বিশ্ব নারী দিবস

ইঞ্জা ৮ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১২:০১:২৮পূর্বাহ্ন শুভেচ্ছা ৩১ মন্তব্য

নারী, সে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে আমাদের জীবনে, সে কখনো কন্যা, কখনো জায়া, কখনো জননী।
যেমন আমার স্বর্গীয়া আম্মার কথায় বলি প্রথমেই, আমার আম্মাকে সারাদিন ঘরের এই কাজ, সময় সেই কাজ করতে দেখতাম, ভোরে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে রেডি করে দিতেন, এরপর দ্রুত সকালের ব্রেকফাস্ট মাটির চুলোতে তৈয়ার করে, খাইয়ে স্কুলে পাঠাতেন, এরপর আব্বার অফিস যাওয়ার পালা, আব্বা বেরিয়ে গেলে ঘরদোরের সকল কাজ শেষ করে দুপুরের জন্য রান্নার ব্যবস্থা, রান্না করা, আমরা এলে আমাদের খাইয়ে বাসন, ডেকচি কড়াই পরিস্কার করে দুপুরে একটু ভাত ঘুম দিলেন কি না দিলেন, শুরু করলেন বিকেলের নাস্তার আয়োজন, এরপর রাতের খাবার, এইসব করতে করতে উনার রাত বারোটা বাজতো, এরপর ঘুমাতে গেলেন, মাঝ রাতেই ছোট ভাই বোনের বিছানা ভেজানো সহ নানা কারণে উনার ঘুম কি হতো তা আমার সন্দেহ ছিলো।

তদ্রূপ আমি দেখছি আমার সহধর্মিণীকে, সে সতেরো বৎসর সংসার করে এসেছে আমাদের কাছাকাছি পনেরো জনের সংসার সামলিয়ে, এরপর ঢাকায় চলে আসার পর ওকে দেখছি সেই আমার আম্মার রূপ, সকাল সন্ধ্যা, রাত তার বিরাম নেই কাজের, মাঝে মাঝে আমি ওকে স্যালুট ঠুকি, বলি আমার সকল আয়ের চাইতেও বেশি হতো তোমার ইনকাম, যদি এই দেশে হাউজ ওয়াইফদের বেতন ধরা হতো, আমরা তো সকাল ৯টা /৬টা অফিস করি, আর তোমরা করো কম বেশ চব্বিশ ঘন্টা।
অথচ দেখুন, ওরাও মানে আমার আম্মা এবং আমার সহধর্মিণী কারো কন্যা ছিলেন, যেমন আমার একমাত্র কন্যার মতো, যে কন্যা একদিন এদের মতোই কাজ করবে কম বেশ চব্বিশটি ঘন্টা।

অন্যদিকে যেসব মহিলারা অফিস করেন, তাদের কথা চিন্তা করুন, উনারা তো অফিসের সাথে সাথে তার ঘরও সামলান।

কিছুদিন আগেই একটা ভিডিও দেখেছিলাম আমাদের সংসদ অধিবেশনের, যেখানে বেগম রওশন এরশাদ বক্তৃতা দেওয়ার প্রাক্কালে বলছিলেন, "মাননীয় স্পীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নারীর ক্ষমতায়নে ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু নারী ক্ষমতায়নের কিছুই তো করেছেন তা দেখছিনা"।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী উনাকে দুই তিনবার ইশারা করে দেখালেন, নিজেকে, মাননীয় স্পীকার মহোদয়াকে এবং বিরোধী দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদকে।
এতে আমাদের প্রিয় আপা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বুঝালেন তা আপনারা একবার বুঝে দেখুন?
উনি বুঝালেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলিয়ো নেত্রী এবং স্পীকার মহোদয়া যেখানে নারী, তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু হয়েছে তা অবশ্যই বিরোধী দলিয়ো নেত্রীর বুঝা উচিত।

সত্যি তাই, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন অন্যান্য বারের চাইতে এখন বেশিই, যেমন আমাদের এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট একজন নারী, এছাড়া বিমানবাহিনীর চারজনের অধিক এখন নারী পাইলট বিমানবাহিনীর ফাইটার বিমান, হেলিকপ্টার চালাচ্ছেন, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের প্রচুর নারী এখন কর্মক্ষেত্রে জড়িত হয়ে আছেন, যাদের সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, এছাড়া প্রাইভেট সেক্টরেও নারীরা নিজেদের কর্মদক্ষতা দেখাচ্ছেন।

সুতরাং নারীদেরকে আর দমিয়ে রাখা যাচ্ছেনা, তারা এখন সমাধিকার নিজেরাই করে নিচ্ছেন, এখন কারোরই উচিত নয় নারীদের বাঁকা চোখে দেখার, কথায় আছেনা, " যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে"।
তেমনি নারীরা এখন অনেকাংশে পুরুষদের চেয়েও বেশি কর্মদক্ষতা দেখাচ্ছে।
এই জন্যই বলি, যেসব নারী সংসার সামলাচ্ছেন তাদেরকে ছোট করে দেখবেননা, উনারা আপনার, আমার চাইতেও বেশি দক্ষ, উনারা যা করছেন তা আপনি, আমি পারবোনা, দরকার হলে ট্রাই করেই দেখুননা, উপলব্ধি করেই দেখুন উনারা কত কষ্ট করছেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, "তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো", কথাটি কিন্তু খুবই সত্য, মেয়েরা যত শিক্ষিত হবে, ততই এই জাতি শিক্ষিত হয়ে উঠবে, কথা দিচ্ছি এর কোনো ব্যত্যয় হবেনা।
ঘরের শিক্ষাটা প্রথম আসে মার কাছ থেকে, এই শিক্ষাটাই সত্যিকার অর্থে আসল শিক্ষা, যাকে ইংরেজিতে বলে ফাউন্ডেশন বা শক্ত ভীত, এই ভীত যদি শক্ত হয় তাহলে জাতি নিশ্চিত অনেকদূর এগিয়ে যাবে, সুতরাং অনুরোধ করছি, কন্যা সন্তানকে আর অবহেলা নয়, ওরা অনেকাংশে ছেলেদের চাইতেও ভালো করছে, সুতরাং ওদের শিক্ষিত হতে দিন, ওদের এগুতে দিন, ওদেরকে মানুুষের মতো মানুষ হতে দিন।

আজ বিশ্ব নারী দিবস, আসুন আমরা সবাই মিলে তার যৌগ্য সম্মানটিই তাকে দিই।
প্রিয় সকল ব্লগার আপুদের জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

হে নারী স্যালুট তোমাকে, তোমার জন্য একদিনের নয়, প্রতিদিনের নারী দিবস হওয়া উচিত।

সমাপ্ত।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ