"দূরে কোথায় দূরে দূরে..."

অনেক পাগলামী করি নিজের সাথে নিজে। নিজের সাথে পাগলামী করার একটা সুবিধা হলো, কেউ এসে বলবে না এসব কি? এমন করতে নেই। অথচ ওসব পাগলামীতে এ পৃথিবীর কারোই কোনো ক্ষতি হয়না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই তাহলে। আমার রাজত্ত্বে সার্বক্ষণীকভাবে রাজত্ত্ব করে সুর। তো গান কখনোই থামেনা। সে যদি পথে থাকি, কিংবা বিছানায় শুয়ে। এমনও হয় একই গান বারবার করে টেনে শুনে যাচ্ছি। আর হিসেব ছাড়া, তাতে কারো কি কোনো ক্ষতি হয়? কিন্তু অন্য কেউ যদি থাকে সে বিরক্ত হবেই এসব বহু উদাহরণ দিতে পারবো।

এবার আসি কথা বলায়। কথাই মানুষের বন্ধু, আবার এই কথাই মানুষের শত্রু। জীবনের এ সময়ে এসে দেখছি প্রচুর মানুষ আমায় খুবই অপছন্দ করে। যা আগে কখনো দেখিনি। এক সময় আমায় যারা চিনতো-জানতো, ভালো যা লাগতো না বলে দিতো। এমনকি বকুনীও দিতো। আর এখন চেনা-জানা মানুষগুলো যাদের জন্য মঙ্গল কামনাই করি। তারা পেছনে কথা শোনায়। ভুল ধরিয়ে দেয়না, শাসন করেনা। কে বলে দূরত্ত্ব কমিয়ে দিয়েছে আর্ন্তসংযোগ? বরং সমালোচনা বাড়িয়ে দিয়েছে। আপন-পর শিখিয়ে দিয়েছে। আর ভুল বোঝা তো এখন জলভাত। মনে আছে ছোট্ট বেলার বান্ধবী ভারতীর কথা। সারাটি দুপুর ওর বাড়ীতে, তাও রোজ। এমনকি সেও। কিন্তু কখনো এমন কথা শুনিনি আমাদের বন্ধুত্ত্ব আমাদের পরিবারের সাথে দূরত্ত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

এবার আসি আমার নিজের চরিত্রের কথায়। বিদ্রূপ করা, খোঁচা দিয়ে কথা বলা শিখেছি। না, না কারো থেকে নয়। আমি কখনো আমার খারাপের জন্য কাউকে দায়ী করিনা। আমি না চাইলে কেউ আমাকে খারাপ কিংবা ভালো করতে পারবে না। নিজের চেষ্টা থাকতে হবে। সময় আমাকে অনেক রাগী করে দিয়েছে। যদিও আমার রাগ হাতে গোণা মানুষের জন্য। আর হাসিটুকু সকলের।আজ সকালে অনেক বৃষ্টি আর ঝড় ছিলো এখানে। য়ার এখানকার ঝড়টা বাইরে বেড়ুলে বোঝা যায়, এর তীব্রতা কতোটুকু। উইকএন্ডে কাজ করা তাও এই আবহাওয়ার মধ্যে। যারা করে আমি বলি তাদের বড়োই ভাগ্যহীন। কারণ এসব মুহূর্ত ওমের মধ্যে ডুবে থেকে আড়মোড়া ভাঙ্গার সময়। তারপর উঠে সকালে সব্জী-পরোটা এবং নীলা স্পেশ্যাল ওমলেট, সাথে উষ্ণ উষ্ণ কফি। আহ আর কি আছে জীবনে? ওহ আর পাশে থাকলে প্রিয় মানুষটার দুষ্টু দুষ্টু আহ্লাদী পাগলামো, জীবনে পাওয়া-না-পাওয়া নিয়ে কি আর আফসোস থাকে? এটা কি সিনেমা ছাড়া দেখা যায়? হুম যায়, যায়। আমার বাবা-মাকে দেখেছি তো। তাই তো এতো রোমান্টিক আমি। আর রাগীও। অনেকেই প্রশ্ন রেডি করে ফেলেছেন, আমার জীবনে এমন নেই? আসলে আমি এতো বেশী মাত্রার রোমান্টিক এবং আবেগী যে, আমার মনকে ডিঙ্গানো কি অতো সহজ কাজ? যাক রোমান্টিকতার কথা আবার পরে বলবো।

এখন আসি নীলা স্পেশ্যাল ওমলেটে। সবাই যেভাবে তৈরী করে, আমিও তাই। কিন্তু সবাই বলে আমার হাতের ছোঁয়ায় অন্যরকম স্বাদ। রেসিপিটা দিলাম, তবে ভাব মারতে নয় কিন্তু। আরেকটি কথা এ জন্মে কোনোদিন রেসিপি লিখিনি, এই প্রথম লিখছি। আর রেসিপির নামটা আমার দেয়া না, বন্ধুরা দিয়েছে।

**নীলা স্পেশ্যাল ওমলেটের রেসিপিঃ
লার্জ সাইজের মুরগীর ডিম(এখানে এক্স-এল সাইজের ডিমও মেলে)-চারটি
বড়ো লাল পেঁয়াজ - দুটি
কাঁচা মরিচ - স্বাদমতো, আমি দিই চারটি
শুকনো লাল মরিচ - একটি
আদা পেষ্ট - দুই চা.চামচ
কারি পাউডার - এক চা.চামচ
কারি পাতা গুড়া - এক চিমটি
লবণ - পরিমাণমতো
ধনেপাতা - এক আঁটি(আমি বেশী পরিমাণে ব্যবহার করি)
টমেট্যো কুঁচি - চায়ের ছোট কাপ
ক্যাপসিকাম(সবুজ-লাল-হলুদ-কমলা)মিক্সড কুঁচি - চায়ের ছোট কাপ
দুধ - অল্প
অলিভ অয়েল/সরিষার তেল - পরিমাণ মতো
রন্ধনপ্রণালীঃ
কাটারবোর্ডে পেঁয়াজ দুটো এবং কাঁচা মরিচও কুচি কুচি করে কাটুন। আদা বেটে নিন। তারপর টমেট্যো-ক্যাপসিকাম(সব রঙের না পাওয়া গেলে সমস্যা না) কুচি করে কেটে একটা কাপে রেখে দিতে হবে। এবার ফ্রাইপ্যানে চুলায় ওঠান, সর্ষে/অলিভ তেল ঢালুন। ওর মধ্যে টমেট্যো-ক্যাপসিকাম-মরিচ কুচি-অল্প পেঁয়াজ-কারি পাতা গুঁড়ো হাল্কা করে ভেঁজে নিন। একটু ভাঁজা হলে উঠিয়ে বাটিতে রাখুন। আরেকটি পাত্রে ডিমগুলো ভেঙ্গে, তার মধ্যে পেঁয়াজ-কাঁচা/শুকনো মরিচ-আদা পেষ্ট-কারি পাউডার-লবণ-ধনেপাতা-দুধ সব একসাথে মিশিয়ে নিন। আমি ইন্ডিয়ান কারি পাউডার ব্যবহার করি। ফ্রাইপ্যানে আবার তেল ঢালুন, ফেঁটানো ডিম ছেড়ে দিন যেভাবে ওমলেট ভাঁজা হয়। আগুণের আঁচ খুব হাল্কা জ্বালে রাখতে হবে। আর উপরে ওই টমেট্যো-ক্যাপসিকাম ছেড়ে দিন। আস্তে আস্তে ডিমটা শুকিয়ে যাবে। হাল্কা ভেঁজা ভেঁজা থাকতে আরোও একবার ধনেপাতা ছড়িয়ে দিন। হয়ে গেলো নীলা স্পেশ্যাল ওমলেট।
ভালো না হলে এজন্য আমি কিছুতেই দায়ী থাকবোনা কিন্তু।
আসল কথায় আসি। আজ আমার মন ভালো নেই। অন্যায় না করেও শাস্তি পেলে ভালো তো থাকার কথাও না। এও জানি সত্যি প্রকাশ পাবেই। সেদিনের কথা ভেবে আমার খারাপ লাগছে, বড়োরা যখন ভুলের জন্য আফসোস করে আমার ওসব নিতে খুব কষ্ট হয়। মানুষ যখন যে কাজের জন্য আফসোস করে, তখন সে বড়ো একাকী হয়ে যায়। আর এই শাস্তি বড়ো ভয়ানক। আমি তাই চাইনা আমার প্রিয় গুরুজন কষ্ট পাক। তাই যে করেই হোক দেরী করে একাকী হয়ে আফসোস না করে এই যে আমি আছি আমায় বুঝুক। এই কষ্ট কেন? আরে আমি তো মহামানবী নই। ওহ মহামানবী বলে শব্দটা কোনো কাজেরও না অবশ্যই। মহাপুরুষ অবতার হয়, মহামানবী কোনো ধর্মের অবতাররূপে কি এসেছে? সব ধর্মপ্রচারকই তো পুরুষ, নারী কোথাও নেই। নারীদের কি সাধ্য প্রচার করার? ওদের জন্য ঘর-স্বামী-সন্তান।
মনে পড়ে গেলো অনেক বছর আগে ১৯৯৬/'৯৭ সালে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো, নাম সাবা আহমেদ। ওর জন্ম, বড়ো হওয়া পাকিস্তানে। কিন্তু আসলে বাংলাদেশী। ওর বাবা চাকরীসূত্রে পাকিস্তান ছিলেন। ওঁদের পরিবারের সাথে আমার ভালো পরিচয় ছিলো। তো অসম্ভব সহজ-সরল মেয়েটি। শমশেরনগর এলে আমাদের বাসা ছাড়া আর কোথাও যেতো না, কারো সাথে মিশতো না। ওর চশমার পাওয়ার ছিলো ভয়ংকর। আর ও না হাসলেও মুখ ভরা হাসি। যাকে বলে স্মাইলিং ফেস। একদিন আমাদের বাসার মন্দিরে (ঠাকুর ঘরে) ও ঢুকলো। যদিও আমাদের পরিবারে এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু চা' বাগানের একজন ইমাম উনি এসে দেখলেন, সঙ্গে সঙ্গে উনি বলছেন "নাউজিবিল্লাহ।" মেয়েটির ধর্ম নাকি গেছে। ঠিক একই সময়ে একজন হিন্দু ষ্টাফ জাতে ব্রাহ্মণ উনি তো মামনিকে বলেই ফেললেন মুসলিম মেয়েকে মন্দিরে ঢুকিয়ে আমাদের জাত নাকি নামিয়ে নিয়েছি। সাবার মুখের দিকে চেয়ে দেখছিলাম আমি, কি অসহায় মেয়েটি তখন। মামনি সেই মুহূর্তে ওই দুজনের সামনে সাবাকে ডেকে বললো, "দেখা হলো মন্দির?" সাবা মাথাটা দুলিয়ে হ্যা করলো। ওই ব্রাহ্মণ আর ইমাম দুজন অবহেলা পেয়ে চলেই গেলো। কিছুদিন পর ইমামের চাকরীও গেলো উনি নাকি একটা ক্লাশ থ্রী-এর বাচ্চা মেয়েকে আরবী শেখাতে গিয়ে শরীর ছুঁয়েছিলো। আর ব্রাহ্মণ পরে স্যরি বলেছিলো এসে।

আমার মামনি...
আমার মামনি...

যাক হঠাৎ শুনলাম সাবার বিয়ে। সাবার চাচু এসে আমায় খবর দিলেন। ওদের বাসায় যেতেই দৌঁড়ে এসে বললো, "নীলা তোমাকে আমি খুব বেশী মিস করবো। আমার হবু বরকে বলেছি তোমার কথা।" তারপর ওর লেহেঙ্গার সেট, অনেক অনেক কাপড় দেখিয়ে বললো এসব কবে, কখন পড়বে। ওর মা এসে বললেন, "নীলার জন্যে যে রেখেছো, সেটা দেখাও।" আমায় একটা লেহেঙ্গা দিয়ে বললো, "নীলা এটা তোমার জন্য। তুমি নীল ভালোবাসো জানি আমি।" প্রথম কথা পাকিস্তানী কোনো জিনিস আমি ব্যবহার করিনা, আর লেহেঙ্গা পড়ার মন-মানসিকতা নেই। কিন্তু ওর মুখের দিকে চেয়ে নিলাম, বললাম বুঝিয়ে। এতো ভালো মানুষ কেন আসে আমার জীবনে? আজ ওকে খুব মনে পড়ছে। তখনও ই-মেইল কি বুঝতাম না। ও আমাকে ওর ই-মেইল দিয়েছিলো, বললো "এটা রাখো, যখন তোমার ই-মেইল হবে আমায় লিখো।" প্রথম ইয়াহুতে মেইল করেছি আমি সাবাকে। উত্তর আসেনি। পরে শুনেছি ও নাকি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কাউকে চিনতে পারেনা। ও কোথায় আছে ওর পরিবার জানে, আমি জানতে চাইনি। সহজ-সরল আর মায়ায় ভরা মুখটা অমনই থাকুক না মনে আজীবন। এখনও ইয়াহু মেইলে ওর ঠিকানা আছে। কেন এমন অবস্থা ওর জানতে ইচ্ছে করছে? ওর সেই হবু বর, যাকে সে ভালোবেসেছিলো তার অত্যাচারে। হায়রে পুরুষ, এদের ভালোবেসে কি না বিসর্জন দেই আমরা নারীরা!

ভালোবাসি।
আর কোনো শব্দ জানা নেই আমার।
তোমাকে ভালোবাসি।
সে তুমি আমায় বিসর্জন দিলেও,
গোপনে রাখলেও,
কাছে না ডাকলেও,
ভালোবাসি।
আর কোনো শব্দ জানা নেই আমার।
শুধু জানি তোমাকে ভালোবাসি।

হ্যামিল্টন, কানাডা
২৮ জুন, ২০১৫ ইং।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ