শায়লা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একজন এক্সিকিউটিভ। খুব ভাল স্যালারী।সামনে প্রমোশন। মেধাবী শায়লা ক্যারিয়ার অরিয়েন্টেড ছিল বরাবরই। এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। ওর আন্ডারে কাজ করছে প্রায় শ খানেক লোকজন। শায়লার এই উন্নতিতে সবাই খুশি। অফিসেও ওকে সবাই সম্মান করে, জুনিয়র কলিগরা ভয়ও পায়। এই ৩২ বছরেই ও ঈর্ষনীয় অবস্থান তৈরি করেছে। পরিবার স্বজনরা ধন্য ধন্য করছে।
কিন্তু অফিস শেষে বাসায় ফেরার পর একরাশ শুন্যতা ঘিরে ধরে অবিবাহিতা নিঃসংগ শায়লাকে।
পড়াশুনা আর ক্যারিয়ার ছিল ওর ফার্স্ট প্রায়োরিটি। দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এমবিএ করে লন্ডন থেকেও কোর্স করে এসেছে। দেখতেও বেশ ও। জীবনে কারো প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। সবগুলো বিয়ের সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিয়েছে। এক পর্যায়ে ওর বাবা মাও হাল ছেড়ে দেয়। বিবিএ লাস্ট ইয়ারে শরিফ নামের একজনের সাথে কিছুটা সম্পর্ক হয়েছিল। সুপ্রতিষ্ঠিত শরিফ বিয়ের কথা বলতেই সেই সম্পর্কও বাদ দেয় ও। লন্ডন যাওয়ার আগে আগে খুব ভাল একটা বিয়ের প্রপোজাল আসে ওর জন্য। পাত্র পক্ষ চেয়েছিল দুই এক মাসের মধ্যেই বিয়ে করতে। কিন্তু শায়লার কোর্স এক বছরের। এক বছরের আগে বিয়ে সম্ভব না। নিজেকে আরো যোগ্যতর করে তুলতে চেয়েছে শায়লা।
তারপর দেশে ফিরেই জব। এটা শায়লার দ্বিতীয় জব। কিন্তু এখন আর ওর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসে না। বন্ধু বান্ধবিদের সবাই বাচ্চা কাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে ব্যাস্ত। এখন শায়লা একটি পরিবার চায়। কিছুটা কম যোগ্যতা সম্পন্ন পাত্র হলেও চলবে।
এই যেমন ওর অধঃস্তন মাহমুদ নামের ছেলেটাকে আজ শায়লা নিজেই লাঞ্চ করার অফার করেছিল। মাহমুদের রিসেন্ট ডিভোর্স হয়েছে। বয়সে ২/৩ বছরের বড় বস এর সাথে লাঞ্চে গিয়ে খুব স্টিফ হয়েছিল। মাহমুদের সাথে ঢলেঢলে কথা বলেছিল শায়লা। ইংগিত দিয়েছিল, আহ্বান করেছিল সুক্ষ্মভাবে। মাহমুদ বোঝেনি সেটা। বরং কথায় কথায় বলেছিল নিজের গার্লফ্রেন্ডের গল্প।
আজকের দিনের কথা ভেবে শায়লার নিজের প্রতিই কেমন যেন ঘৃণা হচ্ছে। ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে ও জীবন থেকে বহুদূরে চলে গেছে আজ!!!
৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ
আরজু মুক্তা
আজকাল এমনি হচ্ছে। সময়ের ব্যতিক্রম
সাবিনা ইয়াসমিন
এমনটা হয় অনেক ক্ষেত্রে। একদিক পরিপূর্ন করতে গেলে আরেকদিক কিছুটা বা পুরোটাই বাদ থেকে যায়।
মাত্র ৩২ বছর! উহু, এতো অল্পে প্রতিষ্ঠিতদের নিরাশ হতে নেই। বয়স আরো বাড়াতে হবে।
গল্প ভালো হয়েছে 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভিন
সয়ংসম্পূর্ণ হতে গিয়ে হয়েছে নিঃসঙ্গ একা। উচ্চতার শিখরে উঠতে গিয়ে একাকীত্ব হয়েছে সঙ্গী।
চমৎকার লিখেছেন
এস.জেড বাবু
একদিকে সাধুবাদ জানাই।
বাট হৃদয়ের ঘা এই সাধুবাদের মত মলমে নিরাময় যোগ্য নয়।
তিনিও হয়ত একদিন জুটিবদ্ধ হবেন তবে বর্তমান শূণ্যতার প্রতিটি মূহুর্ত ভয়াবহ এটা সত্যি।
চমৎকার লিখেছেন।
জিসান শা ইকরাম
ক্যারিয়ার নিয়ে কঠিন সাধনা করে এমন অবস্থার মধ্যে পরেছে এমন দু-একজনকে আমিও জানি।
একটি সময়ে আমাদের একজন সঙ্গীর শূন্যতা তৈরী হয়ই।
মানুষ বলেই এই শূন্যতা,
রোবটিক জীবনে শূন্যতা থাকে না।
নিতাই বাবু
এমন তো অনেক মেয়ে দেখেছি আমি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে নিজের স্বপ্ন সাধনাও বিসর্জন দিয়ে আয়ু-বুড়ো হয়ে চিরকুমারী সেজে বসে আছে। এখন আর শায়লাকে কেউ জিগায় না।
সুন্দর একটা লেখা পড়লাম! শুভকামনা সবসময়।