লাদিসলাউস সিৎসিক-সাতারি।
পেট নেম লাজলো।

একজন অশীতিপর বৃদ্ধ, দেখতে নিরীহ। মানে বয়স হলে যেমন হয় আরকি। কিন্ত এই আশিতিপর নিরীহ বৃদ্ধটি হচ্ছে একজন ভয়াবহ খুনী এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী ভয়ংকর নাজী অফিসার,লাজলো সাতারি, ১৯৪৪ এর রয়্যাল হাঙ্গেরিয়ান পুলিশের ‘কমান্ডার’ ।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই ইউরোপ ছেড়ে পালিয়ে যান লাজলো। পাড়ি দেন কানাডায় মাছ ধরতে যাওয়ার ভুয়া ভিসা নিয়ে।সে মাছ ধরা সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেও শেষ হয়নি তার। মুলত পোল্যান্ড এবং ফ্রান্স থেকে লুট করা আরটিফ্যাক্টস এর বিকিকিনি করে আর্ট-ডিলারের পরিচয় নিয়ে সেখানে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় কাটানোর পরে চলে আসেন হাঙ্গেরিতে।(ইতিহাস বলে অধিকাংশ নাজী লিডারই পালানোর সময় সঙ্গে করে লুট করা আরটিফ্যাক্টস এবং সোনাদানা নিয়েই পালিয়েছিল)
তার পর কেটে গেছে আরও ১৫ বছর। এত দিনেও লাদিসলাউসের পড়শিরা জানতে পারেন নি যে তাঁদের সঙ্গেই বাস করছেন বিগত শতাব্দীর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ নাৎসি নেতা।

প্রায় সত্তর বছর পর সম্প্রতি তাঁকে বুদাপেস্টের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছে হাঙ্গেরি পুলিশ। যুদ্ধাপরাধ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে লাজলোর বিরুদ্ধে।

লাজলোর অপরাধসমুহের মধ্যে অগুনতি ইহুদিকে নির্দ্বিধায় আউশভিৎসের নাৎসি ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পাঠানো এবং রয়্যাল হাঙ্গেরিয়ান পুলিশের ‘কমান্ডার’ থাকাকালীন প্রায় ৮০ জন ইহুদিকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মারার জন্য সীলকরা ট্রেনের কামরায় উঠিয়ে দেয়া বহুল আলোচিত। কামরার যাত্রীরা কাতর আর্তনাদ করলেও সে চিৎকার কানে তোলেননি তিনি। এর পরও একাধিক ইহুদি গণহত্যায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। শুধু তা-ই নয়, কারণ ছাড়াই ইহুদি বন্দীদের নিয়মিত নির্দয় প্রহারের অভিযোগও রয়েছে আজকের এই অশীতিপর বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। বেতমারার তালিকা থেকে বাদ যেতেন না শিশু ও মহিলারাও। অসুস্থরাও বাদ যেতনা প্রহারের তালিকা থেকে।

আপাতত নিজগৃহেই নজরবন্দি আছেন লাজলো সাতারি।

সিমন ভিজেনথাল সেন্টার সর্বক্ষণ নজর রাখছে লাজলোর বার্ধক্য যাতে কোনও ভাবেই তাঁর শাস্তির মেয়াদ বা ভয়াবহতা কমাতে না পারে সে ব্যাপারে, প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার ইহুদি খুনে অভিযুক্ত কোনও ভাবেই ক্ষমা পেতে পারেন না।

সিমন ভিজেনথাল সেন্টারের মতো একটা নজরদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেও খুব জরূরী, একটু বেশীই জরূরী।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ