হেঁটে চলা সময়।

শুন্য শুন্যালয় ৩ আগস্ট ২০১৬, বুধবার, ০৩:৪৪:২২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪৮ মন্তব্য

মেমোরি থেকেঃ
বাবার সাথে কোন একটা কাজে বের হয়েছিলাম। হাঁটছি তো হাঁটছি, আব্বা তবুও রিক্সার নেবার নাম করছেনা। রাগের মিটার চড়তে চড়তে বললাম,
* আব্বা রিক্সা নেন।
= রিক্সা তো মা ব্রিজের গোড়ায় গেলে পাবো
* কিন্তু খালি রিক্সা তো কতই চলে গেলো সামনে দিয়ে
= তাই?
* 🙁
ব্রিজের গোড়া পার হয়ে যাচ্ছি।
* আব্বা রিক্সা নেন।
=মা এক কাজ করি, আমরা ব্রিজটা পার হয়ে ওপাড় থেকে রিক্সা নেই, তাহলে রিক্সাভাড়া অর্ধেক হয়ে যাবে।
* 🙁
ব্রিজ পার হয়ে ওপাড়ে গেলাম, তবুও রিক্সা নিচ্ছেনা দেখে রাগের চোটে কিছু বলছিনা।
অফিসের কাছাকাছি প্রায় তখন মনে পড়েছে এমন ভাবে আব্বা বললো,
=চলো রিক্সা নেই
* আমি রাগ করে, কোন দরকার নেই, অফিস কাছেই।
= তা অবশ্য ঠিক, অইতো অফিস দেখাই যাচ্ছে এখান থেকে।
আব্বাকে কিছুই বলতে পারিনা। যত্ত রাগ বাড়ি এসে মায়ের উপর ঝাড়লাম, আবার যদি আব্বার সাথে কোথাও পাঠিয়েছেন তো দেইখ্যেন 🙁
আমার বাবা গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে অভ্যস্ত। ছাত্র ইউনিয়ন করেছে, এরপর কমিউনিস্ট পার্টিও, তাই হাঁটা তারকাছে মাছে-ভাতে বাংগালীর মতো, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, হয়তো রিক্সা ভাড়ার ৫/৬ টাকা বাঁচানোও একটা ফ্যাক্টর ছিলো। হিসাব করলে হয়তো মিনিট ২০ কিংবা আধাঘন্টা হেঁটেছিলাম।

এখন হাঁটি শখে, হাঁটি ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে, হাঁটি আনন্দে, হাতে মোবাইল ক্যামেরা থাকলে এক ঘন্টাও অনায়াসে হেঁটে যেতে পারি।
তবে এই প্রথমবার হেঁটে হেঁটে ট্রেন স্টেশন পৌঁছানোর পর ট্যাক্সির ১০ ডলার বাঁচাতে পেরে কেমন এক আত্মপ্রসাদ অনুভূব করলাম। বাবাকে মনে পড়েছে কাল খুব। তুচ্ছ কতো তুচ্ছ কিছু থেকেও কতো বড় কিছু গ্রহণ করতে পারি আমরা।

অধুনা আকাশ ভ্রমণের প্রেমে পড়েছি, রিক্সাভ্রমণ আজীবনের পছন্দ ছিলো। তবু বলি হাঁটার মতো অতিমাধুর্য্যের কিছু নেই, হেঁটেছি বলেই একদিন গোলাপ ফুলের ম্যাক্রো ছবি নিতে গিয়ে পাপড়ি সরাতেই দেখি, তার ভেতর একটা শামুক, যেন ঘুমিয়ে আছে। স্বর্গীয়। আমি যেন এখন সময়কে হাঁটাই।

*************************************************************************
বাসস্টপ ও রেললাইন

20160802_130706 [] (2)20160802_131409 []

কোনটা দিয়ে শুরু অথবা শুরুর শুরু? একটি হচ্ছে শুরু কিংবা শেষ, আরেকটি চলা, গতি। যদি বলি সবকিছু প্রথমে শুরু দিয়েই শুরু হয়, এরপর চলা, তবে কিছুটা ভুল বোধহয় থেকেই যাবে, কারন সত্যি সত্যি কোথায় কবে শুরু তা আমরা কেউ জানিনা, আমরা তো চলছিই চলছি মনেহয় আদি থেকে অনাদি। আর শেষটাও কোথায় তাইবা কে জানে? তবে আমাদের সমাধিতে একটা তারিখ লেখা থাকে জন্ম এবং মৃত্যুর। মাতৃগর্ভের সময়টুকু আমরা গুনিনা, গুনিনা অন্ধকারের অই পাড়ের সময়টুকুও। মূল্যবান সময়ের ভিড়ে, মূল্যহীন কিছু সময় তবে থেকেই যায়, তাইনা?

 

 

 

 

.

0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

  • জিসান শা ইকরাম

    মেমোরি থেকে লেখায় যেন দেখতে পাচ্ছি আপনাকে, বাবার সাথে কিভাবে কথা বলছেন,
    মুখে রাগের অভিব্যক্তি,
    এমন অবস্থায় অনেকেই রাগের চোটে থপ থপ করে হাঁটে, আপনি কেমন করে হাঁটছিলেন এটি অবশ্য লেখায় অনুপস্থিত 🙂

    কত শত অভিমানী ভাল লাগার স্মৃতি জড়িয়ে রাখে এখনো আমাদের
    বেঁচে থাকি আমরা এইসব মধুর স্মৃতি নিয়ে।

    হাঁটতে ভালই পারেন দেখছি,
    অষ্ট্রেলিয়ায় ১০ ডলারের পথ একেবারে কম না, কমপক্ষে ২০ মিনিটের হাঁটার পথ তো হবেই,
    হাঁটতে আপনার আনন্দ হবেই, কবি মানুষ, ক্যামেরা ম্যান, দার্শনিকও বলা যায়, যেভাবে গোলাপের মাঝে শামুক খুঁজে পেলেন 🙂
    বেশী বেশী হাঁটুন, সুস্থ্য থাকুন,
    সতেজ ও সজীব থাকুন।

    বাসস্টপ ও রেললাইন এর লেখাটুকু তো পুরাই দর্শন তত্ত্ব,
    বুঝতে একটু সময় নিচ্ছি।

    রেল লাইন ও ষ্টেশন আমার অতি প্রিয় বিষয়,
    পাশাপাশি হেঁটে চলা জীবন ভর, একই সাথে, এই হচ্ছে রেল লাইন।

    শুভকামনা রাশি রাশি।

    • শুন্য শুন্যালয়

      হ্যাঁ এইসব তুচ্ছাতি তুচ্ছি স্মৃতিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। থপথপ করেই মনে হয় হেঁটেছিলাম। রাগি মুখ দেখা যাচ্ছে? 🙂
      হ্যাঁ এখন অনেক হাঁটতে পারি, একদিন তো প্রায় ৪০ ডিগ্রি মাথায় নিয়ে দুই ঘন্টা হেঁটেছিলাম। 🙂
      গোলাপের মধ্যে শামুক দেখে সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল সেদিন, অই দৃশ্য আমাকে তো বটেই আপনার মতো যুক্তিবাদিও দার্শনিক হয়ে যেতো।
      রেললাইন আপনার প্রিয়, হুম জানিতো। আস্ত লেখা ছিল রেললাইন নিয়ে। 🙂
      আপনার জন্যেও শুভকামনা, যাতে হেঁটে হেঁটে আপনিও এমন ১০ ডলারের সম পরিমান গাড়ির তেল বাঁচাতে পারেন।

  • মিষ্টি জিন

    হাঁটতে শিখি সিংগাপুরে বসে। প্রথম প্রথম বেশ কঁষট হোত । একসময় অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেল । না হাঁটলে ভালই লাগতো না।ট্যাক্সী তে ১০/১৫ ডলারের দুরত্বটুকু হেঁটেই যেতাম।
    সুস্হ থাকার জন্য যতটুকু হাঁটা প্রয়োজন এখন সেটুকু করতে গেলেই হাপিয়ে যাই। অনভ্যস্ততার কারনে।
    দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা বন্ধু চিরকাল …. রেললাইন বহে সমান্তরাল । ছবি দুটো খুব সুন্দর বিশেষ করে রেললাইনের ছবিটা।

    • শুন্য শুন্যালয়

      হাঁটতে গেলে অনেক কিছু ভাবাও যায়, তাইনা আপু? একসময়ের অভ্যাস আবার ফিরিয়ে আনুন। হেঁটে বেড়ানো সত্যিই আনন্দের। রেললাইন সবসময়ের পছন্দ, তবে বাসস্টপের উপরে এত সবুজ খুবই ভালো লেগেছে দেখে সেদিন।
      আপু মরুভূমি কোথায়? ছবি চাইইইইই।

      • মিষ্টি জিন

        হ্যা আপু ঠীক বলেছেন । হাঁটার সময় ভেবে ভেবেই তো পোষ্টগুলো দিতে পারঁছি । মরুভূমির ছবি সহ আরো কিঁছু ছবি দিয়ে একখান ছবি ব্লগ দিতে মুন্চায়। কিন্তুক সমিস্যা হইল পেটের মধ্যি আস্ত একখান মিসাইল মারলেও এক লাইন কথা মালা বাইর হইব না তয়
        দেখি কবি গো থিকা ধার ধোর কইরা কিঁচু লওয়া যায় কিনা। :p

      • শুন্য শুন্যালয়

        ধার টার আবার কি বলছেন, আমিতো এতদিন ধরে চুরি করে কাজ চালাচ্ছি, আপনিও শুরু করুন 😀
        আপনার ছবিগুলো দেখবার জন্য খুবই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি, সাথে মরুভূমি দেখবার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করুন আপু। হেঁটে বেড়ানো সত্যিই আনন্দের।

  • মেহেরী তাজ

    আপু হাটাহাটির প্রতি প্রেম না জন্মালে হবে না! আর প্রেম টা জন্মায় একটা নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পর। বুঝতেছি আপনার সে বয়স হয়েছে! হা হা হা হাহা হা…..
    হেটে ১০ ডলার বাঁচায়ে ফ্বলছেন!?? বিশাল কাজ করব ফেলছেন আপু……

    কি হয়েছে আপু আজকাল খুব ” শুরু” খুঁজতেছেন যে? এটা ভালো লক্ষণ নয়। এটা পাগল হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। প্রকৃতি রহস্য করতে পছন্দ করে! আমাদের উচিৎ সেই রহস্য ভেদের চেষ্টা না করা!
    আপুউউউউ আসলে শুরু শেষে কিছু যায় আসে না মাঝের সময়,প্রাপ্তি এগুলাই আসল! বাঁকি সব ভুয়া……. 🙂

    • শুন্য শুন্যালয়

      আর্লি এডোলেসেন্স আর বৃদ্ধদের বয়সের এক সিমিলারিটি আছে, মানসিক সমস্যাগুলো বেশিরভাগই এই দুই এজ গ্রুপের মধ্যে দেখা যায়, সুইসাইডাল টেনডেনসি, অভিমানি হওয়া, প্রেমেও পড়া, হা হা হা। আমি বৃদ্ধদের দলে। তাই সেই বয়স হইছে বলাই যায়। আমার প্রেমিক এখন হাঁটাহাঁটি।
      ১০ ডলার বাঁচানো আসলেই বিরাট কাজ, ভেবে দেখ মাত্র তিন মিনিটের ড্রাইভিং এর জন্য ১০ ডলার নিয়ে নেয়, হেঁটে আসতে লেগেছে মিনিট বিশেক। এখন থেকে ১০ ডলারের এক ব্যাংক খুলবো ভাবতেছি 🙂
      তো তোরও রেললাইন পছন্দ বলছিস? হুম, মাঝের সময়ই আসল। বাকি সব ভূয়া।
      পাগল কিন্তু কিঞ্চিত হইছি। পাগলের এক জোকস শোন।
      –পাগলখানার ডাক্তার গিয়েছে তদারকি করতে, নানা রোগির সাথে কথা বলে, একজন কে তার মনে হলো সে সুস্থ। তাকে বললো, আপনি তো দেখি একদম সুস্থ, দেখি আপনাকে এই গারদ থেকে ছাড়াবার সুপারিশ করবো। পাগল বললো, হ্যাঁ আমিও সেই কথাই বলছি বারবার আমি পাগল নই, আমাকে ছেড়ে দাও। ডাক্তার বললো, দেখি কী করা যায়।
      কিছুদূর চলে যাবার পর ডাক্তারের মাথায় আধখান ইট এসে পড়লো, ঘুরে দেখে সেই রোগী বলছে, স্যার মনে করে কিন্তু সুপারভাইজাররে বইলেন!!!
      আমি কিন্তু পাগল না, পাগলের বইন। 😀

      • মেহেরী তাজ

        আপু বুড়ো বা পিচ্চিদের সিমিলারিটি ব্যাপার টা বুঝলাম! সুইসাইড, অভিমান সেও না হয় বুঝলাম, কিন্তু প্রেমে পড়ার বিষয়টা কি সত্যি? ;?
        আপনি ১০ ডলারের ব্যাংক দিয়ে করবেন কি??? ভেবেছেন কিছু?
        আমার স্টেশন পছন্দ। আমার মন খারাপ হলেই সান্তারা গিয়ে বসে থাকি! কত মানুষ কথা ধারেকাছে অথচ কোন প্রশ্ন করার কেউ নাই! চারপাশে বাতাস……
        পাগল হয়েছেন?? হায় হায়….!!!
        হা হা হা হা পাগলের জোক্স…… হা হা হা হ হা

  • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

    আপনার বাবা যে শুধু এরকম তা নয় সেই সময়কার বাবারা এমনি ছিলেন মাইলের পর মাইল হেটে চলে গিয়েছেন হাটে বাজারে তারপর আপনার পিতা একজন কমিনিষ্ট।খুবই ভাল লাগল মেমোরি। -{@

  • আবু খায়ের আনিছ

    হাটার বাতিক আছে আমার। ইচ্ছা করেই মাইলের পর মাইল হেটে যাই এখনো। বাবার সাথে কখনো হাটাঁ হয়নি, আমার বাপ আমার চেয়ে বড় নবাব, এইটুকু রাস্তা উনি রিক্সা করেই যান। তবে মাঝে মধ্যে হাটতেও দেখেছি।

    শেষের কথাগুলো পড়ে একটা গানের কথা মনে পড়ল, জীবন নামের রেলগাড়ীটা পাইনা খুঁজে ইষ্টিশন………………………

    • শুন্য শুন্যালয়

      হেঁটে বেড়াতে আমার খুবই ভালো লাগে, কখনো গান শুনতে শুনতে হাঁটি, কখনো ভাবতে ভাবতে, কখনো কিছু না ভেবেই। তুমিও হাঁটো, হুম হাঁটা নিয়ে লেখা দিয়েছিলে আগে, মনে আছে। হাঁটা থামিও না।
      মাঝে মাঝে ভাবি ইশ যদি ফরেষ্ট গাম হতে পারতাম!!

      • আবু খায়ের আনিছ

        আজকেও হেটে এলাম অনেকক্ষণ। মাথায় অবশ্য একটা ভূত নিয়ে এসেছি। এই বার আমি বরিশাল যাবই যাব। সব বাদ দিয়ে হলেও যাব।

      • শুন্য শুন্যালয়

        অবশ্যই যাবে, পেয়ারা বাজার, দূর্গাসাগর দেখে আসবে, আর আসার সময় জিসান ভাইয়ের ড্রয়িংরুম থেকে আমার জন্য একটা সোফা তুলে নিয়ে আসবে। পারলে টেবিলটাই। দিঘী আর বটগাছটা কী পারবা? না থাক, বেশি ওজন হবে।

  • ছাইরাছ হেলাল

    এ খুবই অন্যায়, অন্যায্যও বটে, আমার সব আইডিয়া সবাই নিয়ে যাচ্ছি, এ জুলুম আমি সহ্য করলাম,
    অন্য কেউ করবে না। দূরত্ব নিয়ে লেখা দিতে গিয়ে দেখি এক মহাজন আগেই বাগিয়ে বসে আছে,
    ঠিক আছে মানলাম, আজ ভাবলাম পথের উপর লেখাটি দেব!! এখন দেখছি আপনি শান দিয়ে ফেলেছে,
    এ দেখছি অতি গভীর ষড়যন্ত্র!! ভাবছেন এভাবে দাবিয়ে রাখতে পারবেন!!
    সে গুড়ে চিনি, বস্তা বস্তা চিনি।

    • শুন্য শুন্যালয়

      একি আপনি হাত-পা ছুড়ে এমন কান্নাকাটি শুরু করেছেন কেন? বস্তা গুলোর গিট্টু মিট্টু একটু টাইট করে দিন না ভাইজান। কিসের বস্তা বানিয়েছেন তাও বিবেচ্য, পিঁপড়ের নজর পড়লে, গিট্টুতেও কাজ হবেনা। ফুটো করে নিয়ে যাবে।
      দুইন্যার সব টপিক উনি নামজারি করে রেখেছেন যেন!!

      • ছাইরাছ হেলাল

        দুইন্যাইতে বিচার নাই,
        পিঁপড়েরা সব নিক, নিয়ে যাক,
        বিষপিঁপড়ে না হলেই বাঁচি।

        তা খুব দার্শনিক হয়ে গেলেন এক-আধ দিন হেঁটেই!!
        শুরুর শুরু বা শেষের শেষ বলে কিচ্ছু নেই ভাইয়া, চলুক ও চলিবে সিস্টেমই ভাল।
        হাঁটা চলুক, সাথে ক্যামেরা থাকুক, আমারও থাকি আশের পাশেই!!

      • শুন্য শুন্যালয়

        আপনার জিউসের কাছে গিয়ে নালিশ করুন এইবার। বস্তা বস্তা চিনি রক্ষায় বিষের হুল দু একটা না খাইলে চলবেনা।
        হাঁটি একদইন দুইদিন নাকি? রোজই হাঁটি।
        দার্শনিক? কই? কি জিনিস তা?
        চলিতেছে, চলিবে, আশেপাশেই সব নিয়ে। শুরু, শেষ কিচ্ছু না থাকলেই বাঁচি।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    শুন্য আপু বাবা-মায়ের শিক্ষা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এসে কাজে লেগেই যায়। সেই যে পথ চলা শুরু বাবা-মায়ের এক আঙুল ধরে, শেষের বেলা কেউ থাকেনা। আদি-অনাদির ঠিক মধ্যের হাইপেন চিহ্ণটাই নিঃশ্বাস।

    জানো ছোটবেলায় চার মাইল পথ হেঁটে স্কুল যেতাম? আসা-যাওয়া আট মাইল। মাঝে-মধ্যে বাপির বাইসাইকেল, নয়তো চা’বাগানের ট্র্যাক্টরে বাসায় ফিরতাম। তারপর এই যে নার্সিং জব, আমি তো হোম হেলথে কাজ করি। এক সিনিয়র হাউজ থেকে অন্যটায়। পাঁচ ঘন্টা শিফট থাকলে মিনিমাম তিন ঘন্টা হাঁটা। 🙁
    স্নো-ফল হলে খবর হয়ে যায়। এই যাহ নিজের গল্প বলা শুরু করে দিলাম। কি করবো বলো? তুমি এমন লেখা লেখো, আমায় গল্প পেয়ে বসে।

    ভালো রেখো। -{@

    • শুন্য শুন্যালয়

      তিন ঘন্টা? সর্বনাশ, কার কাছে এসে আমি কিসের গল্প লিখলাম। তুমিতো দেখি হাটুইন্যা রানী। 🙂
      স্নো ফল হলেতো আসলেই অনেক কষ্ট হবার কথা, জিরোতেই কাহিল হয়ে যাই।
      তুমি এমন লেখা শুরু করবে, বলা শুরু করবে, একশোবার করবে। গল্প লিখবার আর শুনবার জন্যেই তো আমরা লিখি তাইনা আপু?
      তুমিও অনেক ভালো থেকো, রেখো।
      শেষ আর শুরু দুটোই এক, বাসস্টপ।

  • রিমি রুম্মান

    আমার বাবাও পারতপক্ষে রিক্সা নিতেন না। বলতেন, হাঁটাহাঁটি স্বাস্থ্যের জন্যে ভাল। আবার সুযোগ পেলেই উনার ছোটবেলার গল্প বলতেন। পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে স্কুলে ক্লাস করতেন ছোটবেলায়। আর আমরা সুযোগ পেলেই না হেঁটে বাঁচি। এখন হাঁটি ইচ্ছা করেই হাঁটি। শরীর ঠিক রাখতে হাঁটি।
    তবে আপনাকে দেখতে পেলাম যেন … 🙂

  • মৌনতা রিতু

    জান শূণ্য, আমি ও একেবারেই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। আব্বাদের জমি ছিল অনেক, কিন্তু মানুষ হয়েছেন খুবই কষ্ট করে। ছোটবেলায় দাদা মারা যাওয়াতে তার বড় ভাই আর তাকে পড়াতে চায় নাই। কিন্তু আব্বা দমে থাকে নি। সেই রামপাল থানা মানে যেখানে এখন বিদ্যুত প্রকল্প হচ্ছে, ওখানে কোনো স্কুলছিল নখ। আট নয় মাইল তারও বেশি দূরে স্কুলে পড়তে যেত রাস্তা ভরা কাঁদা থাকত। এক পা উঠাতে গেলে কাঁদায় আর এক পা ডুবে যেত হাঁটু পর্যন্ত। মানুষের বাড়িতে লজিন থেকেছে দিনের পর দিন। দিনমজুর হিসেবে মানুষের ধান কেটে মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেছে। অনেক কষ্টে মেডিকেলে পড়েছে। আজও একর একর জমি মানুষেরই দখলে। চাচারাও ভোগ করতে পারেনি।
    যাইহোক, তাই আব্বা কখনো চাইত না আমাদের কোনো কষ্ট হোক। আমি স্কুলে যেতে আসতে ২০টাকা রিক্সা ভাড়া পেতাম। ওটা জমাতাম। আমি হেঁটেই আসা যাওয়া করতাম। এখন সেই দিনগুলো মনে পড়লে ফিরে যাই সেই জীবনে।
    খুবই ভাল লেগেছে কথাগুলো।

    • শুন্য শুন্যালয়

      ছোটবেলায় আমরাও হেঁটে স্কুলে যাওয়া আসা করতাম, অবাক হই মাঝে এসে লাঞ্চ করেও যেতাম, তাতো অনেকটা পথ ছিলো, এখন ভাবলেই অবাক লাগে। তবে তা কষ্টের মধ্যে পড়েই নি। যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই কখনো কিছু চেয়ে পাইনি এমন হয়নি, আমাদের বাবা-মা রা আমাদের জন্য কত যে স্যাক্রিফাইস করেছেন, তা এখনকার সময়ে ভাবা কঠিন। আপু রিক্সাভাড়া জমিয়ে কি কি কিনেছেন বলতে হবে কিন্তু, কদবেলের ভেতর কাঠি ঢুকিয়ে খাওয়া ছাড়া 🙂

  • খেয়ালী মেয়ে

    আমার আব্বুও বলে বেশী হাঁটার জন্য, কিন্তু আমার হাঁটতে একদম ভালো লাগে না, খুব কম হাঁটি আমি..

    ডলার সেভ করতে পেরেছো জেনে আনন্দিত 🙂
    ছবিগুলো সুন্দর (y)
    শেষের কথাগুলো মনকে নাড়া দিলো,

  • ক্রিস্টাল শামীম

    আমি তো সারাদিন হাঁটার মাঝেই থাকি অফিসে যাই হাইটা, অফিস শেষে করে বাসায় ফিরি হাইটা ২০ মিনিট কইরা ৪০ মিনিট লাগে আমার হাটতে। আর ছুটির দিনে বন্দুদের বাসায় যাই অনেকটা হাইটা। সাপ্তায় ৫ দিন সেভ হয় ০.২০০পয়সা x৫দিন += ১ রিয়্যাল। আর চায়ের দোকানে বইসা কাওকে ফোন না কইরা, বন্দুদের বাসায় যাইয়া এক সাথে চায়ের দোকানে আশা, আমার দাদার কাছ থাইকা শিখছি। তাই আমাকে সবাই কালা মিয়ার নাতি বইলা ডাকে। আর আমার অন্য ভাইদের আমার বাবার নাম দইরা ডাকে। আমার দাদা থাকলে আপনার লেখায় মন্তব্য করতো এমনে।

    হাতের লাঠি দিয়া গুতাদিয়া কইতো এই চ্চূন্নী আমার নাতনি। তোরা সব কেতন্নীর মা। (y)

    • শুন্য শুন্যালয়

      কেতন্নীর মা? হা হা হা। দারন শব্দ পাইলাম একটা। দাদা-নানা এরা আমার কাছে পার পাইতো না, আমি সেই চিজ।
      একবার ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি ঘাড়ে ব্যাথা, নানী বলে মনে হয় বালিশে পা লাগছিলো তাই ঘাড়ে ব্যাথা, কইলাম কই পান এইসব? এরপর নানা রাতে বাড়ি ফিরে আসার আগে নানার বালিশ আচ্ছামতো পাড়াইলাম, সকালে জিজ্ঞেস করি নানা আপনার ঘাড়ে ব্যথা? কয়, ক্যান? ঘাড়ে ব্যাথা হবে ক্যান? কইলাম নানীরে জিগান। অবশ্য নানার সাথে সুইএ সুতা লাগানোর প্রতিযোগিতায় হাইরা গেছিলাম। 🙁
      মজা লাগলো দাদার নাতীর কমেন্ট। 😀

  • ইকরাম মাহমুদ

    আব্বুর সাথে কোথাও গেলে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে পা ব্যাথা বানিয়ে ফেলে। একসময় বুঝতাম না সময় বাঁচানোর চেয়ে আব্বু টাকা বাঁচানোকে বেশি প্রাধান্য কেনো দেয়!
    এখন আমি হাঁটি, হন্টন বিদ্যা আব্বুর থেকে শেখা। কিছুটা সময় বাঁচাই মাঝে মাঝে তবে টাকা টা বেশি বাঁচাই।

  • জিসান শা ইকরাম

    শুরুটা মাঝ খান দিয়েও হতে পারে,
    আমি শুরুটা যেথা দিয়ে করি, ওটিই আমার প্রথম শুরু
    প্রথম থেকে শুরুতে যদি আমি না থাকি, সে আমার শুরু না, অন্য কারো শুরু।
    আমার শুরু শেষ থেকেও হতে পারে,
    জীবনে কোনকিছুই মূল্যবান না,
    জীবনে কোনকিছুই মূল্যহীন না,

  • ইলিয়াস মাসুদ

    বাবাকে নিয়ে যেমন কিছু লিখতে পারি না তেমন পড়তেও পারি না, চোরের মন নিজেকে আর কত কাল লুকাবো জানি না।
    আমার হাঁটতে ভাল লাগে শুধু একটি কারনে আন্য তেমন আগ্রহ নেই, কারন টা হলো নিজেকে ছেড়ে দেয়া যায়,ইয়েমন খঁচা থেকে পাখিকে ছেড়ে দেওয়া………।।
    শরীর টা হাঁটে আর মনটা হারায়…………।।
    শরীর আর মনের দুই এর ই দারুণ চর্চা হয়/
    ছবির সাথে লেখা দারুণ লেগেছে 🙂

    • শুন্য শুন্যালয়

      চোরের মন আর কত লুকাবো, ভাইয়া কিছু লুকাচ্ছেন বুঝতে পারছি। আমাদের কাছে লুকানোর দরকার নেই, কখনো কিছু লিখতে মন চাইলে লিখে ফেলবেন।
      আমার বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কিছু লেখার নেই, আমাদের দুইবোনের জীবনটা আসলে মা-কেন্দ্রিক। তবুও স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট হঠাৎ চোখে না পড়লেও আড়াল থেকে আলোকিত করে।
      হাঁটলে সত্যিই দুইএর চর্চা হয়, আসলে তিনের চর্চা। 🙂

  • ব্লগার সজীব

    সোনালী স্মৃতিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখায়। আপনার লেখা যেন সামনে বসে কথা বলার মত। হাঁটার শুরুটা মজাদার হলেও শেষটি বেশ ভাবায়।
    হাঁটাহাঁটি চলছে তাহলে খুব আপু? 🙂 আমি তো হাঁটতেই থাকি জীবনের পথে সজীবতার পথে।
    দুই ছবির মাঝের লেখাটুকু পড়ে মাথা ঘুড়ান্টিস দিয়েছে, কি সব শুরু শেষ ^:^
    আপু কেমন আছেন? আমাকে তো ভুলেই গেছেন 🙁

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ