কৃষি সেবা:

কৃষককে  উন্নত ও যথোপযুক্ত কৃষিসেবা দেবার লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে  দ্বিতীয় শ্রেণীর কৃষি কর্মকর্তা নিয়োজিত করেছেন। যাকে লালন- পালন করা হয় কৃষকের টাকায়। যার নাম উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা বি,এস। যাকে পূর্বে ফিল্ড অফিসারও বলা হতো।

এই কৃষি কর্মকর্তার কাজ হলো কৃষকের জমি ঘুরে ঘুরে দেখা। জমিতে পোকামাকড, রোগবালাই এর আক্রমণ হলো কিনা কিংবা হয়ে থাকলে তার প্রতিকার ও প্রতিশেধক কি তা কৃষককে বাতলে দেয়া। এছাড়া কৃষি উন্নয়নে প্রান্তিক কৃষক লেভেলে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন মিটিং/ কর্মশালার আয়োজন করা। প্রতিবছর উদ্ভাবিত নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল আসে সেগুলো সম্পর্কে জানানো এবং কৃষকদের ট্রেনিং দেয়া।

আমার এলাকার কৃষি অফিসারের চেহারা অনেকেই দেখেন নি। তবে যে কোন সমস্যায় তার সাথে ফোন দেয়ার জন্য নাম্বার দেয়া আছে। অধিকাংশ সময়ই তার এই ফোন নম্বরটি অফ পাওয়া যায়। আর ফোনে পাওয়া গেলেও তিনি আসতে নারাজ বিশেষ ব্যস্ততার অজুহাতে।

এবছর আমি মোট আবাদী জমির দু- একরে চিকন জাতের আটাশ ধান লাগিয়েছি। আশেপাশে অনেকেই এমন ধান লাগিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী জমির মামার ফোনে এসে দেখি সদ্য বের হওয়া ধানের শিষগুলি হঠাৎ সাদা হয়ে যাচ্ছে। বি,এস সাহেবকে ফোন দিয়েছেন অনেকেই, তিনি আসেননি। আমি ফোন দিলে  তিনি ফোনেই ওষুধ বাতলে দিলেন কিন্তু তার দেয়া ওষুধ দুবার স্প্রে করার পরও কোনো লাভ হয়নি।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও তিন লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন। তাদের জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নানাবিধ অবহেলার কারনে বছর বছর কৃষকের ক্ষতি হলেও তাদের দেখার বা কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না।

ধানের বাজার দর:

সরকার প্রতিবছরই কৃষকের ধানের একটা নির্দিষ্ট দর ধার্য করে দেন এবং সে অনুযায়ী কিনেও থাকেন। সরকার প্রান্তিক লেভেলে হয়তো খোঁজও পান না যে কৃষক আসলেই সেই বাজার দর পাচ্ছেন কিনা! কারন এই ধানের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে লটারী হয়। যাদের নাম ওঠে তারা কৃষি কার্ড দিয়ে ধান সরকারী গোডাউনে দিয়ে টাকা নেবে।এমনটা বলা হলেও বাস্তবে তা হয় না। নাম উঠে অধিকাংশ দলীয় ও এমন কৃষকের  যার জমি মোটে ২৫ শতক।

দলীয় উৎসাহী নেতাগণ এদের কাছ থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে কার্ডটি কিনে নেয়। তারপর নিজেদের ধান নিয়ে  সরকারী গোডাউন ভরিয়ে ফেলে। যেখানকার বাউন্ডারীতেও সাধারণের প্রবেশের সামর্থ্যও নেই। কিন্তু দেশব্যাপী টিভি, পত্রিকায় বিরাট প্রচার হয় ন্যায্যমূল্যে কৃষকের কাছে ধান কেনা হচ্ছে।

এদিকে বিরাট জোট হলো মিল মালিক ও স্থানীয় পাইকাররা বা দালালরা। তারা একটা দাম নির্ধারণ করে যেটা সরকার থেকে ২০০/৩০০ টাকা কম।এ দরেই পাইকাররা ধান কিনে মিল মালিকদের দেয়। তারা সেই ধান থেকে মোটাকে চিকন, পাইলিং, মোমপালিস ইত্যাদি মানা কর্মকান্ডের পর বাজারে ছাড়েন।

ক্রেতা হলো আর এক ধরা খাওয়া পাবলিক। সাধারন মোটা চাল কাট- ছাঁট করে তার নাম দেয় মিনিকেট। আরাম করে অতি উচচদামে কিনে নিয়ে তাই খায়। যেমন সম্প্রতি তরমুজ কেলেংকারী আমরা সবাই দেখলাম। কৃষক তরমুজ নিয়ে বসে আছে। কেনার লোক পাচ্ছে না অথচ দালাল শ্রেণী কৃত্তিম সংকট তৈরি করে জনগনের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা লুটে নিচ্ছে। এভাবে বছরের পর বছর সকল উৎপাদিত কৃষিপন্যে উৎপাদনকারী ও ক্রেতা দুশ্রেনীই ঠকে আসছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যার কোন প্রতিকার নেই। অতিসত্তর সকল পন্যে নজরদারী বাড়িয়ে কৃষক এ ক্রেতাকে রক্ষা করা দরকার।

কৃষকের জন্য বরাদ্দ ভর্তুকি:

বন্যা কবলিত, অনাবাদি- পতিত জমি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সরকার কিছু ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। যেমন- বীজ, সার, ওষুধ এসব। আমি একবার শুধু এককেজি সরিষা আর ৩০ কেজি সার পেয়েছিলাম। কি করবো তার সঠিক নির্দেশনা নাথাকায় সরিষা ভেঙ্গে তেল খেতে হয়েছে। অথচ আমাদের দু- একর এক আবাদী পতিত জমি। এরকম আশেপাশে আরও অনেকের জমি আছে। কৃষি কর্মকর্তা আদৌ জানেন কিনা আমার জানা নেই। এইসব লোকজন কখনোই কোন সরকারী সহায়তা পান না। বি,এস তাদের খোঁজও নেন না। হয়তো তিনি সবার সাথে সখ্যতা করতে পছন্দ করেন না তাই খোঁজ নেন না।

তবে তার সুনিদিষ্ট কিছু সখ্যতা রয়েছে। যাদের কাছে তিনি নিয়মিত নিজেই যান এবং বিভিন্ন পরামর্শও দেন। সরকারী যেসব কৃষক বরাদ্দ আসে তা তাদেরকেই দেন। এখন সেই কৃষকের জমি পতিত বা বন্যা কবলিত থাকুক বা নাই থাকুক তা দেখবার বিষয় নয়!

‘ কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ’- এই স্লোগান যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে অতিসত্ত্বর এই সব অনিয়ম ও দূর্নীতি রোধ করা একান্ত আবশ্যক!!!!

চলবে——

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ