এই সময়ের আলোচিত ঘটনা বরগুনায় প্রকাশ্যে দিবালোক অনেক মানুষের চোখের সামনে নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগী রিফাত, আর একজন রিফাতকে কুপিয়ে খুন করেছে। যখন এই কোপাকুপির ভিডিও দেখেছি, তখনই ভেবেছি যে খুনি নয়ন এবং রিফাত এর সামনে মৃত্যু অপেক্ষা করছে। আজ ঘুম থেকে উঠেই জানলাম যে নয়ন বন্ড ক্রস ফায়ারে নিহত। তার নিহত হওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল আমার কাছে, তাই অবাক হইনি।

মানুষ দুই ভাবে পরিচিতি পায়। নায়ক হয়ে, খলনায়ক হয়ে। নায়ক হয়ে পরিচিত পাবার যোগ্যতা ছিল না বলেই নয়ন বন্ড খল নায়ক হয়ে পরিচিতি পেয়েছে। এতে সে সফল হয়েছে। তার নাম দেশের কতজন মানুষ জানে না, এটি হিসেব করা সহজ।

আলোচনা করার পূর্বে দেখে নেই তার ক্রস ফায়ার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কি? এই সব প্রতিক্রিয়া আমার ফেইসবুক টাইম লাইনের বিভিন্ন জনের স্টাটাস এবং মন্তব্য, যা হুবহু তুলে দিয়েছি।
* ক্রসফায়ার... একটা গেলো.. বাকী গুলোর খবর কি..?
* সকালে এরচেয়ে ভালো খবর আর হয় না।
* বাকী গুলোরও একই চিকিৎসা দরকার। সমাজটা রাহুমুক্ত হোক।
* ক্রসফায়ার মানে থলেতে বিড়াল লুকিয়ে আছে.....
* থলের বিড়াল দিয়ে কি হবে? আইন আদালতের ব্যাপারে গেলেই আইনের ফাক গলে বের হয়ে আসত সে ঠিকই। বরং অন্তত একটা অপরাধী কমল। যেগুলা স্পষ্ট প্রকাশ্য খুন, সেগুলার ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট একশনে যাওয়াই ভাল।
* আপনার মনে হচ্ছে একটা অপরাধী কমেছে, আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছেনা .... আমার মনে হচ্ছে থলের বিড়াল (আরো বড় অপরাধী) বাঁচাতেই এই ক্রসফায়ার...... আর তাইতো আদালত পর্যন্ত তাকে নেয়া হয়নি, এটা বিচার হতেই পারেনা, এটা একটা গেইম.....
কোথায় থাকে ক্রসফায়ার যখন ধর্ষন হয়??? ক্রস ফায়ারতো তখনই করা উচিৎ তাইনা?
* এখানে কি আসলেই থলে বা বিড়াল ছিলো? যা ঘটেছে সবার সামনে ঘটেছে, বেপরোয়া, এক খুনির কর্মকাণ্ড। ক্রসফায়ার আমিও অপছন্দ করি।কিন্তু এই ঘটনার জন্য এটাই ঠিক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আইনের কাছে গেলেই বরং সময়ের পর সময় চলে যেতো।
* এই খুনের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে যার জন্যই এই ক্রসফায়ার...... ক্রস ফায়ার না করে তাকে রিমান্ডে, আদালতে নেয়া হলে বিড়ালের দেখা পাওয়া যেত, আর তখন সব কটা বিড়ালকে ক্রস ফায়ার করতে পারতো তাইনা ? ক্রসফায়ার বিড়াল লুকানোর জন্যই করা হয়েছে।
* প্রথম হত্যাকাণ্ডের চেয়ে দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড ঘৃণ্য ও ভয়ংকর। যারা এই খুনকে সমর্থন দিচ্ছে তারা তারও অধিক ভয়ংকর ও বিপদগামী।
রাষ্ট্রীয় খুন বন্ধ হোক।
* যুগে যুগে এরকম হাজারও নয়ন বন্ড নিজেদের জন্য তৈরী করেছে, আবার ব্যাবহার শেষে এভাবেই ক্রসফায়ারে দিয়েছে পর্দার আড়ালের গডফাদার রা।

এখানে দুই ধরনের মতামত এসেছে। কেউ ক্রসফায়ারকে সমর্থন করছেন, কেউ সমর্থন করছেন না, কেউ আবার থলের বিড়াল ( মানে নয়নের গড ফাদার জাতীয় কেউ ) কে আড়াল করার জন্য এই ক্রস ফায়ার, থলের বিড়ালকেও ক্রস ফায়ার দিলে এরা হয়ত ক্রসফায়ারকে সমর্থন দিত।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে আজ যারা ক্রসফায়ারের বিরোধীতা করে মতামত দিলেন, এদের দু একজন আবার ফেইসবুকে রিফাত খুনের ঘটনার ভিডিও দেখে খুনিদের ক্রসফায়ার দেয়ার জন্য স্টাটাস দিয়েছিলেন। কত বৈপরিত্য কিছু মানুষের চরিত্রে।

ক্রসফায়ার সমর্থনযোগ্য কিনা?
একটি সভ্য দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই কাম্য নয়। সমস্ত অপরাধের দেশে প্রচলিত আইনের আওতায়ই বিচার হওয়া উচিৎ এবং সম্ভব। কিন্তু আদৌ কি সম্ভব সমস্ত অপরাধের বিচার আমাদের দেশের প্রচলিত আইন আনুযায়ী ? একটি সভ্য এবং উন্নত দেশের জনগন, সমাজ ব্যবস্থা, মানসিকতা আমাদের দেশ থেকে সম্পুর্নই আলাদা। তারা মানুষকে ঠকানোর চিন্তাই করেনা, খাদ্যে ভেজাল দেয় না, খাদ্যে ফরমালিন মিশায় না, ডিটারজেন্ট পাউডার শ্যাম্পু দিয়ে দুধ বানায় না, সরকারী লোভনীয় চাকুরীর জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে না, কোন  সরকারী অফিসে ঘুষ এর লেনদেন করেনা- আসলে আরো অনেক কিছু লেখা যায় এ সম্পর্কে।

আমাদের দেশে বিচার বিভাগ সহ সমস্ত বিভাগ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমগ্ন। যার প্রভাব এবং অর্থ আছে সে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু আলোচিত মামলা এবং এর বিচার প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিলেই এই সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় যে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত, বিলম্বিত করা সম্ভব। আইনের মারপ্যাচ একজন অভিযুক্তকে মুক্ত ভাবে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। এক ইংরেজী নববর্ষের রাতে টিএসসিতে বাঁধন নামের এক মেয়েকে বস্রহীন করার পরে দীর্ঘ কয়েক বছর মামলা চলার পরে আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন পূর্বে একটি সংবাদ পড়েছিলাম,
গাজীপুরের এক মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার পরে মামলা করেছিল। ছয়টি তারিখে কোর্টে এসেও আসামীর উকিলের গড় হাজিরার কারনে, অদ্য পর্যন্ত সে মামলার কোন কার্যক্রমই আরম্ভ হয়নি। কত বছর ঐ মেয়ে কোর্টে আসার ধৈর্য বজায় রাখবে? সে আদৌ কি বিচার পাবে?

দেশে যে ভাবে জঙ্গি তৎপরতা আরম্ভ হয়েছিল, স্বাভাবিক আইনের আওতায় কি তা দমন করা সম্ভব ছিলো? জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই, সায়েখ রহমান এর স্বাভাবিক আইনে বিচার হয়েছে, বন্ধ হয়েছিল দেশে তাদের তৎপরতা? দুই ধর্ষককে হত্যা করেছিল হারকিউলিস। সমালোচনার পরে তা বন্ধ এখন। ধর্ষন তো মহামারীর মত হয়েছে দেশে। মাদক এর প্রসার কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কিছুটা যারা চোখ কান খোলা রাখেন, তারাই জানেন। প্রচলিত আইনে এদের বিচার করা সম্ভবই না। মাদক নিয়ে গ্রেফতারের কিছুদিন পরেই এরা জামিন নিয়ে আবার মাদকের ব্যবসা আরম্ভ করে। এদের কিছুর মৃত্যু হচ্ছে ক্রসফায়ারে। যদিও এর গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ক্রসফায়ার সমর্থনযোগ্য নয়, তবে কিছু সময়ের জন্য এটি সমর্থন করা যায়। জংলীদের জন্য জংলী আইনই ভালো।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

  • শামীম চৌধুরী

    এই সমস্ত সন্ত্রাসীদের জন্য আমি ক্রসফায়ার পুরোপুরি সমর্থন করি। কারন এই নয়ন বন্ড যতবার আইনের আওতায় এসেছে ততবার আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো সেই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। তার কাছে আইন ও শাস্তি বলতে মনে হচ্ছে এটা কোন আইন না। যার জন্য সে তার দল গড়তে যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছে এই আইনের কাছেই। তার দলের লোকদের সে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে জামিনে বের হওয়া যাবে। যার জন্য তার দিন দিন সাহস ও অপকর্মের প্রতি লোভ বেড়েই চলেছে। সে মনে করেছিলো প্রকাশ্যে দিবালোকে চাপাতি দিয়ে খুন করলেও সে আইনের সহায়তায় জামিনে বের হয়ে আসবে। তাই ক্রসফায়ারই হচ্ছে উপযুক্ত শাস্তি। যা দেখে অন্যরাও ভয়ে ও আতঙ্কে থাকবে।
    ছোট্ট একটা সত্য ঘটনা বা কাহিনী বলি। সুইডেন আসলাম সবগুলি মামলায় জামিন পাবার পরও সে বাহিরে আসতে চায়নি যার জন্য একটি মামলায় সে জামিন নেয়নি। কারন অনেক দাগী সন্ত্রাসী জামিনে বের হবার পরও ক্রসফায়ারে মারা গেছে। ক্রসফায়ারের এই ভয়টা সবাই পায়। তাই এখন পর্যন্ত সুইডেন আসলাম দ্বারা কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয়নি।

  • শাহরিন

    ক্রস ফায়ার এ আমি ও সমর্থন করি না, তবে এই বেলায় ঠিক হয়েছে।
    রাষ্ট্রের পক্ষে সব কিছু এতো সূক্ষ ভাবে দেখা ঠিক না। সব দোষ সরকারের নয়। সরকার যখন রোহিংগা, মাদক, জংগী দমন এর মত বড় বড় কাজে ব্যাস্ত তখন এলাকার কোন পুচকে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হতে যাচ্ছে এটা না খবর পাওয়া স্বাভাবিক। একদম ঠিক কাজ হয়েছে। আর থলের বিড়াল যখন বেশী লাফালাফি করবে তখন তারও ব্যাবস্থা হবে বলে আমার বিশ্বাস।

  • মাসুদ চয়ন

    আপনার এই সময়পযোগী আলোচনা_আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভয়ার্ত অন্ধকারকে তুলে এনেছে।এ থেকে মুক্তি হচ্ছেনা কিছুতেই।এমন গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ জানাই।তরুন প্রজন্ম অনুধাবন করুক।

  • মোঃ মজিবর রহমান

    ক্রসফায়ার সমর্থনযোগ্য নয়, তবে কিছু সময়ের জন্য এটি সমর্থন করা যায়। জংলীদের জন্য জংলী আইনই ভালো। সহমত>
    কিন্তু আমার কিছু অবাধ্য প্রশ্নআছে।
    ১. দেশের গরিব, অসহায় তরুন সমাজের বেকার, চাকরীহীন, অভাবগ্রস্ত সন্তান্দের সমাজের প্রভাবশালীদের স্বার্থে ব্যাবহার। যখন স্বারথ ফুরিয়ে যায় বা আইনের চোখে দগদগে আসামী হয় তখন ফেলা হয় কেন??
    ২. এই অসহায় বেকার তরুন্দের দিয়ে চাদাবাজ বানিয়ে যখন ফুল চাদাবাজ হয়ে কাল্পিটে হয় তখন তারা গ্রেট খারাপ ফেল দাও।
    ৩. এরা যখন গ্রুপের বাহিরে পা বাড়ায় বা বেশি করাপ্ট হয় তখনই ছেটে ফেলা হয় কেন???
    যেমন রানা প্লাজার রানা আরো অনেক আছে। এথেকে বাচার উপায় কি????

  • মনির হোসেন মমি

    ক্রসফায়ার কখনো সমর্থন করা যায়না বা করাটা ঠিক না কিন্তু উপায় কি?
    বিচার করবেন-এখানেও এ দেশে সমস্যা।বিচারিক কাজ যখন থলের বিড়ালের কাছাকাছি যায় তখন বিচারের মোড় অন্য দিকে যায় অথবা ঝুলে থাকে লং টাইম।এক সময় এ ঘটনা যখন সবাই ভুলতে বসে তখন এর বিচার কার্য ঐ পর্যন্তই থেমে থাকে।আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জে সেভেন মার্ডারের কথাই বলুন আর বিশ্বজিৎ সাগর রুনি তনু মনুর হত্যাই বলুন সব একই সূত্রে গাথা।

    লেখাটা খুব ভাল হইয়েছে।

  • তৌহিদ

    আমার মনের কথাগুলিই আপনার লেখায় ফুটে উঠেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যা আমি সমর্থন করিনা। তবে কিছু সময় হয়তো এর প্রয়োজন আছে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি দেশের প্রচলিত আইনে প্রকাশ্যে একজন ধর্ষকের ফাঁসি হতো। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অবশ্য কর্তব্য।

    সমসাময়িক এমন একটি পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড কোনো অবস্থাতেই গ্রহন যোগ্য নয়। একটি স্বাধীন দেশে বিচার ব্যবস্থাকে এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। প্রয়োজনীয় সব আলামত থাকার পরেও অপরাধীকে সাধারন বিচারের আওতায় না এনে ক্রসফায়ারে নিক্ষেপ করা প্রশাসনিক দুর্বলতাকে বিতর্কিত করে।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ