আজ আমাদের জাতীয় গর্ব বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জবান থেকে তাঁর ভাষা অতি ভদ্র আমার তাঁর লেখায় আমি অনেক কিছু জানি বা শিখি। তাঁর বড়দের সন্মানের সহিত লেখা আমার খুবই পছন্দনীয়। এখন তাঁর বংগবন্ধুকে কটুক্তকারীদের জেভাবে প্রতিবাদ করে আওয়ামিলীগের বড় বড় নেতারা তা বলার সাহস বা ইচ্ছা করেনা। একবার শ্রধ্বেয় বড় আপু নুরুন্নাহার শিরিন আপুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। আপুমনি তাঁর বিপক্ষে বললেন তবে আমি আপুকে বলেছিলাম, " আপু এখন বংগবন্ধুকে নিয়ে কেউ খারাপ মন্তব্য করলে জনাব কাদের সিদ্দিকী জেভাবে প্রতিবাদ করে তা আওয়ামিলীগের বড় নেতারা করেনা কেন? সে আজ আলাদা দল করলেও বংগবন্ধুর বিপক্ষে কথা বলেনি।।" আপু কথা বলেনি।

 

স্মৃতিময় রৌমারী-রাজিবপুর

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

আজ কদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং যমুনা টিভিতে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রচার হচ্ছে। তাতে অনেক তথ্যের অভাব রয়েছে। এভাবেই ইতিহাস নষ্ট হয়। যেহেতু বেঁচে আছি একটু জেনেশুনে লিখলে বা প্রচার করলে দেশবাসীর আরও উপকার বা কল্যাণ হবে।

গতকাল সারা দিনের আলোচনা ছিল বিএনপি নেত্রী তার জন্মদিন পালন করছেন না।  নেতা-কর্মীদের জন্মদিন পালন না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। খুশিতে আটখানা হয়ে ১৪ তারিখ গভীর রাত পর্যন্ত অনেকেই ফোন করেছে, শেষ পর্যন্ত আপনার কথাই সত্য হলো! খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করছেন না। বেগম খালেদা জিয়া তার জন্মদিন পালন করুন আর না করুন সেটা আমার কাছে বড় কথা নয়। প্রধান বিরোধী দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় শোকের দিনে মহান নেতা জাতির পিতার নির্মম হত্যার দিনে ঘটা করে জন্মদিন পালন করবেন না, দলকেও না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা খুবই ভালো কথা। তবে দুর্যোগ, দুর্বিপাকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলজুলুমে পর্যুদস্ত— এসব কারণে বিএনপির নেত্রী তার জন্মদিন পালন না করলে আমার কিছু আসে যায় না। আমার আসে যায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতা সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কুলাঙ্গারের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ায় মর্মাহত জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নেতার প্রতি সম্মান জানিয়ে করছেন না এটা আমার কাছে বড় কথা। তিনি কেন করছেন না এটা জাতির কাছে আরও স্পষ্ট করতে হবে। মহান নেতার নির্মম হত্যায় মর্মাহত হয়ে করলে অবশ্যই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা পাবেন আর অন্য কিছু হলে তথৈবচ।

গত ৪ তারিখ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হয়। দীর্ঘ সময় দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আমি আমার সাধ্যমতো খোলামনে দেশের পরিস্থিতি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। বলেছি এখন কারও ছোট-বড় হওয়ার সময় নয়, দেশকে বাঁচানোর সময়। জীবনে কোনো নারীর প্রেমে পড়িনি, বঙ্গবন্ধু আমার ভালোবাসা। তাই আজীবন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করব। গত সপ্তাহ যমুনার পানিতে ভেসেছি। তাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিক্রিয়া বলতে পারব না। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ অনেক কথা বলেছেন। তার এক বড় ভাই এক সময় আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। জনাব হানিফের জাতীয় অবস্থান এবং বয়স বিবেচনা করে আমাকে সবক দেওয়া তার আদৌ শোভা পায় কিনা এটা তারই ভেবে দেখা দরকার। আমি যে বিএনপির সঙ্গে, বিএনপির নেত্রীর সঙ্গে কোনো ঐক্য করতে যাইনি, দেশ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম— প্রয়োজন হলে আরও আলোচনা করব এটা সবাই জানে। তারপরও নানা জনের নানা কথা খুব একটা শোভা পায় না। জানি তবু তারা বলবেন কারণ বাংলাদেশে আর যাই হোক কথা বলায় ট্যাক্স দিতে হয় না।

১৯৭১-এর এই দিনে মানে ১৬ আগস্ট ধলাপাড়ার মাকড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। বাঁচার আশা ছিল না। পাকিস্তানি হানাদাররা প্রথম প্রথম প্রচার করেছিল, দুষ্কৃতকারীদের সর্দার কাদের সিদ্দিকী ধলাপাড়ার মাকড়াই যুদ্ধে নিহত হয়েছে। দুই দিন পর তারাই আবার প্রচার করে, না নিহত নয়, তার হাত-পা খোয়া গেছে। তার আর যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে গিয়েছিলাম। হানাদারদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করে আল্লাহর দয়ায় বিজয়ী হয়েছিলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। এসব আমি একা করিনি। অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আমারও একটা নগণ্য ভূমিকা ছিল। কীভাবে দিন কেটে গেল হিসাব মিলাতে পারলাম না। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস যারা পাকিস্তান হানাদারদের সহায়তা করেছে, স্বাধীনতার পরপরই তারা ভোল পাল্টে রঙ বদলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হয়ে গিয়েছিল। তারাই তখন হর্তাকর্তা বিধাতা।

ঠিক তেমনি ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে যারা দাঁত বের করে হি হি করে হেসেছিল তারা অনেকে আজ কি সুখেই না আছে! মনে হয় তাদেরই দেশ, তাদের জন্যই যেন স্বাধীনতা। জেনারেল সফিউল্লাহ সেনাপ্রধান হয়ে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করেননি তাও তিনি আওয়ামীদের কাছে পুরস্কার পেয়েছেন। আর আমি জীবন ঝরিয়ে দিয়ে পাচ্ছি তিরস্কার। ১৫ আগস্ট আমার জীবনের গতি বদলে গেছে, শেকড় কেটে গেছে। শেকড়হীন দুর্বল গাছ যেমন পল্লবিত হয় না, হতে পারে না আমার অবস্থাও তেমন। শত্রুর কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আমরা যারা রসুনের কোয়ার মতো একাট্টা ছিলাম, আজ তারা অনেকেই বিভক্ত। আর এই বিভক্তির সুযোগে কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমার বোন জননেত্রীকে আশ্রয় করে আমাদের ওপর খড়গ চালাচ্ছে। যাতে আমরা কচুকাটা হয়ে যাচ্ছি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমার বোন তা বুঝতে পারছেন কিনা, অন্তত আমি বুঝতে পারছি না। তার মন্ত্রিসভায় এমন লোকজন আছে যারা বঙ্গবন্ধুর সরকারের পতনের জন্য এক সময় জীবন কোরবান করেছে। তাই জননেত্রী যদি তার পিতা হত্যার প্রতিকার করতে চান তাহলে যারা তার হত্যাক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে তাদের কোনোক্রমে আশ্রয় নয় বরং বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত। আজ আর কাল একদিন না একদিন সেটা যে হবে সে বিশ্বাস ও প্রত্যয় আমার আছে।

 

কদিন হয় বন্যায় সারা দেশ ভেসেছে। মানুষের দুঃখের কথা পত্রপত্রিকা-টেলিভিশনে দেখে মনটা বড় বেশি চঞ্চল হয়ে গিয়েছিল। তাই বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কাটাতে তাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। শুরু করেছিলাম উত্তরের রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা সীমান্ত থেকে। দুর্গত গরিব মানুষ যে কত ভালো হতে পারে তা সরাসরি প্রত্যক্ষ না করলে বোঝা যায় না। এক সপ্তাহ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-ধলেশ্বরীর কূলে কূলে কাটিয়েছি। শ্যালোতে উঠেছিলাম রৌমারী দাঁতভাঙ্গার পূর্ব পাখিউড়া থেকে। মানুষ যে কত দরিদ্র আর কত বড় মনের ওই সব নিরন্ন মানুষের কাছে না গেলে বোঝার উপায় নেই। টাঙ্গাইল থেকে রৌমারী পৌঁছতে সারা দিন লেগে গিয়েছিল। তার আগের দিন ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল আধাবেলা খরচ হয়েছে। ৬০-৭০ জন কর্মী নিয়ে চাল-ডাল-আটা-ময়দা-নুন-চিনি-গুড়-কাপড়-চোপড়-ওষুধপত্র-ডাক্তার নিয়ে বেরিয়েছিলাম। দুই না তিন তারিখ ড্যাবের ডা. জাহিদকে ওষুধপত্র এবং জুনিয়র ডাক্তার দিয়ে সাহায্য করতে বলেছিলাম। বিএমএর ডাক্তার ইকবাল আর্সেলানকেও ফোন করেছিলাম। প্রথম প্রথম পাওয়া যায়নি। পরে রাত ৯টার দিকে তিনি ফোন ধরেছিলেন। নাম বলতেই আপনজনের মতো আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বলেছিলাম দুর্গতদের পাশে যাব, কিছু ওষুধপত্র ও ডাক্তার দিয়ে সাহায্য করলে খুশি হব। তিনি বড় আগ্রহ নিয়ে বলেছিলেন অবশ্যই সব কিছু করব। কিন্তু দুই-তিন দিন পর যাত্রাকালে শত চেষ্টা করেও আর্সেলানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিন দিন চেষ্টা করেও তাকে ধরতে পারিনি। তাই ওষুধপত্র ডাক্তার পাইনি। জাহিদের পাঠানো ডাক্তার জাভেদ অসাধারণ। স্বাধীনতার পর সিলেটের বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে মাসব্যাপী ত্রাণ পরিচালনা এবং মানিকগঞ্জের জমসা, ফরিদপুরের গোপালপুর ত্রাণ কাজে যেমন করেছিল ডাক্তার জাভেদের সপ্তাহব্যাপী কর্মকাণ্ডেও তেমন উৎসাহ দেখেছি। তার কাজ আমাকে বড় বেশি অভিভূত করেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা বিরামহীন রোগী দেখেছে, হাসিমুখে কথা বলেছে। কারও সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। তাকে সহযোগিতা করেছে প্যারামেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাদিকুর ও মানিক। তারাও খুব ভালো কর্মী। রৌমারী যাওয়ার পথে বকশীগঞ্জের শাহজাহান খাবার ব্যবস্থা করেছিল। জাকিরের সঙ্গে জামালপুর ব্রিজের কাছে দেখা। সেও আমাদের ত্রাণ কাজে সহায়তা করেছে। বকশীগঞ্জ শাহজাহানের বাড়িতে অসাধারণ আতিথেয়তা পেয়ে আমরা যখন ঝরঝরে দেহমনে রৌমারীর পথে ছিলাম তখন রাজীবপুরের নছিম উদ্দিন মেম্বার ত্রাণকর্মীদের জন্য খাবার তৈরি করে অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি। কীভাবে যেন তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলাম।

’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার অনেক কর্মী শরিক হয়েছিল। রৌমারীর হান্নান, জয়নাল, আজিজুল, মশিউর ছিল। তারা তিন-চার দিন থেকে ত্রাণ কাজে আমাদের যাওয়া নিয়ে উতলা হয়েছিল। তারা একে তো ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫-এর প্রতিরোধ সংগ্রামী, তার ওপর একেবারে হতদরিদ্র। তাই তাদের সাধ্যমতো যতটা যা পেরেছে তা তারা করেছে। রৌমারী সদরের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু আমাদের দলকে খাওয়ানোর জন্য উন্মুখ হয়েছিলেন। কিন্তু কেন বুঝলাম না আমার খাওয়ার ব্যাপারে জীবনের সবচেয়ে বড় বিভ্রাটের ঘটনা তার ওখানেই ঘটে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে ৭ দিন ১০ দিন না খেয়ে থেকেছে বলে গল্প করে। অথচ বাস্তবে কেউ তা করেনি। খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট হয়েছে। সকালের খাবার বিকালে অথবা বিকালেও খায়নি, পরদিন খেয়েছে, কিন্তু খেয়েছে। কেউ না খেয়ে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধে এক-দুদিন এবং মাঝে হানাদারদের প্রচণ্ড আক্রমণে কখনো বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে এক-দুবার ছাড়া খাওয়ায় তেমন কষ্ট হয়নি। হ্যাঁ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে ঢাকা থেকে যেদিন সীমান্তের দিকে পাড়ি দিই, সেই যাত্রায় প্রায় ৩০-৩৫ ঘণ্টা শুধু পানি এবং শেষের দিকে দু-চারটা চাল ছাড়া আর কিছু মুখে দিতে পারিনি। এখনকার মতো রাস্তাঘাটে তখন কোনো দোকানপাট ছিল না। পকেটে পয়সা থাকলেও খাবার পাওয়া যেত না। এক সময় ক্ষুধার জ্বালায় থাকতে না পেরে এবাড়ি-ওবাড়ি থেকে চাল নিয়ে মুখে দিয়ে পানি খেয়ে এগোচ্ছিলাম। ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে বেরুতে অনেককে চাল মুখে দিয়ে পানি খেয়ে বেরুতে দেখেছি। তাই আমরা সবাই অমনটা করেছিলাম। তবে বেশি চাল আর খালি পেটে বেশি পানি খেলে সহ্য হয় না। ১০-১২ সহকর্মীর মধ্যে অন্যদের কথা বলতে পারব না, আমার পেটে বেশ কষ্ট হয়েছিল।

সেবারও যে ৩০-৩৫ ঘণ্টা পর খাবার জুটেছিল তাতেও ডাল ছিল, সবজি ছিল, আরেকটা যেন কি ছিল। কিন্তু সেদিন রৌমারী চেয়ারম্যানের বাড়িতে ওসবের কিছুই ছিল না। আমি যখন একাই খেতে বসতে চেয়েছিলাম তখন বাঁপাশে হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, ডান পাশে ডাক্তার জাভেদ, মাঝে আবদুল হাই বসেছিল। খাওয়ার টেবিলে মুরগির মাংস, ভুনা ডিম আর ডাল ছিল। আমি খুব একটা মাংস খাই না, ভুনা ডিম আমার পছন্দ না। তাই শুধু ডাল দিয়ে খেয়েছিলাম। ওতে কিছুটা খারাপ লেগেছিল। চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই সেদিনও ভাত খেয়েছে, আলু-পটল-করলা-বেগুন ভর্তা অথবা মলা, বাইজা, টাকি মাছ বা অন্য কিছু নিশ্চয়ই নিজেদের জন্য ছিল। অথবা যেহেতু চেয়ারম্যান, পাশের বাড়ি থেকে এটা ওটা এনে খেতে দিতে পারত। হয় তার বুদ্ধি কাজ করেনি, না হয় যেহেতু চেয়ারম্যান সেহেতু ওরকম ভর্তা বার্তি কাউকে দেওয়া তার সম্মানে বেধেছে। গত ৪০ বছরে ওটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে নিম্নমানের খাবার। কিন্তু তবুও খুব সম্মান করেই শুধু ডাল দিয়ে যে কটা ভাত খাওয়া যায়- খেয়েছিলাম। রাতে ছিলাম আজিজ মাস্টারের বাড়ি। চেয়ারম্যানের সুন্দর টাইলস করা দোতলা দালান, আজিজ মাস্টারের টিনের ঘর। তবে চেয়ারম্যান দলের সবাইকে খুবই আন্তরিকভাবে খাইয়েছে, যতটা সম্ভব থাকার ব্যবস্থা করেছে। সে জন্য আমার বেশ ভালো লেগেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে যখন আজিজ মাস্টারের ছেলে মাসুম-মামুন, শামীম, সোহেলদের বাড়ি শুতে গিয়েছিলাম তখন আবার কিছু খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। চেয়ারম্যানের বাড়ির খাওয়াই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। আবার ওবাড়িতে খাবার ভালো লাগছিল না। তবুও জোরাজুরির কারণে সামান্য কিছু মুখে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কি একটা ভর্তা এবং সকালের রান্না সবজি, ছোট মাছ গরম করে দিয়েছিল। খাওয়া তো আগেই হয়ে গিয়েছিল। তাই শুধু মুখ রক্ষা করা। কিন্তু অসম্ভব সুস্বাদু ছিল সে খাবার। সকালে প্রায় ৫০-৬০ জনের নাশতার ব্যবস্থা করেছিল। আমার জন্য সবজি, রুটি আরও যেন কি করেছিল।  বুক ভরে গিয়েছিল ওদের আন্তরিকতায় আর স্মৃতিতে ভাসছিল ’৭১-এর সেপ্টেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম রৌমারীর ওই বাড়ি।

লেখক : রাজনীতিক।

 

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ