আপনি ১২ মিনিট লেট করে এসেছেন।
কথাটা শুনে রিস্টওয়াচের দিকে তাকালাম। ভাইবা বোর্ড। মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে চারজন। আর দুজন মহিলা, সুন্দরি না বলে স্মার্ট বলাই ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যখন ব্যাংকার হবো ভাবছি ; তখন বাবা মায়ের রাশভারি চেহারার কাছে চোখ নামিয়ে সিভি জমা দেয়ার ফলস্বরূপ আজকের ভাইবা। শ্রাবণের অঝর বৃষ্টি আর অনিচ্ছার কারণে দেরিটা ইচ্ছা করেই হলো।
নানা ধরণের প্রশ্ন করা শেষে, প্রশ্নের উপসংহারটা ছিলো, " এখানে কাজ করতে পারবেন তো? "
আমি তর্জনী মাথায় স্পর্শ করে বললাম, " কাজ তো আমি করবো না, করবে মাথা। "
ডঃ কামাল হোসেন যে কি বুঝলেন! বললেন, আপনি বাহিরে বসুন। কথা আছে। "
ওকে, স্যার।
সালাম দিয়ে বের হয়ে দেখি, আরও ৫ জন প্রার্থী! জীবনকে চমকে দেয়ার অপেক্ষায়! ভাবলাম, চা খেয়ে আসি।
আবার ডাক এলো। বসেন, মেহজাবীন।
ধন্যবাদ, স্যার ।
কেক খান।
" আজ কি আপনার জন্মদিন?"
উনি অবাক হয়ে বললেন, " বুঝলেন কি করে? "
বললাম, সিক্সথ সেন্স।
বাসায় কে কে আছে?
আমি, তিন ভাই বোন, মা বাবা।
বাসা থেকে আসতে কতক্ষণ লাগবে?
৮/১০ মিনিট।
প্রতিদিন শাড়ি পরে, সেজে গুজে স্মার্ট হয়ে আসবেন।
স্যার, আমি তো সাজতে পারিনা!
উনি হেসে বললেন, "ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। যাওয়ার সময় কো অর্ডিনেটরের সঙ্গে দেখা করে যাবেন। "
ধন্যবাদ দিয়ে, রুটিন নিয়ে বের হলাম। কাল ১১ টায় ক্লাস।
ইন্ট্রোডিউসিং করাতে ডিপার্টমেন্ট হেড স্যার সাথে আসলেন। ডিগ্রীর ইংলিশ ক্লাস।
নিজের পরিচয় সংক্ষেপে সেরে বললাম। ১২০ জন স্টুডেন্টস এর নাম মনে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ১১৫ থেকে ১২০ রোল নং এর নাম শুনবো আজ। ওরা দাঁড়িয়ে নিজেদের নাম ঠিকানা বললো। সেদিন Sentence and it's classification বুঝালাম।
মাকে গিয়ে বললাম, মা কিছু টাঙ্গাইল আর জর্জেট শাড়ি কেনা লাগবে। বাবা, সেদিনই দুটা শাড়ি কিনে আনলো।
পরেরদিন আসমানি জর্জেট শাড়ির সাথে রূপোর দুল, মালা কম্বিনেশন করে পরলাম।
অনার্স ফাস্ট ইয়ারের লিটারেচার ক্লাস নেয়ার জন্য রুমে ঢুকা মাত্রই একটা ছেলে দরজায় এসে বললো," মিস্, আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো, এটা আপনার জন্য। "
তাৎক্ষণিক ধন্যবাদ দিলাম। পরিচয় পর্ব শেষ করে, " Riders to the Sea " এর টাইটেল নিয়ে লেকচার দিলাম। সবার এ্যাটেনশন আমার দিকে, দেখে ভালো লাগলো। সবাই বেশ মনোযোগি। আর যে ছেলেটা ফুল দিয়েছিলো ওর নামটা জেনে ক্লাস শেষ করলাম। সপ্তাহে ওদের সাথে আমার দুদিন ক্লাস। মাহির ছেলেটা প্রথমদিনের মতো ফুল নিয়েই আসতো। ক্লাস না থাকলে গেটেই দেখা হতো।
গুড মর্নিং, ম্যাম!
ওহ্ মাহির, হাউ আ ইউ?
ভালো, মিস!
আপনি?
ভালো।
মিস, এটা আপনার জন্য। কিছু রংগনের থোকা।
ও থ্যাংকস, মাহির।
পরের দুদিন এতো বৃষ্টি যে চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে একাকার। ক্লাস সাসপেন্ড। বিকেলে কোচিং থেকে ফিরে শুনি, মাহির এসেছিলো আমার খোঁজে।
সন্ধ্যার কলিং বেল অযাচিতভাবে বেজে বর্ষার নির্বিঘ্ন ঘুমের বারোটা বাজালো। এ্যাসিসট্যান্ট এসে বললো, আপা, মাহির নামে একজন আসছে। বসতে বল। আমি আসছি।
কি খবর মাহির? এই বৃষ্টিতে?
মিস্! আপনাকে এই দুদিন না দেখে কেমন জানি লাগছিলো। কো অর্ডিনেটর স্যারের কাছে ঠিকানা নিয়ে চলে এসেছি। তার হাতে রজনীগন্ধা!
আচ্ছা! বসো। আর রজনীগন্ধার জন্য থ্যাংকস্! মাহির ভালো লাগলো, তোমাকে দেখে। কিন্তু বৃষ্টি বাদল! মা, চিন্তা করবেন।
কিন্তু মিস্। আমি মনোযোগ বসাতে পারছি না!
বিকেলের নাস্তা করিয়ে, ওকে বিদায় দিলাম।
মনে খটকা কাজ করছে।
পরের সোমবার ওদের ক্লাস। ঠিক ঐভাবে সে গেটে দাঁড়িয়ে। হাতে গিফট পেপারে মোড়ানো কিছু।
মিস্! আপনার জন্য। বাসায় ফিরে দেখি, একটা ডায়েরি। প্রথম পৃষ্ঠায় লিখা, " মিস্, মিস ইউ!"
কি করি? কাকে শেয়ার করি? নানা চিন্তা নিউরণের অলিগলি ছড়ালো। পরেরদিন আর্লি গেলাম। কো অর্ডিনেটরকে ফোনে বলেছিলাম। ওনার রুমে ঢুকেই দেখি, মাহিরও বসে।
কো অর্ডিনেটর বললো, মাহির, আমরা সবাই জানি, তুমি মিসকে খুব পছন্দ করো। কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে নানাজনে নানা কথা বলছে। উনি তো কলেজ ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। আমরা এ ব্যাপারে মিটিং করেছি।আমরা ওনাকে হারাতে চাচ্ছিনা। তুমি, নিশ্চয় সব বুঝতে পারছো?
মাহির শুধু মাথা নাড়লো।
পরেরদিন তাকে আর দেখলাম না। না রাস্তায়, না গেটে, না ক্যাম্পাসে। কাউকে জিজ্ঞেস না করে, শুধু খুঁজি।
একদিন ওর ক্লাসমেট হোমায়রা এসে আমাকে একটা খাম দিলো।
কৌতূহলী চোখে খুলে দেখি ------ " মিস, ভালোবাসাটা এমন কেনো? শহর ছেড়ে আমি সন্দীপ চলে এসেছি। তবে, আপনাকে ভোলা কঠিন। "
"Tears dry
But the pain drawns!"
৩২টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
আবেগে আপ্লুত হলাম।ভালো লাগল।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা আপু
সুরাইয়া পারভীন
হায় ভালোবাসা
কেনো তুমি এমন
চমৎকার লিখেছেন আপু
দারুণ লেগেছে
আরজু মুক্তা
আপু ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ইন্টারভিউ টা দারুন লেগেছে। তবে ছাত্রের ভালোবাসা টা হৃদয়ে গেঁথে গেল। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
আরজু মুক্তা
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন
ফয়জুল মহী
চমৎকার ভাবনায় মার্জিত লিখনী।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
ছাইরাছ হেলাল
“Tears dry
But the pain drawns!”
গল্পে এ লাইন দুটি পড়ে চমকে গেলাম,
কোথায় গিয়ে যেন স্পর্শ করেছে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই। শেষের লাইন দুটাই সারমর্ম।
ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক শুভেচ্ছা রইল মুক্তা আপু চমৎকার লেখেছেন———
আরজু মুক্তা
আপনাকে ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন
শামীম চৌধুরী
মানুষ শুরুতে গিচুই পারে না। পরিবেশ ও পরিস্থিতে আস্তে আস্তে সব শিখে যায়। যেমন আপনি এখন সাজুগুজু শিখে গেছেন। চমৎকার ইনিটারভিউ দিলেন। ভাল লাগলো।
আরজু মুক্তা
ঠিক বলেছেন ভাই। তবে আমি না গল্পের নায়িকা মেহজাবিন সাজুগুজু শিখে গেছে।
আর আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ইশ্ কি অসাধারণ লিখেছেন।কোথায় যেন বিঁধছে কাঁটার মত।
কিছু ভালোবাসা না যায় গ্রহন করা,না যায় ফেলা॥
অবোধ একটা কষ্ট বুকে বাসা বেঁধে থাকে।
শিক্ষক হওয়ারও অনেক যন্ত্রণা আছে।
ভালো লাগলো আপু। লিখতে থাকুন। পড়ে পড়ে ধন্য হই।
শুভ কামনা।।।।
আরজু মুক্তা
আপনি ভালোই ধরেছেন। সেজন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা
ইঞ্জা
প্রেম কোনো রীতিই মানেনা, যেমন স্কুলবেলায় ছবি নামের এক টিচারের প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকতাম, উনার আসা যাওয়ার পথ জুড়ে থাকতো আমার চোখ।
আপনার গল্প পড়ে সেই অনুভূতি ফিরে এলো আপু।
আরজু মুক্তা
বাহ! দিলাম তো স্মৃতিটাকে নাড়িয়ে।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা
সুপায়ন বড়ুয়া
ইন্টারভিউ টা দারুন লেগেছে আপু।
তবে ছাত্রের ভালোবাসা টা মনটা হলো ভারী।
ভালো থাকবেন শুভ কামনা
আরজু মুক্তা
দাদা ধন্যবাদ।
আপনিও ভালো থাকবেন
বন্যা লিপি
কলিজা ছুঁয়ে গেলো শেষ লাইনটা।একের পর এক শব্দগাঁথুনী শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে বাধ্য। অসম্ভব ভালো লাগলো @আরজু মুক্তা🌹🌷🌼🌺
আরজু মুক্তা
ভালোবাসা অবিরাম।
ভালো থাকবেন সবসময়
খাদিজাতুল কুবরা
দারুণ গল্প লিখেছেন আপু, অসম ভালোবাসা পরিণতি না পেলেও মন দাগ কাটে।
খুব ভালো লাগলো।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
আরজু মুক্তা
হা হা। ধন্যবাদ। কাটা দাগ নিয়েই চলতে হয়।
ভালো থাকবেন সবসময়
হালিম নজরুল
চমৎকার ভালবাসার গল্প। শুরুটা আমার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছে।
আরজু মুক্তা
ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময়
আকবর হোসেন রবিন
গল্পটা পড়ে কিছুক্ষণ হাসলাম। প্রথম কারণ, আমিও একবার এক সিনিয়র আপুর প্রেমে পড়েছিলাম। দ্বিতীয় কারণ, আমার বাড়িও সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপের ছেলেগুলো কি বেশি আবেগি হয়!
আপু, গল্প ভালো লেগেছে।
আরজু মুক্তা
আবেগি কিনা সেটা আপনি ভালো জানবেন। বাড়ি যেহেতু সন্দীপ।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা
তৌহিদ
কান্না শুকিয়ে যায়, বেদনারা রয়ে যায় মনের গহীনে। ভালোবাসার রেশ আসলে এমনই। চমৎকার লিখেছেন আপু।
আরজু মুক্তা
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা
মোঃ খুরশীদ আলম
ভাবছি আর ভাবছি………………………… কি বলি, কি বলা যায়।
আরজু মুক্তা
আপনার ভালো লেগেছে, এটাই আমার প্রাপ্তি।
শুভকামনা