বিয়েতে পেঁয়াজ উপহার

চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১১:১৩:০১পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ১২ মন্তব্য

বিয়েতে পেঁয়াজ উপহার

গ্রামের বাড়িতে আছি।
ফজরের নামাজ পড়ে চা দোকানে রুটি কিনতে গেছি। লাইনে আছি, সকালে রুটি কিনতে শুধু গ্রামে নয়, শহরেও লাইন ধরতে হয়।
একজন কারিগর রুটি বানাচ্ছে, কাস্টমারদের কেউ টেবিলে বসে খাচ্ছে আর কেউ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও রুটির অর্ডার দিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি।

পাড়ার ছেলে আবচার, খু্ব সম্ভব আমার সমবয়সি হবে, কিংবা আমার চেয়ে একটু ছোটও হতে পারে। আমার মনে আছে, আমি যখন সরকারী প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলের বাউন্ডারির বাইরে আবচার পেটি নিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করত। একটি খজেইয়্যা আইসক্রিম ৫ পয়সা, ভালো আইসক্রিম ১০ পয়সা, দুধের আইসক্রিম ২৫ পয়সা। খজেইয়্যা আইসক্রিম মানে যে আইসক্রিম খয়ে গেছে, মানে কিছুটা গলে লুজ হয়ে গেছে।
পেটিতে থরে থরে আইসক্রিম সাজিয়ে রেখে তার উপর একটি পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে তারপর আরেক চালান আইসক্রিম। তারপর আবার পলিথিন এবং আবার আইসক্রিম। এভাবে আইসক্রিমের পেটি পুরোনো হতো। ভিতরে পলিথিনের ফাক দিয়ে বাতাস ঢুকে আইসক্রিম গলে ছোট হয়ে যেতো, তখন হতো এটা খজাইয়্যা আইসক্রিম এবং এর দাম অর্ধেক, ৫ পয়সা।

বলছিলাম আবচারের কথা,
আবচার পরে কেমনে কেমনে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে ভাল সরকারি চাকরি করে। কয়েকবছর আগে সম্ভবত উপজেলা শিক্ষা অফিসার ছিল, মনে হয়ে এখনো আছে। আমরা গ্রামের কৃতি সন্তান হিসেবে একবার আবচারকে সংবর্ধনাও দিয়েছিলাম।

আইসক্রিম বিক্রিতে আবচারের ওস্তাদ ছিলো ওরই বড়ো ভাই বাবুল। বাবুল আরো আগে থেকে আইসক্রিস বিক্রি করত। আইসক্রিমওয়ালা হিসেবে আমি মনে হয় বাবুলকেই বেশি পেয়েছিলাম। হ্যাঁ এখন মনে পড়ছে, আবচার বয়সে আমার ছোটই হবে।
আচারের বড়ো ভাই সেই বাবুলও আজ সকালে রুটি অথবা পরোটা কিনতে সেই চা দোকানে এসেছে যেখানে আমি রুটি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি।

চা-দোকানের বাইরে একজন পরোটা বানাচ্ছে, ভিতরে আলাদা একটি ছোট ঘরে একজন রুটি বানাচ্ছে। সেখানে কয়েকজন কাস্টমার রুটির সিরিয়ালে আছে, আমি বাইরে ক্যাশের পাশে দাঁড়িয়ে রুটির অর্ডার দিয়ে টাচ মোবাইল টাচ করে যাচ্ছি। ক্যাশে একটি কিশোর ছেলে, ছেলেটি স্কুলে পড়লে হয়তো ফাইভ, সিক্সে পড়তো। চা দোকানের টেবিলে কয়েকজন বসে নাস্তা খাচ্ছে। টেবিলের কাস্টমারকেও রুটি দিতে হচ্ছে বলে আমরা যারা পার্শ্বেল নেবো তাদের অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছে।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে বাবুল। বাবুল বলল, গতকাল একটি বিয়েতে একজনে উপহার দিয়েছে ২ কেজি পেঁয়াজ। ৪০০ টাকা দিয়ে ২ কেজি পেঁয়াজ পেকেট করে বিয়েতে উপহার দিয়েছে। আমি শোনে অবাক!
ইন্টারেস্টিং তো! বিয়েতে পেঁয়াজ উপহার!

আমি মনে মনে ভাবলাম ভালোইতো, পেঁয়াজগুলো বিয়েতে কাজে আসবে। বর্তমানে পেঁয়াজ হচ্ছে 'টক অব দা কান্ট্রি'। এমনকোনো সেলিব্রেটি নেই যিনি পেঁয়াজ নিয়ে লিখছেন না। আমলা, কামলা, মন্ত্রি, সেপাই সবাই পেঁয়াজ নিয়ে কিছু না কিছু লিখছেন। লিখবেনই না কেন? যে জিনিসের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ বেড়ে যায় আর সে জিনিস যদি প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয় তাকে নিয়ে লেখার জন্য আঙ্গুল চুলকাবেই।

আমি ভাবছি আল্লাহর কথা! তিনি কেমন আল্লাহ যিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টন পেঁয়াজের যোগান দিয়ে গেছেন! অথচ কখনো খোটা দেননি, বিরক্ত হননি, বিনিময় চাননি! অথচ আজকে পেঁয়াজের ফলন একটু কম হয়েছে বলে আমাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে।
কতটা সহনশীল, কতটা ক্ষমাশীল, কতটা করুণাময় হলে পাপি, তাপি, অকৃতজ্ঞ বান্দাকে এভাবে খাবারের যোগান দিতে পারেন ভাবা যায়?
আমি এমন মহা ক্ষমতাধর প্রভুর বান্দা হওয়াতে বুকটা যেন গর্বে ফুলে উঠল। আলহামদুলিল্লাহ!

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ