ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

রুম্পা রুমানা ২৬ আগস্ট ২০১৬, শুক্রবার, ১২:০৩:৪২অপরাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ ২৭ মন্তব্য

মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ভালোবাসা জানবেন মা ।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ এর ১৯ ফেব্রুয়ারী।জন্ম স্থান খুলনা। বাবা-মায়ের এগারো সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী সবার বড়।
নানা আব্দুল হাকিম ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের স্পিকার হলে তিনি নানার পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। টিকাটুলি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা, তারপর সিদ্ধেশ্বরী গার্লসে ভর্তি হন। কিন্তু বাবার ইচ্ছায় ঢাকা ছেড়ে খুলনায় চলে যেতে হয়।তারপর লেখাপড়া শেষ করেছেন খুলনা থেকে।
১৯৬৩ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনীবনা না হওয়ায় বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ।
এর কিছুদিন পরেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ । যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় জুড়ে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা তিনি নির্যাতিত হন।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হয়।রক্ষণশীল সমাজে তিনি তখন নানান বঞ্চনার শিকার। এই পরিস্থিতিতে আহসান উল্লাহ আহমেদ সব কিছু জেনে উনাকে জীবন সঙ্গিনী করেন। দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৭২ সালে।
একাত্তর পরবর্তী দুঃর্বিষহ জীবনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন ,
"যে খালার সাথে একই জামা পড়ে, একসাথে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি, সেই খালা-মামারা, যারা সারা জীবন এত সংস্কৃতি চর্চা করেছেন তাঁরা আমার উপর পাক হানাদারদের নির্যাতনের কারণে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু বড় মামা, মেজ মামা আর মা উদারভাবে কথা বলেছেন। কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে দেখা যেত সব মহিলারা একদিকে জটলা করে আমাকে নিয়ে কথা বলছে। আমি গেলেই সবাই একে একে সেখান থেকে সরে যেত। আমার দ্বিতীয় স্বামী যিনি সবকিছু জেনে বুঝেই আমাকে বিয়ে করেছেন, তিনিও একবার এই পরিস্থিতি দেখে আমাকে কোন দাওয়াতে বা অনুষ্ঠানে যেতে নিরুত্‍সাহিত করেছেন। আমি প্রতিবাদ করেছি, না আমি যাবই। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে আমি কেন যাব না? যুদ্ধ শুধু নয় মাসই আমাকে ঠেকায়নি- সারা জীবনের জন্য সংগ্রামে ফেলে গেছে।"
যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও জানান,
" ঐসময়ের কথা আমি ভাবতেও পারি না। গভীরভাবে যখন আমি উপলব্ধি করতে যাই, তখন আমার সকল স্নায়ু শিথিল হয়ে যায়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার সুস্থ হয়ে উঠতে আমার অনেক সময় লেগে যায়। "
পেশাগত জীবনে তিনি শিক্ষকতা করেছেন এবং বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন।
বর্তমানে ঘর সাজানোর নানান উপকরণ তৈরী করেন এবং তিনি একজন ভাষ্কর। উনার শিল্প কর্মের প্রধান উপকরণ গাছের শুকনো ডালপালা এবং গুড়ি, শেকড়-লতা, শেওলা জমা বাঁশ-কাঠ। মনের ভেতরের শিল্প ভাবনাকে তিনি রুপ দেন ভাষ্কর্যে।
প্রিয় ফেরদৌসী
প্রিয়ভাষিণী ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক লাভ করেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ এর ৭ (ঝ) এর ধারা অনুযায়ী তিনি এখন থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে ১২২ জন বীরাঙ্গনা মায়ের আবেদনের পর উনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সকল বীরাঙ্গনা মায়েদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
:: উদ্ধৃতিতে আটকে দেয়া ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কথাগুলো নেয়া হয়েছে তাঁরই দেয়া একটি সাক্ষাতকার থেকে।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ