মিনি

রিমি রুম্মান ৬ জানুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার, ০৭:১১:১৬পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৮ মন্তব্য

দিনের খাবার শেষে আমি যখন আয়েশ করে এক কাপ কফি হাতে বেল্‌কোনিতে বসি, নিচে লনের একটি দৃশ্যে দৃষ্টি থেমে থাকে। পাশের বাসার চায়নিজ মেয়েটি তাদের পোষা বিড়ালটিকে আদর করছে। কর্ম ব্যস্ততার মাঝে আসা যাওয়ার পথে ওই পরিবারের সকল সদস্যই ক্ষণিক থেমে বিড়ালটিকে মাথায় হাত বুলিয়ে যায়। যেন তাকে ঘিরেই ওদের প্রতিটি দিন আবর্তিত হয়।

 

বিড়ালে দারুন ভয় আমার। আঁতকে উঠি। বুক ধড়ফড় করে। লাফিয়ে লাফিয়ে দূর দূর দিয়ে হেঁটে পালাই। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল, এতো কিছুর পরও সে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ম্যাও ম্যাও করে ধীর গতিতে, করুন স্বরে। ওরা কি নামে ডাকে জানিনা, আমি মিনি বলে ডাকি।

 

সেদিন মিনিকে দেখে কেন যেন ভেতরে একরকম মায়া মায়া বোধ হয়। বুকভরে শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে লনের ঘাসের উপর বড় পাথরটিতে বসি। সন্ধ্যা ঘনিয়েছে আগেই। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারের শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই। মিনি আমার পাশে ঘেসে থাকে__ যেমন করে জ্বরের সময়টাতে আমি আমার প্রিয়জনদের পাশে ঘেসে থাকি। চাঁদের আলোয় চোখদুটি জ্বলজ্বল করছে। সুনসান নৈঃশব্দ্যের মাঝে সেই করুণ স্বরে  ম্যাও ম্যাও ডাক। নীরবে চেয়ে থাকি। এই প্রথম মনে হল, আমরা মানুষ কেন ওদের ভাষা বুঝার ক্ষমতা রাখি না ?

 

কয়দিন আর মিনিকে দেখিনা। আসা-যাওয়ার পথে লনের এদিক ওদিক চোখ বুলাই। অজান্তেই নির্বাক দৃষ্টিতে কাউকে খুঁজে বেড়াই। চায়নিজ মেয়েটির মা'কে দেখি প্রতিদিন, কিন্তু ইংরেজি বুঝে না বিধায় জিজ্ঞেস করা হয়না। আজ মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, মিনি বেশ কয়'দিন ধরেই অসুস্থ ছিল। তাছাড়া ব্যস্ততার জন্যে ওরাও সময়মত খাবার দেয়া সহ অন্যান্য কেয়ার নিতে পারছিলো না, তাই শেল্টারে রেখে এসেছে...

 

সময় তার নিজস্ব গতিতে এগোয়। শুধু ভেতরে কিছু মায়া রেখে যায় কেউ কেউ। অনাবশ্যক এই মায়া না জন্মালে কি এমন ক্ষতি হতো ?

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ