আজ রবিবার হওয়াতে দুজন মনেমনে ভাবছে আজ আর দেখা মিলবে না ভূতের। তাই রাঘব আর বিনু মধ্যাহ্ন ভোজন শেষ করে চলে গেলো হরিবাবুর খাসকামরায়।
হরিবাবু গ্রামের প্রবীন লোক। তাছাড়া অনেক জ্ঞানী বটে। গ্রামের সবাই তাঁকে খুবি মান্য করে।
হরিবাবু পূর্বে জাহাজের নাবিক ছিলেন।
অনেক দেশবিদেশ ভ্রমণ করেছেন এ যেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। আনন্দপুরের গ্রামের মধ্যে হরিবাবুর বাড়িটি সবচেয়ে পরিচিত ও পুরনো বাড়ি।
এ বাড়িটি কখনো বাবুর বাড়ি,কখনো জমিদার বাড়ি,কখনো বা নাবিক বাড়ি নামে পরিচিত।
এ যেন হরিবাবুর বাড়িটি বহু নামে নামান্তর।
বাড়িটি তিনতলা বিশিষ্ট কাঠের তৈরি এছাড়া পুরনো বটগাছের তক্তা দিয়ে ছাদ নির্মাণ।
প্রতিটি দরজা জানালায় অপরূপ সৌন্দর্যের দেউল ও কারুকার্যে ভরপুর যা চোখজোড়ানো। হরিবাবুর বাগানবাড়ির ঠিক উত্তর পাশে রয়েছে মস্ত বড় একটা দিঘি। দিঘিতে অজস্র শাপলা আর পদ্মফুলে ভরপুর হওয়াতে দিঘিটির নাম রাখা হয়েছে পদ্মদিঘি।
হরিবাবুর দু ছেলে ও এক মেয়ে সবাই দেশবিদেশে উচ্চপর্যায়ে সরকারি কর্মরত। ধন সম্পত্তির অভাব নেই। কিন্তু হরিবাবু বড্ড কৃপণ প্রকৃতির লোক।
একদিন হরিবাবু বাণিজ্য থেকে বাড়ি ফিরার পথে আনন্দপুরের বহুদূর এক গ্রামে ডাকাতদল দেখতে পেয়ে নিজের পরনে জমিদারী পোশাক বেগের মধ্যে লুকিয়ে ছেড়া ধূতি,ছেড়া পাঞ্জাবী পরে সিগারেট খেয়ে খেয়ে পদব্রজে হাঁটতে লাগলেন খালি মাঠের মধ্যে দিয়ে।
রাত্রি তখন প্রায় ঘড়িরকাটা দুইটা ছুঁই ছুঁই। ডাকাতদের পাশে এসেই নিজের বেগ ছুড়ে দিয়ে হরিবাবু বলছেন আমাকে বাঁচাও বাবারা আমার সমস্ত টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছে কে বা কারা!
হরিবাবু জুরে জুরে শ্বাস ফেলছেন এ যেন মুখ থেকে কথা আর কিছুতেই বের হচ্ছে না। হাতের সিগারেটা ডাকাত সর্দারকে দিয়ে বলছেন এই নাও বাবা দু এক টান দাও ভালো লাগবে এমন শীতের রাতে অনেক টান্ডা খেয়েছ। ডাকাত সর্দার একে একে দু একটান দিচ্ছে মনের সুখে। আর বাকি ডাকাদেরকে বলছে এই বুড়োকে শালাকে একটা গাছে বেঁধে রাখতো।
আর দেখ এ বুড়োর বেগের মধ্যে কি কি আছে।
হরিবাবু কৃপণ প্রকৃতির লোক হলেও মাথায় ছিলো বড্ড বুদ্ধি। বুদ্ধির জোর কাটিয়ে হরিবাবু বললেন বাবারা দেখো আমি এক গরীব ব্রাক্ষণ এদিক ওদিক পূজার্চনা করে একমুঠো চালডাল পেয়ে থাকি।
আমার ছেলেমেয়েরা দুদিন ধরে উপোস পেটের জ্বালায় কান্না করছে। আমি বাড়ি না ফিরলে ওরা মরেই যাবে পেটের জ্বালায়। আমাকে রক্ষা করো বাবারা।
এমনকি ডাকাতদের হাতে পায়ে ধরতে লাগলেন।
হরিবাবুর এমন আকুতি মিনতিতে ডাকাত সর্দারের মন গলে গেলে অন্য ডাকাতদের কে বলছে এই এ বুড়োকে ছেড়ে দে। আর চল সবাই বাড়ি ফিরে যাই আজ আর কিছুই পেলাম না।
জমিদার হরিবাবু যাওয়ার পথে ডাকাতসর্দারকে বলেছেন আমি আসার পথে বেশ কয়েকজন জমিদারকে দেখেছি ওরা বাণিজ্য করে বাড়ি ফিরছে।
বাবারা তোমরা যদি একটু ধৈর্যের সহিত অপেক্ষা করো তাহলে তাঁদের কাছে বেশ কিছু টাকাকড়ি পেয়ে যাবে।
সারারাত অপেক্ষা করে ডাকাতরা বাণিজ্যপথে জমিদারদেরকে পায়নি। ডাকাতরা কোনকিছু না পেয়ে উল্টে খুঁজতে লাগলো হরিবাবুকে। ভোর হতে চলছে হরিবাবুর কোন সাড়া না পাওয়াতে ডাকাতদল আফসোস করছে আর একে অপরকে বলছে এই বুড়োই হলো জমিদার।
আমাদের সকলের চোখে আঙ্গুল দিয়ে পালিয়েছে।
হরিবাবু অতীতে এসব এনিয়ে বেনিয়ে মিথ্যা কথা বলে অনেক বিপদ হতে বহুবার বেঁচেছেন।
দুপুর তখন প্রায় একটা রাঘব ও বিনু হরিবাবুর অপেক্ষায় বসে আছে হরিবাবুর খাসকামরায়।
হরিবাবু সবেমাত্র মধ্যাহ্নের মাধুকরি সেরেছেন।
খাসকামরায় যাবার সময় হরিবাবু আপন গিন্নী ইন্দুবালাকে বলছেন শুনছো গো গিন্নী কয়েকদিন হলো তোমার হাতের বানানো পানের খিলি খাইনি।
এ কথা শুনে গিন্নী ইন্দুবালা পানের খিলি হরিবাবুর মুখে তুলে দিলেন।
হরিবাবু একের পর এক পানে চিবাচ্ছেন আর আপন গিন্নী ইন্দুবালার বেশ প্রশংসা করতে করতে চলছেন নিজের খাসকামরায়।

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ