যাযাবরের ডায়রী ৪

হৃদয়ের স্পন্দন ২৫ অক্টোবর ২০১৪, শনিবার, ০৮:৪২:২৫অপরাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য

আরো বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো ক্রাচের সাহায্য ছাড়া এখনো হাটতে পারিনা আমি, আমার বা পায়ের মেরুদন্ড, আমার হাটুর বাটি, আমি এটাকে মেরুদন্ড নামে কেনো বলছি আমি জানিনা, তবে জানি মেরুদন্ড ছাড়া যেমন মানুষ সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনা; আমি বাটি ছাড়া পারবোনা, তাই হয়তো এটাকেই মেরুদন্ড বলতে শিখেছি, এটাকে অন্য কিছু একটা  বলে, এর একটা বৈজ্ঞানিক আরেকটা ডাক্তারি নাম আছে, আমার দুটোই মুখস্থ ছিলো, কিন্তু মনে করতে পারছি না, আমার নিউরন কি তবে শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে? শুনেছিলাম এক টান গাজায় নাকি ১০ হাজার নিউরন নষ্ট হয়ে যায়, আমার না কারোই জানা নাই মাথায় ঠিক কি পরিমান নিউরন রয়েছে স্রষ্টা ছাড়া, তেমনি খোদা ছাড়া কেউ বলতে পারেনা জীবনে কত কেজি গাজা খেয়েছি, এক কেজি গাজায় কয়টা সিগেরেট হয়, আর আমি সাধারনত এক ফিল্টার গাজায় ৬ টা কম হলে আর বেষি হলে ৮ টা টান দেই, আমার বন্ধুরা না হলেও ১২ টা , সে হিসেবে কত হাজার নিউরন বা লক্ষ কিংবা কোটি আমি নষ্ট করেছি জানিনা আমি।  আজ সকালে  নদী ফোন করেছিলো,  ফোন করেই কোনো ভালো কথা নাই কিরে গাজাখোর সোজা হয়ে হাটতে পারবি তো? নাকি সারাজীবন পা টেনে হাটাহাটি করবি, লুলা একটা!! আমার খুব খারাপ লেগেছে ও আমাকে গাজাখোর বলায়, গাজা যারা খায় তারা খেতে জানে কিন্তু গাজাখোর কথাটা সহ্য করতে পারেনা, আমি পারতাম কিন্তু আজ আর পারছিনা, আমার পারার কারণ ছিলো, শুধু যারা আমার সাথে গাজা খেতো তারা দেখলেই বলতে গাজার গুরু গাইঞ্জাখোর এসেছে, খুব সুন্দর করে বানাবে আজ, সে কথাটা প্রশংসা ছিলো, যদিও অন্যদের চোখে নির্মম খারাপ বাস্তবতা, কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম আমি এখনো জানিনা নদীর উপর আমি কেনো রাগ হয়েছি, আমাকে গাজাখোর বলায় নাকি লুলা বলায়। আমার বাল্য বান্ধবী নদী!!!!!!! আমাকে ভালোবেসেছিলো , পাত্তা দেইনি ভুল করেছি আমি বড্ড বড় ভুল।

২৬/৬/২০২০

আজ আমার পায়ের ব্যান্ডেজ খুলবে, আমি সকাল বেলায় মেডিকেল চলে এসেছি, আমাকে এইখানে তিন দিন থাকতে হবে সেটা আগে জানলে তিনদিন পরেই আসতাম তাতে আরো তিন দিন সময় বেড়ে যেতো, প্রথম দিন কেটে গেলো রাতে ঘুম হয়না আমার, ডাক্তার কে বলেছি তিনি ঘুমের  ট্যাবলেত দিলেন আমায়, আমি ঘুমিয়ে গেলাম, এইভাবে তিনদিনের জায়গায় আমাকে পর্যবেক্ষণ করা হলো এক সপ্তাহ, সেদিন রাতে আর আমায় ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়নি, পরদিন সকালে আমার পায়ের ব্যান্ডেজ কাটা হবে তাই, জানিনা এটা কোন ধরনের ফর্মুলা যাই হোক সেদিন রাতেই এক আচানক কান্ড ঘটে গেলো আমার সাথে, আমি কি করে যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, যদিও গাজা অথবা ঘুমের ট্যাবলেট ছাড়া আমার ঘুম হবার কথা না, আনুমানিক রাত তিন টা, আমার প্রসাবের বেগ পেলো আমি জেগে উঠলাম, হাতে বাড়িয়ে দিলাম মাথার ডান পাশে টেবিলের সাথে, নাহ হতাশ হলাম আমি , আমার ক্রাচ নাই, তবে কি আমার পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে? তাকালাম পায়ের দিকে নাহ ব্যান্ডেজ ব্যান্ডেজের জায়গায় আছে, তাহলে আমার ক্রাচ কোথায়? বাবা কি সরিয়ে রেখেছেন? আশে পাশে তাকালাম নাহ বাবা নেই কোথাও, ওহ আজ তো বাবার থাকার কথাও না, নার্স টেবিলে একজন শাড়ি পরা মেয়ে বসে আছে, সবুজ শাড়ি উনি কি নার্স না ডাক্তার ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা, গায়ে কোনো সাদা পোষাক ও নাই, ভালো করে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম টেবিলের নিচ দিয়ে ষ্টেথোসকোপের তার ঝুলছে, উনি ডাক্তার না নার্স আমি জানিনা তবে মেডিকেলের ই একজন এতে তো আর সন্দেহের অবকাশ নাই, তাকে ডাকব কিনা ভাবছি, যদিও একটা মানুষ ঝিমুচ্ছে তাকে ডাকতে বিবেকে বাধছিলো আমার, কিন্তু না ডেকেও উপায় নাই, এই যে শুনছেন ? মেয়েটি তাকালো আমার দিকে, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, একে কোথায় যেনো দেখেছই আমি, খুব পরিচিত আমার, নিউরনের অবক্ষয়ে হয়তো চিনতে পারছিনা, ব্যাপার না উঠে আমার দিকেই আসছে, নিশ্চয় সেই কিছু বলবে আর তাতে তার পরিচয় পাবো আমি, ধীর ধীর পায় সে যতই এগিয়ে আসছে ততই ঘাবড়ে যাচ্ছি আমি, যেনো বুকের ভিতর হাতুড়ী নয় ড্রাম পিটাচ্ছে কেউ একজন,  ধীর পায় সে এগিয়ে এলো কিন্তু আমি তাকে চিনতে পারছিনা, সে আসল ঠিক আমার শিয়রের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে,  মৃদু কণথে জানতে চাইলো আমাকে ডেকেছেন , আমি বললাম হ্যা, খেয়াল করলাম তার গলায় ষ্টেথোস্কোপ নেই, টেবিলের দিকে তাকালাম ষ্টেথেসকোপ টি  টেবিলেই ঝোলানো আছে, তার মানে উনি ডাক্তার নন, নার্স ও না, নিচু হয়ে বসে ছিলেন বিধায় ভেবেছিলাম উনি ডাক্তার, আবার হলে হতেও পারেন, ঠিক বলা যাচ্ছেনা আমি তার চুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম, তার গায়ের বডী স্প্রের গন্ধ ও পাচ্ছিলাম, সেটা কি বডী স্প্রে নাকি তার নিজস্ব গন্ধ আমি জানিনা, আমি কখনই পর নারীর কাছাকাছি হইনি যখন আমি বুঝেছি নারী পুরুষের পার্থক্য, যাইনি বলাটা ভুল হবে যাওয়ার সুযোগ হয়নি আমার, আমি মাতাল হয়ে পড়ছিলাম, অদ্ভুত এক নীরবতা সাড়া হাসপাতাল জুড়ে, আমি ঘোড়ে পরেছি এমন সময় নীরবতা ভেঙ্গে সে জানতে চাইলো কেনো ডেকেছেন বলবেন? আমার ক্রাচ টা দেখেছেন? বলেই কেমন যেন কন্ঠ টা অচেনা লাগল আমার এটা কি আমার স্বরধ্বনি? আমি  কি কথা টা বললাম নাকি অন্য কেউ? আর ভাবার সময় হয়নি আমার উনি জানতে চাইলেন ক্রাচ বলতে কি বুঝিয়েছি, উনি বুঝেন নি আমি আসলে পঙ্গুত্ব বরন করতে শুরু করেছি, আগামী কাল আমি চিরতরেও পঙ্গু হয়ে যেতে পারি, তারপর উনাকে বললাম ক্রাচ কি। উনি খুজে পেলেন না , জানতে চাইলেন আমি বেড থেকে নামতে চাচ্ছি কিনা? লজ্জা লাগছিলো প্রচুর তারপরেও বললাম ওয়াশ রুমে যাবো, সে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে লাগল, আমার মনে হলো আমি সুস্থ আছি, শুধু সে ধরে নিয়ে যাবে বলেই ক্রাচ খুজেছিলাম আর কিছুনা !!!!!!

ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম এটাই সেই মেয়ে , ওর নাম শারমিন, আমার পাশের ছাদে উনি দাঁড়িয়ে থাকতেন সিগেরেট খেতেন

কথা চলতেই লাগল সে রাতে ফোন নাম্বার বিনিময় হলো যদিও আমি আমার শিকার কাছে পাবার আনন্দ কিংবা কোনো সুন্দরি রমনির সঙ্গ  পাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিলাম না, আমাকে গ্রাস করেছিলো আমার লুলা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, যদি সত্যি পঙ্গু হয়ে যায় আমার পক্ষে ফাসিতে ঝোলা সম্ভব হবেনা, দোকানে গেলে বিষ পাবোনা, ফার্মাসিস্ট দেখেই বুঝে যাবে পঙ্গুত্বের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে বিষ নিতে এসেছি আমায় দেবেনা, তখন একটাই রাস্তা থাকবে ছুড়ি দিয়ে আত্বহত্যা করা, কিন্তু সে সাহস আমার নাই, ছুড়ি দিয়ে আত্বহত্যা করতে হলে আগে কাউকে মেরে রক্ত দেখে সাহস অর্জন করতে হবে আমায়, নিজের হাত কেটে রক্ত মিশিয়ে গাজা খাওয়ার রক্তের অভিজ্ঞতা সে তুলনায় অপ্রতুল, আর তখন খুন করাও কষ্টের কেনোনা একজন বিকলাঙ্গ খুব সহজেই কাউকে খুন করতে পারবেনা, আর মেয়েটার সাথে প্রেম নামক ছলনা করাও বিভীষিকা হবে আমার জন্য একজন পঙ্গুর সাথে শারমিনের মত রুপসি কেনো মেয়ে পঙ্গু কাউকে স্বামি হিসেবে মানবে না, মেয়েরা খুব দ্রুতই প্রেমে পড়ে যায়, একজন ছেলে যখন চিন্তা করে প্রেম তো করছি বিয়েটা কি করে করবো তখন একটা মেয়ে চিন্তা করে প্রেম তো করছি আমার সন্তান টা দেখতে কার মত হবে ওর না আমার? ভাবতে ভাবতেই সে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ