আজমির শরীফ (জয়পুর ভ্রমণ)

ইঞ্জা ১১ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ০৪:১৬:৫৩অপরাহ্ন ভ্রমণ ৩৬ মন্তব্য

আজমির শরীফ (৫ম পর্ব)

পরদিন সকাল সাতটার সময় ব্রেকফাস্ট করে হোটেল চেকআউট করে নিলাম, কারণ আজ ঘুরে ফিরে দেখে দিল্লি ফিরে যাবো।
ড্রাইভার বললো, এইখানকার সব ঘুরে দেখতে হলে আরও দুইদিন আপনার থাকা উচিত ছিলো, এরপরেও আমি চেষ্টা করবো কিছু হলেও যেন আপনি দেখতে পারেন, এইখানে এক ফোর্ট (দূর্গ) আছে, চলুন ওখান থেকেই আপনি অনেক কিছু দেখতে পারবেন।
আমরা রওনা হলাম ফোর্ট দেখার জন্য।

আমরা ফোর্ট দেখার জন্য পাহাড়ি পথ ধরে এগুলাম, এক সময় আঁকা বাঁকা পথে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম।
উপরে উঠছি তো উঠছি, পাহাড়ের পথ যেন শেষ হয়না, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক উপরে উঠে এসেছি, দূর থেকে ফোর্ট দেখা যায়, রাজা মান সিং এই ফোর্ট নির্মান করেছিলেন।

ফোর্টের মেইন গেইটের সামনে গাড়ী থেকে নেমে অবাক হলাম, প্রচুর বানর ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমি ভিতরের দিকে এগুলাম, বড় রাস্তা গিয়ে উঠেছে উপরের দিকে, খানিকটা উপরে উঠে এলে দেখলাম পথের দুই পাশে বেশ কয়েকটা পানির আঁধার, এখন পানি না থাকলেও এক সময় এইখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হতো যা পরবর্তীতে শহরের বাড়ি বাড়ি পানির সাপ্লাই হতো।
এরপর দূর্গের উপরের দিকে এগুলাম, বিরাট দূর্গের এপাশ ওপাশ পর্যন্ত হাঁটা পথ আছে, যেখানে এক সময় সৈন্যরা দাঁপিয়ে বেড়াতো, তীর ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করতো, এক জায়গায় দেখলাম বিশাল এক কামান, এতো বিশাল কামান আমি আগে দেখিনি, এইটিকে নাড়াচাড়া করার জন্য সয়ংক্রীয় ব্যবস্থা আছে, কারণ একে শুধু হাতে নাড়াচাড়া করা অসম্ভবই।

 

দূর্গের উপর থেকেই বাইরের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম, অনেক দূরে হলেও পরিস্কার দেখা যায়, এ বড় হ্রদ এবং এর মাঝে বড় এক রাজবাড়ী।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম ওটা কি?
ড্রাইভার বললো, ঐটা জলমহাল।
দেখতে খুবই সুন্দর, প্রাকৃতিক হ্রদের মধ্যে অবস্থিত জলমহলটি সত্যি দেখার মত, শহর থেকে ৭ কিমি দূরে অবস্থিত।
এক সময় রাজাদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের স্থান ছিল এটি, হ্রদটির নাম মানসাগর।
জলমহালটি সত্যিকার দেখার মতো, উপরে একতলা দেখা গেলেও এইটি পাঁচতলা, বাকি অংশ পানির নিচে নিমোজ্জিত হয়ে আছে, এই হ্রদে ঘুরার জন্য খুব সুন্দর সুন্দর নৌকা আছে, কিন্তু আপনি এই জলমহালে যেতে পারবেননা, বাইরে থেকেই দেখতে পারবেন।

এর একটু দূরেই রয়েছে মানসিং দুর্গ, যেখানে আমি আছি, সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য রয়েছে কয়েক মাইল দীর্ঘ চওড়া পরিখা।
এই জায়গার নাম অম্বর যা পূর্বে রাজস্থানের রাজধানী ছিল এবং জয়পুর থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। মানসিংস দুর্গের সিঁড়ি দিয়েই ঢুকে দেখা যাবে কালীমন্দির।


অম্বর রাজপ্রাসাদের কাছেই রয়েছে একটি মসজিদ। এটির নাম অম্বর মসজিদ, সম্রাট আকবর এটি নির্মাণ করেন।

অল্প কিছু সময় ঘুরে ঘুরে সব দেখছি, ড্রাইভার তাড়া দিলো, বললো, জনাব চলুন সময় হয়ে গেছে ফেরার, যদি এখন রওনা না দিই, তবে সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর সন্ধ্যাতেই প্রচন্ড ট্রাফিক হবে দিল্লির প্রবেশ মুখে।
আমিও ওর সাথে দ্রুত ফিরে এলাম গাড়ীতে, মনে মনে বললাম, জয়পুর আমি একদিন অনেক সময় নিয়ে আসবো তোমার প্রেমে মগ্ন হতে, তোমার রূপসূধা পান করতে, বিদায়।

সমাপ্ত।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ