প্রতিবছর পৃথিবী থেকে ১০ মিলিয়ন হেক্টর বন হারিয়ে  যাচ্ছে। গত শতাব্দীতে পৃথিবীর জলাভূমির অর্ধেক ধ্বংস হয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রবালপ্রাচীরের প্রায় ৫০% ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে এবং আগামী ২০৫০ সালের ৯০% পর্যন্ত ধ্বংস হতে পারে।

২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে কার্বন নির্গমনকারী প্রথম ৫টি দেশ হল: ১. চীন ১০.০৬ জিটি , ২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫.৪১ জিটি, ৩. ভারত ২.৬৫ জিটি, ৪. রাশিয়ান ফেডারেশন ১.৭১ জিটি ৫. জাপান ১.১ জিটি। জিটি হল মেট্রিক গেগা টন। পরিবেশ দূষণের জন্য সর্বোচ্চ দায়ী দেশগুলো হল চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। আর মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের দিক দিয়ে প্রথম ৫টি দেশ হলো: ১. সৌদি আরব ১৮.৪৮ মেট্রিক টন, ২. কাজাখস্তান ১৭.৬০ মেট্রিক টন, ৩. অস্ট্রেলিয়া ১৬.৯২ মেট্রিক টন, ৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৬.৫৬ মেট্রিক টন এবং ৫. কানাডা ১৫.৩২ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ অল্প আয়তনের একটি দেশ এবং বনায়ন খুবই কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ততার দিকে ধাবিত হচ্ছে। দিনে দিনে জলাশয় বেডে সমতল ভূমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বহিরাগত রোহিঙ্গাদের আগমন ও তাদের পূনরায় বাসস্থান করতেও অনেক জায়গার দরকার। উন্নত দেশগুলোর এই চাপে বাংলাদেশ অধিকাংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে আর আস্তে আস্তে মানুষের পুনর্বাসন করতে আবাদী জমির ঘাটতিতে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি সহ নানাবিধ পরিবেশ হুমকি ও ধংসের সম্মুখীন হবে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি কর্তৃক এ বছরে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে Ecosystem Restoration এবং স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে Generation Restoration। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপনে এবং জনগণের মধ্যেও উক্ত প্রতিপাদ্য ও স্লোগান সহজভাবে উপস্থাপন করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সহজ ভাবানুবাদ করা হয়েছে যথাক্রমে পরিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ছিলো ৫ জুন। বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হয় ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান’ নামে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য  বিষয় ছিলে- ‘ প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ এবং স্লোগান হলো- ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’। অন্যদিকে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষে অঙ্গীকার করি, সোনার বাংলা সবুজ করি।’

কোন কোন দেশে একটি গাছ না কেটে রাস্তার পাশ থেকে তা সরানো হয় অতি সুকৌশলী ব্যবস্থাপনায়। আর আমরা এতসব না ভেবে পটাপট গাছ কেটে ফেলে দিই। সবুজ উজার করে ফেলি। ভাবার ফুসরতও নেই একটি গাছ থেকে কতো প্রানী ও পরিবেশ উপকৃত হয় এবং তাকে কেটে ফেললে কতটা পরিবেশ বিপর্যয় হয়। আর দিনে দিনে আমরা কতটা উষ্ণায়নের দিকে ধাবিত হই।

পরিবেশের বিপর্যয় থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান, যার যেখানে যতটুকু জায়গা পান, সেখানেই গাছ লাগান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ একটা ফলদ, একটা বনজ, একটা ভেষজ—এই তিন ধরনের গাছ লাগাবেন।’

এতোসব ঘোষনার পর পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে বিরাট অংকের টাকা বরাদ্দ হয় ‘ বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর’ জন্য। আমরা দেখি একটি গাছ মিনিমান দশ/বিশ জন মিলে লাগাচ্ছেন। প্রচারেই প্রসার এমন বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর বহু বহু ছবি আমরা দেখতেই থাকি।কিন্তু  রুট লেভেলে যে প্রশাসন এসব কর্মসূচীর দায়িত্ব পান। তারা কতটুকু পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর।

রাস্তার দুপাশে লাগানো এই গাছগুলো লাগাতে না লাগাতেই মরে ভূত। কেন মরলো? কি হয়েছিলো? বা সবটা লাগানো হয়েছে কিনা কে নেবে তার খোঁজ? উদ্ধর্তন মহল এসবের ধার ধারেন না। কারন তারা তো নিজেদের বখরা রেখেই বাকিটুকু রুট লেভেল কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাঠান। এবং তারা খুব ভালো করেই জানেন এর কার্যকারিতা কতটা সফলতার সাথে সম্পন্ন হতে পারে!

তাহলে বছরের পর বছর এতোসব স্লোগান আর ঘোষনার মানে কি? বরং আমরা চাই যতটুকু কাজ ততটুকুই পারফেক্ট। জনগনের টাকায় লাগানো গাছ মারা যায়, বাড়ি ভেঙ্গে যায়। তবুও লুটেরাদের রাজত্ব বছরের পর বছর চলতেই থাকে। আমি জানিনা এর প্রতিকার কেমন বা কিভাবে হওয়া উচিত। আদৌ এসব বলাও সমীচীন কিনা। শুধু বলতে চাই এভাবে আর কতো রামরাজত্বের ফাঁকিজুকি চলবে!!

ছবি ও তথ্য- নেট

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ