ধর্ষণ প্রেক্ষাপট

মাসুদ চয়ন ৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৫:২০:১৩অপরাহ্ন সমসাময়িক ২১ মন্তব্য

#ধর্ষণের দায় পুরোপুরি রাষ্ট্রব্যবস্থা ও পরিবারতন্ত্রের উপর বর্তায়"
----------
এভাবে আঁড়াল থেকে গর্জে উঠে কোনো লাভ হবেনা! যতই বিদ্রোহী আওয়াজ তুলুন মুক্তি আদৌ মিলবেনা।সিস্টেমটা এভাবে দাঁড়িয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই।
কিচ্ছু করার নেই। ধর্ষণ এখন চর্চার রুপক অর্থেে জৌলুশ ছড়াচ্ছে। নিয়মিতই এর রেশ বিস্তৃত হচ্ছে চারপাশে।শিশুরাই মূল টার্গেটে পরিনত হচ্ছে।কারণ তাদেরকে রাজি করানো সহজ। আপনি যেই সময় একটি ধর্ষণ বিষয়ক স্ট্যাটাস লেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন,আপনার শরীরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ভয়ে যন্ত্রনায়।ঘেমে অস্থির হয়ে বিক্ষোভ পুষছেন হৃদয় গহীনে,ঠিক সেই সময়ে আরও শত শত শিশু/নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে একইভাবে।আপনার দৃষ্টিসীমার অগোচরে থেকে যাচ্ছে ঘটনাগুলো।যতোগুলো ঘটনা বাস্তবে ঘটছে_তার এক চতুর্থাংশও আপনার বা আমার চক্ষুপেয় হচ্ছেনা। সব খবরতো আর ভাইরাল হওয়ার মতো নয়।সব খবরে কি আর ইন্টারেস্ট থাকে! বাঙালী মস্তিষ্ক ইন্টারেস্ট প্রিয় ইস্যুকে ভালোবাসে।নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা ধর্ষিত হলে ধামা চাপা দেয়ার আয়োজন চলে।কারণ ওখানে ইন্টারেস্ট ইনভেস্ট দুটোই কম।

হাজারে দু'একটা ফোকাসে আসে অমন ঘটনাগুলো।মিডিয়ার সমস্ত ফোকাস উন্নত স্তরের মানুষদের নিয়ে।
এই যেমন মাদ্রাসা,স্কুল,কলেজ,­ভার্সিটি,শপিং কমপ্লেক্স,রেস্তোরা,আবাসিক এলাকা। হাই প্রোফাইল কাভারেজ দিতে তাদের সমস্ত সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
অথচ তারা জানেনা-এমন একটি ভাইরাল ইস্যু,সহস্র বিকৃত চেতনাকে উস্কানি দিচ্ছে ঠিক সেই সময়ে। ধর্ষণ কি শুধুমাত্র একটি আলোচিত খবর,আর কিছুই নয়!
কি আশ্চর্য!তারাতো এই মনোভাবেই প্রচারণা চালচ্ছে-পরিত্রানের উপায় নিয়ে গঠনমূলক কাজ পরিচালনা করছেনা।

যে জীবনটি লজ্জার চাদরে চিরদিনের মতন হারিয়ে গেলো-শুধুই কি তারটা হারালো।সে খবর কেউ রাখেনা কেউ না। এতো এক স্বাভাবিক ঘটনা তাই নয় কি!আহা!কত্তো সহজে ভেবে নিলাম। গভীরে গেলাম না। হিউম্যান রিসোর্স কিচ্ছু করছেনা। ওইসব মহিলার আলোচনা দেখলে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে।
নিয়মিত ঘটছে ধর্ষণ ল। এভাবেই চলছে বাঙালী/বাংলাদেশী জীবন।এদেশের শতকরা ৫০ ভাগ পুরুষই নীরবে ধর্ষক মনন লালন করছে। কল্পনায় লক্ষ লক্ষ রমনীকে ধর্ষণ করে চলেছে। সুযোগ আসলে ছাড়া পাওয়ার উপায় নেই,জাস্ট মাইন্ড ইট। ওরা মুখোসের আঁড়ালে ভদ্র মানুষ নম্র মানুষ।
তাহলে আপনি নারী হয়ে কার কাছে আশ্রয় চাবেন? নারীর আশ্রয়তো নারীও নয়। একে অপরকে শত্রু মনে করে হেয় করতে চায়।
আপনার নিজের পরিবার সদস্যেের মধ্যেও ধর্ষক লালন করছেন। আপনি হয়তো জানেন-তবুও না জানার ভান করছেন।

এখন প্রশ্নটা হচ্ছে এর পেছনের মূল কারণটা কি! আর পরিত্রানের উপায়ই বা কি!
অনেকে বলবেন-নারীর স্বাধীন চলাচল,পর্দাশীলতার অভাব। কেউ বলবে ধর্মীয় শিক্ষায় গলদ আছে। কেউ কেউ সরাসরি পুরুষকে দোষারোপ করবে-তাদের যুক্তি-এটা পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ।
এমন বিকৃত কারুকাজ বহুকাল ধরে চলে আসছে।অনেকে বলবে আইনের শাসন নেই,বিচার বিভাগ নিষ্ক্রিয়।
এগুলো কোনোটাই মূল কারণ নয়। একে অপরের ব্যক্তিগত মতামত মাত্র। যার চেতনা যেমন সে সেভাবেই চিন্তা করবে।একে অপরের দিকে কাঁদা ছুড়বে। আদৌ কি এরা মুক্তির স্বপক্ষে কিছু করার যোগ্যতা রাখে,কখখনো না।
আমাদের মূল কারণ সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
ধর্ষন এবং যৌন মিলন দুটিই একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন জৈবিক ক্রিয়া। একটিকে পাশবিকতা এবং অন্যটিকে শিল্প চর্চা বলে আখ্যান দেয়া হয়। প্রক্রিয়া কিন্তু একটাই,পাশ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ভিন্ন। উত্তরটাও ওখানে লুকায়িত। বাঙালী মনন ঠিক এই জায়গায় পিছিয়ে পড়েছে। তাদের শিল্প বিকশিত মন নেই। তাদের যৌন জীবনে শিল্পের ছোঁয়া নেই প্রেম ভালোবাসা নেই।
তারা আজও জানেনা সুস্থ যৌনাচার প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই তারা আঁড়ালে কষ্ট পুষে রাখে।ভালোলাগা ইচ্ছে আকাঙ্খা মুক্ত ভাবে প্রকাশ করতে জানেনা। এভাবে তাদের মধ্যে বিকৃত চেতনার বীজ বপিত হতে থাকে।যখন সীমা অতিক্রম করে,ঠিক তখনই তারা ধর্ষক হয়ে ওঠে। তার মানে ধর্ষণের বিকাশ ঘটার জন্য কোনো ব্যক্তি মানুষ দায়ী নয়। আমাদের পুরো সামাজিক সিস্টেমটাই দায়ী। আমাদের শিক্ষার শেকড় ভন্ডামোর গলদে পরিপূর্ণ। তাই নৈতিক মূল্যবোধ মানবিক নিমগ্নতা হারিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের মানবিক মূল্যবোধ অন্য সভ্যতা হতে বহুগুন পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই আজ পশুরাও আমাদের থেকে মানবিক।
শিক্ষক,ডাক্তার,বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও এমন বিকৃত চেতনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।রাষ্ট্রকে এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।শিশুদের পাঠ্যচর্চায় সুস্থ যৌন বিষয়ক আলোচনা থাকতে হবে।
সুস্থ যৌনাচার এবং বিকৃত যৌনাচারের পার্থক্য সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিতে হবে। আত্নকেন্দ্রিক পরিবার তন্ত্র থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। অন্যের সন্তানকেও নিজের সন্তানের চোখে দেখতে হবে।
মনে রাখবেন আপনার ঘরের শিশুটিও ধর্ষক হয়ে উঠতে পারে। যদি আপনি নৈতিক স্বচ্ছতার শিক্ষা দিতে না পারেন। সার্টিফিকেট গত শিক্ষা শুধু চাকরি দিবে।আর কিচ্ছুনা কিচ্ছুনা!
এর সাথে নারীদের সাহসী ভূমিকা একান্ত কাম্য। আর কতোকাল নিজেকে নারী পরিচয়ে খোলসবন্দি করে রাখবেন? নিজেকে মানুষ নামে ডাকুন। অনেক নারীই প্রগতিশীল চেতনায় বিকশিত হচ্ছে। আপনি নন কেনো? মনে রাখবেন আপনার চেতনা আপনার মেয়ে শিশুটির মধ্যেও জন্ম নিচ্ছে।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ