মশাটির নাম ঝাঝাঝুঝু

আতা স্বপন ২৭ মে ২০২০, বুধবার, ১০:২১:০১অপরাহ্ন গল্প ১০ মন্তব্য

মা মা ও মা কোথায় তুমি। প্রচন্ড খিদে । খেতে দাও।
সবেত স্কুল থেকে এলি। আগে হাতমুখে পানি দে। ফ্রেস হ।
নাবিল নামের ছেলিটি তখন স্কুল বেগ বিছানায় ছুরে ফেলে বাথরুমে ঢুকল। খুব জোরে বাথরুমের দরজা আটকালো। ঠিক তখন্ই শুনতে পেল-
দড়জা এতো জোড়ে লাগানো অভদ্রতা।
কে কে? কথা বলল? ধুত কে আবার হবে। বাথরুমেতো আমি একাই। তবে কে যেন কথা বলল স্পষ্ট শুনলাম। বিরবির করে বলল সে। মনের ভুল ভেবে পাত্তা দিল না।
কিছুক্ষন পর আবার সে কন্ঠ-
কেমন আছো নাবিল?
কে? কে?
আমি?
আমি! কে?
আমি মশা। এই যে তোমার হাতের উপর বসে আছি।
নাবিল তার ডান হাতের কব্জিতে একটি মশাকে বসা দেখতে পেল।
তুমি কথা বলছ? তাও আবার বাংলায়! বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি কথা বলতে পারো!
কেন তোমরা মানুষরা পারলে আমরা পারবো না কেন?
ঠিক তা না! মানে বলছিলাম মশার তো কোন ভাষা নেই। কানের কাছে শুধু ঝু ঝু আওয়াজ করে।
আমি সে আওয়াজ করেই কথা বলছি। তুমি সেটা তোমার ভাষায় বুঝতে পারছো।
ধুত তাই কি হয়?
এইতো হচ্ছে।
তাইতো অবাক হচ্ছি।
অবাক হবার কি আছে তোমাদের এক নবি সোলেমান। সে সব জীবের ভাষা বুঝত।
আমিতো সোলেমান না! নবিও না! আমি নাবিল।
কোন কারনে তুমি সে ক্ষমতা পেয়েগেছ।
বলকি?
আমি সেটা জানি বলেই তোমার সাথে কথা বলছি।
মানুষের মতো তোমাদের কোন নাম আছে?
আছে!
তোমার নাম কি?
আমার নাম ঝাঝাঝুঝু
এ আবার কেমন নাম?
এটা একটা সম্মানিত নাম। আমার মুল নাম ঝাঝা আর সম্মান হল ঝুঝু।
ঝুঝু সম্মান! সেটা আবার কি?
তোমরা মানুষরা যেমন নাইট, ডক্টরেট ব্যাবহরা কর এটা তেমনই।
বাহ! তুমিতো অনেক জ্ঞানী মশা।
হ্যা! এ কারেনেই আমি সম্মানিত হয়েছি। ঝুঝু হলো জ্ঞীন সম্মান। পিপি হলো যুদ্ধাদের সম্মান। রারা হলো রাজার সম্মান।
বলোকি? তা তোমাদের আকিকা হয় না?
আকিকা ! আকিকা আবার কি?
ওমা এটাই জানো না। আমরা যখন জম্ম গ্রহন করি তখন আমাদের নাম রাখা হয় আকিকা করে। এটা একটা অনুষ্ঠান। ছেলে হলে ২টি ছাগল নয় ১টি গরু আবার মেয়ে হলে ১ ছাগল জবাই করতে হবে। গরিবদের মাঝে তা বন্টন করতে হবে।
ভালোতো!
তা তোমার জম্ম কোথায় হয়েছে?
তোমাদের বাড়ির পাশে যে ড্রেন দেখছ ওটাতে আমার জম্ম।
ওমা ! ছি ছি ! ওয়াক থু। এরকম নোংরা জায়গায়!

যেখানে নোংরা আর পচা পানি থাকে সেখানেই আমাদের জম্ম। এটাই আমাদের উপযুক্ত পছন্দের জায়গা।অবশ্য আমাদের কেউ কেউ পরিষ্কার টলটলে জমানো পানিতেও জন্মে। এদেরে বলে এডিস মশা। এরা ডেংগু রোগ ছড়াতে ওস্তাদ।

আচ্ছা ঝাঝা তোমরা মানুষদের রক্ত চুষ কেন? তোমাদের খারপা লাগে না?
এটা আমাদের খাদ্য। তাই বাচার তাগিদে করি। কিন্তু তোমরা মানুষরা তো অকারনে একে অন্যের রক্ত চুষে খাচ্ছ। তা চোখে পড়ে না।
কি ভাবে ?
ধনিরা গরিবদের রক্ত চুষে আরো ধনী হচ্ছে। নি:স্ব মানুষগুলো অসহায় হয়ে ড্রেনের পাসে আমাদের সাথেই বসবাস করছে। আসলে মানুষরা বড় এক চোখা নিজেদের অন্যায় চোখে পড়ে না।
কিছু মানুষ এরকম। সবাই না। দুষ্ট কিছু মানুষের জন্য আমাদের তুমি ভুল বুজেছ। আমাদের মধ্যে ভালো আছে আবার খারাপো আছে। ভালরা যা চির কল্যানকর তাতে বিশ্বাস করে। ভাল ভাল কাজ করে। আর যারা শয়তান তারা সবার কাছেই শয়তান।
তোমাকে একটা কথা বলি মনোযোগ দিয়ে শোন। তোমাদের মানুষদের মধ্যে যারা শয়তান। অকারনে অন্যের রক্ত চুষে খায় তারা একদিন লাখো লাখো নি:স্ব অসহায় মানুষের পায়ে নিচে তেমন পিষ্ট হয়ে মারা পরবে যেমন করে তোমরা আমাদের দু হাতের তালুতে পিষ্ট কর। মনে রেখ তোমাকেই তোমার কর্মফল ভোগ করতে হবে।

আচ্ছা তোমরা কোন ভাল কাজ কি কর?
হ্যা করিতো। আমাদের স্রষ্টা মাঝে মাঝে ভাল কাজে লাগান। আমরা হলাম স্রষ্টার বাহিনী।আমাদের মাধ্যমে তিনি কখনো কখনো দুষ্টদের শিক্ষা দেন। কেন নমরুদের কাহিনি জাননা। তাকেতো আমাদেরই একটা ল্যংড়া মশার কারণে মরতে হয়েছিল।

হ্যা তাইতো! মা বলেছিল ঘটনাটা।

তোমরা মানুষরা যদি এখনো অন্যায় করতেই থাকো আবার আমাদের মত স্রস্টার হাজারো বাহিনী আছে। কিছু দৃশ্য কিছু অদৃশ্য। যা তোমাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। কাজেই সাবধান! হে মানব জাতি!

এই নাবিল ! নাবিল! কি করছিস ভিতরে এতোক্ষন?
বাথরুমে বসে ঘুমানো নাবিলের একটা অভ্যাস। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এতোক্ষন সে মশার সাথে কথা বলছিল। মায়ের ডাক শুনে তরিঘরি করে বাথরুম থেকে বেড় হয় সে। ঠিক তখনি তার কানের পাশ দিয়ে একটি মশা উড়ে গেল। যেন বলে গেল- আমাকে মনে রেখ। মনে রেখ আমার কথাগুলো! বন্ধু! বাই বাই।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ