যে মায়ের জঠরে জন্ম তোমার তাকেই করো ধর্ষণ।
ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলবে তুমি দেব তোমায় নির্বাসন।
জেগেছে বাঙালি আজ জেগেছে বাংলা
ধর্ষক তুমি যেই হও মৃত্যুদন্ড হোক শান্তনা।

ধর্ষণ একটি মনোবৈকল্যের সামাজিক ব্যাধি। সারা বাংলায় নীরবে ঘটে চলছে। লজ্জায় ঘৃণায় কেউ প্রকাশ করে না। কেউ কেউ আত্নহননের পথ বেছে নেয়। তখন মানুষ একটু নাড়াচাড়া দেয় আবার থমকে দাঁড়ায়।

সাম্প্রতিক কালে এই করোনার দু:সময়ে এই পশুশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মানুষের ধৈর্যশক্তি ভেঙে পড়েছে। কারণ কিছু মুখচেনা মানুষ ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়ায় বলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাই মানুষ প্রতিকারে আজ রাজপথে নেমে পড়েছে।
কারন চলতি বছরই খাগড়াছড়িতে একদল নরপশু মা বাবার সামনে মেয়েকে গণধর্ষণ করেছে। প্রতিক্রিয়া হীন দেশে ঢাবি এলাকায় পাহাড়িদের ছোট একটা মানববন্ধন হয়েছে।

এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ভিপি সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মামলা করাতে তারা আবার বুক ফুলিয়ে পাল্টা মিছিল করেছে। তাদের পক্ষে প্রখ্যাত আইনজীবি আর এনজিও ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে গেল। আজ ৭ই অক্টোবর ধর্ষণ মামলায় ১৭ দিন পার হলেও ডাকসুর সাবেক ভিপি সহ ছয় আসামীর কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় আত্নহত্যার হুমকী দিয়েছে আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের কাছে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে আমরণ অনশনে বসেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জলি তালুকদার।(২০.৯.২০)

এরপরে একে একে অসুস্থ স্বামীকে রক্ত দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রী ধর্ষণ, সিলেটের এমসি (মুরারী চাঁদ) কলেজের ছাত্রবাসে একস্ত্রীকে ধর্ষণ, গির্জায় কিশোরীকে আটকে রেখে ফাদারের তিন দিন ধর্ষণ, নোয়াখালীতে গৃহবধূকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ওই নারীর নগ্ন ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া থেকে শুরু করে মেয়ে পাতিয়ে সাধুর নারী ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সিলেটের এম সি কলেজের ধর্ষকদের (যারা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত) যুবলীগ নেতা দুলাল পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তা মিডিয়াতে গুরুত্ব না পেলেও ধর্ষকরা গুরুত্ব পেয়েছে।

এসব ধর্ষণের ঘটনার জেরে নতুন করে সারাদেশে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার উত্তরায় শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এর বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এতে শামিল হয়েছে। ধর্ষকের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পিছপা হয়নি ক্ষমতাসীন দলও।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। গণদাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ধর্ষকদের শাস্তি যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড- করার প্রক্রিয়া চলছে। ধর্ষক যেই হোক তার প্রতি কোন ধরনের সহানুভূতি না দেখানোর ঘোষণা এসেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে। কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি তাদের ফৌজদারি আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে ধর্ষণ মামলা। ইতোমধ্যেই নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সরকারের এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশের জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ধর্ষণ আইনের পরিবর্তন করা হচ্ছে। জনগণের দাবি মোতাবেক ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদন্ড করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ধর্ষণের সব মামলা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা বলেছেন, ধর্ষকদের ফাঁসি হওয়া উচিত। আন্দোলনরতদের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে কারো গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ছাড়াও তাকে প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকার,আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে একটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে- জনগণ বিএনপির কাছে কিছুই আশা করে না  কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে তাদের সব স্বপ্ন পূরণের আশা করে। কারণ, যে বঙ্গবন্ধু ’৭২ সালে পরিবার কর্তৃক বর্জিত বীরাঙ্গনাদের সন্তানের পিতার নাম পরিচয় দিতে না পারার বঞ্চনার কথা জানা মাত্র মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে দ্বিধাহীন চিত্তে উত্তরদিয়েছিলেন- ‘তোমাদের পিতার নামের স্থানে লিখবে শেখ মুজিবের নাম।’
জনগনের যৌক্তিক আন্দোলন যখন সার্থক পরিণতির দিকে যাচ্ছে তখন আবার অশুভ শক্তি ধর্ষকদের পক্ষে পুলিশের বিপক্ষে শ্লোগান দিয়ে উষ্কানী দিচ্ছে। যে পুলিশ ধর্ষকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। সরকার যখন মৃত্যুদন্ড দেয়ার চিন্তা করছে তখন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে।

ভুলে গেলে চলবে না এদেশ ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জীত। ৩ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ। যেখানে ৫৬% মুসলিম, ৪১% হিন্দু ও ৩% অন্যান্য নারী ছিল। যারা পাকি ভাইদের দোসরদের বিশ্বাস করে ঠকেছিল। গনিমতের মাল বলে পাকি ভাইদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তাদের উত্তরসুরিরা আজ ও সক্রিয়। ৩০ হাজার যুদ্ধ শিশুরা  সমাজে বিদ্যমান  ।

সবশেষে বলি এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি শুধু আইন দিয়ে হবে না যদি না মানসিকতার পরিবর্তন না হয়। সৌদি আরবে কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও আমার মা বোনেরা পিতা পুত্রের কাছে দিনের পর দিন ধর্ষিত হয়ে ও বিচার পায় নি।

এই রোগটি সমাজের সর্বস্তরে বিস্তার ঘটেছে। শাহবাগে বিক্ষোভে মনিরা সুলতানা পপি একটি ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাই নারীদেরকে অবরোদ বাসিনী ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে সম মর্যাদায় সম্মানের সাথে দেখতে হবে। যেভাবে গার্মেন্টসশিল্পের মেয়েরা পুরুষের সম মর্যদায় কাজ করে তাদেরকে সহকর্মীরা ধর্ষণ করে না। ধর্ষণ করে টাউট বাটপার মোড়ল শ্রেনীরলোকেরা।

আর দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির উন্নতি করে মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন করে এই রোগ থেকে মুক্তিআনতে হবে। না হলে সেই তিমিরেই থাকতে হবে।

ছবি নেট , সূত্র জনকন্ঠ।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ