এক তারিখে আম্মুর সাথে একটা চরম ফান করেছি। আম্মুর জন্য *তুসকা* কাশের সিরাপ আনা হয়েছে। এটা আমি আগে খেয়েছি ,আমি জানি এটার টেষ্ট ফালতু। আম্মু আমায় প্রশ্ন করেছে এটা খেতে কেমন রে? আমি মুখে ২০০ ওয়াট বাল্বের হাসি রেখে বলেছি "আম্মু এটা খেতে খুব ভালো "। আম্মু খাওয়ার পর আমায় কিছু বললো না খালি একটু হাসলো।
এর পর তিন তারিখ এর ঘটনা, সকালে উঠে আম্মু আমায় বলছে
আম্মু - হ্যা রে পিঠা খাবি?
আমি - অবশ্যই তার জন্যই তো বাড়ি আসা।
আম্মু -কত খানি চালের আটা বের করবো বল? দশ না পনেরো কেজি?
আমি- বের যখন করবাই দশ কেন পনেরো কেজিই করো।
তার কিছুক্ষন পরের ঘটনা
আম্মু- বাবা পনেরো কেজিই ভিজায়ে দিলাম। তবে একটা সমস্যা.....
আমি - মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে আম্মুর দিকে তাকালাম।
আম্মু- কাজের লোক পাওয়া গেলো না। তোকেই পাড়া দিতে হবে। পারবি তো?
আমি : হ্যা হ্যা না পারার কি আছে।!? (পুরাই তব্দা খেয়ে গেছি)
বলেই আম্মু উল্টা ঘুরে দাঁড়ালো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আম্মুর শরীর সামান্য সময়ের জন্য দুলে উঠেছে। তিনি হাসছেন। আমি এ ও বুঝতে পারছি এটা *তুস্কার*ফল।
আসলে পারা বলতে ঢেঁকিতে পারা দেওয়ার কথা বলছিলো আম্মু।
তারপর ঢেঁকিপাড়ে গিয়ে পারা ও দিলাম অনেক ক্ষন। কিন্তু বুঝলাম উনি আমার মা আর আমি উনার মেয়ে। কারন যখন আমি মোটামুটি ঘেমে নেয়ে গেছি তখন দেখি মায়ের ডাকা দুটা লোক আসলো। এবার আবার আম্মু তার মুখে ৫০০ ওয়াট বাল্বের হাসি টেনে রেখেছে। আটা বের করা হলো ঢেঁকি দিয়ে আর আজ রাতেই বানানো হচ্ছে তার পিঠা। ভাপা পিঠা,কুসলি পিঠা,মুঠো পিঠা, চিতয় পিঠা।
সোনেলার সবাইকে এই শীতের পিঠার দাওয়াত 🙂
ঢেঁকির কথা পড়ে নাই এদেশে এমন মানুষের সংখা কমই হওয়ার কথা।
তবে ঢেঁকি ব্যবহার করে এমন মানুষের সংখাও খুব বেশি নয়।
সেই ঢেঁকি ব্যবহার করা অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে আমরা পরি।
আমাদের মহল্লায় মোট চারটি ঢেঁকি আছে। এই মেশিনের যুগেও আমার এই ঢেঁকি গুলো ব্যাবহার করি।
গ্রাম বাংলার গান শুনুন এবং ঢেকির পার দেখুনঃ ও ধান ভানিরে ঢেকিতে পার দিয়া
৩১টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
যেমন মেয়ে তেমনি মা, ওস্তাদ আপনার মা দেখি ওস্তাদেরও ওস্তাদ :D) আপনি ২০০ ওয়াট আর আপনার মা ৫০০ ওয়াট ভাল্বের হাসি হাসেন 🙂 পিঠার দাওয়াতের জন্য ধন্যবাদ। বাড়ি থেকে বলছি দিয়ে সোনেলা আর আপনার বাড়িকে এক সুতোয় গেঁথে ফেললেন।
আপনার বাড়িতে এখনো ঢেকি ব্যবহৃত হয় জেনে ভালো লাগলো। বাঁচিয়ে রেখেছেন আপনারা এই ঐতিহ্যকে।
গানটি অনেক দিন পরে শুনলাম। পিঠার ছবি দিয়েন,দেখেই খাবার শান্তি পাই :p
মেহেরী তাজ
হ্যা,আমার মা ই আমার ওস্তাদ।ধন্যবাদ শিষ্য।
হৃদয়ের স্পন্দন
আপু আপনাকে দেখে হিংসা হচ্ছে, আর ছবি দেখে আফসোস
মেহেরী তাজ
হিংসে আর আফসোস এর কারন বুঝলামনা আসলে।
ছাইরাছ হেলাল
পারা দেয়া কিন্তু সহজ নয়,আপনি তো দেখছি বেশ কাজের/গুনী।
পিঠে-পুলির দাওয়াত পেয়ে আনন্দিত হলাম।
মেহেরী তাজ
ঠিক বলেছেন ভাইয়া,খুব পরিশ্রমের কাজ।ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রহেলিকা
ঠিকানা ছাড়া দাওয়াত দিলে কই যামু? পারা দেওয়া তাহলে রপ্ত করাই আছে আপনার! বেশ বেশ!
মেহেরী তাজ
আমার ঠিকানা,কেয়ার অফ সোনেলা 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
দাওয়াত খেতে জামু কই,
পারা যখন দিতে পারেন তখন মায়ের মত মন পেলেন ।
পিঠা ওয়াও দারুন।
মেহেরী তাজ
এক সময় চলে আসুন,সোনেলার সবাইকে নিয়ে 🙂
নুসরাত মৌরিন
ঢেঁকি জিনিসটা আমার অসম্ভব প্রিয় আগে বাড়িতে গেলেই ঢে৬কি তলায় বসে থাকতাম।কিন্তু পাড়া দেয়া হয়নি কখনো।খালা,চাচী,নানী,দাদীদের দেখতাম কী দারুন দক্ষতায় ঢেঁকিতে চাল কুটে!!
পিঠার দাওয়াত দিলেন?কিন্তু ঠিকানা কই?
আমি কিন্তু খুব পিঠা খাই। 😀
মেহেরী তাজ
ঢেঁকিতে পার দেয়ার একটি ছন্দ,তাল আছে।সবাই পারেনা আপু।চলে আসুন একদিন সোনেলার সবাইকে নিয়ে। আগে প্রগ্রাম করুন আসার,ঠিকানা সমস্যা হবেনা।
নুসরাত মৌরিন
ঢেঁকি জিনিসটা আমার অসম্ভব প্রিয় ।আগে বাড়িতে গেলেই ঢেঁকি তলায় বসে থাকতাম।কিন্তু পাড়া দেয়া হয়নি কখনো।খালা,চাচী,নানী,দাদীদের দেখতাম কী দারুন দক্ষতায় ঢেঁকিতে চাল কুটে!!
পিঠার দাওয়াত দিলেন?কিন্তু ঠিকানা কই?
আমি কিন্তু খুব পিঠা খাই। 😀
নুসরাত মৌরিন
এহহে একই মন্তব্য দুইবার কেমনে হলো!! ;?
মেহেরী তাজ
বুঝলামনা আপু।একই মন্তব্য তো দুইবার নেয়না।কিছু একটা পার্থক্য আছে মনে হচ্ছে।
নুসরাত মৌরিন
হুম শুরুর টা তে টাইপিং মিসটেক হয়ে গেছিল।ওটা এডিট করে দিতে গিয়ে দেখি,দুইটা হয়ে গেছে!! :p
মেহেরী তাজ
হ্যা আপু, এইযে একটা > ঢে৬কি :p
শুন্য শুন্যালয়
তোমার আম্মুকেই তবে ওস্তাদ মানলাম। 😀 পিঠা কেউ খাক বা না খাক আমি কিন্তু অবশ্যই তোমার বাড়ি যাব, সোনেলার সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে পিঠাও খাবো।
ছোটবেলায় ঢেকিতে পার দিয়েছি আমি, যে বসে বসে চাল উল্টিয়ে দেয় আমার দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগতো, শুধু অইটা দেখতেই ঢেকিয়ালা বাড়িতে যেয়ে বসে থাকতাম। কি রিদমিক তালে চালে উল্টে দেয়, ভয় পেতাম কখন হাতে লেগে যায় তার, মনে পড়ে গেলো সেই স্মৃতি। তুমি কিন্তু সবাইকে লোভী বানিয়ে দিচ্ছো, গ্রামে ফিরে যেতে, ছোটবেলায় ফিরে যেতে।।
মেহেরী তাজ
আপু দেশে এসে অবশ্য অবশ্যই আমাদের এখানে আসবেন।আমাদের বাড়িতে বেড়াবেন।দেশে আসবার আগে এই সিডিউল করে রাখবেনই।
অরণ্য
প্রিয় মেহেরী তাজ
ইচ্ছে করছে চলে যাই তোমাদের ঢেঁকির পাড়ে
ফেলে রেখে সব কাজ।
ইচ্ছে করছে একটু বসি বাঁশঝাড়ের ছায়ে ঐ
পিঠে নিয়ে তুমি খুঁজছো আমায়
ডাকছো – ভাইয়া তুই কই? 🙂
মেহেরী তাজ
খুঁজছি তো ভাইয়া,আপনি তো এলেন না।ধন্যবাদ ভাইয়া।
লীলাবতী
আম্মুর সাথে এমন ফান।বন্ধুর মত আপনি আর আপনার আম্মু।তারপরেও তিনি আম্মু।শুভেচ্ছা আপনাদের দুজনকে।
বাস্তবে ঢেঁকি দেখিনি কোনদিন।শুনে ভালো লাগলো যে ঢেঁকির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এখনো। পিঠার ছবি চাই আপু।
মেহেরী তাজ
আম্মু আমার সেরা বন্ধু আপু।ধন্যবাদ আপু।আপনি আমাকে আপনি আপনি বলেন কেন?তুমি বলুন প্লিজ 🙂
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা হা , আপনি আর আপনার আম্মু দেখি একই মজাদার মানুষ।
আপনার আম্মুর গুন আপনার মাঝে চলে এসেছে–
একারনে বাই বর্ন এত দুষ্ট 🙂
ঢেকিতে আপনি পার দিয়েছেন? পায়ে তো অনেক শক্তি লাগে এতে………
শুনে ভালো লাগলো… ঢেঁকি এখনও ব্যবহার করছেন।
মেহেরী তাজ
:D) বাই বর্ন আমি আসলেই দুষ্ট।আম্মু দুষ্টামি চালান করে দিয়েছেন আমার মাঝে তাহলে 🙂
বনলতা সেন
আপনি সত্যি সত্যি পারা দিতে পারেন! কঠিন কাজ বলেই জানি।
পিলে হবে বলে রাখছি।
মেহেরী তাজ
সত্যি পারি আপু 🙂 পিলে কেন হবে?দাওয়াত দিলাম তো,আসেননি কেন?
মরুভূমির জলদস্যু
এখনও এটা ব্যবহার হয়!! :c
মেহেরী তাজ
আমাদের বাড়িতে তো হয় 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনি খুব আন্তরিক ভাবে লিখতে পারেন।মা এর গুন আপনি পেয়েছেন 🙂 ঢেঁকি এখনো আছে আপনাদের! অবাক হলাম,ভালোও লাগলো।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ আপু,আপনার মন্তব্য আমাকে প্রেরণা দেয় 🙂