অবশেষে (৭ম পর্ব)

আতা স্বপন ২৮ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৮:৪৫অপরাহ্ন উপন্যাস ৮ মন্তব্য

পনের.
মার্কেটে আজ মনে হয় লোকের ঢল নেমেছে।লোকজন গিজ গিজ করছে। অনেকটা পোকার মত।এর মধ্যে এতগুলো দোকান কোনটা রেখে কোনটা কিনি। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি অনেক কিছু কিনে ফেললেন।বয়স্ক মানুষ এতো কিছু তার শরীর সইবে কেন!মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠল। তারাতারি মার্কেট থেকে বেরিয়ে তিনি রিক্সা খুজতে লাগলেন। হারেছ আলীর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন।
এই রিক্সা খিলগাও যাইবা?
হ ছার যামু।
ভাড় কত?
বেবাকের তন লই পচিশ টেকা। তয় আপনে বিশ টেকা দিয়েন।
সবার কাছে যেই ভাড়া নাও আমিও তাই দেব। ডিসকাউন্ট দরকার নাই। দেশটা ডিসকাউন্ট ডিসকাউন্ট কইরাই গোল্লায় গেল।
ছারে যে কি কয়। আমি আমনের কাউ কই নাইতো?
চুপ বেটা ! এটা ডিসকাউন্ট!
ছার আমি কিন্তু ইসকুলে পড়ছিলাম কাউ হইল গরু। আমার ইসকুলের ছারে কইছে ডি কাউ গরু।

বেটা তুই আসলেই গরু। মাথায় গোবর আর গোবর।

এইডা ছার ঠিক কইছেন। আমার ছারেও এইডাই কইছিল। তোরে মাথা দিয়া পড়া শুনা হইবো না। মাথা ভর্তি গোবর। এক কাম কর মাথার মধ্যে শাকসবজি চাস কর ভাল ফলন হইবো।

হারছে আলী পাসের চায়ের দোকানে বসে এতক্ষন তমিজ উদ্দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ সে লক্ষ করল তিনি অন্য একটা রিক্সা ঠিক করছেন। তড়িৎ গতিতে ছুটে সেখানে উপস্থিত হলো।

ছার উঠেন ! রিক্সায় উঠেন! আমনের জন্য অনকেক্ষন হইলো ঐ চায়ের দোকানডায় বইয়া আছি।

কিরে হারেইচ চা তুই কই থেইকা আইলি।ছাররে নেওনের লাইগা। ছারের লগে আমার কথা ফাইনাল হইয়া গেছে। ছারে আমার রিক্সায় উঠব।

দেখ সুরইয্যা ! আমার লগে কেচাল করিব না।ছারে মার্কেডে ডুকনের আগেই আমারে ঠিক কইরা গেছে। হের লাইগা অনেক্ষন বইয়া রইছি। হেয় আমার রিক্সায়ই উঠব।

তুই কইলি আর হইয়া গেল না! ছারে আমারে ঠিক করছে। হেয় আমার রিক্সায় উঠব।

সুরুয্যা ভাল চাসতো এহান থেইকা চইলা যা।নইলে তোর কপালে খারাবি আছে।

তুই আমার কি করবি ফকিরের বাচ্চা।

দেখ বাপ তুইলা কথা কবি না। আমার বাপ ফকির না! আমার বাপ মৌলভী। আরেবার যদি বাপ তুইলা কথা কস ।চাপাত এমন এক থাপ্পর দিমু না দাত সব পাউডার হইয়া যাইব।

দেখি তোর সাহস কত। গায়ে হাত দিয়া দেখ খালী। তোরে কেমন কোলে লইয়া ফিডার খাওয়াই।

রিক্সায় উঠা নিয়ে দুইজনের মাঝে তুমুল ঝগড়া লেগে গেল। তমিজ উদ্দিন ঘটনার আকর্ষিকতায় হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।ইতিমধ্যে মার্কেটের সামনে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। এদের মধ্যে আবার গ্রুপিং হয়ে গেছে। একদল সমর্থন করছে হারেছকে একদল সমর্থন করছে সুরজকে। এমনকি দু দলের মধ্যেও শুরু হয়েছে কথা কাটাকাটি। বিরাট গেনজাম লেগে গেল।

ষোল.
দোস্ত চল আজ একটা দাওয়াত আছে একসাখে যাই।
কোথায়?
আরে স্যারের বাসায়। আজ স্যারের বিবাহ বার্ষীকি।
তাই নাকি! জানতাম নাতো।
আমিও জানতাম না।সকালে স্যার একটা ফ্লাওয়ার বাস্কেট আমার হাতে ধরিয়ে বাসায় পৌছে দিতে বললেন।তখনই জিজ্ঞেস করে জানলাম কথাটা আর দাওয়াতও দিয়ে দিলেন।কিন্তু এই দিনটি আমার ভোলা উচিৎ হয়নি একদম।
কেন? স্যারের বিয়ের দিন তোর কি?
সেটাইতো! আসলে স্যারের এই বিয়েটার স্বাক্ষী ছিলাম আমি।
বলিস কি?
ঠিকই বলছি।একটা নাটকিয়তার মধ্যে স্যারের বিয়েটা হয়।যেদিন পরিচয় সেদিনই বিয়ে। কি বলিস ইন্টারেস্টিং না!
তা আর বলতে। হেভি রোমান্টিক কাহিনী মনে হচ্ছে!
যেমন রোমন্টিক তেমন পেথেটিক।অন্যসময় শুনবি। এখন বল যাবি কিনা।
যাওয়া যায়।তবে রোগীর চাপ একটু কমুক।
আরে সিরিয়াস পেশেন্ট তেমন নাই । আর না আসলেই হল।
তা ঠিক! ওহ! আরেকটা কথা এই মাত্র মনে পড়ল?
কি?
একজনের সাথে দেখা করার কথা ছিল।ভেরী আর্জেন্ট।
কে? তোর ও নাকি?
ঠিক ধরেছিস।আজ ওর বোন বাসায় থাকবে না। কোথায় যেন যাবে। এইতো সুযোগে নিরজনে দুজনে সময়কাটানোর।
বুঝলাম।
কি বুঝেছিস?
গোপন কথাটি রবে না গোপনে।
তা যা বলেছিস।তবে আমাদের কোন কিছু গোপন নেই রে।ওর বোন সবটাই জানে।ওর পরীক্ষা শেষ হলেই বিয়ের প্রস্তাব দিব।
তাহলেতো গেমের চুড়ান্ত পর্যায় দেখছি।এখন ওকে নিয়ে কদি ঘুরবি ফিরবি। বিয়ের আগে এটাই আনন্দ। আচ্ছা আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।
কি?
তোর সেই ইয়েকেও আমাদের সাথে নিয়ে চল!
ধুর! ও রাজি হবে না!
আচ্ছা হলে দুজন বিকেলে হাসপাতালে চলে আছিস। আমি ততক্ষনে একটা গিফট ম্যানেজ করি।
হঠাৎ ইমারজেন্সির দিক থেকে এক নার্স ছুটে আসল। স্যার কোথায় মনে হয় মারামারি হয়েছে। অনেক লোক একসাথে আহত হয়ে ইমাজেন্সিতে আছে। আপনারা একটু আসুন।
দৌড়ে হাজির হল হাসান আর কার্তিক।তাদের সামনে আহত হয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে কয়েকজন। আরো কয়েকজন মেঝেতে বসে আছে। আহত অবস্থায় দুজন কিশোরও আছে। সবাই কম বেশী আহত। এদের মাঝে বুড়োমত একজনকে হাসানের চেনা চেনা মনে হলো।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ