চিঠি – দ্বিতীয় অংশ

এস.জেড বাবু ২৫ মার্চ ২০২০, বুধবার, ০৪:৪২:২২অপরাহ্ন চিঠি ২১ মন্তব্য

চিঠি - পর্ব দুই

ভাবছি এই চিঠি যদি কোনওদিন লিখা শেষ হয়, মা কে নিজেই পড়ে শোনাবো। এখন আর মা আমার ঘরে যেতে পারে না। শেষ দু’বছর ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।এই আছে এই নেই অবস্থা। আজকাল যদি কখনো উল্টো ফিরে,গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে মা- ধুক করে উঠে বুক, আস্তে করে সন্দেহ নিয়ে মায়ের নাকের সামনে আঙ্গুল রেখে বুঝতে চেষ্টা করি- বিধাতা সত্যিই আমাকে কতটা নিঃশ্ব করে দিলেন। 

শুকরীয়া যে আজও মা আছেন, কখনো বাসায় ফিরে এলে ঝং ধরা কব্জাটা মায়ের কানে কানে বলে- তোমার ছেলে ফিরেছে, দুই ঘন্টা ধরে পাশের টেবিলে যে শূন্য পানির বোতলটা পড়ে আছে, ওটা ভরবে এখনি। মা কে সঙ্গ দেয়ার মতো কাউকে মিলাতে পারিনি এখনো- পেট পুঁজার টানে চাকরি ছাড়তে পারিনি। 

কখনো মনে হয়, এমন ছেলে জন্ম দিয়েও মা আজ কত অসহায়- কখনো মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় মানুষ তো আমি, নিজে। 

সকালের নাস্তা রেডি হলে নিজেই দিয়ে আসি মায়ের ঘরে। মা নিজেই রুটি ছিড়ে খেতে পারেন, আমি অপেক্ষায় থাকি, সময় পেলে মা কে ফেইসবুকের হাস্যকর সব কৌতুক পড়ে শুনাই, কখনো সোনেলার প্রিয় কোন ভাই বা বোনের চরম প্রিয় কোন ধারাবাহিক লিখার এক অংশ। মায়ের খাওয়া শেষ হলে ঔষধ তুলে দিই মুখে। এরপর সকালের ছুটি। 

মা কখনো বলেন, শরীরের অসুখের ঔষধ তো দিলি বাবা, মরার আগে মনের অসুখটা যদি সারতো। আমি বরাবরই চুপ করে থাকতাম, আজও চুপ করেই থাকি। কারণ এক বন্ধু বলেছিল- এই বয়সে মায়েদের মনের ঔষধ হল ছেলের ঘরের “নাতি নাতনী”। ভাবছিলাম, সাহস করে বৌ ঘরে আনলেও নাতি-নাতনী পর্যন্ত গড়াতে কত সময় লাগবে। হিসেব করতে করতে মায়ের মনের অসুখ মনেই বইল, একমাত্র সন্তান একলাই রইল, মেয়ে দেখতে যাই যাই করে ছত্রিশ পেড়োয়, পছন্দ করতে করতে আজ আমি চল্লিশের কোঠায়। 

পছন্দ !!

আচ্ছা ! এখনো কি পছন্দ করার মতো অধিকার টা আমার আছে? বয়স সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি আমায়? 

-০-

চলবে__

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ