যৌতুকের বলি ৯ম পর্ব

মনির হোসেন মমি ২০ এপ্রিল ২০১৫, সোমবার, ০৯:৩৬:০৩অপরাহ্ন গল্প ১৩ মন্তব্য

jbvjbআকমল তার পরিবার পরিজনের নিকট হতে বিদায় নিয়ে চলে যায় তার গন্তব্যে।দেখতে দেখতে গত হলো দুই দিন অনেকটা নিঃসঙ্গ নিরামিশ দিন দুটো কাটল ফুলীর এ দিকে আজ বাড়ীতে অনেক মেহমান এসেছেন তাই সে রান্নার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।রান্নার কাজে ব্যাস্ত হলেও তার মনটা পড়ে থাকে স্বামীর ভাবনার মাঝে।অনেক লোকের রান্না একা একা হাফিয়ে উঠছেন ফুলী।ননদী,জাল শাশুড়ী কেউ তাকে এ কাজে সাহায্য করছেন না,দুজন চাকর-চাকরানী ছিলো তাদেরকও বিদায় করে দিয়েছেন যখন সে এ বাড়ীর বউ হয়ে আসেন তাছাড়া শশুড় মশাই কামলা দিয়ে বাজার করিয়ে ফুলীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন রান্না যেন ভাল হয়।
এক সময় রান্না প্রায় শেষের দিকে ,ফুলী কল পাড়ে গেলেন জল আনতে সেই সুযোগে ননদী দেবর যুক্তি করেন,ননদী তরিৎ বেগে বেশ এক ঘামলা লবন তরকারিতে এবং মরা তেলাপোকার পয়জন বিশেষ পোলাও ভাতে মিশিয়ে দিয়ে নিজের স্থানে চলে আসেন।
-কি...কাজ হয়েছেতো?
-এক দম সব ঠিক আছে।
ননদী,ভাসুর বৌ জাল দেবর সবাই যেন মহা খুশি এবার হবে আচ্ছা মতো ধূলাই।রান্না শেষ করে ফুলী নাইতে চলে যান। তাদের টিনসেটের বাথ রুমে সেখানে আগেই উৎ পেতে থাকা দেবরের ক্যামেরায় ধারন করেন বৌদির গোছলের নগ্ন দৃশ্য।দৃশ্য ধারনে কিছুটা আচ্ করতে পেরে ফুলী আৎকে উঠেন,তরিগড়ি করে নিজেকে আবৃত করে ভেজাঁ কাপড়ে।

cfghchgcঅতিথীদের আপ্যায়নের পর্ব শুরু হবে এরই মধ্যে এক মহিলা অতিথী আকমলের বউকে খোজছেন।ডাক দিতেই শাশুড়ীর জবাব আসে।
-বউ মা গোছল সেরে আসবে...তোমরা খাওয়া শুরু করতে পারো ....এই খাবার গুলো নিয়ে আয়।
-না তা কি হয়,ফুলীর অনেক প্রশংসা শুনেছি আকমলের কাছ থেকে তা ছাড়া,কত ক্ষন হলো আমরা এসেছি সে এক বারও এলো না আমাদের কাছে।
-সে তো জমিদারের মাইয়া দে..মাঘ দেখায়, আপনাদের কাছে এলে যদি ওর জাত কলংকিত হয়।
ননদীর এমন কথাগুলো বলার মুহুর্তে গোছল সেড়ে ঘরে ঢুকতেই ফুলীর কানে লাগে, সে কাউকে কিছু না বলে নিজ ঘরে গিয়ে চুলে নারিকেল তৈল দিতে থাকেন ঠিক সেই সময় শাশুড়ী তার ঘরে ঢুকেন।
-বউ মা তোমার হলো...?
-জি আম্মা এইতো শেষ,
ফুলীর চোখে মুখে কান্নার আর্বিভাব।শাশুড়ী বুঝতে পেরেও কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি ফুলীকে।
-ঐ দিকে মেহমান সবাই বসে আছে তুমি না গেলে ওরা খাবার শুরু করবেন না।
-ঠিক আছে,চলুন।
-বৌ মা একটা কথা বলি তুমি রাগ করো না,কেউ কিছু কটু কথা বললেও মেহমানদের সামনে কারো কোন কথার উচ্চ জবাব দিওনা এটা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য।
ফুলী মাথা নেড়ে ঠিক আছেন জানালেন শাশুড়ীকে।বউ শাশুড়ী দুজনেই মেহমানদের সামনে গিয়ে তাদের আপ্যায়ণে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।ফুলী ভাত মাংস বেড়ে দিচ্ছেন দেবর নিয়ে যাচ্ছেন মেহমানদের নিকট,জাল ননদী অপেক্ষায় আছেন কখন ঘটবে অঘটন আর ক্ষমতা ধর শশুড়মশাই উঠোনে জমিদারী চেয়ারে বসে বিশাল এক হুক্কোয় ফু দিতে দিতে কাজের লোকদের সাথে কথা বলছেন পাশে তার চামচাটি মাঝে মাঝে ছটফট করে হুক্কোর চুলায় ফু দিয়ে আগুনকে নিয়ন্ত্রনে রাখছেন।

খাবার পরিবেশনায় বেশ পারদর্শী দেবর সে একাই অনেকটা সামলে নিয়েছিল বিপত্তি ঘটে মেহমানদের প্রথম যে জন খাবার মুখে নিয়ে গিলতে যাবে অমনি তরকারিতে সীমাহীন লবনা্ক্তে মুখে বুমি আসে তার অবস্থা যেনো বিষাক্ত কিছু মিশানো হয়েছিল খাবারে।সে বুমির পর বুমি করতে থাকে,সবাই খাবার হাতে হতোবাক তাকে ধরাধরি করে বাহিরে আলো বাতাসে আনতেই ফুলীর শশুড় হুক্কা রেখে চেয়ার থেকে উঠে রাগান্বিত হয়ে.....এ অবস্থা হলো কি করে?
কারো মুখে যেন কথা নেই সবাই হা করে তাকিয়ে আছেন মোড়লের মুখের দিকে।ননদী,দেবর জাল সবাই যেনো কিছুই জানেন না।এরই মধ্যে তার ছোট ছেলের দিকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করাতে সে উত্তর দেয়।
-ভাবী রান্নায় এতো লবন আর কি জানি হয়তো দিয়েছেন বলে খাবারের এক লোকমা খেয়ে দ্বিতীয় লোকমা দিতেই সে বুমি করতে থাকে।
মোড়লের চোখে মুখে প্রতিশোধের আগুনের আভা স্পষ্ট ফুটে উঠে ফুলীর দিকে।কোন মতো নিজের রাগকে আপাত কন্ট্রোল করেন মেহমানরা বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর তা প্রকাশ পায় ফুলীর উপর।মোড়ল খাবারের ধারে গিয়ে এক এক করে সবগুলো তরকারি মুখে দিয়ে ...থুথু দিয়ে ফেলে দিচ্ছেন পাতিলা সহ বাহিরে,ভাত মুখে দিয়ে সেও বুমির ভাব ধরে ফুলির দিকে সে বড় বড় চোখে তাকায় ফুলী যেনো অসহায়ের মতো চোখের জল ছেড়ে দিয়ে শশুড়ের পায়ে পড়েন...আব্বা আমি এসব কিছুই করিনি এতো লবন দেইনি,ভাতেও কিছু মিশাইনি....আপনি বিশ্বাস করেন আমি এমন বাজে রান্না করিনি। মোড়লের হাতের লাঠি দিয়ে উপর্যুরি আঘাত করতে থাকে কখনও পিঠে কখনও বুকে।তৎক্ষনাত দেবর ফুলীর চুলের মুষ্ঠিতে ধরে হেচকা টান দিয়ে মুখে যা তা বাপ মা তুলে গালাগাল করতে থাকেন...তুই করিসনি তবে কি তোর চুন্নী মা এসে করেছে নাকি?ফকিন্নির মাইয়া বেজাতের ঘরের বেজাত।এরই মধ্যে বার বার বার বলার চেষ্টা করতে থাকেন ফুলী...আমি কিছ্ছু জানি না....আমি এতো লবন দেইনি,ভাতে কোন কিছু মিশাইনি.....আঘাতে গা হতে রক্ত ঝড়ছে তার পরও ক্ষ্যান্ত হয়নি তাদের অত্যাচার।বাপ ছেলে কিছুটা অবসরে, ননদ আর জালের পালা তারা হাতে নয় গায়ে কলংকের দাগ দিতে কর্কস ভাষায় কথা বলছেন তাদের বাবার সাথে।
-আব্বা এতো দিন আমি কিছু বলিনি,আজ বলব আকমল চলে যাবার পর আমি প্রায় রাতে দেখতাম তার ঘরে কে যেনো আসে আবার ভোর হওয়ার আগেই চলে যায়।
মোড়ল আরো ক্ষেপে যায়।
-কি...সব যা তা বলছ বড় বউ মা?
দেবর তার মোবাইলটা পিতাকে দেখিয়ে বলতে থাকেন।
-যা তা নয় বাবা সত্যি,,,,,এই যে... এই মোবাইলে তার প্রমান আছে।
মোড়লের স্ত্রী দৌড়ে ছেলের কাছে এসে এক থাপ্পর দিলেন ছেলেকে।
-এক দম চুপ,কি বলছিস আমার সোনার মতো বউমার নামে,.....তোরা কি মানুষ না অমানুষ।সবাই মিল্লা একজনকে মারছিস আবার মিথ্যে কলংকও দিচ্ছিস।কি এমন অন্যায় সে করেছে যার জন্য এভাবে গরুর মতো মারবি?
-মিথ্যে নয় মা সব সত্য,এই এই দেখো তোমার আদরের বউয়ের কৃর্তি.....
মাকে দেখাতে সেই গোছল ঘরের ভিডিওটা দেখাতে ব্যাস্ত ছেলে, মা যেনো কিছুতেই মানতে পারছেন না তাইতো সে রাগে ছেলের হাত থেকে মোবাইলটা হঠাৎ ছিনিয়ে নিয়ে ঢিল দিয়ে পাশের ডোবায় ফেলে দিলেন এবং অত্যান্ত সাহসীকতায় মোড়লের সামনে হতে ফুলীকে টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে এক পরিচিত মেয়েকে সেবা করতে বলেন।দীর্ঘ সংসার জীবনে এই প্রথম মোড়লের কথার অবাধ্য হন।
-আর কোন কথা নয়,আকমল আসুক যা হবার তা তখন হবে।
চলবে..

যৌতুকের বলি ৮ম পর্ব

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ