অদ্ভূত যতো প্রেম-৩

খেয়ালী মেয়ে ২৫ জুলাই ২০১৫, শনিবার, ১০:০৮:৪৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৬ মন্তব্য

প্রেমের মরা জলে ডুবে না তুমি সুজন দেইখা কইরো পিরিত, মইরলে যেন ভুলে না দরদী!!!

একটা গান কতো কি বলে যায়—প্রেম স্বর্গীয়—চাইলেই যে কারো প্রেমে পড়া যায় না—প্রেম যে অজান্তেই মনের মাঝে ভালোবাসার দীপশিখা জ্বালিয়ে দেয়—প্রেম ভালোবাসা কখনো জীবনে আগাম নোটিশ দিয়ে আসে না—এই প্রেমের উপর জোর করা চলে না—এই প্রেম এমন এক আগুন যা নিজ থেকে জ্বলে উঠে, আবার যখন নিভে যাবার নিজ থেকেই নিভে যায়—তারপরও বলি যে প্রেম করতে দুইদিন ভাঙ্গতে একদিন অমন প্রেম আর কইরো না দরদী.......................

**পাশের বাসার মিতুল আপু এলাকারই শামীম নামে একটা ছেলেকে ভালোবাসে—যেভাবে হোক তাদের এই গোপন প্রেমের কথা মিতুল আপুর বাসায় জানাজানি হয়ে যায়—আর জানাজানি হওয়ার পর তার ভাই তাকে অনেক মেরেছিলো, শুধু মেরে ক্ষান্ত হয়নি তার বই খাতা সব পুড়ে ফেলেছিলো—তারপর অল্পদিনের ব্যবধানে তাকে জোর করে একটা বিয়েও দিয়ে দিলো—আমার চাচাতো বোন আর মিতুল আপু একই সাথে পড়তো, সেই সুবাধে আমাদের বাসায় তার আসা যাওয়া ছিলো—তাদের প্রেমের কথা জানাজানি হওয়ার পর সেই আসা যাওয়াটা বন্ধ হয়ে যায়—বিয়ের পর একদিন বিকেলবেলা এসেছিলো আমার বোনের সাথে দেখা করার জন্য, সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আবার চলে যায়—তার যাওয়ার পর বোনের কাছ থেকে জানতে পারি, যে সময় তার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিলো, তখন মিতুল আপু তাদের বাসায় যে ছুটাবুয়া কাজ করতো তার মাধ্যমে শামীমকে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে একটা চিঠি দিয়েছিলো, কিন্তু শামীম বুয়ার সামনেই না পড়ে চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলেছিলো—মিতুল আপুর বাসা থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ ছিলো না,তাই সে শামীমের সাথে একবার দেখাও করতে পারেনি—বিয়েটা তার জোর করেই হয়েছে, কাবিনে যে স্বাক্ষর দিতে হয় সেটাও নাকি তার হাতের উপর তার ভাই হাত রেখে জোর করে লেখিয়ে নিয়েছে(অনেকটা ছোটবাচ্চাদেরকে যেভাবে অক্ষরের উপর হাত ঘুরিয়ে লেখা শিখানো হয় ঠিক সেভাবে)—এক শামীমকে ভালোবেসে তার সাথে এতো কিছু হয়ে গেলো, কিন্তু সেই শামীম তার কোন খবর নিলো না—মিতুল আপুর সব জানার পর তার জন্য কেমন জানি মায়া হচ্ছিল, তার ভাইয়ের উপর অনেক রাগ হয়েছিলো, ভাই এতো নিষ্ঠুর কি করে হয়?---কিন্তু তার ভাইয়ের এই নিষ্ঠুরতার কথাও অনেকটা চাপা পড়ে যায়, কয়েকমাস পর যখন শুনি এই শামীম মিতুল আপুর এক বান্ধবীর সাথে পালিয়ে বিয়ে করে.............তাজ্জব হয়ে যাই, ১টা বছরও তো গড়ালো না—কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি অন্যকারো সাথে আবার সম্পর্কে জড়ানো যায়?—যে মেয়েটা তার জন্য এতো জলাঞ্জলি দিলো তার সাথে তাহলে তার কিসের সম্পর্ক ছিলো?—বুঝি না কিছুই—কোন কিছুর উত্তরও মিলে না—সব কিছু বড়ই অদ্ভূত লাগে................

**পুষ্পিতা একটু বেশি চঞ্চল ছিলো—ঢাকা কলেজের ছেলে ইরফানের সাথে তার গভীর প্রেমের কথা আমাদের কারোই অজানা নয়—সারাক্ষণ ফোনে কথা বলতো এই হাসতো এই কাঁদতো—কি জামা পড়েছে? কি তার রং?—ডাইনিং এ তার তরকারির বাটিতে কিচ্ছু ছিলো না—বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে পানি ছিলো না—উফফফফফ্ কিচ্ছু বাদ দিতো না, সব বলতো—ইরফানকে সব না বললে তার নাকি হজম হয় না কিছু—ছেলেটাও কম যায় না—ইরফানকে দেখার সৌভাগ্য ২বার হয়েছিলো—আমাদের কলেজ গেইটে এসেছিলো আমাদের সাথে দেখা করার জন্য—সবার জন্য রঙিন কাগজে মুড়িয়ে গিফট এনেছিলো—ভেতরে সমরেশ মজুমদারের বই ছিলো, আমার বইটার নাম ছিলো আট কুঠুরি নয় দরজা—ইরফান পুষ্পিতার জুটিটা আমাদের ভালো লেগেছিলো—এই জুটির মাঝে ভালোবাসাটা যেমন দেখেছি, মান অভিমানও ঠিক তেমনি দেখেছি—প্রায়ই ইরফানের সাথে ফোনে ঝগড়া করে শেষ পর্যন্ত রাগ করে রুমে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিতো—পুষ্পিতার রাগ ভাঙানোর জন্য সবার সেকি চেষ্টা, কতো অনুরোধ করতো সবাই খাওয়ার জন্য, কিন্তু সে না খেয়ে থাকতো—এই জিনিসটা আমার খুব অপছন্দের ছিলো— রুমে একজন না খেলে ভালো লাগতো না, এই কথাটাই ওকে বুঝানো যেতো না, খুব বিরক্ত হতাম—এরপর রাগ কমে গেলে ২/৩দিন পর নিজে নিজেই খেতো—আবার আগের মতো শুরু হয়ে যেতো ইরফানের সাথে তার চঞ্চলতা—এমনিই ছিলো পুষ্পিতা—ভালো লাগতো তাদের প্রেমময় সবকিছু—কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে পুষ্পিতা বললো, ইরফানের সাথে তার ব্রেকআপ হয়ে গেছে—ইরফান ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত, পুষ্পিতা এটা আগে জানতো না, এখন জেনেছে, আর এজন্যই ইরফানের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না—পুষ্পিতার মতো ম্যাচিউরড একজনকে বুঝানোর মতো আমাদের কিছুই ছিলো না—তারপরও বলতাম রাজনীতির সাথে জড়িত সবাই খারাপ না—যে মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিলো ইরফান আর পুষ্পিতার মাঝে সেটা এভাবে সামান্য একটা কারণে ভেঙে যাক তা আমরা বন্ধুরা কখনোই চাইনি—কিন্তু পুষ্পিতা সে তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলো—এরপরও বেশ কয়েকবার ইরফান আমাদের কলেজ গেইটে এসেছিলো পুষ্পিতার সাথে দেখা করার জন্য—কিন্তু পুষ্পিতা কখনো তাকে দেখা দেয়নি—এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে ইরফান ফিরে যেতো—তারপর একসময় ইরফান আর আসতো না—শেষ হয়ে যায় ইরফান পুষ্পিতা নামক একটা প্রেমের অধ্যায়ের—আমরাও কখনো আর ইরফানের কথা বলিনি—শুধু মনে মনে গোপনে জানার চেষ্টা করতাম, কিভাবে এই প্রেম মানব মনে আসে?..আর কেনই বা এই প্রেম ভেঙে যায়?—এখানেও কোন উত্তর মিলতো না..........

**পুরাতন হোস্টেলের শকুন্তলা আপু আমাদের হোস্টেলের নীচতলায় হলরুমে বিকেলবেলায় বাইরের কিছু ছোট বাচ্চাকে গান শিখাত—আপুটা কয়েকটা টিউশনি করতো, সেই সুবাদে আশেপাশের অনেকের সাথে তার পরিচয় ছিলো—গানের গলা খুব শ্রুতিমধুর ছিলো—আর এই গলা/কন্ঠের জন্য তার পরিচিতিও ছিলো কলেজজুড়ে—তানবীর নামে সবার ভাষ্যমতে শকুন্তলা আপুর চেয়ে দু’বছরের ছোট একটা ছেলের সাথে তার প্রেমও তার কন্ঠের মতোই পুরো কলেজজুড়ে সবার জানা ছিলো—সবসময় আপুটার মুখে একটা মিষ্টি হাসি থাকতো—আমি প্রথম প্রথম জানতাম না, পরে বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারি যে এই তানবীর এবং শকুন্তলা আপু দুজনেই দুই ধর্মের—তারপরও দুজনের মাঝে এই ধর্ম/বয়স কখনোই কোন দেয়াল তুলতে পারবে না অন্তত তাদের দেখে সবার এটাই মনে হতো—কিন্তু না যা অন্যদের মনে হতো তা ভুল ছিলো—মাঝখানে কলেজ চলাকালীন সময় আপুটা ২মাসের মতো কলেজে ছিলো না—২মাস পরে যখন কলেজে আসে তখন তার মাঝে অনেক পরিবর্তন—তার কপালে হালকা সিঁদুরের ফোঁটা, হাতে শাঁখা এসব দেখে কারো বুঝতে বাকি রইলো না যে আপুটার বিয়ে হয়ে গেছে—বিয়ের পাত্র অবশ্যই তানবীর না, অন্য কেউ—আগের সেই মিষ্টি হাসির আপুটা আর আগের মতো নেই—আগের মতো আর দেখলে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না—গানের ক্লাসটাও বন্ধ করে দিলো, তবে প্রতিদিনই নিয়মমতো বিকেলবেলা হলরুমে একা একা বসে থাকতো, দূর থেকে দেখতাম, খুব মায়া লাগতো—কাছে যাওয়ার সাহস হতো না আমার, কারণ আমি কাউকে সান্ত্বনা দিতে জানি না—সবার কাছে শুনেছি শকুন্তলা আপু ভালো নেই, তার অমতেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে এখনো কোন কিছু স্বাভাবিকভাবে নেয়নি—এক বৃহস্পতিবার বাড়ি আসবো ভাইয়া গেইটে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে সাথে ভাতিজিকে নিয়ে এসেছে—তাই আমি নিচে গিয়ে আমার ভাতিজিকে সাথে নিয়ে উপরে আসার সময় হলরুমের দিকে চোখ পড়লো-দেখি শকুন্তলা আপু বসে আছে নীচে—কিছু না ভেবে আমার ভাইয়ের পিচ্চিটাকে সাথে নিয়ে আপুর কাছে গেলাম—জানতে চাইলাম আপু তুমি আজ বাসায় যাবে না—হুহু করে শব্দ করে কেঁদে উঠলো—আর বলতে লাগলো, আমার খুব ঘেন্না লাগে,খুব ঘেন্না লাগে-ঐলোকটা যখন আমাকে স্পর্শ করে আমার খুব ঘেন্না লাগে—কেনো বৃহস্পতিবার আসে?কেনো?—আমি বাসায় যেতে চাই না, আমার খুব ঘেন্না লাগে ঐলোকটার সাথে রাতে থাকতে—কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না, ভাইয়ের মেয়েটাকে নিয়ে ঐখান থেকে বের হয়ে আসি—আমার ভাইয়ের মেয়েটা বারবার জানতে চাচ্ছে ফুফী ও কেনো কাঁদছে?—কি জবাব দিবো?,আমারও যে জবাব জানা নেই—যেখানে আমরা অপেক্ষায় থাকি কবে বৃহস্পতিবার আসবে?,কবে কলেজ বন্ধ হবে?,কবে বাসায় যাবো?-সেখানে শকুন্তলা আপুর প্রশ্ন কেনো বৃহস্পতিবার আসে?—কতোজনকেই তো দেখেছি গভীর প্রেম ছেড়ে অন্যজনকে বিয়ে করতে—কই কারো মুখে তো কখনো শুনিনি এমন করে যে আমার খুব ঘেন্না লাগে—গাড়িতে পুরো রাস্তাটায় পার করে এসেছি এটা ভেবে যে, কতোটা ঘৃনা নিয়ে সে তার বিয়ে করা বরের সাথে রাত কাটায়?—কতোটা ভালো সে তানবীর নামের ছেলেটাকে বেসেছিলো যে এখন অন্য কাউকে মেনে নিতে পারছে না?—এ কেমন ভালোবাসা যা তাকে প্রতি মুহুর্তে ঘেন্নার মুখোমুখি করছে?—কোন উত্তর মেলেনা—কী অদ্ভূত!!প্রেম মানুষকে কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে..............

.........চলবে.......

অদ্ভূত যতো প্রেম-১

অদ্ভূত যতো প্রেম-২

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ