সে

মামুন ১৩ জানুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার, ০৭:০১:০৪অপরাহ্ন গল্প ৩ মন্তব্য

চলন্ত রিক্সায় বসে রেখা আনমনে ভাবছিল। 'মানুষটাকে আজকাল কেন যেন বুঝতে পারি না। দিন যত যায় তাকে যেন দূরের মানুষের মত মনে হতে থাকে। অথচ কি একটা সময় ই ছিল আমাদের! আর এখন বন্ধের একটা দিনে বাসায় আসে। এসেই সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে, মাঝরাত হয়ে যায়। কি মাঝ রাত, আরো সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু লোকটার ১০ বাই ৬ ইঞ্চি একটা আয়তাকার জগতের বাইরের কোনো দিকেই দৃষ্টি দেবার সময় থাকে না। এইতো সেদিন উদ্ভাসের একটা সেমিনারে আমাদের সবাইকে নিয়ে যাবার কথা। আড়াইটার দিকে সেমিনার হবে। রাত থেকেই বলে যাচ্ছিলাম ,' কাল কিন্তু কোনোভাবেই মিস করবে না। সবাই তাদের হাজবেন্ড সহ বাচ্চাদের নিয়ে আসবে।' উত্তর 'হু' জাতীয় কিছু একটা বলে আবারো নিজের জগতে ডুব দিচ্ছিল মানুষটা।

দুপুরের রান্নাটা শেষ করে নিজেরা সবাই রেডী হয়ে যখন 'ও'কে ডাকতে গেলাম, একটা হাসি দিয়ে সে বলল, 'প্লীজ লক্ষিটি, আমি না গেলে হয় না?' এই হাসিই তো আমাকে ডোবালো। মানুষটার ভুবনভোলানো হাসির সামনে কেন যেন নিজেকে নিজের ভেতর থেকে আর বের করে আনতে পারি না। এটা কি ভালোবাসা? অনতিক্রম্য ভালোবাসা! মাঝে মাঝে ভাবি , এই ভালোবাসা কি মানুষটা বোঝে? ওর মনের তল কি কখনো পায়? পেতে চেষ্টা করে? না হলে ছেলেমেয়েদের পড়ালিখা থেকে শুরু করে এই যে পনেরটি বছর ওদেরকে নিয়ে ঘর-সংসার সে একাই সামলাচ্ছে, মানুষটির তাতে কি অবদান রয়েছে? শুধু টাকা আয় করাই কি সব? নিজের মনের দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করে মেয়েকে নিয়ে বের হবার সময় একবার মানুষটার দিকে তাকাই। তবে এই নিঃশ্বাসটা গোপন না করলেও চলতো। অন্য সব বিষয়ের মত আমার এই ভুবনভোলানো হাসির অধিকারী মানুষটি আমার দীর্ঘ কি ছোট-কোন নিঃশ্বাসেরও কি খবর রাখে?'

ছোট্ট কিন্তু গভীর একটা নি:শ্বাস ফেললো রেখা। 'হয়ত... হয়ত না। তবুও কি অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসায় আপ্লুত করে রাখে মানুষটা আমাকে!'

আরেকবার নিজের মানুষটাকে দেখে মৃদু হাসিমুখে রেখা বরাবরের মতই প্রসন্ন হৃদয় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। ওর হৃদয়টা পড়ে থাকে ভুবনভোলানো হাসি নিয়ে বাস করা মানুষটির কাছেই। সে যদি বুঝতো! রিক্সায় উঠে একজন মানুষের পাশে বসে থাকার অনুভূতিটা লাভের জন্য আজকাল রেখার মন কতটা ব্যাকুল হয় উঠে!

# অণুগল্প

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ