ছাদের কার্নিশে একা একা হাটছি, ইচ্ছে করছে রেলিঙের উপর দিয়ে হাটি, আমার তাই করা উচিৎ, এতে আমার দুইটা কাজ হবে, এক হয় আমি বেচে যাবো, জীবনে কোনো কাজ না জানলেও মানুষকে সার্কাস টাইপ অদ্ভুত একা খেলা দেখিয়ে কিছু আয় ইনকাম করা যাবে, নয়তো মরে যাবো, উকি দিয়ে ছাদ থেকে নিচে তাকালাম, সাম্ভাব্য উচ্চতা ১১০ ফুট, এখান থেকে পড়লে কি কি হতে পারে? নাও মরতে পারি, হয়তো এবার পঙ্গু হয়েই বাচতে হবে।
শারমিন যে কোন টাতে দাঁড়ায় সেখানে আজ নতুন অতিথি, শারমিন নেই, মেয়েটা হয়তো শারমিনের ছোটো বোন, ডেকে জিজ্ঞাসা করবো নাকি কেমন আছো? তোমার বোনের কি অবস্থা? যদি শারমিনের বোন না হয়? কেলেঙ্কারি ব্যাপার হয়ে যাবে, না ডাকার সিশ্বান্ত নিলাম, শারমিন  কে একটা ফোন দেওয়া যায়, সেদিন যখন আমার পায়ের প্লাষ্টার খুলে মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিলো আমার পাশে, ওর মা তখন অপারেশন কেবিনে, ডাক্তার আমার পায়ের প্লাষ্টার খুলছে সেদিকে আমার নজর নেই, আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে, সেটা কি ভালোবেসে তাকিয়েছিলাম? নাহ কেননা আজ ১১ দিন আমি বাসায় ফিরে এসেছি এর মাঝে শারমিনের কথা মাথায় আসেনি আমার, আজ অন্য একটি মেয়েকে দেখে ওর কথা মনে পড়ে গেলো, যাই হোক অন্তত ভদ্রতা করে হলেও মেয়েটিকে ফোন দেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমার যে মোবাইল নাই? ২০২০ শালে দাড়িয়েও একটা মানুষ ফোন ইউস করেনা বাহ কি আজিব এ দুনিয়া, শারমিন আমার ফেসবুক আকাউন্ট লিঙ্ক নিয়েছে, কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? লাষ্ট লগ ইন করেছিলাম ২০১৫ শালের ২৬ সেপ্টেম্বর। নাহ আজ বাবার ফোন থেকে শারমিন কে ফোন দিবো, ঘরে ফিরে এলাম, গাজা খাওয়ার অভ্যাস টা পুরোই দমে গেছে, যদিও একটা ষ্টিক খেতে ইচ্ছে করছে, খাওয়া যাবেনা, সেই গাজাপাগল আমি কাল এক টান গাজা খেয়ে মাতাল হয়ে পড়েছিলাম, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি, পিনিক নামক প্যাড়ার থেকে মুক্তি চাই, গাজা খেলে মায়া বাড়ে, পৃথিবী টা কে সুন্দর মনে হয়, শুধু গাজা না মনে হয় যে কোনো ধরনের নেশা করলেই এমন টা হয়, এক দিক দিয়ে পৃথিবীর মায়া বাড়ায় অন্য দিকে টেনে নিয়ে মরণের দিকে, নিজের অজান্তে, কি অদ্ভুত কি অদ্ভুত!!!!!

বাবার নোটবুক টা হাতে নিলাম স্কাইপ সফটওয়ার টা আছে কিনা দেখতে হবে, নাহ পেলাম না, ভাইবার ইন্সটল দেওয়া, ওটাতেই হবে মানিব্যাগ খুলে শারমিনের নাম্বার টা নিলাম, দ্রুতই সেব করে নিলাম, শারমিন অনলাইনে নাই, বাবার আইডিতেই লগ ইন করা ছিলো, বাবা ভাইবার আউট কিছু ক্রেডিট কিনে রেখেছে, দেরী না করে শারমিন কে ফোন দিলাম,  ফোন বেজেই চলল ফোন রিসিভ হয়নি, আবার দিলাম ফোন বাজছে আর আমি ভাবছি ফোন কেটে দিবো কিনা, কিন্তু ও যদি পরে ফোন দেয় নির্ঘাত বাবার হাতে পড়বে, আর বাবা চান্স পেয়ে যাবে, আমাকে বিয়ে করানোর চেষ্টা করবে এর মাঝেই মিষ্টি রিনঝিনে কন্ঠ হ্যালো
শারমিন বলছেন?
না আপু ঘুমাচ্ছে, কে আপনি? কিছু মনে না করলে পরে ফোন দিন, আপু সিক আপনার কি খুব দরকার? আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি,  আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই শারমিন কে ডাকতে গেলো মেয়েটা, যদি আমাকে  বলতে দিত কি বলতাম? মেয়েটার নাম জেনে নিতাম, বাবা কি করে, আন্টি কেমন আছে এইসব? তারপর শারমিন কে একটা চমক দেওয়া যেতো, আচ্ছা তোমার বাবার অফিস অইখানে না? সে এই পোষ্টে না আঙ্কেল কি বাসায় এসেছে? কি বলো তার তো এই টাইমে ছুটি হয়ে যায়, কি অদ্ভুত মানুষের জীবন, যার সাথে একদিন কথা হয়েছে আর তাকে আমি আপনি করে বলেছি কল্পনার রাজ্যের তার সাথে তুমি করে কথা বলছি সত্যি সেলুকাস এই দুনিয়া
হ্যালো কে বলছেন ? ঘুম জড়ানো একটা কন্ঠ শুনলাম আমি, মনে হচ্ছে বহুদিনের চেনা এই স্বর, ফোন টা রেখে দিবো কিনা ভাবছি আবার শারমিন বলে উঠলো কে বলছেন প্লিজ
আমি
আমি কে? আপনার নাম টা বলুন ক্লান্ত আমি, দয়া করে পরিচয় দিন
লুলা! নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো কথাটা?
আপনি কি হুমায়নের হিমু হতে চাচ্ছেন? দেখুন রহস্য করা বাদ দিন এসব আমার একদম পছন্দ না, ওসব রুপার সাথে করবেন
কে আপনি বলবেন নাকি ফোন কেটে দিব?
সরি শারমিন মুখ ফসকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে, আমি তোমাদের বাসার পাশে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছেলেটা, আমাদের হাসপাতালে কথা হয়েছিলো চিনতে পেরেছেন?
কেমন যেনো হতচ্ছাড়া হয়ে গেলাম, এক লাইনেই তুমি আর আপনি করে বলছি আমি
ও আচ্ছা হ্যা কেমন আছেন বলুন, আপনার নাম্বার দিলেন না তো, ফেসবুক আইডিও অনেক খুজেছি পাইনি, এই নামে অনেক ছবি পাই কিন্তু কোথাও আপনার ছবির মত না, আমি মনে হয় আপনার চেহাড়া ভুলে গেছি হয়তো ছবি দেওয়া ছিলো
না আমার কোনো ছবি দেয়া নাই
কেমন আছেন আপনি? আন্টি কেমন আছে?
ওপাশ থেকে বেশ কিছুক্ষন কোনো সারাশব্দ পেলাম না, বুঝলাম অঘটনের আর বাকী নেই, নিজের ভিতর অনুশোচনা বোধ কাজ করতে লাগলো,
হ্যালো শুনুন আমার নিজের কোনো ফোন নাই, আমি বাবার ফোন থেকে ফোন করেছি, আমি দু একদিনের ভিতর ফোন নিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো রাখি
স্বার্থপরের মত ফোন রেখে দিলাম আমি, ওপাশে আমার কথাগুলো সে শুনেছে কিনা আমি জানিনা, নোটবুকের চার্জ ও শেষ আজ আর ফেসবুকে লগ ইন করা হবেনা, আর করেই বা কি লাভ? আমার তো কেউ নেই সেখানে,
বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে একটা ফোন কিনবো এই মনস্তাপ করেই দিন শেষ হলো আমার, কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি বাবা এসেছেন তার হাতে একটা ফুলের তোড়া, মাথা ঘোলাচ্ছে, কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না, ঘুমাবো বলেই আমি আমার ঘরে চলে এলাম, বাবা ফুলের তোড়া রেখে গেলেন আমার খাটের পাশে সাইড বক্সের উপরে, ফুল থেকে কোনো সুভাস আসছিলো না, ফুল গুলো হয়তো কাগজ কিংবা প্লাষ্টিকের, দিনের সাথে যুগের সাথে সময় পাল্টাচ্ছে নিজের মত করে, ভালোবাসা যেখানে ঠুনকো সেখানে ফুল প্রাকৃতিক কিনা তা ভেবে দেখা নিঃসন্দেহে বোকামি,
আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না  দেবী আফ্রেদীতি এসেছিলো স্বপ্নের মাঝে তাকে দেখতেই ঘুমিয়ে ছিলাম আনমনে

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ