এমন একটা দিনেই আমি রুদ্রনীলকে বিদায় জানিয়েছিলাম---
সময়টা ছিল এমন সবাই তখন পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে আর নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত---কত আয়োজন চারদিকে—আমি শুধু সাধারন নয়, অতি সাধারন একটা মেয়ে-তাই আমার মাঝে এমন কোন ব্যস্ততায় ছিল না---সবকিছু একই রকম ছিলো---শুধু সাল পরিবর্তন হবে এতোটুকুই তো----কিন্তু আমি জানতামই না যে আমারও কাউকে বিদায় জানাতে হবে---আমার কাছে রুদ্রনীল ছিল একটা ছোট্ট চারাগাছের মতো---যে চারাগাছটার প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত সঠিক পরিচর্যা---যার জন্য প্রয়োজন ছিল একজন সফল কৃষকের—যার সঠিক ট্রিটমেন্টে রুদ্রনীল আবার সতেজ হয়ে উঠতে পারতো---কিন্তু দারিদ্রতা আর ভাগ্যের কাছে তো অনেকজনকেই হার মানতে হয়---তাই হয়তো রুদ্রও হার মেনেছে...................
সময় কতো তাড়াতাড়ি গড়িয়ে যায়—মনে হচ্ছে এইতো সেদিন---অথচ দুইটা বছর পার হয়ে গেলো—রুদ্রনীল আর ফিরে এলো না—এখন সে শুধুই স্মৃতি---আমার স্মৃতি নামক বইএ খুব তাড়াতাড়ি অনেকগুলো নতুন অধ্যায় সংযুক্ত হল---আর তার একটা অধ্যায় জুড়ে আছে রুদ্রনীল.................
যাওয়ার আগে জানতে চেয়েছিলে রুদ্র, তোমাকে মনে রাখবো কিনা?---আমি ভালবাসার কাঙাল রুদ্র, তোমার নিষ্পাপ ভালবাসাটা আমি কিভাবে অস্বীকার করি?---এখনও আমি বাসার ছাদে গিয়ে আকাশ দেখি-মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে দিই আকাশটা একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য—এখনও আমি চলতি পথে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দূর থেকে পেছনে ছুটে যাওয়া পাহাড়গুলোই মুগ্ধ হয়ে দেখি—এখনও আমি তারাদের সাথে আনমনে কতো কথা বলে যাই-সপ্তর্ষিদের খুঁজে বেড়ায় তারাদের ভিড়ে---এখনও আমি তুলি,পেনসিল নিয়ে ছোট ছোট নিষ্পাপ মুখগুলোর সাথেই খেলতে ভালবাসি---এখনও আমি অপেক্ষা করি ছোট্ট একটা মিষ্টি মুখ এসে আমায় বলবে আপু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে-আমি তোমার মত হব---এখনও আমি সেই সব সুবিধাবঞ্চিত শিশু যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, তাদের মাঝেই স্বপ্নের বীজ বপন করতে ভালবাসি---এখনও আমি সেই আগের আমিই আছি রুদ্র---ভুলিনি তোমায়—হৃদয়ে অনেক যত্ন করে রেখেছি রুদ্র, তোমার সেই নিষ্পাপ চোখের চাহনি-সেই নিষ্পাপ ভালবাসাকে............
জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত কত নতুন মুখের সাথে পরিচিত হচ্ছি---সময়ে কত জনের যে প্রিয় হয়ে উঠছি-আবার কতো জন যে আমার কাছে অনেকের চেয়ে অনেক বেশিই প্রিয় হয়ে উঠছে---তার মানে এই না যে তোমার জায়গা আমি অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছি বা দিয়ে দিবো---কোন নতুন মুখের আগমনে আমি আমার পুরাতন ভাললাগা গুলোকে ভুলে যাইনি রুদ্র—একটুও অবহেলার ধূলো জমতে দেয়নি সেই ভালোলাগা গুলোকে, সেই সময়গুলোতে............
রাতের আকাশের সব তারারা নাকি দিনের আলোর গভীরে লুকিয়ে থাকে---আমাদের প্রিয় মানুষগুলো যখন আমাদের ছেড়ে চলে যায়-কেনো জানি আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আসলেই কি তারা চলে যায়?—কেনো জানি মনে হচ্ছে রাতের তারারা যেমন দিনের আলোর গভীরে লুকিয়ে থাকে-ঠিক তেমনি করে প্রিয় সেই মানুষগুলোও হয়তো আমাদের আশেপাশেই থাকে—শুধু আমরাই হয়তো সেটা বুঝতে পারি না.........
যেখানে, যেভাবে আছো রুদ্র ভালো থেকো.............
(খেয়ালী মেয়ের স্মৃতিচারণ)
৩১ ডিসেম্বর,২০১৪
২৯টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এতো স্মৃতিচারণ নয়, স্মৃতি আপনার লেখায় জীবন্ত হয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
লেখা পড়ে আমরাও ভারী হচ্ছি।
সমবেদনা নয়,আপানার সাহসের প্রশংসা করছি। খুব সুন্দর লেখা পড়ে বছর শুরু হলো।
খেয়ালী মেয়ে
শুভ নববর্ষ 🙂
অরণ্য
অসাধারণ লিখেন আপনি। এর আগে কয়েকটি চিঠি পড়েছিলাম আপনার – গ্রেট! আজ আপনার এই লেখাটি পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আপনার প্রতিটি প্যারাগ্রাফই এক একটি ভিন্ন ভিন্ন কবিতা হতে পারে, যদিও কথাটি বলছে সাহিত্যে প্রচন্ডভাবে স্বল্পজ্ঞানী একজন মানুষ। কেউ ময়দা দিয়ে বানায় পিঠা, কেউবা রুটি, কেউবা সিংগারা-সমুচা। আপনার একটা প্যারাকে আমি পড়লাম এভাবে (ক্ষমা চেয়েনিলাম আপনার সুন্দর লেখাটিকে এভাবে সাজানোর জন্য। ২০১৫ তে প্রথম কোন লেখা পড়ছি – সেটি আপনার। হ্যাপি নিউ ইয়ার।
____________________________________________________________
যাওয়ার আগে জানতে চেয়েছিলে রুদ্র
তোমাকে মনে রাখবো কিনা?
আমি ভালবাসার কাঙাল রুদ্র,
তোমার নিষ্পাপ ভালবাসাটা আমি কিভাবে অস্বীকার করি?
এখনও আমি বাসার ছাদে গিয়ে আকাশ দেখি
মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে দিই
আকাশটা একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য।
এখনও আমি চলতি পথে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে
দূর থেকে পেছনে ছুটে যাওয়া পাহাড়গুলোই মুগ্ধ হয়ে দেখি।
এখনও আমি তারাদের সাথে আনমনে কতো কথা বলে যাই
সপ্তর্ষিদের খুঁজে বেড়ায় তারাদের ভিড়ে।
এখনও আমি তুলি,পেনসিল নিয়ে
ছোট ছোট নিষ্পাপ মুখগুলোর সাথেই খেলতে ভালবাসি।
এখনও আমি অপেক্ষা করি
ছোট্ট একটা মিষ্টি মুখ এসে আমায় বলবে
আপু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে, আমি তোমার মত হব।
এখনও আমি সেই সব সুবিধাবঞ্চিত শিশু,যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়
তাদের মাঝেই স্বপ্নের বীজ বপন করতে ভালবাসি।
এখনও আমি সেই আগের আমিই আছি রুদ্র।
ভুলিনি তোমায়
হৃদয়ে অনেক যত্ন করে রেখেছি রুদ্র
তোমার সেই নিষ্পাপ চোখের চাহনি
সেই নিষ্পাপ ভালবাসাকে…………
_____________________________________________________________
খেয়ালী মেয়ে
বাহ!!!আপনি তো দেখি লাইনগুলোকে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন–অনেক ধন্যবাদ, সেই সাথে হ্যাপি নিউ ইয়ার..
মরুভূমির জলদস্যু
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো -{@
খেয়ালী মেয়ে
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্যও -{@
মিথুন
অসাধারন লেখা। ছোট্ট রুদ্রনীল কিভাবে হারিয়ে যাবে? খেয়ালী মেয়ে যতদিন আছে, ততোদিন তো নয়। মন হয়ে গেলো লেখাটি পড়ে ————-
খেয়ালী মেয়ে
অনেক ধন্যবাদ 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বেশ গোছানো লেখা অত্যান্ত আবেগ দিয়েই হারানো বিদায়কে স্বরণ করলেন।এমনি হয় -{@
খেয়ালী মেয়ে
ধন্যবাদ..
ব্লগার সজীব
রুদ্রনীল বেঁচে থাকবে পরী আপুর হৃদয়ে। আমাদের অন্তরেও।যেখানেই থাকুক রুদ্রনীল,ভালো থাকুক।
খেয়ালী মেয়ে
হুমমমম যেখানেই থাকুক রুদ্রনীল,ভালো থাকুক—-
থার্ড পার্সন পুরাল
বেঁচে থাকবে রুদ্র আপনার জীবনের পরতে পরতে ।মন টা খুব ভারী হয়ে উঠলো লেখাটি পড়ে ।কি বলে সান্তনা দেবো তা আমার জানা নেই ।শুধু এই টুকু এ বলবো রুদ্র আপনার আশেপাশেই আছে।
খেয়ালী মেয়ে
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য..
ছারপোকা
ভাল লাগে খুব এমন সুন্দর গল্পগুলো পড়তে ধন্যবাদ এর কিছু নেই ।ভাল থাকবেন ।
লীলাবতী
খুব টাচি লেখা আপু।ভালো থাকুক রুদ্রনীল।
খেয়ালী মেয়ে
এটাই চাওয়া ভালো থাকুক রুদ্রনীল।
জিসান শা ইকরাম
মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
রুদ্র ভালো থাকুক,যেখানে আছে।
আপনি খুব কেয়ার নিতে পারেন বাচ্চাদের।
তাই এরা আপনাকে এত পছন্দ করে।
শুভ কামনা।
খেয়ালী মেয়ে
অনেক ধন্যবাদ জিসান ভাইয়া–এই পোস্টটার জন্য আপনেকে ধন্যবাদ না দিয়ে থাকতে পারলাম না, হয়তো একটু দেরি হয়ে গেছে…
শুন্য শুন্যালয়
কেউ কারো জায়গা কখনো নিতে পারেনা। ছোট্ট রুদ্রনীল বেঁচে থাকবে আমৃত্যু সব প্রিয়দের মাঝে। রুদ্রনীল কে আমি দেখিনি, দেখিনি আপনাকেও, তবু দুজনকেই অনুভব করতে পারছি, লেখাটি যে এমনই।
ভালো থাকুক রুদ্র, যেখানেই থাকুক।
খেয়ালী মেয়ে
এই চাওয়াটা আমারও ভালো থাকুক রুদ্র, যেখানেই থাকুক।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুদ্রনীল রা এমন করে বেঁচে থাকে সবার হৃদয়ে।
খেয়ালী মেয়ে
ঠিক তাই–
স্বপ্ন
আপু মনটা বেশ ভারী হয়ে উঠলো।রুদ্র ভালো থাকুক।
খেয়ালী মেয়ে
রুদ্র ভালো থাকুক এটাই চাওয়া..
নুসরাত মৌরিন
🙁
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আপনার লেখনী মন ভিজিয়ে দিল।
রুদ্র যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক-এই কামনা।
খেয়ালী মেয়ে
ধন্যবাদ 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনেক ভালো লাগলো। প্রিয় মানুষগুলোকে কখনোই ভুলা যায় না। তাদের জায়গাও অন্য কেউ ফিলাপ করতে পারেনা।
রুদ্র ভালো থাকুক।
খেয়ালী মেয়ে
হুমমম কারো জায়গা কেউ নিতে পারে না–