পঞ্চমী পর্যন্ত, রইলো কিছু কি বাকী?

নীলাঞ্জনা নীলা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫৬:২১পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, কবিতা ২৪ মন্তব্য

প্রথমা -

ক্ষত...
ক্ষত...

যখন হঠাৎ পুরোনো কাটা দাগটায় আঙুল পড়ে,
আলগোছে ছুঁয়ে যাই আর ভাবি কতোটা ব্যথা পেয়েছিলাম সেদিন
কিছুতেই মনে পড়লো না সেই ব্যথার কারণ।
অথচ দিব্যি মনে আছে আগুণ জ্বালিয়ে পুড়িয়েছি্লাম অনর্থক কিছু সময়
তাতে আঙুল তো পোড়েইনি,
এমনকি শরীরের কোথাও কোনো জ্বলুনীও হয়নি
শুধু প্যারালাইসড মনের ভেতর যে ক্ষত, সেসব মনে থেকে গেছে আজও।

দ্বিতীয়া -

ফেলে রাখা ষ্টোররুমে...
ফেলে রাখা ষ্টোররুমে...

যদি চলে যাও, খোলামকুচি স্মৃতিসমেত কিছু বিস্মৃতিও রেখে দেবো
কারণ জানতে চাও?
মানুষ তো অপাংক্তেয় জিনিসও রেখে দেয় ষ্টোররুমে।

তৃতীয়া -

মাথার উপর ওই যে আকাশ...
মাথার উপর ওই যে আকাশ...

বিপরীত নাগরিক জীবনের বৃত্তে বন্দী আবেগীয় আতিথেয়তা
একদিকে বৈকালিক আবেগ, অন্যদিকে বৈষয়িক দিন
কি করে একে অন্যকে স্পর্শ করে শুনবে?
মাথার ওপর ওই যে আকাশ।

চতুর্থী -

কঙ্কাবতীর প্রাসাদ...
কঙ্কাবতীর প্রাসাদ...

ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেখাবো কঙ্কাবতীর অন্দরমহল
তালা খুলেও রেখে দিয়েছিলাম
সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি বদলে দিয়ে জেগে থেকে অপেক্ষায়ও ছিলো সে
আর তুমি কিনা রাজবাড়ীর দেউড়ি থেকেই ফিরে এলে!

পঞ্চমী -

পথের গায়ে পদচিহ্ন...
পথের গায়ে পদচিহ্ন...

জানো একা একা অপেক্ষাতে কি ক্ষতি হয়!
ওয়ান-ওয়ে পথে ফিরে আসা যায়,
তবে অনেক ঘুরে-ফিরে
ততোক্ষণে রোদ-বৃষ্টিতে পথের মানচিত্র বদলেও যায়, জানো?

হ্যামিল্টন, কানাডা
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      নন্দিনীদি আসলে লেখাগুলো হঠাৎ করে মাথায় চলে এলো। পূর্ণকাব্য লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। তাই অণু হিসেবেই রেখে দিলাম। তবে প্রথমটি আমার আঙুলের কাটা দাগ। দ্বিতীয়টি অবহেলা, তৃতীয়টি মিলন, চতুর্থটি ফিরে আসা, আর পঞ্চমটি ফিরিয়ে দেয়া মানে প্রত্যাখ্যান।

      ওহ পদচিহ্নের পাশে ছোট্ট ছোট্ট নুড়ি-পাথর। কি যে সুন্দর না আটলান্টিকের ওই সৈকতটা, দেখলে মন ভরে যায়।

      ভালো থাকুন দিদি।

      • অনিকেত নন্দিনী

        নীলাদি, লেখাটা নিঃসন্দেহে সুন্দর, আমি অসুন্দরই কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাইনি। 🙁
        মাঝেমাঝে মাথাটা এত্ত বেশি ফাঁকা লাগে যে বলার মতো কিছুই খুঁজে পাইনা।

        পদচিহ্নের পাশের ওই নকশাকাটা ছাপ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি লাঠি ভর করে হেঁটে গেছে, ওটা লাঠির মাথার নকশার ছাপ।

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        হতে পারে নন্দিনীদি। তবে ওই বিচে লাঠি নিয়ে যাওয়া যায়না। মনে হচ্ছে কুকুরের পায়ের ছাপ।
        পাথুরে বিচ তো, ওখানে ভর করে চলা মানুষরা চলতে পারেনা।

        দিদি আসলে মাথা ফাঁকা নয়, অক্ষররা বিশ্রাম চায়। তাই অনেক সময় কিছুই বলা যায়না।
        এমনটি সবার মধ্যেই হয়। বুঝেছেন? তখন আমি কি করি জানেন? গান শুনি। 🙂

        ভালো থাকুন সবসময়। -{@

  • ছাইরাছ হেলাল

    বাহ, ভিন্নরকম লেখা!
    এমন করে আগে লিখেছেন বলে মনে পড়ে না,

    ওয়ান ওয়েতে যাওয়া যায়, আসা আর হয়না,
    রাজবাড়ীর সোনার কাঠি আর রূপার কাঠির রদবদল স্বপ্নেই থেকে যায়।

  • মৌনতা রিতু

    নীলা আপু অসম্ভব ভাল লেগেছে। কঙ্কাবতীর অন্দরমহল মন ছুঁয়েছে। পূজার শুভেচ্ছা নিও। পূজা দেখতে প্রতিবারই যাওয়া হয়। এবারও দাওয়াত আছে। যাব।
    ভাল থেকো ভালবাসা নিও।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      মৌনতা আপু কঙ্কাবতীর অন্দরমহলের ইন্টেরিওর ডেকোরেশন কে করেছে জানো? ওই যে রাক্ষস-দৈত্য উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, সে। 😀 আজকাল দৈত্য-রাক্ষসরাও ইন্টেরিওর ডেকোরেশনে বেশ ভালোই দেখছি। :D)

      ইস আমার হিংসে হচ্ছে, পূজোতে এবার যাওয়া হবে কিনা কে জানে!

      তুমিও ভালো থেকো।

  • শুন্য শুন্যালয়

    প্রত্যেকটি অনুকবিতা এক একটি গল্প হতে পারে। তুমি এতো ভালো কেমন করে লেখো?
    সময় বুঝি আগুনে পোড়ে? সিগারেট খেতে নাকি? 🙂 প্যারালাইজড মনে ক্ষতগুলো জোড়ালো হয়না, ক্ষতগুলো বিষাক্ত আর্সেনিকের মত মাইক্রো মাইক্রো করে ছড়ায়।
    স্টোররুমে প্রয়োজন হলে যাই, কিন্তু বিস্মৃতি সে বড় অবাধ্য যখন তখন যেখানে সেখানে এসে হামলে পড়ে, বুভূক্ষু, বর্তমান খেয়ে ফেলে সব।
    আকাশ যেন মাথার চাদর, বিছানায় গড়াগড়ি করে চাদরের নীচে লুকিয়ে পড়া।
    দেউড়ি তে আরেক কংকাবতী ছিলো মনে হয় 🙂
    মানচিত্র তো বদলেই যাবে একদিন, দুইদিন কিংবা কএক মূহুর্ত পরে।
    অনেকদিন পরে ফিরেছি বলে কিনা জানিনা, আমি যেন অনেকদিন পরে তোমার এমন লেখা পড়লাম। প্রত্যেকটি চমৎকার। প্রিয় প্রিয়।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      গল্পটা না হয় তুমি-ই লিখে ফেলো। আজকাল ধৈর্য নেই গল্প লেখার।
      ভালো লিখি নাকি তিলোত্তমা? তোমার চোখের পাওয়ার ঠিক আছে তো? আর মাথার স্ক্রু টাইট? :p 😀
      সময়ই তো আগুণে পোড়ে গো তিলোত্তমা। একেকটি স্মৃতি কোনোটা পোড়ায় আর কোনো কোনোগুলো আনন্দে ভাসায়। এটা অবশ্য মানলাম প্যারালাইজড মন তো অবশ থাকে।
      তিলোত্তমা আমি আবার ষ্টোররুমের জিনিস রেখে দিয়ে আবার ফেলে দেই। প্রথমে রাখার কারণ ফেলতে খারাপ লাগে। তারপর ষ্টোর যখন গুছাতে যাই, তখন কি পরিমাণ গার্বেজের ব্যাগে জমা হয় ভাবতেই পারবেনা। 😀

      ছুঁয়ে দিতে পারছো না? এই দেখো হাত বাড়ালেই আমি ওই দূরের মায়ায় গাল বুলোতে পারি
      আমার কাছে মেঘ যখনই আসে,
      তখনই বৃষ্টির নিমন্ত্রণ পাই
      বৃষ্টি মানেই আকাশ আমার এবং তোমার।
      দিব্যি স্পর্শ করতে পারি দূরত্ত্ব তখন নিঃশ্বাসে এসে ঠেকে। —————-আকাশ আমার কাছে এমনই গো তিলোত্তমা। তোমার এই “আকাশ যেন মাথার চাদর, বিছানায় গড়াগড়ি করে চাদরের নীচে লুকিয়ে পড়া” কথাটি লিখিয়ে নিলো এ কয়টি লাইন এখুনি।
      তাইতো মাথায় আসেনি! ঠিক বলেছো দেউড়িতে আরেক কঙ্কাবতী ছিলো নিশ্চিত। এসব রাজকুমারদের চরিত্র কি কখনো বদলেছে?
      তিলোত্তমা মনের মানচিত্র বদলে গেলে ভয়ঙ্কর বিপদ। সম্পর্কের বারোটা বাজে, তাই না?

      আসলে তুমি এতোদিন আসোনি, তাই ভালো লেগেছে। আমি তো সেই একই আগডুম-বাগডুমই লিখি। 😀

      শারদ শুভেচ্ছা তিলোত্তমা। -{@

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ