রিমি ঘোড়াঘাটের পথে

কেসি মিলান ১৭ আগস্ট ২০১৬, বুধবার, ১১:৪৪:২৪অপরাহ্ন বিবিধ ৩ মন্তব্য

গন্তব্য মানেই দূরের কোন ঠিকান। এই ঠিকনাটি বড়ই প্রত্যাশিত যেখানে সবাই কোন না কোন দিন যেতে চায়, যেতে হয়।
সেদিন স্থানীয় এক বাস স্ট্যান্ডে অসংখ্য মানুষের ভীড় দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। আমার বেশ মনে পড়ে বিষয়টা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় নিয়েছিলাম। অবশ্য একটু পরই বুঝেছিলাম ওই লোকেরা ছিল যাত্রী। তারা সবাই স্ব স্ব গন্তব্যগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল।
আমি যে সময় এই মানুষদের অপেক্ষা করতে দেখেছিলাম তখন সময়টা ছিল রাত পৌনে এগারটা। অর্থাৎ সূর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। আর মনে হচ্ছিল সারা বিশ্বটাই যেন অন্ধকারের অতল কোন গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
গ্রীষ্মের রাত। শরীরে জ্বালা ধরবার মত চারদিকে প্রচন্ড গরম যদিও টিপ টিপ করে অনর্গল বৃষ্টি হচ্ছিল সে সময়।
বাস কাউন্টারগুলো আকারে ছোট, বসবার আসনও হাতে গোণা কয়েকটা করে মাত্র যা আগেই পরিপূর্ণ হয়ে তিল ধরতে পারে অবশিষ্ট এমন জায়গাও ছিল না। ফলে অধিকাংশ মানুষদের রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিল।
কিন্তু গন্তব্যে যাবার প্রয়োজনীয়তা বা আকাংখার কাছে বৃষ্টিতে ভেজার মত সামান্য সমস্যা কোন সমস্যাই ছিল না। আর এজন্যই ভিজে ভিজেই তারা তাদের বাসের অপেক্ষা করছিল।
আমি কিছুটা ভাগ্যবান ছিলাম এজন্য যে আমি সেদিন তাদের একজন ছিলাম না।
ঘরে যেয়ে বিশ্রাম নেয়া বা ঘুমিয়ে যাওয়াই ভাল ভেবে সামনের দিকে এগুতে থাকলাম। কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছি মাত্র ঠিক তখনই রিমির দেখা পেলাম। ব্যাপারটা ছিল অবাক হবার মতেই।
সাম্প্রতিক সময়ে যাদের সংগে আমার পরিচয় হয়েছে রিমি হচ্ছে তাদেরই একজন। ওর সম্পকের্ বেশি কিছু জানিও না। শুধু জানতাম কিছুদিন আগে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির সন্ধান করছে।
কথা বলে জানলাম একটা চাকরি পেয়েছে ও। সরকারী চাকরি। উপজেলার শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তা পর্যায়ের চাকরি। কর্মস্থল হয়েছে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায়। চাকরিতে যোগ দেয়ার জন্য সেখানেই যাচ্ছে রিমি।
কিন্তু … এত রাতে  ও কি একা যাচ্ছে না কি সংগে আছে কেউ? একা একজন মেয়ের পক্ষে এভাবে রাতে চলা কি নিরাপদ হবে ওর জন্য? কেন জানি এরকম কিছু উদ্ভট ও অনাহুত প্রশ্ন উঁকি ঝুকি মারছিল আমার মনের কোণে। লজ্জ্বাও পাচ্ছিলাম। তবে এরকম প্রশ্নের মূলে যে একেবারে কোন কারণ নেই তাও নয়।
এ দেশে এ সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? সকাল হলেই তো খবরের কাগজে, টিভিতে, রেডিওতে দেখা যায়, শোনা যায় দরজার বাইরে পা রাখলেই মেয়েরা ধষির্ত হচ্ছে, আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে, নিখোঁজ হচ্ছে।
যাহোক, এক সময় আমি প্রশ্ন করেই বসলাম-”কে যাচ্ছে তোমার সংগে?”
”কেউ না, আমি একাই যাচ্ছি”। রিমি সাথে সাথেই উত্তর দিল।
”তোমার কি মনে হয় না পথে কোন বিপদ হতে পারে”। আমি আবরও প্রশ্ন করলাম।
রিমি উত্তর দিয়ে বল্ল, “ বিপদ হতে পারে না বা হবে না তা তো আমরা বলতে পারি না। তবে এবারে কোন বিপদ হবে না তা বলতে পারি। কারণ সারা রাত যাত্রা শেষে বাস গন্তব্যে পৌঁছাবে সকাল বেলায়।”
আমি আমার রুমে ফিরে এলাম। ভীষন ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল। তাড়াহুড়ো করে ঘুমোতে গেলাম। কিন্তু ঘুম এল না। রিমির কথা বার বার মনে পড়ছিল।
দেওয়ালে ঝুলানো ফ্রেমে বাঁধা কোন ছবি আমার রুমে নেই। অথচ কোন এক অন্তর্দৃষ্টিতে এরকমই ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি দেখতে পেলাম যেখানে শুধু রিমিই নয় রিমির মত অসংখ্য মেয়েরা এখন, রাতের এই অন্ধকারে জীবনের বিভিন্ন পথে এগিয়ে চলেছে।
কিন্তু … ভাবছিলাম আরও অনেক কিছু।
ভাবনার মধ্য দিয়ে কখন কতটা সময় যে পাড় হয়ে গেছে মনে নেই। তবে কাছের এক মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানের শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম ভোর হয়ে গেছে। একটু পরই হবে সকাল।
রিমির কথা আবার মনে এলো। ও হয়তো এতক্ষণে অথবা একটু পরই ওর গন্তব্যে অর্থাৎ ঘোড়াঘাটে পৌঁছে যাবে।
রিমি এটাই তো বলতে চেয়েছিল-রাত থাকবে না। রাতের অন্ধকারও থাকবে না।
আসলে রাত সে যত অন্ধকারই হোক এক সময় থাকে না।

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ