বন্ধু মানেই এলিয়ে দেয়া নিরাপত্তার নি:শ্বাস...

তিরি’র দিনপঞ্জিকা :

জুলাই ১২ –
পাগল দুটোকে নিয়ে পড়ছি ঝামেলায়। কি যে করি! প্রিয় আজ নিয়ে এলো ফুচকা। আর অহম আইসক্রীম। দুটোই খেতে পারিনি। এতো দূর থেকে এনেছে ওসব কি আস্ত থাকে? এখন দুটোতে আড্ডা দিচ্ছে। ভাবছি একটু দুষ্টুমী করবো।

জুলাই ১৫ -
প্রিয়র রাগ এই প্রথম দেখলাম। সেদিন ওরা আড্ডা দিচ্ছিলো আর আমি চ্যাঁচিয়ে উঠলাম। পাগলের মতো দৌড়ে এলো দুজনে। বোঝার পর প্রিয় এমন রাগ করলো। বলল, "দুষ্টুমী এসব নিয়ে? এসব কি? তিরি সব মেনে নেয়া যায়, কি করেছো বুঝেছো?" এভাবে উঁচু স্বরে কখনো কথা বলতে শুনিনি ওকে। গত তিনদিন একটাও কথা বলেনি। আজ গিয়ে হাসি ফুঁটলো। বলেছি আমায় আর ভালোবাসোনা। তাই না? তাইতো কথা বলোনা। আজ অনেক বেশী ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে,তাও বাইরে গিয়ে। এই দেখো লাফ দিয়ে উঠলো তোমার পরী। তেরছা চোখে চেয়ে এরপর হেসে ফেললো। প্রিয় তুমি কি জানো তোমাকে অনেক ভালোবাসি?

জুলাই ২২ -
কখনো ভাবিনি আমার দিনপঞ্জিকা থেকে একেকটি দিন বাদ যাবে। তুই রে সোনা সব বদলে দিচ্ছিস। তোকে নিয়ে আমার কতো কি ভাবনা! এই তুই কি আমার কথা শুনতে পাস? তোর অপেক্ষায় আরোও দুজন মানুষ কতো যে পাগলামী করে যদি দেখতি। আমার পৃথিবীটাকে আলোয় ভরে রাখিস রে সোনা।

জুলাই ২৩ -
উফ এ বছর যে আর কতো কি দেখবো। আজ সন্ধ্যায় অহম বাইরে গেলো। রিনী এলো বাসায়। খুব করে ধরলো যেনো বাইরে যাই। বললাম অহম আমাকে মেরে তো ফেলবেই আর প্রিয় কথা বলাই বন্ধ করে দেবে। রিনী তখন ফোন দিলো প্রিয়কে। যাক গেলাম ওর সাথে। প্রিয় গাড়ী পাঠিয়ে দিলো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রিয় রেষ্টুরেন্ট গোধূলী-বেলায় পৌঁছলাম। ভালো লাগলো। যেতেই তো সবাই তারস্বরে চিৎকার। গিয়ে দেখি প্রিয় আর অহম এসব এরেঞ্জ করেছে। চোখ ভরে জল চলে এলো। প্রতিটি মেয়েই মা হয়, এমন ভাগ্য ক'জনের জোটে?

জুলাই ২৪ -
আজ প্রিয়'র জন্মদিন গেলো। এজন্যই গতকাল পার্টিটা হলো। তাও আজ আমি ছোট্ট করে ওর জন্যে একটা পার্টি দিলাম। রিনী ওরা এলো, আর সবথেকে যা মজা পেলাম রিনীর বড়ো ভাই উচ্ছ্বাসও এলো। অনেকগুলো বছর পর দেখে বুঝলাম, আবেগেরও মৃত্যু ঘটতে পারে। বরং বুকের ভেতর একধরণের আনন্দাশ্রু তোলপাড় করছিলো প্রিয়র দিকে চেয়ে। অহম এসে বললো, "এই মুটিটা আয় তো নাচি তোকে নিয়ে।" নাচতে কি আর পারি? প্রিয় সবার মধ্যে হাতটা ধরে, হাঁটু ভাঁজ করে বললো, "এমন একটি সময় আমাকে দিয়েছো তুমি, এজন্য আজীবন কৃতজ্ঞ।" এতো লজ্জ্বা লাগছিলো আমার, কিছু বলতে পারিনি। প্রিয় অনেক ভালোবাসি তোমায়। আদুরে এমন মূহুর্ত দিয়েছো আমায়।

জুলাই ২৭-
আজকাল অনেক বেশী ক্লান্তি লাগে। প্রিয়কে বলিনা কিছু, এমনিতেই অনেক অস্থির থাকে। কি এক অপেক্ষা দেখি ওর চোখে! কুঁড়ি সোনা তোর বাবাকে কখনো কষ্ট দিসনা।
আগষ্ট ৫ - তুই কি রে? কবে আসবি? তোকে অনুভব করছি, চোখের সামনে এসে দাঁড়াবি কবে? পৃথিবীটাকে তোর কাছে নিয়ে ফেলেছি। বুঝিস সেটা? মনের আনাচে-কানাচে তোর ওম ওম উষ্ণতা। কচি কচি আঙুলের স্পর্শ আমার গালে, চলে আয়।

আগষ্ট ৬ -
সকাল এগারোটায় ফোন এলো। ওপাশ থেকে কারো কথা শোনা যাচ্ছিলো না। হঠাৎ "হ্যালো"...বুঝলাম উচ্ছ্বাস। এতো সাধারণভাবে কথা বলতে পেরে অবাক হয়ে গেলাম। উচ্ছ্বাস বললো, "অনেক সুখে আছো।" বললাম আসলেই ভাগ্য ভালো আমার অনেক, প্রিয়'র মতো স্বামী পাওয়া যায়না। বললাম উচ্ছ্বাস এখন যে রাখতে হবে। প্রিয় এসেছে অফিস রেখে। ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ও। চোখ দিয়ে কথা বলা মানুষটা আমার।

আগষ্ট ৭ -
অহম আজ একগাদা বাজার করে ফিরলো। ফিরে এসে বলে, "এখানে বস। ফুলটুসীটাকে গান শোনাবো।" কতো বছর পর অহম গিটার বাজিয়ে গান গাইলো। উপমা চলে যাবার পর আর কোনোদিন গিটার বাজায়নি, গানও না। ভালোবাসা মানুষকে কিভাবে বদলে দেয়, সেটা নিজেকে দিয়েই তো বুঝি। প্রিয় অনেক কিছু যেমন ছেড়ে দেয়া যায়, অনেক অপ্রিয়কে জড়িয়েও নিতে শেখায়। ভালোবাসা তাই আস্ত পাগলামী। খুনসুটি নেই যে সম্পর্কে, সেটা শেষ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। গান শেষ করে বলে, "চাকরীটা ছেড়ে দেবো।" বললাম এসব পাগলামী কথা আর না। বললো ফোন এসেছিলো মারকাটের থেকে দু'দিনের ভেতর যেতে হবে। বললাম শোন আরোও চার মাস বাকী। তখন এসে থাকিস।

আগষ্ট ৯ -
আজ চলে গেলো অহম। পুরো বাসাটা কি যে ফাঁকা! ফুলকুঁড়িটা কি বুঝেছে কে জানে! একেবারে চুপ, নেচে উঠছে শান্তভাবে। সব সময় কোথাও যাবার আগে কপালে একটা টোকা দিয়ে যায়। সেই একই প্রাণোচ্ছ্বল হাসি দেয়ার কি আপ্রাণ চেষ্টা, কিন্তু পারেনি।

সাতচল্লিশ - তিরির প্রতি
অবশেষে পৌঁছেই গেলাম। আজ না বলে পারছিনা, জীবনে এতো খারাপ কখনো লাগেনি। অভ্যেস হয়ে যাবে যদিও। জানিস তো ভালোবাসা হলো অভ্যেস!!!

তোর অহম

আটচল্লিশ - অহমের প্রতি
মন খারাপ করিস না। আবার আসবি তো। তোর ফুলটুসী জানিস নাচেনা আগের মতো করে। বুঝতে পারছি আরেকটা দুষ্টু আমার জীবনে আসছে। তবে মজা হলো প্রিয়ও তোকে খুব মিস করছে। এমনটি আমি ওকে কখনোই দেখিনি।

আচ্ছা শোন এতো ইন্টু কথা তোকে মানায় না রে ছাগল। সুন্দর হাসি তো দেয়া শিখলি না, কার্টুন হাসিটাই দে।

তোর তিরি

ক্রমশ প্রকাশ্য

হ্যামিল্টন,কানাডা
১০ ডিসেম্বর, ২০১৪ ইং।

ল্যাপটপ নষ্ট হয়েছে আবার। প্রিয় সোনেলায় লেখার তাগিদ থাকে সব সময়ই। ইচ্ছের কাছে ল্যাপটপ পরাভূত, তাই মোবাইলেই পোষ্ট দিলাম এই প্রথম।

 

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ