দুম করে উড়ে এলো, ধরো সপ্তর্ষিমন্ডল থেকেও আরো দূরে, কোন অচিন ছায়াপথে বসে থাকা, অরূন্ধতীর দীর্ঘশ্বাস! ধুতুরা ফুলের সাদা খোঁপার মতো, আন্তঃজাগতিক মহাশূন্যতাকে অতিক্রম করে, উড়ে এলো একপশলা মহাজাগতিক বাতাস! মাথার অগোছালো দুর্লভ চুলে আলতো করে, বুলালো হাত, মায়ার দলিল লিখতে গিয়ে রাজ্যশ্রীর নিঃশব্দ বুকে, এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস, খুলির ভিতর পাক খেয়ে জমে আছে অক্ষিকোটরে! তখন অপার্থিব জলযানে একাই ব্যস্ত ছিলাম, প্রাগৈতিহাসিক মৎস শিকারে, সঙ্গী ছিল শুধু একপশলা মহাজাগতিক বাতাস! তখন তুমি বৈকাল হ্রদের জমাট বাঁধা সেতুর উপর, চোখ বুজে দাঁড়িয়ে ছিলে, সব কিছু জমে গেলো, তবু তুমি- কখনো জমাট বাঁধো না! হয়তো স্মৃতিতে কাতর পাখির দল এমনই অদ্ভুত, শুধু উড়ে আর উড়ে! আকাশের কল্পনায় উপস্থিত, তবু অনুপস্থিত আমাদের চারপাশে! একরাশ হিমশীতল বাতাসকে বুকের ভিতরে- তুলতুলে লোমশ পাখির মতো নিয়ে, রাজসিক দুঃখগুলো আইভি লতার মতো শরীরে- পেঁচিয়ে, প্রশান্ত স্বরে বলেছিলে- ‘চলোনা আজ মহাজাগতিক বাতাসে ভিজি!’ বাতাসে কি ভেজা যায়? হয়তো যায়না! হয়তো নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে পাল পাল আলো এসে, মহাবিশ্বকে ভাসিয়ে দেবার কথা ছিল এতোদিনে, কিন্তু এখন তো অন্ধকার মায়াবী ছাতার মতো মেলেছে- বিস্তার! রাডারে শিকার করা মানচিত্রে, হাবলের বহু কষ্ট আর শ্রমে- তোলা ফটোগ্রাফে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার! আলোরা এই অবেলায় হারালো কোথায়? সবকিছু এই চার দেয়ালের মতো তীব্র কালো, এখানে শূন্যতা ও অন্ধকার! পূর্নতাও অন্ধকার, তুমি, আমি ও সবকিছু মিশে যাচ্ছে অস্তিত্বহীনতায়! মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা তো আসলেই নেই! পুনরায় মহাজাগতিক দমকা বাতাস ছুঁয়ে দিলে ভাবি বসে, এইতো আছি! তুমি আমি পাশাপাশি, সুতীক্ষ পর্বতের শরীর ঘেঁষে যেমন রয়েছে বিনম্র মালভূমি! তুমি তখন আন্দিজ পর্বতের ছোট উপত্যকার নীল সরোবরের- পাশে হলদেটে গাছের ভিতের উপর বসেছিলে, হাতে অস্ট্রিচের পালক! মুকুট বানানো দরকার! আর দরকার কিঞ্চিৎ অবসর! মায়ান পাথরগুলো চুরমার হয়ে চোখের সামনেই হ্রদ হলো, আর তুমি সেখানে পা ভিজিয়ে ডাক দিয়ে বললে, এসো জলের উপরে হাঁটি! আমিতো কখনো জলের উপরে হাঁটিনি, সবকিছু ভাসায় যে স্রোত, সেখানে কি হাঁটা যায়? হয়তো তোমার মায়াবি হাত ছুঁয়ে দিলে সম্ভব! কিন্তু সেতো- অদৃশ্য! অন্ধকার! এখনতো সবখানে তুমি, অট্টালিকার ছাদে নেমে আসা চাঁদে, মিনারে, পার্কের সরু রাজপথে, স্কাই স্ক্র্যাপারের মাথায়, সর্বত্র তুমি! তোমার প্রতিরূপ, তোমার প্রতিলিপি! শেষ বিকালের ট্রেনে নীল রঙ্গা স্টেশনে, এখনো ডাকছ তুমি! নাড়াচ্ছ হাত! ডাকছ তুমি পরাহত দেবীর মতো! তীরে আসা গৃহত্যাগী শামুকের- মতো! ঝিনুকের ফেলে যাওয়া খোলসের মতো, ম্লান তবু ঝলসানো ঔজ্জ্বল্য আছে, ঔজ্জ্বল্য পুড়ে গিয়েছে তবু অন্ধকার আছে! শুধু তুমি আছ! হাতে হাত ছুঁয়ে দিলে হয়তো সবই আছে! আবার কিছুই নেই! তুমি-আমি কেউই নেই, অন্ধকার ঘরটার মতোন!
১৯টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
শেষ বিকালের ট্রেনে নীল রঙ্গা স্টেশনে, এখনো ডাকছ তুমি! নাড়াচ্ছ হাত!
আমি অভিভুত নয়নে তাকিয়ে রব তোমার অপরুপ নয়ন পানে।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ। প্রেমের প্রকৃতিই তাই। দূর থেকে অবলোকন আর কষ্টের বীজ বোনা।
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
এখনতো সবখানে তুমি, অট্টালিকার ছাদে নেমে আসা চাঁদে,
মিনারে, পার্কের সরু রাজপথে, স্কাই স্ক্র্যাপারের মাথায়,
সর্বত্র তুমি!
চমৎকার প্রকাশ।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
শুভকামনা
নিতাই বাবু
আমিতো কখনো জলের উপরে হাঁটিনি,
সবকিছু ভাসায় যে স্রোত, সেখানে কি হাঁটা যায়?
হয়তো তোমার মায়াবি হাত ছুঁয়ে দিলে সম্ভব! কিন্তু সেতো-
অদৃশ্য! অন্ধকার!
কবির ভাবনার জয় হোক! কবিতায় মুগ্ধতা রেখে গেলাম। সাথে শুভকামনা থাকলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
আপনার জন্যও শুভকামনা।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ উপস্থাপন।অনেক অনেক ভালো লাগলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রিয়জন সাথে থাকলে সব অসাধ্য ই সাধন করা যায়-জলের উপর হাঁটা যায়। তাকে সর্বত্র হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখা যায়। চমৎকার উপস্থাপন করেছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অফুরন্ত
সৌবর্ণ বাঁধন
দিদি অনেক ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
মনেমাধুরী দিয়ে গাঁথা ভাবনাগুলো চমৎকার কবি দা
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
সুপ্রিয় ব্লগার, লক্ষ্য করা যাচ্ছে আপনি নিজের পোস্ট দিলেও অন্যদের পোস্ট আপনি দেখছেন না এবং মন্তব্য করছেন না, আশা করছি সবার লেখা পড়ে মন্তব্য করুন এবং নিজের অবস্থান দৃঢ় করুন।
:- এডমিন
সৌবর্ণ বাঁধন
সুপ্রিয় এডমিন আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু।
অসাধারণ!!!!!
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ।