এলোমেলো কিছু কথা…**তেইশ**

নীলাঞ্জনা নীলা ১ জানুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ০৯:০৬:৪৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

নতূন বছরের শুভেচ্ছা...
নতূন বছরের শুভেচ্ছা...

একেকটি সময় একেকরকম অনুভূতির জন্ম দেয়। তাইতো আমরা একঘেঁয়ে জীবন থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকি। এমন যদি হতো, কোনো পরিবর্তন নেই একেকটি মুহূর্তের, কেমন হতো! এই যে শৈশব থেকে কৈশোর আসে, কৈশোর থেকে তারুণ্য আর তারুণ্য থেকে বৃদ্ধকাল। জীবনের একেক ধাঁচে কতোই না ভিন্ন ভিন্ন রূপ! সেই ছোটবেলায় মনে হতো কবে বড়ো হবো? আজ অনেক বড়ো হয়ে যাবার পর মনে হয় ইস কেন যে বড়ো হোলাম! আমরা কেউই নদীর ওপারের দীর্ঘশ্বাস দেখিনা, শুধু ভাবি এপারেই যতো না-পাওয়া। আসলে কি তাই? আমরা প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে কতো কিছু পাচ্ছি, পাশাপাশি হারিয়েও ফেলছি। কিন্তু হারানোটুকুই আমাদের কাছে বেশী দামী হয়ে যায়, পাওয়াটুকু ম্লান পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাসের ভেতর। আর তাই মানুষের একমাসের দুঃখ বারো মাস শুধু নয়, আজীবন চলতে থাকে। আর দুই মাসের আনন্দ-ভ্রমণ কয়েক পলের জন্য উঠে আসে, সেটাও দীর্ঘশ্বাসেই। কেউ স্বীকার করবে না যে সে ভালো আছে। আবার অনেকেই লুকিয়ে রাখে দুঃখ "ভালো আছি"র মিষ্টি হাসি দিয়ে।

কিন্তু আমি ভালো থাকি, আসলে ভালো থাকাটাকে একেবারে অভ্যেস করে নিয়েছি। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে মনে মনে বলেছিলাম ২০১৬ সাল আমার জীবনে একেবারে অন্যরূপে আসবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি এক অন্যরূপেই শুরু হয়েছিলো। আজ এ বছরের শেষ দিন, আর কখনো ফিরে আসবে না। কিন্তু আগামী দিনগুলোতে আজকের এই দিনটা অন্যভাবে মনের মধ্যে আসবে। যাক সেসব কথা। মনে পড়ে যখন স্কুলে পড়ি, থার্টি ফার্ষ্ট মানেই আনন্দ। নতূন বইয়ের গন্ধ নেয়ার, স্কুলে নতূন ক্লাশে উঠে মনে মনে ভাব নেয়ার। আমিও সিনিয়র এখন। যখন ক্লাশ এইটে পড়ি তখন থার্টি ফার্ষ্টে ঢাকায় ছিলাম। মনে পড়ে দাদা(আমাদের সবার বড়ো ভাই বাবুনদা) রাতে মামনিকে এসে বলছিলো বাইরে যাবে। আজ বিশাল হৈ-চৈ আর আনন্দ হবে গুলশানের দিকে। তখনই জানলাম থার্টি ফার্ষ্ট এমনও হয়! অনেক রাতে ফিরে এসেছিলো দাদা। আর শমশেরনগর চা' বাগানে থাকার সময় সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি পোষ্টার বানাতাম কালার পেপারে লিখতাম Happy New Year আর সালও লেখা থাকতো। ঠিক বারোটার সময় প্রথমেই বাপির কানের কাছে গিয়ে জোরে বলতাম Happy New Year বাপি। বাপি উঠে যেতো। আমার কপালে আদর দিতো। মামনির ঘুম খুব কম, হাল্কাও। তাই মামনিকে ডাকার আগেই উঠে বসতো। আর প্রতি বছর সকালে উঠে বাপি লিভিং রুমে এসে দেখতো পোষ্টার আর দু'পাশে দুটো বেলুন লাগানো। কিন্তু ভাব ধরতো এভাবে, "তুই দেখি পোষ্টার লাগাইছোস!" তবে থার্টি ফার্ষ্ট রাতে আমাদের সাধু বুড়াকে বলতাম Happy New Year কও বুড়া। বুড়াও বলতো চোখ কচলে কচলে। ইস কি জ্বালিয়েছিলাম! আর বাসার চৌকিদারদের তো ঘুমই হারাম হয়ে যেতো যখন ঢাকা কিংবা সিলেট থেকে ফিরে আসতাম। সকালে উঠেই ক্ষীরোদ থেকে শুরু করে সবাইকে দিয়ে বলাতাম Happy New Year.

স্মৃতি রোমন্থন আমার বড়ো ভালো লাগে। আনন্দের হাসি চোখে-মুখে চলে আসে। আজ যখন দেখি বাপি-মামনি একা, নিঃসঙ্গভাবে নতূন বছর পালন করছে, আমার আনন্দ তখন আর থাকেনা। ছাত্রজীবনে বেশীরভাগ সময়ই বাসার বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু ছুটি পেলেই চলে আসতাম শমশেরনগরে তাও না জানিয়ে। একা একা কেন এলাম এ নিয়ে বাপি-মামনির কি চিন্তা! কিভাবে বলি মনে মনে ঠিকই টানে তাদের সঙ্গ? কমলগঞ্জ কলেজে যখন ভর্তি হই, বাপিকে বলেছিলাম ইন্টার এখানেই করি। তারপর তো আর এখানে থাকা যাবে না বাপি, বাইরে পড়তে যেতেই হবে। বাপিও রাজি হয়ে গেলো। আসলে বাবা-মায়েরা জানে তার সন্তান কিসে আনন্দ পায়। তারপরেও অনেক আনন্দ জেনেও বাবা-মায়েরা না জানার ভাণ করে। সন্তানরা বেশীরভাগ সময়ই ভুল বোঝে। অথচ বাবা-মা কখনোই তার সন্তানকে কষ্টে দেখতে চায়না। এসব তখনই বুঝেছি, যখন মা হয়েছি। আমার ছেলেটা ওর মায়ের মতো দুষ্টুমী করেনা, কিন্তু ওদের এখনকার সময়ের সাথে আমি অনেক পেছনে পড়ে আছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমন আমরা যন্ত্রের সাথে অতোটা ঘনিষ্ট ছিলাম না। আর এসব নিয়ে অনেক রাগ করতাম একসময়, এখন করিনা। কারণ দেখেছি রাগে ক্ষতি-ই হয়, বরং আদরে কাছে আসে, সব কথাও শোনে। এইতো পাওয়া। সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছি। সামনের বছর অনেক সুন্দর কিছু আসবে আমি এটা জানি। কারণ ঈশ্বর সবসময় কেড়ে নিয়ে যাননা, অনেক বেশী কিছুই দিয়ে থাকেন। হ্যামিল্টনের ২০১৬ সালের শেষ সন্ধ্যা থেকে সবাইকে জানাচ্ছি নতূন বছরের শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।  -{@   (3

                                 Happy New Year 2017.  

হ্যামিল্টন, কানাডা
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং।

**ছবি তোলা থেকে এডিট সব এই এলোমেলো কিছু কথা লেখার মানুষটি-ই করেছে কিন্তু।**

এলোমেলো কিছু কথা…**বাইশ**

https://www.youtube.com/watch?v=CFsD_k80TpQ

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ