মায়ার পাখি

মেহেরী তাজ ২৬ মার্চ ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০১:১৬:২৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৮ মন্তব্য

তখন আমি ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি। একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার সময় একটা আমগাছের নিচে হালকা কালো নাকি ছাঁই রং এর একটা পাখির বাচ্চা পেয়েছিলা। স্কুল ব্যাগ কাঁধ থেকে নামিয়ে পাখির বাচ্চা টা কে নিয়েই লেগেছিলাম। পরে ওটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম। ওকে পাওয়ার পরেই কি যেন একটা নাম দিয়েছিলাম এতো দিন পরে তা আর মনে পরছে না। সেই পাখিকে পেয়ে কি আনন্দেই না কেটেছিলো তার পরের কদিন। সে কি মায়া। একটু পরপর গিয়ে দেখে আসা,নিয়ম করে খেতে দেওয়া, স্কুলের সময় টুকু বাদ দিয়ে বাঁকি সময় টা তাকে নিয়েই আমার দিব্বি কেটে যেত। যে যা বলে তাই খাওয়াতাম। সে হোক না কেনো ভাত,চাল,মশা,মাছি বা ফরিং। একদিন বিকেলে দেখি দিব্বি হাটার চেষ্টা করছে। আর তার তার ঠিক পরের দিন সকালেই দেখি কোথায় যেন চলে গেছে।

সেই পাখির বাচ্চার শোক তো আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না।
তখন আমার এক ফ্রেন্ড বলেছিলো " তোর পাখিটা আকাশে উড়ে বেড়াবে এতে অখুশি হচ্ছিস কেন, ওদের জন্মই তো হয়েছে ওড়ার জন্য। তুই চাইলেই কি তাকে ধরে রাখতে পারবি?"

এরপর পাখির মায়া আমায় ছুতে পারেনি কোন দিন।

কিন্তু আজ বিকেলে যখন সিমেন্টের ব্রেঞ্চে একা একা বসে বিড়াল গুলোর খেলা দেখছিলাম, হঠাৎ করেই যেন আমি আবার সেই স্কুল লাইফে ফেরত চলে গেলাম। চোখের ডান পাশ দিয়ে কি যেন একটা নড়াচড়া দেখে পাশ ফিরলাম। ময়লা ফেলে ফেলে জায়গা টা এখন দেখতে ডাস্টবিন মনে হয়। এটার একপাশে একটা সজনে গাছ। গাছে অনেক গুলো কাক আর ময়লার স্তুপটার পাশে দুটা বিড়াল এক কদম সামনে যায় তো দু কদম পিছনে ফিরে আসে বিষয় টা ঠিক ধরতে পারছিলাম না। এবার একদম ময়লার স্তুপের দিকে ফিরে বসলাম। কিছু একটা দেখতে পাচ্ছি। ধুসর রং হওয়ার বুঝতে পারছিনা। সাহস করে কাছে গেলাম। কি মায়া মায়া দুটো চোখ তার। বেশ বড়( সম্ভবত হুতুম প্যাঁচা কি লক্ষীপ্যাঁচা)। কিন্তু ডানা দুটো ঝাপটানো আর ঠোট হা করে ভয় দেখানো ছাড়া একচুল নড়তে পারছেনা।কিছু একটা হয়েছে এবং সেটা পায়ে। আমি খুব বুঝতে পারছি ওকে রেখে চলে গেলে মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে ওর বিড়াল আর কাকের খাদ্যে পরিনত হতে। সাহস করে একটা ডানা ধরে ডাস্টবিন থেকে তুলে নিয়ে এসে পরিস্কার জায়গায় রেখে দিলাম। মাথায় হাত বুলালে দেখি ঘুময়ে পরছে। অনেকেই ছবি তোলার জন্য পাগল হয়ে গেছে দেখে আমার ফ্ল্যাট এ নিয়ে আসলাম। বেশ কজন মিলে ওকে ভালো করার চেষ্টা করেছি। তারপরে আমার রুমের সামনে যে ফাকা জায়গা টা আছে সেখানে রেখে দিয়েছি। কিন্তু মনে হচ্ছে বাঁচানো যাবে না।

আমার মনে পরছে সেই ফ্রেন্ডের কথা।পাখিদের না আকাশে ওড়ার কথা? কিন্তু এই মায়া মায় চোখের পাখিটা মনে হয় না আর উড়বে! হয় তো কাল সকালেই দেখবো সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমায় শোকে ফেলে। আবার আমার সেই ফ্রেন্ডটাও আমায় ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ছ'বছর হলো। আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি 🙁

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ