যে কোন পরিবার ও সমাজের জন্য বেকারত্ব একটা অভিশাপ। বেকার জীবন খুবই কষ্টকর। এই কষ্টের বোঝা বইতে না পেরে অনেক বেকার আত্নহত্যা করেছেন, মাদকাসক্ত হয়েছেন, এটা  নতুন নয়। কিন্তু বেকারত্ব দূরীকরণে আমরা কতটুকু সচেষ্ট। এই মুহুর্তে যিনি একজন শিক্ষিত বেকার তিনি যদি তার মেধাকে আরো কিছু দিন আগে কাজে লাগাতেন তাহলে হয়তো তাকে আজকের এই পরিণতি বরণ করতে হতো না। শুনতে হতো না “বাবা-মায়ের বোঝা” নামক বিশেষণ। যা হোক, আমি আমার এই আলোচনায় দেখাতে চেষ্টা করবো আমরা যারা বেকার থাকতে চাইনা তারা কিভাবে সহজেই পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের জীবনকে কর্মময় করে তুলতে পারি। কিভাবে দূর করতে পারি বাবা-মায়ের, প্রিয়জনের উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ, কিভাবে চোখের জল মুছে হাসি ফিরিয়ে আনতে পারি জনম দুখি মায়ের মুখে।

আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি উন্নত, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু দিন দিন আমাদের সমাজে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়ছে এতে কারো দ্বিমত, দ্বিধা-দ্বন্দ বা বিতর্ক নাই। আমরা সবাই চাই বেকারত্ব দূর হোক, কর্মময় সমাজ গড়ে উঠুক।

একথা সত্য যে জীবনের একটা বড় সময় আমরা পাঠগ্রহণের পিছনে ব্যায় করি। আমাদের দেশে চাকুরীতে অংশ গ্রহনের সময়সীমা সাধারণত 30 বছরের উর্দ্ধে নয়। যেখানে পড়াশোনায় ভাল অবস্থান তৈরী করতে একজন শিক্ষার্থীর সময় লেগে যায় প্রায় 24-25 বছর বা তারও বেশী সেখানে বাকী সময় চাকুরীর জন্য নিজেকে উপস্থাপন করা বা দক্ষ হিসাবে তৈরী করার জন্য যথেষ্ট নয়, আমি আশা করি আমার সাথে আপনি একমত হবেন।

সরকারি চাকুরী আমাদের দেশে সোনার হরিণ। একদিকে বেকারত্বের প্রবল চাপ অন্যদিকে সরকারি চাকুরীতে তো নয়ই বেসরকারি সেক্টরেও কর্মসংস্থান আশানুরূপ সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্ব লাগামহীন ‍দুষ্টু ঘোড়ার দৌড়ের মত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষিত বেকার বাধ্য হয়ে মন্তব্য করছে পড়াশোনা না করে রিক্সা চালালেও ভাল হত। শিক্ষিত বেকারেরা না পারে নিম্নমানের কোন কাজ করতে না পারে চুরি ছিনতাইয়ের মতো অণৈতিক কাজে জড়াতে। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, বখাটের পাল্লায় পড়ে ভূত ভবিষ্যতের হুমকি ডেকে আনে। পরিবার ও সমাজের কাছে বোঝা হয়ে বাকী জীবন বেঁচে থাকে।

এই অবস্থার উত্তোরণ দরকার। আপনি হয়তো অবাক হবেন এটা জেনে যে, এই অবস্থা হতে উত্তোরণের চাবিকাঠি আপনারই হাতে। কিভাবে ? আসুন একটু মিলিয়ে নিই। আপনি তো সারা জীবন পড়াশোনা করবেন না। একসময় নিশ্চয় জীবন জিবীকার তাগিদে, পারিবারিক দায়িত্ববোধ থেকে কর্মজীবনে অংশ গ্রহণ করবেন। তাহলে আপনি কি এখনই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আপনি কত বছর বয়সে বা ঠিক কোন সময়টায় কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন। আপনি ভাবুন, আপনি কি করতে চান বা কি হিসাবে আয়নায় আপনাকে দেখতে চান। আপনার যদি কোন পেশা পছন্দের হয়ে থাকে তাহলে আপনার চারপাশের সেই সব প্রিয়জনদের সাথে কথা বলুন যারা ইতোমধ্যেই তাদের কর্মময় জীবনে প্রবেশ করেছেন বা যারা পছন্দের পেশায় অংশ গ্রহণ করতে সক্ষম না হয়ে অপেক্ষায় আছেন। আপনার শিক্ষা জীবন শেষে আপনার পছন্দের চাকুরীতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবেন এমন নিশ্চয়তা আপনাকে কেউই দিতে পারবে না। আচ্ছা ধরুন, যদি তেমনটিই হয় তাহলে আপনি কি করবেন তখন। ভিন্ন কোন পেশায় আপনি ট্রাই করবেন, তাইতো? কিন্ত আপনার কি সেই কাজ ভাল লাগবে, তার কোন নিশ্চয়তা নাই। আপনি কি লক্ষ করেছেন আমাদের সমাজে অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক রয়েছে যারা বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেনীর চাকুরীতে অংশগ্রহণ করেছে। চতুর্থ শ্রেণীর কোন চাকুরীতে যেমন ধরুন পিওন, সুইপার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি, খালাসি, অপিস সহায়ক ইত্যাদিতে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী হলেও চলে। কিন্তু নিশ্চয় এমন কোন জানাশোনা লোক আপনার আছে যিনি ডিগ্রি পাশ করেও অষ্টম শ্রেণী পাশের সনদ দিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরী করছেন। আপনি এও দেখে থাকবেন উচ্চ শিক্ষিত হয়েও ঘুষ দিয়ে অণৈতিক পন্থায় চাকুরী নিতে অনেক লোক লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তো, আপনি হলে কি করবেন ?

আপনি এখনই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি করবেন। হ্যাঁ, আপনি হয়তো সঠিকটাই ভেবেছেন। ভবিষ্যতের চিন্তু আপনাকে এখনই করে নিতে হবে, ভবিষ্যতের বীজ আজই, এক্ষুণীই বপন করতে হবে। ভাবুন, আপনি শিক্ষিত হবেন এবং কর্মঠ হবেন। আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলার জন্য আজ থেকে কাজে লেগে পড়ুন।

 

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ