চাকুরীর জন্য ছোটাছোটি করে মরছি, কোথাও চাকুরী পাচ্ছিনা, চাকুরী মানেই অসহ্য একটা ব্যাপার, গলায় টাই বেধে ছোটাছুটি করা, সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কি শীত আর কি গরম ইন করে কলারের বোতাম লাগিয়ে ফাইলে আকিবুকি করা, সব কিছুর প্রতি অনিচ্ছা সত্বেও আমাকে চাকুরী করতে হবে, গলায় টাই বাধা যে প্রাচিন কালের ভৃত্যের ছবি প্রদর্শন করে তা ভুলে গিয়েছে আধুনিক সমাজ, আগেকার দিনে ভৃত্য দের গলায় দড়ি বেধে রাখা হতো, চাকর চাকরামী করবে আর দড়ি ছিলো তার প্রতীক, সভ্য এ জগতে দড়ির বদলে কাপড় এসেছে, তাতে এসেছে হরেক রকম ডিজাইন কিন্তু সেটা যে আদিযুগের মানসিকতার পরিচয় বহন করে সেদিকে কে খেয়াল রাখবে? তীব্র অনিচ্ছা থাকা সত্বেও চাকুরী আমাকে করতেই হবে, বাবার অবস্থা ক্ষিন হয়ে আসছে, কিছুদিন পর রিটায়রমেন্ট, গতো কয়েকদিন যাবত বাবা এমনিতেই অসুস্থ, পেনশনের টাকা কবে পাবো কে জানে, বাবাকে তো আর চিকিতসার অভাবে বিছানায় ফেলে রাখা যাবেনা, ২০২১ সাল সব কিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে বাংলা, শুধু দুর্নীতি আর আইনে কোনো পরিবর্তন নেই, এখনো মুক্তিযোদ্বারা না খেয়ে ঘুমায়, হাতে গোনা কয়জন ই বা বেচে আছে, তাদের ও সম্মান আর ভালোবাসায় পূর্ণ করতে পারেনি নির্লজ্জ এ জাতী ।
শারমীন এর অফিসে একটা চাকুরি হয়ে গেলো আমার, শারমীন আমাকে এ ব্যাপারে সরবাত্বক সাহায্য করেছে, এমনকি আমাকে অফিসে হাসব্যান্ড বলেও পরিচয় দিয়েছে, মনে হচ্ছে চাকুরী টা করতে পারবোনা, অফিসের সকলেই বাকা চোখে তাকায় আমার পানে, শারমীন এইখানে কি কাজ করে সেটাও আমি জানিনা, তবে শারমীন এই অফিসেই চাকুরি করে, আমার কাজ খুব একটা না, এসিট্যান্স ডিরেক্টর, ফুল কোম্পানি নয়, কোম্পানির একটা শাখার দ্বায়িত্ব পালন করবো, কোম্পানির পোল্ট্রি ডিপার্টমেন্ট আমার কাজ, বেশ কিছুদিন যাবার পর আমার দিকে কলিগ দের বাকা চোখে তাকানোর কারণ জানতে পারলাম, শারমীন এই অফিসের কর্মচারী না, শারমীন এখানকার চেয়ারম্যান, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হলো কিছুই করার নেই! নিজেকে কেমন যেনো অসহায় লাগছে আমার কাছে, এখন বুঝতে পারছি আমি অফিসে লেট হলেও কেউ কিছু বলেনা কেনো? আমার টাই পরতে হয়না, অফিসের কোনো ফরমালিটি আমার মেনে চলা লাগেনা, শারমীন আমার অনীহার ব্যাপার গুলো জানত, আর তাছাড়া প্রথমেই এতো ভালো পোষ্ট আর এতো টাকা সেলারি!! এইখানে জয়েন করার আগে একটাই শর্ত ছিলো শারমীন আমার বউ না এই কথা আর কেউ জানবে না আমি আর শারমীন ছাড়া, নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে চাকুরী টা ছেড়ে দিতে হবে, বিব্রতকর একটা অবস্থা, শারমীন ও আর আগের মত নাই, আমার সাথে কথা খুব কম হয় ওর, আগে রাতের পর রাত কথা বলে পার হয়ে যেতো, কোনো প্রেম ছিলোনা, বন্ধুত্ব ছিলোনা, শারমীন আমায় কোন চোখে দেখে তাও জানিনা, তবে আমার চোখে খুনের নেশা, বাবা খুব একটা দিন বাচবে না, তার মৃত্যুর পর ই আমাকে এই ভ০য়ানক খেলা খেলতে হবে, কিন্তু ছেলে হিসেবে বাবার প্রতি করণিয় কর্তব্য টুকু পালন করতে হলে চাকুরী ছাড়া যাবেনা, কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা আমি , নিজের অজান্তেই শারমীন কে ফোন দিলাম, ওর সাথে দেখা করতে চাই বলেছি, ও বলেছে নেক্সট ফ্রাইডে দেখা করবে, আজ সবে শনিবার , আগামী একসপ্তাহ আমাকে কঠিন পরিক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হবে, প্রশ্ন গুলো নিজেকেই করতে হবে, তার সাথে উত্তর টা নিজের ই দিতে হবে ।
প্রতিটা দিনের সাথে আমি অভ্যাস্ত হয়ে পড়ছি নশ্বর এ দুনিয়ার বুকে, দিন দিন চাকুড়ি ছেরে দেবার অনীহা ক্রমশ বাড়ছে, চাকুরী ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা আমার, বরং পরপর গত দু রাত শারমীন কে বউ রুপে স্বপ্নে দেখেছি, আজ বৃহস্পতি বার, অফিস থেকে একটু তারাতারী বের হয়েছি, পকেটের অবস্থাও বেশী একটা ভালোনা, অফিস থেকে নেমেই সোজা ডাচ বাংলা বুথ, শেষ সম্বল টুকু উঠিয়েই সোজা বসুন্ধরা এলাম, গিফট কিনবো একটা শারমীনের জন্য, কাল চাকুরীর ব্যাপার টা ঘুড়িয়ে নিবো ভেবেছি চাকুরী টা প্রয়োজন ছেড়ে দেওয়াটা নেহাত বোকামি, শারমীনের জন্য কি কিনবো ভেবে পাচ্ছিনা, আচ্ছা শারমীন কে কি একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যায় ওর কি পছন্দ? নাহ ব্যাপার টা খারাপ হবে, আজ জেনে নিয়ে কাল গিফট করা ঠিক হবেনা, শারমীন আমার পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার গুলো জেনে নিয়েছে, কিন্তু আমি হাদারাম প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন টাও করিনি তোমার কি ভালো লাগে, আমি একটা বড্ড উন্মাদ এটা বুঝতে আর আমার বাকী নাই, গত কয়েকটা বছর একা একা থাকতে থাকতে কতটা ছিটকে পড়েছি তা শুধুমাত্র আমি জানি, সমাজের সাথে তাল মেলানো বড্ড কষ্টের, একটা পিঙ্ককালারের পুতুল কিনে নিলাম, আমি এর আগে কখনো এমন অদ্ভুত পুতুল দেখিনাই, বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম জানিনা, ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো আমার, শারমীনের ফোন, হ্যালো কেমন আছেন ?
ভালো কি খবর তুমি কেমন আছো?
ভালো
তা এতো রাতে কি মনে করে?
কেনো অপরাধ হলো বুঝি?
মাহ মানে তুমি তো আমাকে রাতে কথা বলবানা বলেছো তাই আর কি
ও আচ্ছা, না মানে আপনার তো অফিসে যেতে সকাল বেলা উঠতে হয়, রাতে ঘুম কম হলে সকালে উঠতে কষ্ট হবে, আর তাছাড়া ঘুম ভালো না হলে কাজে মন বসবে না, এভারেজে ব্যাপার গুলো ভালো হবেনা তাই
ওহ আচ্ছা , তুমি তো অনেক বুঝো
হ্যা বুঝতে হয়, না বুঝলে কেমনে হবে, যাই হোক দিন কাল কেমন চলছে স্যার?
ভালোই যাচ্ছে আর কি, তবে তোমায় খুব মিস করি
কেনো ভাইবারে নক দিলেই তো পারেন
আমার কাছে ভাইবারে নক দেওয়ার মত ফোন নাই
২০২১ সালে দাঁড়িয়ে এসব কথা মানায় না যুবক
আমি জানি কিন্তু সেটাই সত্যি
হুম বুঝেছি, আচ্ছা কাল কখন দেখা হচ্ছে?
কখন করতে পারবে বা করতে চাও?
আপনার সময় ই আমার সময় স্যার কেননা আপনি এখন অনেক বিজি, চাকুরী করেন
আচ্ছা বিকাল ৫ টায়, লেকরোড
ওকে বায়
বায় বলে ফোন টা রাখলাম আমি, গতো ১৫ দিনের একটা ভাবনার ভার থেকে মুক্ত, শারমীন আমার কাজের জন্য সেক্রিফাইস করছে নিজেকে, তা ছাড়া অবিবাহিত বয়স্ক একটা মেয়ে একটা অবিবাহিত ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে আনন্দ পাবে সেটাই স্বাভাবিক, শারমিনের ফেসবুক টাইমলাইন ঘাটলাম, এবাউট দেখে আমি নিজেই স্তম্বিত, শারমীন আমার ৫ বছরের বড়!!! কোথাও যেনো বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম, সেটা হৃদয়ে না মস্তিস্কে তা বুঝে উঠতে পারছিনা, যদিও মানুষের মন বলতে কিছু নাই, সবই ব্রেনের কারসাজী, আপনি যখন ব্যাথা পাবেন তখন শরীরের আক্রান্ত অংশ ব্রেনে সিগন্যাল পাঠাবে আপনি বিপদ্গ্রস্থ সেটাই ব্যাথা, সুখে থাকার ব্যাপার টাও একইরকম, আমি কি শারমীণের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি, নাহ কোটিপতি বাবার দুলালির সাথে রাস্তার যাযাবর কিংবা মাস্তান দের মিল শুধু বাংলা সিনেমাতেই সম্ভব, জীবন টা বাংলা সিনেমা নয় ।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ