আবার সেই ঘরে ফেরা

স্বপ্ন নীলা ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, সোমবার, ০৪:০১:৫৪অপরাহ্ন বিবিধ ৪০ মন্তব্য

”কারে দেখাবো মনের কষ্ট গো আমি বুক চিরিয়া
অন্তরে তুষেরই অনল জাগে রইয়া রইয়া ----’’। রহিমা তিন মাসের বা্চ্চা কোলে নিয়ে ধান লাড়ছে আর গুণ গুণ করে গান গাইছে। তার চোখ দিয়ে ঝর্ণাধারা গড়িয়ে পড়ছে। এমন সময় পাশের বাড়ির আলেয়া একটা লাউ নিয়ে আসল। ও বুবু এই যে দ্যাহ কি নিয়া আইছি-- ঐ যে লাউ গাছ লাগাইয়া দিছিলা আমার ঘরের পিছনে--গাছটা এত্ত বড় অইছে - লাউ গাছের ডগাগুলা বড়ই লকলকা হইছে গো বুবু। ওমা তুমি দেহি কানতাছো। এই যে দ্যাহ। তুমি কান্দ ক্যান। রহিমা কান্না করে আর চোখ মুছে। বলে, ওরে আলেয়া ! কান্দন কি আর সাধে আহে রে বইন। দুই মাইয়ার পর আবার মাইয়া অইল। শশুর, শাশুরী, ননদ, দেবর সবাই খোটা দেয়, তোগো ভাই সারাক্ষণ খিটিমিটি করে, গাইল দেয়, মারে-- আইজক্যাও মারছে, এই যে দ্যাখ একটু আগে মাইর‌্যা আমারে কিছু রাহে নাই। আলেয়া বলে, বুবু ! কয়েকদিন আগে আমাগো বাড়ি হাসি আইছিল, হুনছো তো ! আমার ভাসুরের মাইয়া। নার্স হইছে। ও কইলো ছাওয়াল মাইয়া সব নাকি ঐ পুরুষগো উপর নির্ভর করে !! শিক্ষিত মাইয়া, কত যুক্তি দিয়া কথা কইল--। মাইয়াগো নাকি একটা কি যেন (x) থাকে। আর পুরুষগো নাকি কি জানি দুইড্যা (x y) থাহে। ও বুবু তুমি ভাইরে কইব্যা তোমার জন্যি আমার এই অবস্থা ----। রহিমা ভাবে এটা কি সত্যি !! সত্যি এটা সম্ভব !! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। একটু পানিও পড়েনি রহিমার পেটে। একটু পরেই রহিমার স্বামী আসে।প্রচন্ড তর্জন গর্জন করতে থাকে !! বলে, ওরে মাগী !! বইস্যা বইস্যা শুধু আরাম কর !! পানি আন -- পা ধুমু !! খালিতো মাইয়া জন্ম দ্যাও -- আর বইস্যা বইস্যা আরাম কর !! রহিমার মাথার ভিতর হাজারটা ঝি ঝি পোকা কামড় দিচ্ছে, সব কিছু কেমন ওলট পালট লাগছে---তার চোখটা জ্বলছে, মনে হয় আর এই বাড়ি নয়---বলে, সব কিছুর জন্যি তুমি দায়ী । ‍তোমার জন্যিই মাইয়া অইছে, এখন তোমার দোষ ঢাকার জন্যি আমারে দোষ দিতাছাও !! আমার উপর অত্যাচার করতাছাও !! এত অত্যাচার আর সহ্য করুম না --- আমার চোখ যে দিকে যায় চইল্যা যামু ---। রহিমা তার দুই সন্তানকে কাছে ডাকে, বলে, চল আমার আম্মারা । আর এই বাড়িতে থাকুম না -- না খাইয়্যা মরুম - তয় আর এই বাড়িতে থাকুম না ----। রহিমার স্বামী অবাক হয়, তাকিয়ে থাকে রহিমার দিকে -- এ যেন নতুন এক রহিমাকে দেখছে--। কোন দিন রহিমা স্বামীর অবাধ্য হয় নাই, তার কথার পিঠে কোন কথাই বলে নাই, সেই রহিমা আজ তর্ক করছে, বলছে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে !! রহিমার স্বামী বলে, তোর কি হইছে, ভুতে ধরছে !! সুখে থাকতে ভুতে কিলায়, কোন খানে শুনছোস তুই এই সব আবোল তাবোল কথা---!! রহিমা বলে, এটাই সত্যি, এটাই সত্যি -- রহিমা সন্তানদের নিয়ে রাস্তার দিকে পা বাড়ায় --রহিমার ননদ বলে তুমি যাইয়া থাকবা কোনে, খাইবা কি, তুমি আর তুমার মাইয়াগো ক্যাডা খাওয়াইবো !! রহিমার কানে কথাগুলো তীরের মত বিঁধে যায় -- কল্পনায় সে দেখে  শুধুমাত্র একটা মাটির হাড়ি ভেঙ্গে ফেলেছিল বলে তার ভাবী তাকে কত মেরেছিল, ভাইও সাথে সাথে তাল দিয়েছিল --অথচ বাবা মা বেঁচে থাকতে তার কত আদর ছিল, বিয়ের পর তারা তেমন একটা খোঁজও নেয় নাই, বাড়িতে গেলে দুইদিনের বেশি থাকলে তার ভাবী ও ভাই তারা দিত- কবে শুশুর বাড়ি সে চলে আসবে, তাদের নাকি খরচ বেশি হচ্ছে, অথচ তার ভাইয়ের ছোট একটা মুদির  দোকান আছে, জমিতে চাষ করে, পুকুরে কত মাছ !! এক  বছরে কত টাকার মাছ বিক্রি করে।  রহিমা থমকে দাঁড়ায়, কোথায় যাবে সে !! এই মেয়েদের নিয়ে কোথায় তার জায়গা হবে !! সে একা হলে কোন কথাই ছিল না--কিন্তু তাকে এই বাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে -- সামনের দিকে ইতস্তত ভঙ্গিতে হাটতে থাকে --।  রহিমার স্বামী পথ আগলে ধরে --- ও রহিমা তুই কোনে যাস !! আমার সন্তানগো তুই কোনে নিয়া যাস !! তুইও যাবি না -- আমার সন্তানরাও যাইবো না --। তুইও আমার, সন্তানরাও আমার ---। রহিমা অবাক হয় --- ডুকরে কেঁদে উঠে --রহিমা ভাবে এইতো একমাস আগেও কত মেরেছে তার স্বামী, বাড়ি হতে চলে যেতে বলেছিল। পাড়ার এক খালা মিটমাট করে দিয়েছিল-- আজ আবারও মারলো--এখন সে কি করবে !! সূর্য্য তার লাল আভা মাখিয়ে ঘুমের দেশে চলে যাচ্ছে ---চারদিকে হালকা অন্ধকার। বাঁশ ঝারে হুতুম পেঁচাটা ডানা ঝাপটাচ্ছে ---রহিমার স্বামী রহিমার হাত ধরে -- রহিমা পা বাড়ায় তার চিরচেনা বাড়িতে, চিরচেনা লোকের হাতটি শক্ত করে ধরে -- দূরের আকাশে চাঁদ উঠেছে-- এত সুন্দর চাঁদ কোন দিনও উঠে নাই - চারদিকে জোৎস্না ---জোৎস্নারা খেলা করছে ---

১৬ আগস্ট, ২০১৪

0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ