অবয়ব (পর্ব-৩)

রুদ্র আমিন ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ০৫:৪১:২৩অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

সময় ঘনিয়ে আসছে, শুক্রবার দ্যাখা করতে যাবো সুর্পনাদের বাসায়, তাদের বাসার ঐ করিম সাহেব কে জানতেই হবে, সুর্পনা এমন কাজ করতেই পারে না, এমন হতেই পারে না। সুর্পনা ক্যানো আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে? হঠাৎ করে হারিয়ে গিয়েছিলো সুর্পনা, কংক্রিটে ঢাকা শহরে এসে নিজেকে সামলিয়ে সবেমাত্র চলতে শুরু করেছি স্বাভাবিক জীবনে, সুর্পনার দেয়া যন্ত্রণাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ক্যানো তাকে আবার দেখতে পেলাম আর ক্যানইবা তার জীবনে অন্য একজনের স্পর্শ খুঁজে পাচ্ছি। নাহ্‌ আমার ধারণা হয়তো ভুল, সুর্পণা এমন হতেই পারে না।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে তানিম নিজেকে পুনরায় আউলা ঝাউলা করে ফেলেছে, খেতে গেলে খেতে পারছে না ঠিক মত, ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারছে না, চোখের পাতা বন্ধ করলে যেমন, খোলা রাখলেও তেমন, সুপর্ণা আর সুপর্ণা। হঠাৎ তানিমের বাসার কলিং বেল বেঁজে উঠলো, আচমকা উঠে দাঁড়ালো তানিম।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তানিম বলতে লাগলো, কে? কে?
– দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, আমি,
আমি কে?
– আরে আমি রনি, দরজাটা খুলবি তো আগে।
দরজা খুলে দেয়া হলো, রনি ঘরে ঢুকেই বিছানার উপর ছাঁদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লো, কিরে তুই এই সময়ে, আর এভাবে হাপাচ্ছিস ক্যানো, পুলিশের তাড়া খেয়েছিস নাকি?
– একটু সময় দে, আমার কথা শুনলে তুই নিজে নিজেকে সামলাতে পারবি না, ঠান্ডা পানি থাকলে একটু দে আগে গলাটা ভিজিয়ে নিই।
ক্যান তুই নিয়ে খেতে পারিস না? কোথায় কি করে এসে এখানে নবাব সাহেব হাপাচ্ছেন, কত বলেছি বাজে নেশা বাদ দেয়, এসব ভালো না, প্রেম হারালে কি নিজেকে তাই এভাবে নষ্ট করতে দিতে হবে নাকি?

– তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস, নিজেও তো প্রেম হারিয়ে থাকতে পারিস নি, কোথায় কাকে দেখে এখন নিজেকে পাগল বানিয়ে ফেলেছে আবার অন্যকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে, এই কয়েকদিন কি তুই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখেছিস? পাগল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না তোকে..

ঠিক বলেছিস, আমি পাগল হয়ে গেছি, কাকে দেখলাম, আর দেখে কি শুনলাম, কোনোটাই মেলাতে পারছি না…আচ্ছা তোর বিয়ের খবর কি? আক্কেল নাকি তোর বিয়ের কথা বলতেছে…

– দ্যাখ, এসব কথা বাদ দিতে বলেছি, আজকের ঘটনা শুনলে বিয়ের কথা কিংবা ভালোবাসার কথা তুই নিজেও ভুলে যাবি, মেয়ে মানুষ কি এমন হয়?
কি হয়েছে একটু খুলে বলবি?
– বলবো, তুই আগে একটু ঠিক হয়ে নে আর আমি একটু ঠান্ডা হয়ে নেই, বলার জন্যই তো তোর বাসায় আসলাম.. দোস্ত ফ্যানটা একটু জোরে ঘুরানোর ব্যবস্থা করবি, সত্যি বলছি ঘাম বের হচ্ছে তো হচ্ছেই..

আচ্ছা আমি ফ্যানের স্প্রিড বাড়িয়ে দিচ্ছি, তুই ঠান্ডা হয়ে আমার রুমে আয়।
ড্রয়িং রুমে প্রায় আঁধা ঘন্টা বিছানায় শুয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো রনি, হাটি হাটি পা পা করে তানিমের রুমে প্রবেশ করলো..কিরে তুই কি এখন ঠিক?
– তবুও ক্যামন যেন লাগছে বন্ধু, স্বস্তি পাচ্ছি না। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে স্বস্তি থাকা সম্ভব না।

আচ্ছা এবার বল তো দেখি এমন ঘটনা ঘটলো তোর, প্রায় যে ঘটনা ঘটে সেখানে আজ আবার কত বড় কে জানে? হোটেলে গিয়ে তো খুন খারাপি করিস নি? কিংবা কোনো নারীকে পেটাসনি?
– আরে নাহ্‌, এই প্রথম কোনো নারীকে স্পর্শ ছাড়াই হোটেল থেকে বের হয়ে এসেছি,
কি বলিস, তুই এতো ভালো হয়ে গেলি কি করে, আর তোর প্রতিশোধ কি শেষ হয়ে গেছে? যাক তবুও ভালো যে তোর শুভ বুদ্ধি উদয় হচ্ছে। কতবার তোকে বুঝিয়েছি এসব ভালো না, এটাকে প্রতিশোধ বলে না, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা ছাড়া আর কিছুই না।

– সাধুর মতো কথা বলিস নাতো, ভালো লাগেনা ওসব কথা,
তাহলে কি বলবো, কি ঘটনা ঘটেছে সেটাই তো বলিস না তুই,
– আমি বললে তুই সহ্য করতে পারবি কিনা সেটা চিন্তা করতেছি, কিংবা এখানে বিশ্বাসেরও ব্যাপার আছে, আচ্ছা তোর কাছে কি সুপর্ণা কোনো ছবি আছে?
ক্যানো ছবি দিয়ে কি করবি,
– দরকার আছে থাকলে দ্যাখা, খুব জরুরী

বোস, দেখাচ্ছি বলে তানিম তার ড্রয়ার থেকে সুপর্ণার ছবি বের করে দিলো, সুপর্ণার ছবি হাতে নিয়ে রনি কি যেন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো

কিরে এভাবে কি দেখছিস? দেখে তো মনে হচ্ছে ছবি খেয়ে ফেলবি
– বন্ধু, একদিন একটি গল্প শুনেছিলাম, আর সেটা বাস্তব নয় বলে জানিয়েছিলো গল্প বললেওয়ালা। তোকে সেই গল্পটি শুনাবো তারপর কি ঘটেছে সেটা বলছি,

তা ঝটপট বলে ফেলতো… ন্যাকামো আর ভালো লাগছে না। তুই শুধু একটু কথাকে হাজার কথার মধ্যে প্যাচাতে থাকিস।
-তাহলে শোন,

—-চলবে

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ