শারমীনের সাথে আজ দেখা হবার কথা রয়েছে, দিন যেনো কাটছেই না, সাধারনত সকাল ৮ টার আগে আমার ঘুম ভাঙ্গেনা, আজ ফজর ওয়াক্তেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো, দেখা হবে বিকাল ৫ টায়, অনেক সময় রয়েছে হাতে, বাগানের অদিক টাতে আমার যাওয়া আসা একদম ই কম, তবু আজ গেলাম, নিজ হাতে পানি দিলাম । খেয়াল করলাম পানি দেয়ার সময় কেমন যেনো নষ্টালজিয়া হয়ে যাচ্ছিলাম, আজ বাগান ঘুড়ে ঘুড়ে গান গাইলাম, একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিলো যেমন টা লাষ্ট ৮ বছর আগে লাগত, বাবা কোনো কিছুই বাদ দেন নি, এই বুড়ো বয়সে নিজ হাতেই সব করছেন, প্রত্যহ ফজরের নামাজ পড়ে তিনি বাগানে আসেন, গাছ পরিচর্যা করেন, আগাছা তোলেন, পানি দেন কেমন যেনো এক অপরাধবোধে ডুবে যাচ্ছি আমি, প্রথম যেদিন বাগান করার সিধ্বান্ত নেই তার পরের দিন ভিবিন্ন ধরনের গাছগাছালি কিনে আনি, বাবা সেসব একদম পছন্দ করেন নি, কিন্তু হটাথ আমি ঘর বন্দী হলাম, সারাদিন বাইরে ঘোড়াঘুড়ি আর বাসায় এলে দরজা বন্ধ করে থাকা, ভুলেই আগেলাম আমার একটা দুনিয়া আছে, ব্যাক্তিগত দুনিয়া, আমার বাগান, আমার বন্ধুরা হুট করেই সব বন্ধ করে দিলাম, বাবা বুঝতে পেরেছিলেন আমার পরিবর্তন হবার কারণ, তাই হয়তো আমার ভালো লাগা গুলো তিনি ধরে রেখেছেন, হয়তো বাবা বিশ্বাস করতেন আমি একদিন সব ছেড়ে ফিরবো, কিন্তু বাবা কি জানেন আমি সেই সময়ে স্ইশ্বান্ত নিয়ে ফেলেছি, আমি এই ধরনীর মায়া ত্যাগ করেছি? আমি চলে গেলে বাবার কি হবে সেটা ভেবে চোখে এক ফোটা জল চলে এলো, অনেক দিন বাবাকে হাসিখুশি দেখিনি, খুব একটা প্রয়োজন না হলে কখনোই বাবার সাথে আমি কথা বলতাম না, সে হিসেবে তাকে আমি কথা বলতেও খুব দেখিনাই, কিন্তু গত কয়েকদিন বাবা বেশ ফুড়ফুড়ে মেজাজে আছেন, আমরা একসাথে রাতের খাবার খাই, নাহ যে কয়েকটা দিন আছি বাবার সাথে সকালের নাস্তা টাও করতে হবে, আমি চলে গেলে তিনি একা হয়ে যাবেন, সাথে এক মাত্র পুত্র মৃত্যুর শোক তাকে কাতর করে ফেলবে তার থেকে কোনো ব্যাপার না জানিয়ে যতদিন তাকে সুখে রাখা যায়। ছেলে হিসেবে এর বেশ কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না, বেচে থাকলে হয়তো বাবার শেষ দিন টা পর্যন্ত তার হাত ধরে রাখতাম, মানুষ দু বার শিশুকালে আরেকবার যৌবনে প্রবেশ করে, রোসলিন ভেনারি বলেছিলেন আমার জন্ম যখন হয়েছিলো তখন আমি শিশু হয়েছিলাম, ঠিক যেইভাবে আমি শিশুকাল থেকে আমার যৌবনে প্রবেশ করেছিলাম ঠিক সেইভাবেই আবার শিশুকালে ফিরে যাচ্ছি, বয়স বলতে কোনো কিছু আমার জীবনে নাই, কেননা আমার সন্তানেরা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে, তারা কখনই আমার হাত ছেড়ে যাবেনা, বাবা হয়তো রোসলিন ভেনারির মত সোভাগ্যবান না, তাকে শিশুকাল যৌবনকাল এবং মৃত্যুর আগে বয়স্ককাল পার হয়ে মরতে হবে, খুব আফসোস লাগছে বাবার জন্য, কিন্তু কি আর করা, আমি যে আত্বঘাতি শুধু না তার আগে খুনি হবো , বাবা হয়তো আমার আত্বহত্যা মেনে নিতে পারবেন কিন্তু নামের আগে খুনি শব্দটি মেনে নিতে পারবেন না
হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম, সময় দুপুর ১টা ২৫ মিনিট। গোসোল টা করে নিতে হবে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগেরেট ধরিয়ে গোসোলের কথা ভাবছিলাম, এমন সময় কলিং বেলের শব্দ, সিগেরেট টা ফেলে দিবো কিজনা ভাবছি এই সময় তো বাবার আসার কথা না, অন্য কেউ ও আসবেনা, এই বাড়িতে গত ৬ বছরে আমি আর বাবা ছাড়া কেউ প্রবেশ করেনি, অন্তত আমার জানা মতে। বাবা আসলো কিনা, সিগেরেট টা ফেলে দিলাম আমি, বাসায় কোনো এয়ার ফ্রেশনার নাই, অগ্যতা বডি স্প্রে টা গায়ে না দিয়ে রুমের চারপাশে স্প্রে করে নিলাম একবার, ফ্যান ও ছেড়ে দিলাম, শীতের দিন, কেমন যেনো কেপে উঠলাম, নাহ তবে শারীরিক ভাবে আমি সুস্থ হতে চলেছি, শেষ কবে এমন শীতের ছোয়া পেয়েছিলাম ঠিক মনে করতে পারছিনা, অদ্ভুত এ শহর, আপনি ঋতুকালীন দেশে থেকেও যখন শীতের কিংবা গরমের ছোয়া পাবেন না তখন দেশ উন্নত হোক আর না হোক আপনার জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে এ কথা নিসন্দেহে বলা যায়
বিকাল ৫টা রমনা উদ্যান প্রকান্ড বট গাছের নিচে আমি বসে আছি, হাতে বেনসন এন্ড হ্যাজেস, এই সেই বটগাছ যেখানে প্রতি পহেলা বৈশাখে গান হয়, মেলার প্রানকেন্দ্র হয়, আমি এখনো মেলার আমেজ মনে নিয়ে বসে আছি একটু পর শারমীন আসবে, এই মেয়েটা আসার জন্য আমি অপেক্ষা করে আছি, আমার মনে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে, কিন্তু কি ভাবে? যাযাবরের মনে তো এরকম সুখ আসেনা আজ অনেকদিন তবে কি আমি প্রেমে পড়লাম!!! এসব ছাই পাশ ভাবতে ভাবতেই আরেকটা সিগেরেট ধরিয়ে নিলাম আমি মনের অজান্তে, যদিও শারমীন জানে আমি সিগেরেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, একটা মেয়েকে এভাবে মিথ্যা বলতে আমার খারাপ লাগেনি, এখনো লাগছেনা, কিন্তু শারমীন যদি হাতে নাতে ধরে ফেলে তবে যে মিথ্যুক উপাশি পাবো তার জন্য একটা বিষাধ কাজ করছে মনের ভিতর, সিগেরেট টা ফেলে দিতে যাবো এমন সময় দেখি শারমীন আমার সামনে মুচকি মুচকি হাসছে, নীল শাড়ি পড়েছে, হাতে একটা গোলাপ, গোলাপ টা হয়তো আমাকে দেয়ার জন্য এনেছে, কোনো মেয়ে আমাকে ফুল দিবে ব্যাপারটা আকেমন যেনো লজ্জা লাগছে আমার কাছে, ধুর ছাই আমাই তো ওর সাথে প্রেম করিনা, হয়তো ফুল টা কেউ ওকে দিয়েছে, আমাকে কেনো দিবে সে? ভাবত্রে ভাবতে কি মুখে চিন্তার কোনো ছাপ পড়লো কিনা আমি জানিনা, শারমীন কথা বলে উঠলো কি ব্যাপার হাসি হাসি মুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেলো কি ভালো লাগছেনা নাকি যে আমি এসেছি?
আরে নাহ, অপেক্ষা তো করে আছি আপনার জন্য, আসলে মাঝে মাঝে আমার কিছু একটা হয়ে যায় সাইকো টাইপ, সিগেরেট টা তখনো হাতে, একটা টান দেবো মনে করেছিলাম, ছো মেড়ে শারমীন সিগেরেট নিয়ে গেলো, একটা মেয়ে এতো প্রফেশনাল ভাবে সিগেরেট খায় শারমীন কে না দেখলে জানতাম না, যদিও অনেক মেয়েকেই দেখেছি তবে সেটা একান্তই নিজেকে নষ্টালজিয়া করার বৃথা প্রচেষ্টা
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ডায়েরি যখন বলছেন তখন সবই ঠিক আছে। তাই বলে দুম করে শেষ করে দিলে তো হবে না।
বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দিলাম আর আপনি এখন বিড়ির গল্প বলে জায়গা-বেজায়গায় সুড়সুড়ি দিচ্ছেন!
হৃদয়ের স্পন্দন
দুম করেই শেষ হবার সম্ভাবনা বেশী ডায়রী তো ভাই, বিড়ি খাওয়া ছাড়তে পারছিনা, আপনাকে দেখে হিংসা হচ্ছে
মামুন
আগের পর্বগুলো পড়া হয় নি। পড়ে নেবার ইচ্ছেটা জাগল মনে। এই পর্বের সাবলীল লিখাটিতে ভালো লাগা রেখে গেলাম।
শুভসকাল। -{@
হৃদয়ের স্পন্দন
শুভ সকাল, পড়ে নিলে ভালো লাগবে
মোঃ মজিবর রহমান
ভালো লাগা রইয়ে গেল। -{@
হৃদয়ের স্পন্দন
নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বরাবরের মত ভাল লাগছে।
হৃদয়ের স্পন্দন
মনে হচ্ছে আমি স্বকিয়তা বজায় রাখতে পেরেছি, ধন্যবাদ ভাই জানানোর জন্য, শুভ কামনা নিবেন
সোনিয়া হক
প্রথম পর্ব থেকে পড়তে হবে। -{@
হৃদয়ের স্পন্দন
আমন্ত্রন রইলো যদিও অখাদ্য -{@
অরণ্য
যাযাবরের জন্য শুভেচ্ছা।
হৃদয়ের স্পন্দন
পৌছে দিব 😀 \|/
খেয়ালী মেয়ে
একটা মেয়েকে এভাবে মিথ্যা বলতে আমার খারাপ লাগেনি, এখনো লাগছেনা-এই লাইনটা কেমন জানি 🙁
হৃদয়ের স্পন্দন
কিন্তু খুনি হতে চাওয়া মানুষ গুলোর থেকে এর থেকে ভালো কি বা আশা করা যায় যেখানে তিনি একজন যাযাবর
ধন্যবাদ প্রতিটা পোষ্ট পড়ার জন্য
জিসান শা ইকরাম
লেখা ভালো হইছে অনেক।
হৃদয়ের স্পন্দন
ধন্যবাদ ভাই , সাহস পেলাম সাথে অনুপ্রেরনা
শিশির কনা
আমি এখন পর্যন্ত কোন মেয়ে সিগারেট খোর দেখিনি।
হৃদয়ের স্পন্দন
আপনার জন্য আসলে পুরা ৩২ টি বি আফসোস রইলো আর কি বা দিতে পারি, যাই হোক আমার সাথে কোনোদিন দেখা হলে আপনাকে মেয়েদের আড্ডাখানা ঘুরিয়ে দেখাবো না, আমার বাসার ছাদ থেকেই দেখা যায়
শুন্য শুন্যালয়
যাযাবর চরিত্রটা একেবারেই অন্যরকম। ডায়েরী টা মাঝখান থেকে শুরু হয়ে আছে, অপেক্ষা আছে এর শুরুটা জানবার জন্য।
যেহেতু যাযাবরের ডায়েরী আমার খুবই প্রিয়, তাই বলতেই হচ্ছে বানানগুলো আরেকটু ঠিক ঠাক করে নিতে হবে। পছন্দের লেখায় এতো ভুল বানান সহ্য করবোনা। পরামর্শের জন্য কিছু মনে করলে করতে পারেন।
হৃদয়ের স্পন্দন
যাযাবর যেহেতু চরিত্র অন্যরকম হওয়া টাই স্বাভাবিক, যাযাবরের ডায়রী আপনার ভালো লেগেছে এবং এটা প্রিয় চরিত্র হয়ে দাড়িয়েছে যা শুনে ঋতিমত স্পন্দিত শিহরন অনুভব করছি, এতটা না বললেও পারতেন, বানা গুলো অবশ্যই ঠিক করতে হবে, কিন্তু লেখার সময় ই পাইনা, যা আবার পাই তাতে লেখার পর রিবিসন দিয়ে মিসটেক গুলোই ঠিক করার সময় হয়না, বানান ঠিক করা মোটামোটি সময়ের ব্যাপার, তবু চেষ্টা আমার চিরন্তন, আর মনে করার কি আছে? বরং আপনাদের পরামর্শ আছে বলেই হয়তো ব্লগে এখনো আছি না হলে আজিজ বোর্ডিং 😛