টাইটেল

এস.জেড বাবু ১ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ০২:৫৮:৪০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য

প্রাইমারিতে থাকতে ভাবতাম চোর কেমন হয় !!

সারা শরীরে সরিষার তেল আর পাতিলের তলার কালি মেখে, লেংটি দিয়ে, খুন্তি হাতে, চৌকির নিচ বরাবর সিঁধ কাটে তেমন মানুষটা চোর হবে।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ভাগ্যবান গৃহস্থ চোর ধরবে। স্কুল ছুটির পর তাড়াতাড়ি ফিরেই সিঁধ কাটা দেখতে যাবো। ওরে আল্লাহ, এতো ছোট গর্ত দিয়ে চোর কি করে ঢোকে ?

সন্ধ্যেবেলায় মেম্বার বাড়ির উঠানে, গোল হয়ে বসা শালিশ বৈঠকে, ভীরের পিছন থেকে মামার কাঁধে চড়ে দেখা হতো, সাদা ফতুয়া পড়া চার পাঁচ জন মোড়লের সামনে দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথা নিচু করে মুখ লুকানো, খালি গায়ের লেংটি করা মানুষটার সামনে একটা খুন্তি। ছালার বস্তার উপর তিনটা কাঁসার থালা, দুইটা পিতলের কলস আর একটা সিলভারের বদনা।

জটলার পিছন দিক থেকে নারী কন্ঠের অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ। হেয় তো কিছু নেতে পারে নাই, হেরে মাফ কইরা দেন।

সেগুন কাঠের চেয়ারে আলাদা করে বসা, সবচেয়ে মোটা ভুরিওয়ালা লোকটার দরাজ কন্ঠ- কাইন্দা লাভ নাই, জামাই সামলাইয়া রাখ। তুই আমাগো গেরামের মাইয়া, হের লাইগ্গা শেষ বারের মতো কাল্লুরে মাফ কইরা দিলাম।
এরপর যদি কোন দিন চুরির কতা হুনি, তোরে শুদ্দা গ্রাম ছাড়া করমু।

চারিদিকে সামান্য গুঞ্জন, ওইদিকে চোর মিয়া কুঁজো হয়ে মাথা নুয়াইয়া সাদা পোষাকধারীদের পা ছুঁয়ে যেত গুনে গুনে।

ততক্ষনে আমার চোর দেখার অভিযান শেষ, মামার কাঁধে বসেই উল্টোদিকে মাথা ঘুড়িয়ে দেখতাম, ভাঙ্গা ভীরের মধ্যে ছেঁড়া শাড়ি পড়া মহিলাটির পিছনে দাড়িয়ে খুন্তি ওয়ালা কালি মাখা চোর- শ্রমের কডা কডা।
কত লজ্জা ছিলো চোরের।
কাল থেকে চোর দেখলে, দুর দিয়ে হেঁটে যাবো। স্কুলে গিয়ে ছুটির ঘন্টায় চোর বেচারার গল্প শোনাবো।

যুগ বদলেছে, আজকাল চোর দেখি চকচকে পার্লার ফেরত কোট টাই পড়া, দামী লেদারের সোফায় বসা, সামনে ত্রিশ চল্লিশেক মাইক্রোফোন আর পিছনে আট দশজন দেহরক্ষী নিয়ে দন্ত উদ্ভাসিত হাসির সাথে কি চমৎকার রঙিন ছবিতে পত্রিকার প্রথম পাতায়।

ওরা অভাবে চুরি করে না, স্বভাবে করে।
ওরা ঘর জামাই না, নিজের বাংলোয় থাকে।
ওদের দেহে মুখে কালি নেই, ওরা ২৪/৭ কেমেরা ফেইস নিয়ে রেডি থাকে।
ওরা ধরা পড়ে মাথা নুয়ে রাখে না, সেলিব্রিটি হয়।
ওদের গল্প স্কুলের বাচ্চারা জানেনা, অনলাইনে ভাইরাল হয়।
ওদের খুন্তি লাগে না, আধা খাওয়া আপেল মার্কা ল্যাপটপ লাগে।
ওদের বিচার আর বিচারক সবাই দেখে না, গল্প শুনে।
ওদের পক্ষে ওদের বৌ থাকে না- এডভান্স পেইড; উকিল থাকে।

ওরা চৌকির নিচ দিয়ে রাতের আঁধারে সিঁধ কাটে না- ভূয়া কাগজ বানিয়ে দিনের আলোয় চা, ঠান্ডা খেতে খেতে, এসির হাওয়ায় বসে, তারের ভিতর দিয়ে চুরির কর্ম সারে।
আবার বিনা তারে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে ব্যাংকের লকারে ঢোকে।

ওরা চুরি করা মাল কাঁধে বহন করে না, অনলাইন ট্রান্সফার করে।

ওদের লজ্জা আছে কি না জানিনা, কার কাছে ধরা খাইয়া, কার কাছে মাফ চাইয়া পাড় পায়- তা ও শুনিনা।শুধু ওদের কালো আয়নার গাড়ি শতমাইল বেগে দৌড়ায় ধূলা উড়িয়ে, আমরা পলিউশানের ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি।

আচ্ছা, ব্যাংক ছাড়া এখনও তো চুরি হয় গ্রামে, গঞ্জে, শহরে। বাস ষ্ট্যান্ড আর লঞ্চ ঘাটে, হাটবারের জটলায়।
তেমন গাঁও গেরামের বখাটে আর পকেটমারদের যদি চোর টাইটেল বলবৎ থাকে,
ডিজিটাল খুন্তিওয়ালা অনলাইন চোরদের অপমান হয় না ?

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ