আমি তোমার জন্য এসেছি-(পর্ব-ঊনিশ)

আরাফ আমি চুলায় রান্না বসিয়েছি একটু অপেক্ষা করো! সকালে খেয়ে যাবে। মিরার কথা শেষ না করতেন আজাদ বললেন, মিরা তুমি টেবিলে খাবার দাও। আরাফ খেয়ে তারপর যাবে বলেই আরাফ এর পিঠে হাত রাখলেন আজাদ।

সবার কথা ফেলতে পারল না আরাফ। সকালের খাবার খেয়ে প্রিয়ার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো সকালের বাসেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল, বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে প্রিয়ার কথা ভেসে উঠল। বাসে থেমে থেমে যাচ্ছে সকালে স্কুল,কলেজ,চাকরিজীবি লোকজন সকালে যাতায়েত করে তাই এই সময়টা রাস্তায় জ্যাম,বাসেও ভিড় থাকে। স্যার বাদাম কিনবেন, আরাফ চোখ খোলে দেখল একজন বৃদ্ধা বাদাম ঠোঙা হাতে দাঁড়িয়ে আছে যদিও ইচ্ছে নেই তবু

বললো ১০ টাকার দেন।

বৃদ্ধা মুচকি হাসিটা উপহার দিয়ে আরাফকে বাদাম দিয়ে পাশের সিটের যাত্রীর কাছে চলে গেল, আরাফ উদাস দৃষ্টিতে জানালার বাইরে চেয়ে রইল।

ওর মনের ক্ষতটা যে প্রিয়ার সৃষ্টি করা এটা সে ভুলবে কি করে, বাসায় ফিরেই বাবা মাকে সব জানাবে আরাফ ভেবে রাখল।

-আরমানের ফোন আরাফ তুমি কোথায়.?

-ভাইয়া একটু বাইরে, কিছু বলবে.?

-হ্যাঁ, আচ্ছা বাসায় আসো পরে কথা হবে।

-ওকে, বড় ভাইয়া।

আরাফকে নিয়ে বাসটা ঢাকায় ফিরলো, স্টেশনে সে কোন প্রকার বিলম্ব না করে খুব দ্রুত সময়ে আরাফ বাসায় পৌঁছল।

দাদুমিন মনটা ভালো নেই দুপুরে খেয়ে নিজের রুমেই শুয়ে আছেন। আজাদ অফিসে, মিরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রতিদিনের মতো প্রিয়াকে নিয়ে কোচিং গিয়েছে, ফিরতে দেরি হবে এর মধ্যে আরাফের কথা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

দুপুর গড়িয়ে রাত নামল আরাফ মায়ের রুমে গিয়ে বসল। মনোয়ারা বুঝতে পারল ছেলে কিছু বলতে এসেছে ছেলে মেয়েরা বড় হলে দরকার ছাড়া তারা বাবা মায়ের কাছে আসে না।

-আরাফ কিছু বলবে..?

-হ্যাঁ মা! বাবা কোথায় দুজনের সামনেই কথা গুলো বলতে চায় আরাফ।

-তোমার বাবা নিচে গিয়েছে তুমি বসো এখনি চলে আসবে।

আরাফ সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে টেনশন যেন আর মাথা থেকে সরাতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে ভাবছে আব্বু্ কি প্রিয়ার বিষয়টা মেনে নিবে! নাকি রাগনিত হয়ে আমার প্রস্তাবটা প্রত্যাখান করে দিবে!

-আরাফ শরীর খারাপ?

- না আব্বু!

-আমি ঠিক আছি।

-তারপর বলো ময়মনসিংহের কি খবর আজাদ, মিরা মা কেমন আছেন.?

-ওহ্ হ্যাঁ প্রিয়া মা-মনি কেমন আছেন.?

-হ্যাঁ, আব্বু সবাই ভালো আছেন আরাফ কথা বাড়াতে চায়নি তাই ছোট করেই জবাবটা দিল।

-শোন আরাফ অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা ধরে অপেক্ষা করছে। তোমার সাথে কি জানি বলবে, আকরামকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলে মনোয়ারা কিচেনে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল।

-তুমিও থাক আম্মু কথা গুলো তোমাদের দুজনের সামনেই বলতে চাই।

-ওহ্ তাই নাকি!

আচ্ছা আমিও বসছি বলেই আরাফের সাথে সোফায় বসলেন মা। আকরাম সাহেব বিছানায় শুয়ে আছেন শরীরটা ক্লান্ত বয়স হয়েছে। বেশিক্ষন হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না, অল্পতে হাঁপিয়ে উঠেন।

আরাফ বাবা,মা দুজনের উদ্দেশ্যে বলে তোমরা চাও আমি বিয়ে করি.?

-মনোয়ারা,আকরাম দুজনে এক বাক্যে জবাব দেয়।

হ্যাঁ চাইত।

আব্বু তাহলে আমি যাকে পছন্দ করি তার সাথেই বিয়ে দিবে.?

-হ্যাঁ দিব।

আকরাম সাহেব হাসি মুখে বললেন,  আরাফ তুমি কাউকে পছন্দ করো.?

-হ্যাঁ।

মনোয়ারা বলেন কে সে নাম পরিচয় দাও! আমরা বিয়ের প্রস্তাব দিব।

আব্বু তোমরা তাকে চিন!

আমরা তাকে চিনি মানে.?

হ্যাঁ আব্বু, আমি আজাদ আঙ্কেলের মেয়ে প্রিয়াকে পছন্দ করি। এটা প্রিয়ার পরিবার জানে না, তোমরা চাইলে আমি প্রিয়াকে বিয়ে করতে চাই।

আব্বু প্রিয়ার বাবা হয়ত অর্থ সম্পদের দিক থেকে আমাদের সমতুল্য নয় কিন্তু মানুষ হিসাবে ওনারা অনেক ভালো। সমাজে পরিচয় দেবার জন্য ওনার সামাজিক একটা অবস্থান আছে।

মনোয়ারার দিকে চেয়ে আরাফ বললো আম্মু আমি অর্থ সম্পদের লোভ করি না। আমার নিজের যা সম্পদ আছে তা অনেক কিছু আমি চাই ভালো একটা পরিবার,ভালো একটা মেয়ে চাই সেটা প্রিয়া মাঝে আছে।

সবকিছু শুনে আকরাম সাহেব হা হা হা হা করে হেসে উঠেন। পাগল ছেলে তুমি জানো! আমি প্রিয়াকে দেখার পর মনে মনে তোমার সাথে প্রিয়ার বিয়ের চিন্তা করে রেখেছি। সেদিন রাতেও তোমার মায়ের সাথে প্রিয়ার সম্পর্কে আলোচনা করলাম।

আরাফ সারাদিন যতটা কষ্টে ছিলো বাবার কথা শুনার পর সব কষ্ট ভুলে গেল। মাকে জড়িয়ে ধরল মনোয়ারা বেগম বললেন শোন বিষয়টা নিয়ে আজাদের সাথে কথা বলো, প্রিয়াকে যাতে অন্য বাড়িতে বিয়া দিবার কথা চিন্তাও না করে।

আরাফের খুশি দেখে কে! এত বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আরাফের আনন্দ ভরা মুখটা দেখে আকরাম সাহেবের বুকটা ভরে গেল। সন্তাদের খুশি আমাদের খুশি, তোমার পছন্দই আমাদের পছন্দ।

আচ্ছা আব্বু আমরা কি প্রিয়াদের বাড়িতে একবার বেড়াতে যেতে পারি না! মনোয়ারা ছেলের খুশি দেখে বলেই ফেললেন।

তুমি চাইলে কালকেই প্রিয়াদের বাড়ি যাব...

আরাফ মায়ের কথা শুনে বাচ্চাদের মতো আবদারের সুরে বললেন চল না, বাবা কালেই প্রিয়াদের বাড়িতে যাই! রাতের ট্রেনেই না হয় ঢাকা ফিরব।

আকরাম সাহেব হেসে বললেন আরাফ যাও ঘুমিয়ে পড় সকালে উঠতে হবে! আর মনোয়ারা, আরমানকে এখনি একবার কল করে বলো আগামী কাল রবিবার সকালে ট্রেনে আমরা ময়মনসিংহে যাব। ওর সেনাবাহিনীর সৈনিকদের দিয়ে তিনটা ট্রেনের টিকেট কেটে রাখতে সকালে স্টেশনে যাবার আগে আরাফ গিয়ে নিয়ে আসবে। কারণ সামনে নির্বাচন এই মুহূত্বে ট্রেনের টিকেট পেতে বেগ পেতে হবে।

ময়মনসিংহ যাবার কারন জানতে চাইলে বলবে, আমরা আজাদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি দরকার হলে ঢাকায় ফিরে সব জানাব।

আরাফ বাবা, মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো দোয়া করো তোমরা, আমার মনের আশা যেন আল্লাহ্ পূরন করেন। সব সময় দোয়া করি বাবা আমার সন্তানেরা যেন ভালো থাকে।

ভোরের ট্রেনে আরাফ,মনোয়ারা, আকরাম সবাই একসাথে ময়মনসিংহে প্রিয়াদের বাড়িতে এসে হাজির। সবাইকে দেখে দাদুমনি তো ভিষন খুশি, স্যার একটা খবর দিয়ে আসলে ভালো হত। ম্যাডাম প্রথম আমার বাড়িতে আসলেন কাজটা ঠিক হয়নি বলেই আজাদ আকরাম এক সাথে হাত মিলিয়ে বুক মিলালেন।

আরাফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সেটা কেউ খেয়াল করছে না।

আকরাম সাহেব মনোয়ারার হাতটা ধরে আজাদের মায়ের রুমে নিয়ে গেলেন। দাদুমনি জোহরের নামাজ পড়ে শুয়েছিলেন আকরামকে দেখে উঠে বসলেন, মা আপনার বউমা আরাফের মা বলতেই মনোয়ারা সালাম করলেন।

আজাদ ডাকল মিরা!

এদিকে আস দেখে যাও কে আসছে! আরাফের বাবা মা আসছে।মানে আমার শ্রদ্ধাভাজন দুজন মানুষ আকরাম স্যার আর ম্যাডাম মনোয়ারা ভাবি আসছেন। তাড়াতাড়ি আস, আজাদের চিৎকারে মিরা ড্রাইনিং রুম থেকে আসলেন। ভাবি কেমন আছেন.? বলেই মিরা মনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরলেন।

ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন.? অনেক দিন পর দেখলাম বলে মিরা থামল। প্রিয়া মা-মনি কোথায় তাকে ডাকেন একবার মায়ের মুখটা দেখি বলেই মুচকি হাসলেন মনোয়ারা।

জ্বী ভাবি, প্রিয়া স্কুলে গেছে এখনি চলে আসবে। আপনার বসুন। আরাফ তুমি কেমন আছো.? জ্বী আন্টি ভালো।

আপনারা বসেন দুপুরে খাবারের সময় হয়ে গেছে পরে সব গল্প শোনব আফাতত আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি, সবাই ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসুন বলেই মিরা চলে গেল।

আরাফ দাদুমনির পাশেই সোফায় বসলো দাদুমনি যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলেন তবুও চুপ রয়ে গেলেন।

আজাদ সবাইকে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসার অনুরোধ করতে ব্যস্ত।

আরাফের এ বাড়ির প্রতিটা দেয়াল চেনা, প্রতিটা মানুষ চেনা, কোথায় কি আছে সব তার জানা তাই সে বার্থরুমে ফ্রেশ হতে গেল। আজাদ, মনোয়ারা, আকরাম, দাদুমনি সবাই কথা বলতেছেন এর মাঝেই কলিংবেলের আওয়াজ হলো আজাদ দরজা খুলতে গেল।

মনোয়ারার দৃষ্টি যেন আর ফেরাতে পারছে না! মনে মনে হাসল ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে।  এর কাছে ভারতের সুচিত্রা সেনও ফেল করবে সত্যি মেয়েটা অনেক সুন্দর।

আরে এমন একটা সুন্দরী মেয়েকেই আমার আরাফের জন্য খোঁজছিলাম। মনে মনে আল্লাহ্ এমন একজনকেই মিলিয়ে দিল, আর আমার ছেলেই কম কিসে! দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা করেছে।

বর্তমানে কলেজের শিক্ষক তারপর বড় ব্যবসায়ী দেখতে সুন্দর দুজনকে মানাবে বেশ ভালোই, ভাবতে ভাবতে প্রিয়া রুমে ঢুকল। আকরামকে দেখে এগিয়ে আসল কেমন আছেন আঙ্কেল বলেই সালাম করলেন মনোয়ারা ভাবলেন মেয়েটা সামাজিক শিক্ষাও আছে,

ওনি মনোয়ারা ভাবি আরাফের মা বলেই আজাদ সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রিয়াকে। ভাবি আমার একমাত্র মেয়ে বলেন, দ্বিতীয় মা বলেন সবটা ও প্রিয়া।

আন্টি কেমন আছেন.? বলেই মনোয়ারাকে সালাম করলো প্রিয়া। ভালো লাগা আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল মনোয়ারার হৃদয়, প্রিয়া জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। আকরাম বললেন যাও মা ফ্রেশ হয়ে আস প্রিয়া চলে গেল।

আরাফ আসতেই আকরাম,মনোয়ারা একে একে সবাই ফ্রেশ হয়ে খাবারের টেবিলে বসল মিরা এবারও সবাইকে প্লেটে খাবার তুলে দিলেন প্রিয়াও মায়ের কাজে সাহায্য করলো তারপর মনোয়ারার পাশে বসে দুপুরের খাবার খেল।

খাবার শেষে আকরাম, মনোয়ারা, আরাফ, প্রিয়া সবাই গল্প করতে আজাদের রুমে বসলো। সবাই মিরার রান্নার প্রশংসা করলেন, আকরাম সাহেব বললেন মনোয়ারা তুমি মিরার কাছ থেকে ডাল রান্না করা শিখবে মিরা কিন্তু খুব ভালো রান্না করে। তবে ডালটা একটু বেশি ভালো রান্না করে বলে আকরাম সাহেব হাসলেন।

নানা বিষয়ে গল্প হচ্ছিল আকরাম সাহেব বললেন...

.....চলবে।

সুরাইয়া নার্গিস।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ