অনিরুদ্ধ,
গত পাঁচ মাসে গুনে গুনে পঁচিশটি চিঠি দিলে তুমি আমায়। আজকাল কেউ চিঠি লেখে! তাও নীল খামে! মেসেঞ্জার, হোয়াটস এপ, ভাইবারের যুগে চিঠি অচল তা কি তুমি জানো না?
তোমার প্রতিটি চিঠিতেই তোমার প্রেমিকা শ্রাবন্তীর বিভিন্ন আচরনের বর্ণনা লিখে তোমার হতাশার কথা লিখেছো। আমার পরামর্শ চেয়েছ। কি পরামর্শ দেব আমি তোমায়?

= * শেষ চিঠিতে লিখলে তোমার বন্ধু অনিমেষ এর সাথে সিনেমা দেখার প্রগ্রাম করেছিল তিনদিন আগে, যা তুমি জানতে না। তোমাকে শ্রাবন্তি ই জানিয়েছে এই প্রগ্রামের কথা, তোমাকেও যেতে বলল। স্টার সিনে কমপ্লেক্সে তিনজনে একসাথে সিনেমা দেখবে বলে তুমি বেশ আনন্দিত ছিলে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলে তুমি। শ্রাবন্তীর তর সইছিল না, তোমাকে বাদ দিয়েই সে তোমার বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখে এলো। তোমার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো না শ্রাবন্তি। অথচ ঐ মুভিটি আরো বহুদিন চলবে হলে।

* অনিরুদ্ধ, এতে মন খারাপের কিছু নেই। কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। আর অসুস্থ অনিরুদ্ধের চেয়ে সুস্থ্য অনিমেষ শ্রাবন্তীর নিকট কাম্য, এটি বুঝতে হবে তোমার। সিনেমা দেখার কথা তোমাকে না জানালে কি করতে? ধরে নাও তুমি জানোই না এই ঘটনা।
------------------------------------------------------------------------------

=* আর একটা চিঠিতে লিখলে যে তোমার প্রতি তার প্রেম নেই, ভালোবাসাও নেই। কিছু একটা টান অনুভব করে শ্রাবন্তি তোমার প্রতি, সে টান প্রেম বা ভালোবাসা কিনা তা শ্রাবন্তী নিজেই জানে না, এটি নাকি সে নিজেই বলেছে তোমাকে। তোমার মাঝেও নাকি প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই। প্রেম ভালোবাসাহীন বহুবার শারীরিক সম্পর্ক কিভাবে স্থাপন করল তোমার সাথে শ্রাবন্তী, এটি তুমি আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছ।

*এর কি ব্যাখ্যা দেবো আমি অনিরুদ্ধ! প্রেম, ভালোবাসাহীন শারীরিক সম্পর্ক হয় কাদের মধ্যে জানো তুমি? বলতে খারাপ লাগছে, তারপরেও বলছি- এমন শারীরিক সম্পর্ক তাঁর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। এমন সম্পর্ক তাঁর আরো অনেকের সাথে থাকতে পারে। তুমি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবছো শারীরিক সম্পর্কে, তাঁর কাছে এর তেমন গুরুত্ব নেই। তাঁর ধারনার তাঁর মাঝেও প্রেম, ভালোবাসা নেই- তোমার মাঝেও প্রেম, ভালোবাসা নেই। শ্রাবন্তীকে না হয় জিজ্ঞেস করো, তাঁর ভাবনায় যখন কারো মাঝেই প্রেম, ভালোবাসা নেই তাহলে এই যে বিশেষ সম্পর্ক এটি সে বজায় রাখে কিভাবে? কিভাবে সে তোমার সাথে বিছানায় যায়?
----------------------------------------------------------------------------

=* শ্রাবন্তীর বাসায় গিয়ে একদিন দেখলে তাঁর বন্ধু জয়ন্ত আচার্য আর সে ড্রইং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তুমি যাওয়ায় দুজনের চোখে মুখেই অসন্তোষ। তারা পাশা পাশি বসে আড্ডা দিচ্ছিল, তুমি যাবার পরে আড্ডার প্রসঙ্গ নতুন দিকে মোর নিলো। কি একটা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জয়ন্ত আচার্য্যকে বললে যে তোমার সামনেই সব বলতে হবে। অত্যন্ত তাচ্ছিল্য এবং কিছুটা চ্যালেঞ্জের কন্ঠেই জয়ন্ত তোমার মুখের উপর বলে দিলো ' শ্রাবন্তিকে সে একাকী বলবে এই কথা, এই বলে শ্রাবন্তিকে সে হাত ধরে নিয়ে গেলো বারান্দায়। তোমাকে প্রচন্ড অপমান করার পরেও শ্রাবন্তি এর কোন প্রতিবাদ করেনি। খুব কষ্ট পেয়েছিলে তুমি শ্রাবন্তীর এই আচরণে।

* অনিরুদ্ধ এখানে হিসেবটা খুব সহজ। জয়ন্ত আচার্য্যকে সে তোমার চেয়ে বহুগুণ মূল্য দেয়। এতটাই যখন অপমান বোধ তখন একটা কাজ করো, শ্রাবন্তীকে একটা অপশন দাও বেঁছে নেয়ার। কাকে সে রাখবে, তোমাকে না জয়ন্ত আচর্য্যকে? যে কোন একজনকে রাখতে বলো। আমি নিশ্চিত সে তোমাকেই রাখবে না। উল্টো তোমাকে বলবে ' তুমি এত নীচ? এত ছোট মন তোমার? এ-কারনেই তোমাকে ছুড়ে ফেলে দিলাম '। যেহেতু তোমার প্রতি তাঁর কোন প্রেম, ভালোবাসা নেই, আছে কিছুটা টান- সে টানের চেয়ে বেশী টান জয়ন্তের প্রতি তাঁর, তাই তোমার অপমানের সময় সে নিশ্চুপ থেকেছে, বারান্দায় গিয়ে একাকী কথা বলেছে। আর সম্পর্ক যদি যেমন আছে তেমন চালাতে চাও, যদি বেশী ভালোবেসে থাকো শ্রাবন্তীকে, তাহলে এই অপশন দিও না তাকে, বাদ পরে যাবে।
------------------------------------------------------------------------------

=* ফেইসবুক চালাও তোমারা দুজনেই। মেসেঞ্জারও চালাও। রাত তিনটা চারটা পর্যন্ত শ্রাবন্তি ম্যাসেঞ্জারে থাকে। এত রাত অবধি ম্যাসেঞ্জারে কি করে জানতে চেয়েছ একদিন। তাঁর উত্তর ছিলো, তাঁর রক্তের আত্মীয়দের সাথে কথা বলে সে এত রাত অবধি। অথচ অধিকাংশ সময়েই তুমি দেখো তাঁর আত্মীয় স্বজনরা মেসেঞ্জারে রাতে অনলাইনে নেই, কিন্তু শ্রাবন্তি আছে। কি করবে তুমি জানতে চেয়েছ।

* শোনো অনিরুদ্ধ, এই সব প্রশ্ন তুমি কেন করো তাঁকে? নিজের বিবেক বুদ্ধি কি হারিয়ে ফেলেছো তুমি? তোমার প্রতি তাঁর প্রেম ভালোবাসা নেই, তারপরেও তোমার সাথে গভীর সম্পর্কে গিয়েছে সে। তুমি কেন ভাবো যে প্রেম, ভালোবাসাহীন এমন সম্পর্ক কেবল মাত্র তোমার সাথেই? এই সব মেয়েদের পাইপ লাইন অনেক লম্বা। পাইপ লাইনের একদম নীচে থাকে একদল প্রাক্তন, যা থেকে ঝরে পরতে থাকে দু একজন প্রতিদিন। একদল থাকে বর্তমান, যাদের মাঝে থেকে দু একজন প্রতিদিন প্রাক্তন হয়। আর একদল থাকে ভবিষ্যত, যাদের দু একজন বর্তমান হয়। তুমি বর্তমানের একদম শেষ প্রান্তে আছো, যে কোন মুহূর্তে প্রাক্তন হয়ে যাবে। বুঝি ভালোবাসো তাঁকে খুব, প্রাক্তন না হতে চাইলে, তাঁর মন মত চলো, কোন প্রশ্ন করবে না। দয়া করে যদি রাখে তোমাকে তাই তোমার ভাগ্য হিসেবে মেনে নাও।  

আজ আর বেশী কিছু লিখবো না। আমি নিজেই অসুস্থ আসলে। জানি নিষেধ করলেও মানবে না সে নিষেদ, বাজারের সস্তা ডার্বি সিগারেট আর কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবসা তোমাদের মত হতভাগাদের জন্য টিকে আছে। আবার লিখবো তোমাকে। শ্রাবন্তীকে নিয়ে কক্সবাজারে তিন রাত কাটানো, এবং গাজীপুরের এক রিসোর্টের ঘটনা জানিয়ে এর ব্যখ্যা কি জানতে চেয়েছ। জানাবো কোন একদিন আবার।

যতটা সম্ভব ভালো থেকো। নিজেকে ফিরে পাও বন্ধু নিজের মাঝে।
অফুরান ভালোবাসায়
.................... জয়

*** একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে,
গল্পে না লিখে চিঠি হিসেবে লেখা।

 

 

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ