯ গজ থেকে তিন গজ কাটলাম কুর্তি বানানোর জন্য। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমার সহকারী মালেকা যেনো আমাকে বলল,’খালা ১৯ গজ কাপড় ঠিক করে কাটেন!’ আমি হু বললাম শুধু যেনো। কিন্তু পিছনে ফিরে মালেকাকে দেখলাম না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা হলো সে সাদা কাপড়টা দিয়ে আমি ঠিকঠাক কোনো কিছুই যেনো বানিয়ে পরতে পারলাম না। কোনো না কোনো খুৎ রয়ে গেলো। ১৯ গজ কাপড়ের হিসেব যেনো আমি মিলাতে পারলাম না।

নোটঃ জীবনে রহস্যের যেমন শেষ নেই। গল্পে রাতের পরে যে ভোরের আলোর তীক্ষ্ণতা আমি বুঝিয়েছি তা হলো সত্য। অন্ধকার কেটে এক আলো আসেই। করোনাকালে সকলে ভালো থাকুন। সকলের জীবন মঙ্গলময় হোক।

,,রিতু জাহান,, রংপুর।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ