লকডাউনে আমরা আমজনতা

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৩ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ১২:১৮:৪৩অপরাহ্ন সমসাময়িক ১৮ মন্তব্য

আমজনতার ছোট মুখে বড় কথা মানায় না। কিংবা বললেও কারও কিছু যায় আসে না। তারপরও ছোট মুখ চুলকায় বেশী। তাই আমজনতার কলম উঠলেও প্রেমের গল্প বা কবিতাই সম্বল।

ফেসবুকে গেলেই দেখতে পাচ্ছি পুলিশ রিক্সা ভেঙ্গে দিয়েছে আর সে হাউমাউ করে কাঁদছে। আমজনতা আমরা হা- হুতাস করে বলছি- বেটা খচ্চর পুলিশ কতো খারাপ! গরীব মানুষও দেখে না।

পুলিশ ব্যাটা কত খারাপ এডভোকেটকে আটকিয়ে নানা প্রশ্ন করছে। তাকেও বেইজ্জত করেছে। ডাক্তার ম্যাডামের পাশ চেয়ে তো মহাবিপদে বেচারা। দেশশুদ্ধ লোক পুলিশের গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছি। অবশেষে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল পুলিশই খারাপ।

অথচ উন্নত দেশে ফাঁকা রাস্তার পাশে যদি কেউ প্রসাব করে।তখুনি সেটা সিসি ক্যামেরায় ধরা পরে যায়। অল্পসময় পরেই পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায় আমরা আমজনতার তখন বলি কি অসাধারণ পুলিশ পারফরমেন্স!

তারা তিনজনই মুক্তিযাদ্ধার সন্তান। চললো তিন শ্রেষ্ঠ  সন্তানের ঝগড়া, বাক-বিতন্ডা। কাকে ছেড়ে কে বড় হবে চলছে এই পাল্লা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে মাঝে মাঝে সিংহে সিংহে লড়াই দেখা যায়, ব্যাপারটা ঠিক তেমনি।

কেউ কেউ বলছে, এমন স্বনামধন্য ডাক্তারকে বেইজ্জত করা মোটেও ঠিক হয়নি। আসলেই ভদ্র মহিলা বাহবা পাবার যোগ্য মাশাআল্লাহ গলা। “হারামজাদা থেকে তুই মেডিকেল চাম্স পাস নাই বলেই পুলিশ হইছিস”- পর্যন্ত বলা শেষ। তারপরও আমরা ডাক্তারের পক্ষে। কারণ অলরেডি তিনি ম্যাজিষ্ট্রট কে খেয়ে ফেলেছেন। যদিও আমরা  দেখছি ম্যাজিষ্টেট বেচারা বেশ কবার সরি বললেন। তাতে কি? জামানা ক্ষমতার, ওসব ছোট-খাটো সরিতে কিছু হয় না। অবশ্য ভালোই হলো ঢাকা শহরের প্রচন্ড রোদে ডিউটি থেকে বেচারা রক্ষা পেল।

আমজনতা বলাবলি করছে, তিনজনই তো কোটায় চাকরী পেয়েছে এজন্যই এ অবস্থা। তাদের কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

একজন আমজনতার অতিব সত্য বাণী- “কোটাভিত্তিক ব্যবস্থা এসে যাদের যোগ্যতা  হয়ত নেই, তারাও বড় বড় পদে বসে পা দোলাচ্ছেন।”

রাস্তায় দাঁডিয়ে মহান পেশার মানুষদের এরকম একে অপরকে হুমকি দেয়া কিংবা আমি মুক্তিযোদধার সন্তান হিসেবে দাবী এগুলো কেমন যেন লজ্জাকর!  যাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছেন তাদের সম্মানকেই পারতপক্ষে ছোট করা হচ্ছে!

মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহন করেছিলেন কোনদিনই তারা কিছু আশা করে যুদ্ধে যাননি। কিংবা স্বপ্নেও ভাবেননি এমন করে তাদের সন্তানদের চাকুরী নামক সুবিধা দেয়া হবে। কিছু না বুঝে, না শুনেই, আশা না করেই তারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আজ অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন তারাও তাদের সন্তানরা সকল সুবিধা ভোগ করছে। হয়ত পরপারে গিয়ে আসল যোদ্ধারা এটা  দেখেও কষ্ট পাচ্ছেন।

আমরা এটা কিন্তু দেখছি না, জনগন ভিন্ন ভং ধরে, বেশভূষায়, ভূয়া পরিচয়ে, পাশের নাম করে বাহারী গাড়িতে, বিভিন্ন অযুহাতে কারণে- অকারণে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে কে আসল আর কে নকল তাদের সামাল দিতে। লোকজন সঠিক উত্তরও দিচ্ছে না। বেচারা একসময় সহ্যশক্তি হারিয়ে মেজাজী হয়ে ওঠছে। আমজনতা তখুনি তার গোষ্টী উদ্ধার করছে ভিড়েও করে।

আমাদের দেশে করোনার জন্য যেসব প্রস্তুতি থাকা দরকার অন্যান্য দেশের চেয়ে তার কিছুই নেই। শুধু সব ঠিক আছে এই গালগল্পই সার। আর রাষ্ট্র সমস্তটাই লকডাউনের নামে ভং ধরে, পুলিশের উপর ছেড়ে দিয়ে তামাশা দেখছে। সঠিক কোন নিয়ম নীতির মধ্যে রাস্তা চলাচলের বিষয়টিও পুলিশের কাছে নেই। কঠোর হলে সমালোচনা হচ্ছে আবার শিথিল হলে দায়িত্বহীনতা।

আমরা সবাই জানি করোনাকালীন এই দূসময়ে এই পেশার মানুষরা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে আছেন। গতবছর অনেক ডাক্তার ও পুলিশ মারা গেছেন। তাদের ত্যাগের জন্যই হয়ত আমরা কিছুটা হলেও শান্তিতে আছি। আগামী দিনগুলোতেও তাদেরকেই যোদ্ধা হিসেবে থাকতে হবে। অনেকেই বলছেন, একজন ডাক্তার যিনি সারারাত ডিউটি করে হয়ত ফিরছিলেন। ইগোতে লেগে তারও মাথা গরম। আবার কঠোর রোদে যিনি রাস্তায় ডিউটি করছেন তিনিও কম যান না। তবে আমরাও জানি কে কতটা রাত জাগে, আর কি করে।

ডাক্তার, পুলিশ, ম্যাজিষ্ট্রেট নিজের সম্মানীটুকু নিয়েই এবং জেনেবুঝেই নিজ নিজ কর্মে নিয়োজিত। তাদের স্ট্যাটাস, বিলাসবহুল জীবন যাপন তাদেরই। লকডাউনের জন্য গরীবরা না খেয়ে কাঁদছে। তাদের রিক্সা ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, মারধোর করা হচ্ছে শুধু নিয়ম ভঙ্গের জন্য। এ নিয়ম ও আইন যদি সবার জন্যই সমান হয় তাহলে কেন কোন ব্যক্তি বড় পরিচয়ের জন্য ছাড়া পাবে? কিংবা বলা হবে তাকে ছাড দেয়া উচিত ছিল। মানীর মানহানী হয়েছে, এটা উচিত হয়নি।

লকডাউনের এ সময় ঢাকাশহরে হঠাৎ অসংখ্য গাড়ির বহর যাতে করে অবাধে লোকজন চলছে। পুলিশ হিমশিম খেয়ে এখন ছাড দিয়ে ঢিলেঢালাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ তো তার বাবার না! করোনা বাড়লে বাড়ুক!

এই ছাড দেবার একটা মহান ব্যাপার আমাদের দেশে লক্ষ্যনীয়। কেউ মহান পেশার নামে, কেউ ক্ষমতায়, কেউ সুপারিশে, কেউ অসহায়ত্বর দোহাই দিয়ে সুবিধা আর ছাড নিতেই ব্যস্ত।

আমাদের ছোট্ট একটু দেশ আজ ছাড দিতে দিতেই এমন বেহাল দশায় পৌঁছেছে। সুবিধার আড়ালে আবডালে চলছে শুধু নিজেদের স্রার্থসিদ্ধি। আর আমরা আমজনতা সারাজীবন ঠকে ঠকে অভ্যস্ত। আমরা প্রতিবাদ বা কঠোর সমালোচনাও ভুলে গেছি কিংবা ভয় পাই। আরে ভাই কাউকে না কাউকে তো সাহসী হতে হবে। না হয় আমরা সাধারন আমজনতা তা বলে দেশ কি আমার নয়? চরম বিপর্যয়ে তো ফলভোগ আমাকেও করতে হবে। বরং আজকের সুবিধাভোগীরা কাল নিজেকে জমাবেন অন্য কোথাও! বিপদে থাকবো শুধু সাধারনরা।

উন্নত দেশগুলোতে আইন সবার জন্য সমান। আমরাও  তো উন্নত দেশে পরিনত হতে যাচ্ছি। তাই আমাদেরও উচিত সদাচরন করা ও শেখা। করোনা মহামারীতে কে ছোট, কে বড়,কার ক্ষমতা বেশী কার কম, কে দায়িত্ব বেশী পালন করছে কে কম এসব না প্রমাণ করে সবাইকে আইন মেনে চলাই কাম্য।

একজন দিনমজুর থেকে শুরু করে উদ্ধর্তন ব্যক্তি সবাই নিজ নিজ জায়গায় সম্মানের। একজন ডাক্তার কেন হেনস্তা হচ্ছেন  কিংবা গলাবাজ করছেন? একজন আইনজীবি কেন হেনস্তা হচ্ছেন? রিকসাঅলারা যতটুকু নয় তার চেয়েও বেশি কান্নাকাটি করে বুক ভাসাচ্ছেন? সবই লকডাউন মানিনা, নিয়ম মানি না এমন ইঙ্গিত। বাঙ্গালী নিয়ম ভেঙ্গে চলারই জাত। এমতাবস্তায়, নিম্ন থেকে উচ্চ প্রত্যেক লেভেলের মানুষের উচিত এই কঠিন মহামারীতে দেশের পাশে দাঁড়ানো। নিয়ম মাফিক চলাচল করে সরকারকে সহযোগিতা করা। তা না হলে আমরা কঠিন বিপদে পরতে যাচ্ছি।

নামমাত্র লকডাউন দিয়ে কোন কাজই হবে না। বিত্তবানরা ঠিকই তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। আর সাধারন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীই কেবল হুমকিতে। সুতরাং অযথা লকডাউনের নামে গরীবের পেটে লাথি আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বাচ্চাদের জীবন নষ্ট করে, রাস্তাঘাটে ক্ষমতার তামাশা করার দরকার কি? আর এভাবে চলবেই বা কতোদিন? হয় কঠোর লকডাউনসহ অন্যান্য  ব্যবস্থা নেয়া হোক, না হয় সব যা হয় হোক বলে ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়!!!

ছবি- নেট থেকে।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ