বন্ধু হতে চেয়ে তোমার (৪র্থ পর্ব)

মামুন ১১ ডিসেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০৬:৪৩পূর্বাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

৪.

ক'দিন ধরে ঝগড়া... কথা বন্ধ রুনা ও শিহাবের।

মামুলি এক ব্যাপার নিয়ে। প্রায়ই এমন হয় ওদের দুজনের ভিতর। ভীষণ ছেলেমানুষ ওরা।

শিহাবের খুব ইচ্ছে করছে রুনাকে এক নজর দেখতে। কিন্তু ইগোর বেড়াজাল ডিঙ্গাতে পারছে না সে।মোবাইল হাতে নিয়ে সেভ করা পরিচিত নাম্বারটি বের করেছে অনেকবার... সবুজ বাটনটিতে জাস্ট একটা প্রেস করাটা যে এতো ভারী হয়ে উঠবে- আগে কি কখনো ভেবেছে সে? এরকম অস্থিরতায় কেটে গেলো কয়েকটি দিন।

একদিন গভীর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে শিহাবের ঘুম ভাঙ্গে। এক সমুদ্র ঘামের মধ্যে ভাসতে ভাসতে সে জেগে উঠে। স্বপ্নটা এতোটাই বাস্তব যে তাঁর রেশ যেন শিহাবের সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে... তাঁর প্রিয়া চলে যাচ্ছে তাঁকে ছেড়ে!

বুকের গভীরে চিনচিনে ব্যাথাটা বাড়ে... পানি খায়... কিন্তু অস্থিরতা কমে না।

ঘড়ি দেখে শিহাব।

রাত তিনটা।

জানালার পর্দা সরাতেই ঘরের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ে জোছনা... তাঁকে বলে দেয়, " পাহাড়ী বৃষ্টিতে আমার ভেজা হয়ে গেছে... এখন কেবল আর একটা ইচ্ছেপূরন বাকি। সেও হয়ে যাবে... পাহাড়ি পূর্ণিমার তরল আগুনে পুড়ব বলে অপেক্ষায় আছি কখন গৃহত্যাগী জোছনা উঠে..."। শিহাবের চোখ ভিজে উঠে... তাঁর কেবল মনে হতে থাকে এই জীবনে রুনার মিষ্টি মুখটি সে বুঝি আর দেখতে পাবেনা!

ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে শিহাব।

রুনার বাসার পথে এগোয়।

গোকুলনগর থেকে সিএন্ডবি কম দূরে নয়... কিন্তু শিহাব যেন উড়ে চলে।

শিহাব যখন রুমার বাসার সামনে পৌঁছায় ততোক্ষণে তাঁর হাঁফ ছুটে গেছে... বাসার গেটে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়... আকাশের পানে তাকায় চিবুক সোজা করে। হ্যা... রুনার রুমে ডিম লাইট জ্বলছে... ফ্যান ঘুরছে আর তাতে প্রবল ঝড় উঠেছে জানালার পর্দায়।

ঝড় উঠেছে শিহাবের বুকেও... খুব কাছ থেকে খুব সন্তর্পনে প্রিয়াকে দেখতে পেয়ে আবেগী ঝড়!! পকেট থেকে সেল ফোন বের করে শিহাব। কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে পরিচিত নাম্বারটির ওপর হাত বুলিয়ে যায়... যেন রুনার হৃদয়ের দুই অলিন্দেই তাঁর ঘোরা হয়ে গেলো। নিশ্চিন্ত... ক্লান্ত... তবে একটা পরম নির্ভরতা অনুভব করছে।ওর প্রিয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছে! কি দরকার ওকে সেখান থেকে জাগানোর? সে যে এসেছিল সেটা সে নাই বা জানলো... আর ভালোবাসায় দেখানোটা কম... উপলব্ধিটা বেশী হওয়া উচিত।

যে পথ দিয়ে সে এসেছিল চরম উদ্ভ্রান্তের মত... মোবাইল পকেটে রেখে সে পথ দিয়েই পায়ে পায়ে ফিরে যায় শিহাব।

জানালার পর্দা বাতাসে উড়ছে। তারই ফাঁক দিয়ে রুনা শিহাবকে চলে যেতে দেখে। একটা অপসৃয়মান ছায়ার মতো রুনাকে হৃদয়ে নিয়ে ফিরে গেলো মানুষটা!

সে কেন এসেছিল?

এসেছিলোই যখন ওকে ডাকলো না কেন?

মোবাইল বের করেও ফোন করল না কেন?

এতোগুলো কেন'র উত্তর কি জানা হবে কখনো??

ভাবতে ভাবতে রুনা নিজে এটা বিস্মৃত হল, ঠিক এই সময়ে সে ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে কিসের জন্য দাড়িয়েছিল? প্রকৃতি আমাদেরকে নিয়ে খেলা করে... অনেক রহস্য দেখিয়ে দেয়... আবার এমন অনেক সহজ কিছুও দেখতে দেয় না... ভুলিয়ে দেয়। আর এই ভুল-ভোলানি খেলার একটা মাত্র যায়গাই সে বেছে নিয়েছে...সকল অনুভুতির জন্ম হয় যেখানে... সেই হৃদয়!!

(ক্রমশঃ)

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ